পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলনী প্রশ্নের উত্তর/pather panchanli question answers class 8 bangla - Online story

Saturday 27 August 2022

পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলনী প্রশ্নের উত্তর/pather panchanli question answers class 8 bangla

 


 

 

পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলনী প্রশ্নের উত্তর

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১. অতি সংক্ষেপে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

১.১ কুঠির মাঠ দেখতে যাবার পথে কী দেখে অপু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল?

উঃ। কুঠির মাঠ দেখতে যাবার পথে বড়ো বড়ো কানওয়ালা জীবন্ত খরগোশ দেখে অপু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল।

১.২ আলকুশি কী ?
উঃ। আলকুশি হলো জঙ্গলের একটি বিষাক্ত ফল। যার আঠা হাতে লাগলে সেই জায়গা জ্বালা করে এবং চুলকে ফুলে যায়।


১.৩ ‘এই দ্যাখো মা আমার সেই মালাটা'—কে কখন এই কথা বলেছে?
উঃ। কথাটি বলেছে ভুবন মুখার্জির বাড়ির সেজোবউ-এর মেয়ে টুনু। অপুদের বাড়িতে এসে সে যখন দুর্গার খেলা করার বাক্সটি খুলেছিল তার মধ্যে পুতুলের জন্য পুঁতির একটি মালা ছিল। তখন টুনু মালাটা বের করে এনে এই কথাটি বলেছে


১.৪ অপু কার পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল? গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি আর কোন্ কাজ করতেন?
উঃ। অপু গ্রামের একমাত্র গুরুমশাই প্রসন্নবাবুর পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল।
গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি একখানি মুদির দোকান চালাতেন।


১.৫ পাঠশালা কখন বসতো? কজন ছাত্রছাত্রী ছিল?
উঃ। পাঠশালা বসত বিকালে। সবসুদ্ধ মোট আট দশজন ছাত্রছাত্রী পাঠশালায় ছিল।


১.৬ আতুরি ডাইনি কে? বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গেল কীভাবে?


উঃ। আতুরি ডাইনি অপুর গ্রামে থাকা এক অসহায়, গরিব বৃদ্ধা। গ্রামের লোকের ধারণা ছিল সেই বুড়ি নাকি বাচ্চাদের মেরে কচুপাতায় প্রাণ পুরে জলে ডুবিয়ে রাখে। এছাড়াও সবাই জানত সে ইচ্ছে করলেই ছোটো ছেলেদের রক্ত চোখের দৃষ্টি দিয়েই শুষে নিতে পারে। বড়ো হওয়ার পর অপু তাকে হাটে আমচুর বিক্রি করতে দেখেছিল একদিন। বুড়িটি ছিল একা। তার কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। আমচুর বিক্রি করে তার দিন কাটত। মরার সময় তাকে পোড়ানোরও কেউ ছিল না। এইসব ঘটনা থেকেই আতুরি
ডাইনির সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গিয়েছিল।


১.৭ লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু যে আশ্চর্য ভ্রমণকাহিনি শুনিয়েছিল তা লেখো।
উঃ। লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু পনেরো দিন ধরে নিজের অদ্ভুত গল্পের ভ্রমণকাহিনি বলে বেড়িয়েছিল। সে ওই কয়েকদিন নানা আশ্চর্য জিনিস দেখেছে। রেলের রাস্তা, যেখানে দিয়ে সত্যিকারের রেলগাড়ি যায়। মাটির আতা,পেঁপে, শশা—অবিকল সত্যিকারের ফলের মতো। এক ধরনের পুতুলটার কথাও সে বলে যার পেট টিপলে মৃগি রোগীর মতো হাত-পা ছুঁড়ে হঠাৎ খঞ্জনি বাজাতে শুরু করে।অপু অনেক দূর পথ গিয়েছিল কত পদ্মফুলে ভরা বিল; অচেনা কত নতুন গাঁ। কত দূর দিগন্ত পথ। নির্জন পথে পাশ দিয়ে সেখানে যেতে হয়। কোনো একটি গ্রামের পাশে কামারের দোকান যেখানে অপুকে জল খাওয়ানোর জন্য তার বাবা নিয়ে গিয়েছিল।তারা অতি যত্ন সহকারে ভিতরে ডেকে দুধ, চিঁড়ে, বাতাসা খেতে দিয়েছিল। এসব গল্পই সে মা ও দিদিকে শুনিয়েছিল।


১.৮ অপু কড়ি খেলতে কোথায় গিয়েছিল? তার সঙ্গীসাথি কারা ছিল লেখো।

উঃ। অপু কড়ি খেলতে জেলেপাড়ায় গিয়েছিল।সেখানে তার সঙ্গীসাথি ছিল ব্রাষ্মণ পাড়ার ছেলে পটু ও জেলেপাড়ার তিনকড়ির ছেলে বঙ্কা, হৃদয় ও জেলেপাড়ার আরও অন্যান্য ছেলেরা।


