বাণী নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মুল‍্যবান কথা • - Online story

Monday 6 February 2023

বাণী নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মুল‍্যবান কথা •

 

নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মুল‍্যবান কথা •


"★অকালপক্কতা : কী গাছ কী মানুষ—কারও পক্ষেই খুব বেশি অকালে পেকে যাওয়া
ভাল নয় এবং এর জন্য পরিণামে ফল ভোগ করতে হয়। ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠার
প্রাকৃতিক নিয়মটা অলঙ্ঘনীয়।


অধ্যায়ন : অধ্যায়ন কোনো দিন তপস্যা হইতে পারে না। অধ্যায়নের অর্থ কতকগুলি
গ্রন্থ পাঠ ও কতকগুলি পরীক্ষা পাশ। ইহার দ্বারা স্বর্ণপদক লাভ করিতে পারে-
হয়তো বড় চাকুরী পাইতে পারে—কিন্তু মনুষ্যত্ব অর্জন করিতে পারে না। পুস্তক পাঠ
করিয়া আমরা উচ্চভাব বা আদর্শ শিক্ষা করিতে পারি—একথা সত্য, কিন্তু সে সব ভাব
যে পর্যন্ত আমরা উপলব্ধি ও হৃদয়ঙ্গম করিয়া কার্যে পরিণত না করিতেছি, সে পর্যন্ত
আমাদের চরিত্র গঠন হইতে পারে না।


★তপস্যার উদ্দেশ্য সত্যকে উপলব্ধি করা-
শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন প্রভৃতি উপায়ে তদ্ভাব ভাবিত হইয়া সত্যের সহিত মিশিয়া
যাওয়া।


★অভিযান : লাভক্ষতির বিচার না করিয়া adventure প্রিয় হইতে হইবে।— কঠিন
Physical Strain সহ্য করিতে করিতে বীরপুরুষের সৃষ্টি হইলে নতুন জাতির সৃষ্টি
হইবে।

★অসবর্ণ বিবাহ : ভারতের ইতিহাস পড়িয়া দেখ—বহুবার রক্ত সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে।
এই রক্ত সংমিশ্রণের ফলে ভারতীয় জাতি বারবার মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াও পুনর্জীবন
লাভ করিয়াছে। আমাদের দেশে অসবর্ণ বিবাহ বহুকাল নিষিদ্ধ ছিল বলিয়া আমার মনে হয় যে, অসবর্ণ বিবাহ প্রবর্তনের দ্বারা যথেষ্ট রক্ত সংমিশ্রণ ঘটিবে এবং এই রক্ত
সংমিশ্রণের ফলে জীবনীশক্তি আমরা ফিরিয়া পাইব।


★অস্পৃশ্যতা ঃ আমি বুঝতে পারি না—যে দেশের লোক বিশ্বাস করে ঈশ্বর সর্বভূতে
আছেন, সে দেশের লোক অস্পৃশ্যতার মতো একটা প্রথা কেমন করিয়া সহ্য করে।



★সংগ্রাম : যদি উৎকৃষ্ট বাহিনী থাকে তবে সশস্ত্র সংগ্রাম করিয়া যে কোনো সময়
ও যে কোনো মুহূর্তে জয়লাভ করা যায়। কিন্তু অহিংস ও নিরস্ত্র সংগ্রামের ক্ষেত্রে ইহা
বলা যায় না। অহিংস সংগ্রামের প্রধান অস্ত্র হইল সাহস ও উৎসাহ। সুতরাং মনস্তাত্ত্বিক
মুহূর্তে আরম্ভ করা হইলে অহিংস সংগ্রামের সাফল্যের সম্ভাবনা খুব কম।



★আত্মৰিকাশ : জগতে মহৎ প্রচেষ্টা যাহা কিছু আছে, তাহা মনুষ্যহৃদয়ের আত্মবিশ্বাস
ও সৃষ্টিশক্তির প্রতিচ্ছায়া মাত্র।



★আত্মবিশ্বাস ঃ আমাদের অসীম শক্তি আছে—–নাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা।
আত্মবিশ্বাস ছাড়া আর কোনো বিশ্বাসই টেকে না শেষপর্যন্ত। নিজের শক্তিতে আস্থাবান হও, ভয় পেয়ো না, ভয়টা মিথ্যা, একমাত্র সত্য অভয়।জগতে সব কিছুই ক্ষণভঙ্গুর—শুধু একটা বস্তু ভাঙে না বা নষ্ট হয় না—সে বস্তু—
ভাব বা আদর্শ।
আমার বিশ্বাস যৌন প্রবৃত্তিকে পরিহার করে চলা, এমনকি সক্রিয় কাম প্রবৃত্তিকে
দমন করাও অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য। কিন্তু ভারতীয় যোগী ও ঋষিগণ উপলব্ধি করেছিলেন,যে কারো অধ্যাত্মিক উন্নতির পক্ষে তাই যথেষ্ট নয়। যে মানসিকতা প্রবৃত্তি (Instinct)ও আবেগের ক্রীড়াভূমি এবং যা থেকে কাম প্রবৃত্তির উদ্ভব, তাকে রূপান্তরিত করা দরকার।