১.৯ ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্রহ’ বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কী লেখা ছিল?
উঃ। ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্ৰহ’ বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে লেখা ছিল যে—শকুনির ডিমের ভিতর পারদ ভরে কয়েকদিন
রৌদ্রে রেখে তারপর সেই ডিম মুখে পুরলে মানুষ ইচ্ছে করলে শূন্যমার্গে অর্থাৎ আকাশে উড়তে পারবে।


১.১০ আমি মরবার সময় বইখানা তোমায় দিয়ে যাব দাদু’–কে, কাকে একথা বলেছিলেন? কোন্ বইখানি দিয়ে

যাবার কথা ছিল ?
উঃ। অপুকে এ কথাটি বলেছিলেন গ্রামের বয়স্ক ব্যাক্তি নরোত্তম দাস বাবাজি।
‘প্রেমভক্তি চন্দ্ৰিকা’ বইখানা অপুকে দিয়ে যাবার কথা তিনি বলেছিলেন।


১.১১ অপুর দপ্তরে কী কী বই ছিল? কোন্ মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত?
উঃ। অপুর দপ্তরে যে সব বই ছিল তা হল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত চরিতমালা, ধারাপাত, শুভঙ্করী।‘বঙ্গবাসী’ মাসিক পত্রিকাটি হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত।


১.১২ 'দুর্গা কতবার খুঁজিয়াছেও খেলা আর কোনো দিন আসে নাই,'।—কোন্ খেলার কথা বলা হয়েছে লেখো
উঃ। নিশ্চিন্দিপুরে একজন বৃদ্ধ মুসলমান বড়ো রং-চং করা কাঁচ বসানো একটি টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল ।
বাক্সের গায়ে চোঙের মতো জিনিস ছিল। তাতে চোখ একটা লাগিয়ে ছবিতে সত্যিকারের মানুষ, ঘরবাড়ি মুদ্ধ দেখা যায়। এই খেলাটির কথাই বলা হয়েছে।



১.১৩ অপু বসে বসে খাতায় কী লেখে?

উঃ। অপু বসে বসে খাতায় নাটক আর গল্প লেখে।


১.১৪ অপুর টিনের বাক্সে কী কী বই ছিল?
উঃ। অপুর টিনের বাক্সে একটি নিত্যকর্ম পদ্ধতি, একটি পুরানো প্রাকৃতিক ভুগোল, একখানি শুভঙ্করী, পাতা ছেঁড়া একখানা
বীরাঙ্গনা কাব্য, ও মায়ের সেই ছেঁড়া কাশীদাসী মহাভারত বই ছিল।



১.১৫ ‘তোরা নাকি এ গাঁ ছেড়ে চলে যাবি?’—কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উঃ। একথা ভুবন মুখুজ্জের মেয়ে রানি অপুকে বলেছে।নিশ্চিন্দিপুর গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।

১.১৬ ‘রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে?’—কী রইল? এখানে কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে?
উঃ। একটি কৌটো রইল ।
এখানে একটি সোনার সিঁদুর কৌটোর কথা বলা হয়েছে, যা অপুর দিদি হয়তো কখনো সেজো ঠাকরুনের বাড়ি থেকে
চুরি করেছিল।


২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো :




২.১ দুর্গা-অপুর খেলাধুলোর সরঞ্জাম বলতে কী ছিল লেখো।
উঃ। দুর্গার খেলার সরঞ্জাম ছিল কয়েকটি কড়ি, নাটাফল, আমের গুটি। অপুর খেলার সরঞ্জাম ছিল একটি রং ওঠা
কাঠের ঘোড়া, একটি টোল খাওয়া টিনের ভেঁপু বাঁশি গোটা কয়েক কড়ি, দু পয়সা দামের একটি পিস্তল ইত্যাদি।


২.২ অপুর পাঠশালাটি কেমন ছিল?
উঃ। গ্রামের প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের বাড়িতেই অপুর পাঠশালা ছিল। যে ঘরটিতে পাঠশালা হয় তার কোনোদিকে বেড়া বা দেওয়াল কিছু নেই চারিদিকে খোলা। পাঠশালার শিক্ষ দেওয়ার বিশেষ উপকরণটি ছিল একটি বেত। ছেলেরা নিজেরাই বসার চাটাই নিয়ে আসত।


২.৩ আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু কী করত?বা যেখানে কেউ আসে না, তাদের ঘরের পিছনে হাওয়াতে কঞি ঘুরিয়ে আপন মনে নানা কথা বলতে বলতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

উঃ। আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু একটি সরু বাঁশের কঞ্চি নিয়ে নদীর পাড়ে বাঁশবনের ভিতরে
করত। নিজের মনে মায়ের মুখে শোনা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের দৃশ্য কল্পনা করে সে নিজেকে সেই যুদ্ধের অংশ করে নিত।


২.৪ দুর্গা তো পাঠশালায় যেতো না, তার সারাদিন কীভাবে কাটত,লেখো।
উঃ। দুর্গা পাঠশালায় যেতো না, তার সারাদিন কাটত নানা বনে জঙ্গলে ঘুরে। এর মাধ্যমে দুর্গা জীবনের সব আনন্দ উপভোগ করত। সে দুপুরে শুধু ভাত খাওয়ার জন্য বাড়ি আসত তারপর সারাদিন সে ঘুরে বেড়াত পাড়ার আমবাগানে,জামবাগানে। কাদের বাড়ি কোন গাছে কী ফল হয়েছে সব তার জানা ছিল। সে কামরাঙা, নাটাফল, আমের গুটি এইসব
সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকত। তাছাড়া পুতুলের ঘর সাজানোর জন্য নানা জিনিস সংগ্রহ করতেও সে ব্যস্ত থাকত।


২.৫ বাছুর খুঁজতে বেরিয়ে দুর্গা ও অপু কীভাবে পথ হারিয়ে ফেলেছিল?

উঃ।
বাছুর খুঁজতে গিয়ে দুর্গা অপুকে রেলের রাস্তা দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিল যা ছিল তাদের দক্ষিণ মাঠের থেকে অনেক অনেক দূরে। দুজনে নবাবগঞ্জের পাকা রাস্তার উপরে গিয়েও যখন রেলের রাস্তা দেখতে পায়না তখন তারা ভাবে রেলের রাস্তা বুঝি আরো দূরে, দৌড় দিতে দিতে তারা পাকা রাস্তা ফেলে বন মাঠ, বিল জলা ভেঙে দক্ষিণ দিকে দৌড়োতে থাকে। দৌড় দিতে দিতে তাদের চেনা রাস্তা, বনজঙ্গল সরে সরে যেতে থাকে। নবাবগঞ্জের লাল রাস্তা। রোয়ার মাঠ,
জলসত্রতলা, ঠাকুরঝি পুকুর তাদের বাঁদিকে ডানদিকে দুরে পড়ে থাকল, খানিক দুরে গিয়ে একটা বড়ো জলা পড়লো সেখানে উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাসে তারা পথ হারিয়ে ফেলল।



২.৬ রাজকৃষ্ণ সান্যালের দেশভ্রমণের গল্পগুলি কেমন ছিল?
উঃ। রাজকৃয় সান্যালের দেশভ্রমণের বাতিক ছিল। তাঁর বলা গল্পগুলি যেমনই হোক না কেন, সেটি সাজিয়ে বলার ক্ষমতা তাঁর অসাধারণ ছিল। কোথায় দ্বারকা, কোথায় সাবিত্রী পাহাড়, চন্দ্রনাথ ইত্যাদি স্থানে তিনি ভ্রমণ করেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী-পুত্রও থাকত। অপুর কাছে এই দেশভ্রমণের গল্পগুলি ভালো লাগত।

২.৭. একদিন পাঠশালায় এমন একটি ঘটনা হইয়াছিল, যাহা তাহার জীবনের একটি নতুন অভিজ্ঞতা।'—অপুর জীবনের সেই নতুন অভিজ্ঞতাটি কী?
উঃ। পাঠশালায় ঘটে যাওয়া অপুর জীবনের সেই নতুন অভিজ্ঞতাটি ছিল শ্রুতিলিখন করা। সেদিন পাঠশালায় অন্য কেউ উপস্থিত না থাকায় কোনো গল্পগুজব হলো না পড়াশোনা হচ্ছিল। অপু পাঠশালায় গিয়ে বসে পড়ছিল। এমন সময় গুরুমশাই শ্রুতিলিখন লিখতে বললেন। গুরুমশাই মুখে মুখে যা কিছু
বলছিলেন অপু তা বুঝল না কেবলমাত্র এটা বুঝল যে কথাগুলি গুরুমশাই-এর নিজের সম্পর্কে নয়। তবে দাশুরায়ের পাঁচালির মতো
তিনি মুখস্থ বলছেন। কথাগুলি অপুর শুনতে খুব মধুর লাগছিল।সে কথাগুলির মানে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু অজানা শব্দের
ঝংকার জড়ানো অপরিচিত শব্দগুলি সেদিন অপুর কাছে মনে হয়েছিল সংগীত। সেই কথাগুলির মধ্য দিয়ে দেশের একটা অস্পষ্ট
ছবি অপুর শিশুমনে ফুটে উঠেছিল। অপু ভাবত কুঠির মাঠ পেরিয়ে যে পথটি ঘুরে গিয়েছে গুরুমশাইয়ের বলা ‘জনস্থান মধ্যবর্তী প্রস্রবন গিরি’ বুঝি সেই পথেই অবস্থিত।


২.৮ দুর্গা-অপু কীভাবে রেলের রাস্তা দেখার চেষ্টা করেছিল?
উঃ। একবার অপুদের রাঙি গাইয়ের বাছুর হারিয়ে গিয়েছিল।দুর্গা-অপু যখন বাছুর খুঁজতে দক্ষিণ মাঠের দিকে গিয়েছিল, দূরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে দুর্গা একটি কী দেখছিল। হঠাৎ দুর্গা বলল-রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা। তারপর তারা রওনা দিল। দুর্গা বলেছিল রেলের রাস্তা পাকা রাস্তার ওধারে।
এই ভেবে তারা দুজনে রওনা দিল পায়ে হেঁটে। দৌড় দিয়ে, বনজঙ্গল ডিঙিয়ে তারা রেলের রাস্তা দেখার চেষ্টা তবে সে আশা তাদের পূর্ণ হয়নি। অনেক দূর গিয়ে পথ হারিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়েছিল।


২.৯ ‘বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস।'—একথা বলার কারণ কী? সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার আনন্দ তুমি সম্পর্কে লেখো।
উঃ। বাঁকা কঞি অপুর কাছে অনেক মূল্যবান, এক অদ্ভুত জিনিস। যা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক খুঁজে
খুঁজে বনজঙ্গলের ভিতর একটা শুকনো, গোড়ার দিক মোটা, আগার দিক সরু এমন হালকা ও বাঁকা কঞি অপু জোগাড়
করে আনে। তা দিয়ে অপু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে। এই অদ্ভুত সামান্য উপকরণটি দিয়ে সে মহাভারতে শোনা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কল্পনায় মেতে থাকত। একা একা নির্জন জায়গায় কখনও বাঁশবাগানের পথে কখনও নদীর ধারে। নিজের মনে কথা বলতে বলতে সে ঘুড়ে বেড়াত। এই আনন্দ কেবল অপুই বোঝে অন্য কেউ বোঝে না। সে সেই বাঁকা কঞ্চি নিয়ে কখনও তামাকের দোকানি, কখনও ভ্রমণকারী,কখনও বা সেনাপতি, কখনও বা মহাভারতের অর্জুন সেজে আপনমনে খেলে।
সব শিশুই সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার চেষ্টা করে। এই তুচ্ছ উপকরণ ও শিশুমনে অমূল্য বলে মনে হয় কঞ্চিটিকে অপু তারবারি করে মনে করে রামায়ণ মহাভারতের কল্পজগতে মানসভ্রমণ করে বেড়াত। তাই এই সামান্য উপকরণ তার মনে আশ্চর্যে আনন্দ এনে দিত।


২.১০ শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য অপু কী করছিল ?
উঃ। শূন্যে ওড়ার ক্ষমতার অর্জনের জন্য অপু নানা জায়গায় শকুনির ডিম খুঁজেছিল। সেটা প্রথমে দিদিকে তারপর সতু, নীলু, কানু, পটল, নেড়া সকলকে জিজ্ঞাসা করে শকুনির বাসা কোথায় আছে। তারা দেখেছে কী না? তারপর সে রাখালকে জিজ্ঞাসা করেছিল, শকুনের ডিমের কথা। সে যদি শকুনের ডিম এনে দেয় তাহলে অপু তাকে টাকা দেবে। পরের
দিন রাখাল দুটি কালো রং-এর ছোটো ছোটো ডিম এনে অপুকে দিল তবে তারজন্য রাখাল বলল দু-আনার কমে সে দেবে না। তা শুনে অপু অবাক হয়ে গেল। সে বলল, তার কাছে থাকা এক গুচ্ছ কড়ি আছে সে সেগুলি রাখালকে দেবে কিন্তু রাখাল তাতে রাজি হলো না। অনেক কষ্টে দিদির থেকে এনে তারপর নিজের প্রিয় কড়িগুলির অর্ধেকটাও দিয়েছিল। তবে ডিমগুলো সত্যই শকুনের ডিম কিনা তা পরীক্ষা করে জানা যায়নি।



২.১১ ভুলো কুকুরকে নিয়ে দুর্গা কীভাবে আমোদ উপভোগ করত?
উঃ। দুর্গা প্রতিদিন নিজের ভাত খাওয়ার শেষে এক মুঠো ভাত ভুলো কুকুরের জন্য নিয়ে আসত। এতে তার মায়ের কাছে অনেক বকা খেতে হয়েছিল। কিন্তু অপু এই আমোদ উপভোগ করা সম্পর্কে কিছুটা জানত। চারিদিকে জনশূন্য কেউ কোথাও নেই চোখ বুজে দুর্গা যেই সেই ভুলো কুকুরকে ডাকত তারপর ভাত মাটিতে ফেলতেই বনজঙ্গল পেরিয়ে শুকনো পাতার স্তূপ পেরিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ভুলো কুকুরটি ছুটে চলে আসত। তা দেখে দুর্গার মন আনন্দে ভরে যেত। এইভাবেই
সে আমোদ উপভোগ করত।




২.১২ বৃদ্ধ নরোত্তম বাবাজির সঙ্গে অপুর কীভাবে ভাব হয়েছিল?
উঃ । অপু যখন ছোটো ছিল তখন তার বাবার সাথে সে নরোত্তম বাবাজির বাড়ি যেত। গৌরবর্ণ, সদানন্দ, বৃদ্ধ নরোত্তম সামান্য
খড়ের ঘরে থাকতেন। তিনি বিশেষ গোলমাল ভালোবাসেন না, প্রায়ই নির্জনে থাকেন। সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে গাঙ্গুলিদের
চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে বসেন। ছোটো থেকেই অপুকে নিয়ে হরিহর তাঁর কাছে যেতেন। সেই থেকে তাঁর সাথে অপুর ভাব হয়। তিনি
বলতেন অপু তার কাছে গৌরসুন্দরের মতো। নিষ্পাপ ভাবমাখানো চোখ ছিল অপুর। মুখচোরা অপু এই বৃদ্ধ ব্যক্তিটির সঙ্গে
নানারকম বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করত। বৃদ্ধ নরোত্তমের কাছে অপু প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা বইখানি দেখতে চাইত। বৃদ্ধ
বলতেন বইখানি তিনি অপুকে দিয়ে যাবেন। তিনি জানেন অপুর হাতে এ বইখানির কোনো অসম্মান হবে না।

২.১৩;অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির আয়োজন সম্পর্কে লেখো। এখনকার পিকনিকের সঙ্গে এরকম চড়ুইভাতির তফাত্ কোথায়?
উঃ। নীলমণি রায়ের জঙ্গলাকীর্ণ ভিটের ওপারে অপু-দুর্গা চড়ইভাতির আয়োজন করে। খানিকটা বনজঙ্গল দুর্গা নিজের হতে দা দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে তারপর ঘর থেকে চাল নিয়ে আসে ও একটি ভালো নারিকেল মালার দুই ফোটা তেল নিয়ে আসে। খেলাঘরের মাটির ছোবার মতো ছোটো একটা হাঁড়ি জোগাড় করে এবং কতগুলি মেটে আলু নিয়ে আসে। দুর্গা একটি বেগুনও আনে। বনভোজনে সত্যিকারের ভাত, মেটে আলু সেদ্ধ ও বেগুন ভাজা রান্না হয়। সব রান্না
দুর্গা নিজেই করে। তাদের সাথে যোগ দেয় কালীনাথ চক্কোতির মেয়ে বিনি।
এখনকার পিকনিকের সাথে এরকম চড়ুইভাতির তফাত অনেক, এখনকার পিকনিকের জন্য আগে থেকে দিন ঠিক করা
হয়। একটি সুন্দর পরিষ্কার জায়গা দেখে নানারকম আয়োজন করে ভালো ভালো খাবারের জোগাড় করে দলবদ্ধ ভাবে
পিকনিক করা হয়। রান্নার ব্যবস্থা রান্নার ঠাকুর করে। এই পিকনিকগুলি অনেক খরচসাপেক্ষ হয়। প্রকৃতির মাঝে কিশোর
মনের বিস্ময়ও নতুন কিছু করার যে নির্ভেজাল আনন্দ তা এখনকার দিনে পিকনিকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না।


২.১৪ অজয় কে? তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হলো কীভাবে?
উঃ। অজয় নীলমণি হাজরার যাত্রাদলের একজন বালক অভিনেতা। অজয়ের তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হয়েছিল দেখতে গিয়ে। অজয় রাজপুত্রের অভিনয় করেছিল। তারপর যাত্রার শেষে অজয় পান খেতে যায়, সেখানে অপু তাকে পান কিনে দেয় তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং অপু অজয়কে বাড়িতে আসতে বলে। যাত্রা চলাকালীন অজয় রোজ অপুদের বাড়িতে খেতে যেত। সর্বজয়া অজয়কে খুব ভালোবেসেছিলেন। দুর্গাও অজয় কে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবেসেছিল,অজয় যেহেতু অপুর সমবয়সী ছিল এবং অপু তাকে তার মনের কথা কিছু কিছু বলতে লাগল এই ভাবে দিন দিন যেতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হওয়ায় অপু মনে মনে স্বপ্ন দেখেছিল যে বড়ো হয়ে সে যাত্রাদলেই অভিনয় করবে।



২.১৫ অপু তার দিদির সঙ্গে কেন কখনও আড়ি করবে না?
উঃ। অপু তার দিদিকে খুব ভালোবাসে তবে যখন তার দিদি তার নাকে কলমির ফুল দিয়ে নোলক বানিয়ে দেয় তার ভালো
লাগেনা, কিন্তু তাও দিদিকে সে কিছু বলতে পারে না এবং অপুর দিদি মাঝেমধ্যে আম, জাম, কামরাঙ্গা, তেঁতুল লোভনীয়
খাদ্যগুলি মাকে লুকিয়ে নিয়ে আসে এবং দুজনে মিলে খায়। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কখনো দিদির সাথে আড়ি করবে না।
সতু যেদিন তাদের খেলাঘরের দোকান থেকে মাকাল ফল চুরি করে পালায় সেদিন তার দিদি সমস্ত বনবাদাড় ঘুরে সন্ধ্যায়
একরাশ মাকাল ফল এনে দিয়েছিল। তার ডাগর চোখের স্নিগ্ধ মমতামাখা হাসি দেখে অপু সেদিন বুঝেছিল দিদি তাকে বড়োই
ভালোবাসে। তাই অপু দিদির সাথে আড়ি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় বিশদে লেখো :

৩.১ বাবার সঙ্গে অপুর কুঠির মাঠ দেখতে যাবার অভিজ্ঞতাটি লেখো। ‘কুঠিবাড়ি’ বলতে তুমি কী বোঝো?
উঃ। বাবার সঙ্গে অপুর কুঠির মাঠ দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল তার কাছে বড়োই আনন্দের। অপু বিস্ময়ের সঙ্গে সেখানে রহস্য খুঁজে পেয়েছে। সেখানে সে বড়ো বড়ো কানের খরগোশকে লাফিয়ে চলে যেতে দেখেছে।
বর্ণপরিচয় বইতে এতদিন দেখা খরগোশ যে বইয়ের পাতা থেকে তার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবে এ দেখেই তার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মাঠে যাওয়ার পথে বিচিত্র প্রকৃতির নানা দৃশ্য অপু দেখেছে। পথের দুপাশে সে দেখেছে নাম না জানা নানা ধরনের গাছ। সেগুলি আবার কলমিলতায় ঢেকে আছে। হাজারো ফুল ফুটে আছে পথের
পাশে। বেলাশেষের ইন্দ্রজাল মাঠ, বন, নদীকে করে তুলেছে মায়াময়। ফেরার পথে অপু আলকুশি ধরতে গিয়েছিল। বাবা বারণ করে বলেন ওটা বিষফল, হাত দিলে চুলকোয়। বাবলা গাছে অপু দেখে নীলকণ্ঠ পাখি সে স্মৃতিও তার কাছে খুব মধুর। নদীর ধারে জিয়ল গাছের আড়ালে অপু দেখে ইটের পাঁজার মতো দালান বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, জানতে পারে ওটাই কুঠিবাড়ি। কুঠিবাড়ি বলতে সাধারণত কোঠা বা পাকা বাড়ি অথবা বড়ো দালানওয়ালা বাড়িকে বোঝানো হয়। এখানে কুঠি বাড়ি হল তৎকালীন নীলকর সাহেবদের ব্যবহৃত বাসস্থান ও অফিস। ভাঙা কুঠিবাড়িগুলিকে দেখে অপুর মনে হয়
ওগুলি যেন প্রাচীন যুগের অতিকায় এক হিংস্র জন্তুর কঙ্কাল।


৩.২ ছবি দেখে চেনা কোনো কিছু হঠাৎ চোখের সামনে চলে এলে কেমন লাগে? অপুর খরগোশ দেখার মতো তোমার হঠাৎ অবাক হবার মতো কোনো ঘটনা লেখো।
উঃ। ছবি দেখে চেনা আর বাস্তব অভিজ্ঞতায় জানাচেনার মধ্যে অনেক তফাত আছে। ছবি দেখে চেনা কিছু হঠাৎ চোখের সামনে চলে এলে অবাক লাগে। তার সবকিছুই দেখার জন্যই আমাদের মন কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
একবার আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। হাতিকে বইয়ের পাতায় ছবিতে দেখেছিলাম। হঠাৎই একদিন বাড়ির সামনে দিয়ে
একটি মাহুত হাতি নিয়ে যাচ্ছিল। হইচই শুনে হতে আমি বাইরে এসে দেখি যে একটি বিশালাকার জীব। আমি তখন হাতি দেখে
অবাক হয়ে যাই। তবে খুশিও হই। তখন আমি হাতির চালককে দাঁড়াতে বলে ঘর থেকে দুটি কলা নিয়ে গিয়ে নিজে হাতে হাতির
শুঁড়ের মধ্যে দিতে সে সেটিকে নিয়ে শুঁড়ে গুটিয়ে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে খেয়ে নেয়। তখন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।


৩.৩ কালবৈশাখী ঝড়ে দুর্গা-অপুর আম কুড়ানোর ঘটনাটি লেখো। ঝড়বৃষ্টিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে তা উপভোগ করার কোনো অভিজ্ঞতা তোমার থাকলে তা লেখো।
উঃ। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় দুর্গাও অপু মহাউল্লাসে ছোটাছুটি করে অর্জন কুড়োতে থাকে। কালবৈশাখী ঝড় উঠলে দুর্গা অপুকে সিঁদুরকৌটো আমগাছের তলায় যেতে বলে এবং দুর্গা নিজে সোনামুখীতলায় দৌড় দিয়ে দাঁড়ায় ঝড়ের হাওয়ায় গাছগুলি জোরে জোরে দুলতে থাকে। বাতাসের শব্দে কান পাতা যায় না। সোনামুখী তলায় পৌঁছে সে ছোটাছুটি শুরু করে আনন্দের সাথে আম কুড়াতে থাকে। তবে আনন্দে অপু চিৎকার করছিল। কারণ আম পড়ার উল্লাস তার মধ্যেই বেশি ছিল। সেই পরিমাণে আম সে কুড়াতে পারল না। দুর্গা কয়েকটি আম কুড়ালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখুজ্জে বাড়ির
ছেলেমেয়েরা সেখানে আসে এবং তাদের মধ্যে সতু তাদের আম কুড়োতে নিষেধ করে। তখন তারা গড়ের পুকুরের পাড়ের আমবাগানে যায়। সেখানে অনেক দিনের পুরানো আম কাঁঠালের গাছ। নীচে বনচালতা, কাঁটাগাছ ও ষাঁড়াগাছের জঙ্গল। অনেক চেষ্টায় তারা আট দশটা আম পেয়েছিল। এই সময় প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ার সাথে মুষলধারায় বৃষ্টি নামে।
বাজের শব্দে ভয় পাওয়া অপুকে আঁচলের আড়ালে থেকে দুর্গা বলে—‘নেবুর পাতা করমচা, হেই বিষ্টি ধরে যা।'
তোমার অভিজ্ঞতাটি নিজে লেখো।

৩.৪ যেদিন অপু প্রথম পাঠশালা গেল সেদিনের কথা লেখো। তোমার প্রথম স্কুলে যাবার দিনটি মনে পড়ে? সেদিনের কথা তোমার যা মনে আছে লেখো।
উঃ। অপুকে যেদিন প্রথম পাঠশালায় যাবার কথা তার মা বললেন সেদিন অপুর খুব অভিমান হয়েছিল। তার ধারণা ছিল
যারা দুষ্টু, ভাইবোনেদের সঙ্গে ঝগড়া করে তাদের স্কুলে যেতে হয়। সে তাই পাঠশালায় যাবার জন্য কোনো উৎসাহ দেখান। কিন্তু বাবা যাওয়ার তাড়া দেওয়ায় অপুকে গ্রামের প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালায় যেতেই হল। প্রথম যখন সে পাঠশালায় গেল সেদিন সে অনেকক্ষণ মুখ নীচু করে বসে রইল। পরে ভয়ে ভয়ে মুখ তুলে চেয়ে দেখল গুরুমশাই দোকানের মাচায় বসে দাঁড়িতে সৈন্ধব লবণ ওজন করে কাকে দিচ্ছে। কয়েকটি ছেলে আপন মনে চাটাই পেতে বসে নানা সুর করে
দুলছিল পড়ছে। আর একটা ছোটো ছেলে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে আপন মনে পাততাড়ির তালপাতা মুখে পুরে চিবাচ্ছে। একটি
ছেলে মাচার নীচে তাকিয়ে কী যেন লক্ষ করছে। তার সামনে দুজন ছেলে শ্লেট নিয়ে কাটাকুটি খেলা করছে। অপু তা দেখে
নিজের শ্লেটে বড়ো বড়ো করে বানান শিখতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর গুরুমশাই বললেন ‘ফনে কী হচ্ছে’? গুরুমশাই শ্লেট দেখে বকা দিলেন। এরপরে অপু হেসে উঠল। গুরুমশাই হাসার জন্য আবার বকা দিয়ে উঠলেন এবং একটি ইট আনতে বললেন। তা শুনে অপুর খুব ভয় হলো। সে ভাবল ইটখানা শাস্তি দেবে বলে আনতে বলা হয়েছে। পরে বুঝল সেই
ইটটি তার জন্য নয়। অপু ছোটো ছিল বলেই সেদিন হয়তো গুরুমশায়ের শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল। হ্যাঁ, আমার প্রথম স্কুলে যাবার দিনটি মনে পড়ে। আমি স্কুলে বাবার সাথে গেলাম। শিক্ষক মহাশয় আমাকে একটি
শ্রেণিকক্ষে নিয়ে গেলেন যেখানে আমার মতো আরও অনেক ছেলেমেয়ে ছিল। তারপরে শ্লেটে শিক্ষক মহাশয় আমাকে অ, আ
লিখতে বলেছিলেন এবং নামতা মুখস্থ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি শ্লেটে অ, আ লিখেছিলাম এবং নামতা মুখস্থ বলেছিলাম।
৩.৫ অচেনা আনন্দকে পাইতে হইলে পৃথিবী ঘুরিয়া বেড়াইতে হইবে, তাহার মানে নাই।’—‘পথের পাঁচালী'তে দূর্গা আর অপু নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে থেকেই কীভাবে বারে বারে অচেনার আনন্দ অনুভব করেছে লেখো।
উঃ। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের মায়াময় প্রকৃতিতে দুটি কিশোর-কিশোরীর বড়ো হয়ে ওঠার একটি চিত্র লেখক এঁকেছেন। অপু যখন ছোটো ছিল তখন থেকেই সে এই নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের পরিবেশকে আপন মনের জগতে রেখে
দিয়েছিল। দুর্গাও তেমন এই গ্রামের বন জঙ্গল, বাগান ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ পরিচিত ছিল। নদীতে স্নান করা বা পানফল
চুরি করা, বন থেকে নানা ফুল, ফল চুরি করে আনন্দ উপভোগ করত। ঝড়ের মধ্যে থেকে আম কুড়ানোর আনন্দ সে উপভোগ করেছে আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে পুড়ে,
দৌড় দিয়ে বাড়ি থেকে বহু দূরে পাড়ি দিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করেছে। প্রকৃতির মধ্যেই সে অচেনার আনন্দকে খুঁজে পেয়েছে।
বিভূতিভূষণ তেমনি অপুর মধ্যে ছিল অনেক অজানা প্রশ্ন আর অনন্তকে জানার অসীম কৌতুহল। রাখালেরা যখন গোরু চরাতো তাদের জল খাওয়াতে নিয়ে যেত, যখন নৌকা বা ডিঙি করে মাছ ধরত জেলে, মাঠে মাঠে ফুল ফুটে গন্ধ ভেসে আসা,সবুজ জমির উপর নীল আকাশের ঝুঁকে পড়ার সৌন্দর্য। তারপর
বাবার সাথে যেদিন রেললাইন দেখতে গেল, সেদিন অপু যেন অন্য এক আনন্দ উপভোগ করেছিল। যে জায়গায় সে কখনো যায়নি, সেখানে সে প্রথম যেদিন পা রাখল, যে নদীর জলে নতুন স্নান করল, যে গ্রামের হাওয়ায় শরীর জুড়ালো তার আগে সেখানে কেউ এসেছে কিনা তা নিয়ে অপুর কোনো
ভাবনা নেই। তবে সেদিন যেন অপু এক নতুন দেশ আবিষ্কার করল। সেদিন সে সর্বপ্রথম মন, বুদ্ধি, হৃদয় দিয়ে তার
নবীনতাকে আস্বাদ করেছিল। তাই অচেনাকে চেনার জন্য তার আনন্দ পাবার জন্য পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই।
‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে তারা দুই ভাই বোন এইভাবেই প্রকৃতিকে উপভোগ করেছে।


৩.৬ হরিহরের সঙ্গে মহাজনবাড়িতে গিয়ে অপু কীভাবে প্রথম নিজেদের দারিদ্র্য সম্পর্কে সচেতন হলো,লেখো
উঃ। বাবার সঙ্গে শিষ্যের বাড়ি গিয়ে অপু প্রথম নিজেদের দারিদ্র্য সম্পর্কে সচেতন হয়েছিল। ছোটো থেকে অপুর নিজেদের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। কারণ আর কোনো উন্নত জীবনযাপন প্রণালী সে কখনো দেখেনি বাবার সাথে অপু যখন মহাজনের বাড়িতে গেল, তারপর সেখানে বধূ যখন অপুকে নিজেদের ঘরে নিয়ে গেল সেখানে সাজানো নানা জিনিস দেখে অপু অবাক হল। সে বুঝল এদের জীবনযাপন প্রণালী তাদের থেকে অনেক ভালো।এমনসব বিচিত্র জিনিস যা অপু আগে কখনো দেখেনি। বধূ তারপরে অপুকে এক বাটি ভরতি করে অনেকখানি মোহনভোগ খেতে দিলেন। অপু মোহনভোগ খেয়ে অবাক হয়ে যায়। কারণ এর আগে কোনদিন সে এইরকম মোহনভোগ মোহনভোগ আবার কিশমিশ দেওয়া ছিল এবং এত ঘি যে আঙুল দিয়ে ঘি মাখামাখি হয়ে যায়। সে যখন
তার মায়ের কাছে মোহনভোগ খেতে চায় তখন তাকে তার মা সুজিকে জলে সিদ্ধ করে একটু গুড় মিশিয়ে খেতে দেয়।
সে সেদিন ভাবল যে মা হয়তো এমন মোহনভোগ বানাতে জানেন না। তার মায়ের হাতের মোহনভোগ এবং এই
মোহনভোগে আকাশপাতাল তফাত। তখন তার মা ও দিদির জন্য করুণা ও সহানুভূতি জেগে ওঠে। সে সেদিন বুঝল তার মা গরীব।






গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর দেয়া হলো যেগুলি পরীক্ষার আসার সম্ভাবনা