আন্তর্জাতিক বোধ ঃ আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী ও তাহাদের বিকাশ সম্বন্ধে আমাদের
যথোচিত উপলব্ধি থাকা আবশ্যক। আমরা এমন একটা যুগে বাস করিতেছি, যখন
এক অর্থে সীমাস্তগুলি অবলুপ্ত হইয়াছে, পৃথিবী আজ একটি একক। একটি প্রান্তে যাহা ঘটে আমাদের সংযোগ থাকিলেও, ঐতিহাসিক বিকাশ সম্বন্ধে আমাদের যথোচিত উপলব্ধি থাকিলেও, যদি আমাদের আন্তর্জাতিক বোধ না থাকে, তবে আমরা ভ্রান্ত
প্রতিপন্ন হইতে পারি।



★আপোস : আপোসের মনোবৃত্তি হীনবস্তু—এতে মানুষের অধঃপতন এবং আদর্শের
হানি হয়।




★জননী : জননীকে ভালবাসার অর্থ শুধু নিজের প্রকৃতিকে ভালবাসা নয়, সমগ্র
মাতৃজাতিকে ভালবাসা


★জাতি : একটি জাতি বেঁচে থাকতে পারে, যতক্ষণ যে ব্যক্তিদের নিয়ে সেই জাতি
পঠিত তারা খনই প্রয়োজন দেখা দেবে জাতির স্বার্থে মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত থাকবে।
জাতিও সেরুণ সত্য। ব্যক্তি ছাড়া জাতি হয় না----জাতি ছাড়া ব্যক্তিও হয় না। জাতির



★বীর ঃ অত্যাচার ও দুঃখের মধ্য দিয়াই বীরের উদ্ভব হয়। তাই অত্যাচারকে আহ্বান
করিয়া আনিতে হইবে এবং তাহার সম্পূর্ণ সুযোগ লইতে হইবে।



★বৈদেশিক ঃ বৈদেশিক নীতি বাস্তব বুদ্ধিতে চালিত হয়, সেই নীতি নির্ধারণে জাতির
নিজস্ব স্বার্থের দিকটাই প্রবল।
স্বাধীনতাই জীবন, স্বাধীনতার সন্ধানে জীবনদানে অবিনশ্বর গৌরব।



★ধর্ম : খ্রিস্টধর্ম ও বৈষ্ণবধর্ম উভয়েই ভক্তি প্রধান। এই নিমিত্ত উভয় ধর্ম
সমপ্রকৃতির। হিন্দু-বৌদ্ধ বিবাদ ও সংগ্রামের ফলে ভারতীয় জাতি দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল।
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বর্ণ চৈতন্যের (Cast Consciousness) উদয়
হইল। এই বর্ণ চৈতন্যের প্লাবনে জাতীয় ভাব বা সমাজ চৈতন্য (Social
Consciousness) ডুবিয়া গেল। ডোম-বাগদি প্রভৃতি যেসব বলশালী বীরত্বসম্পন্ন
বর্ণের দ্বারা বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল তাহারা নীচবর্ণ হইয়া যাওয়াতে
সমাজ ও দেশরক্ষাতে তাহাদের সেরূপ আগ্রহ রহিল না। এ কারণে বোধহয় মুসলমান
বিজয় এত সহজ হইয়াছিল।
ইতিহাস কোনো ব্যক্তির ভূমিকা নির্ভর করে অংশত তার দৈহিক ও মানসিক
প্রস্তুতির ওপর এবং অংশত পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও জন্মের সমকালীন প্রয়োজনের
ওপর।

দুই রকম ব্রহ্মচর্য আছে—প্রথম অবস্থায় ব্রহ্মচর্য মানে শরীরকে শুদ্ধ রাখা। এর
পরের অবস্থায় ব্রহ্মচর্য মানে নারীর প্রতি কোনো কামনা পোষণ না করা। প্রথম রকমের
ব্রহ্মচারী হওয়া খুব কঠিন নয়, কিন্তু দ্বিতীয় রকমের ব্রহ্মচারী হতে হলে বহুকাল চেষ্টা
ও অভ্যাস দরকার।
ব্রাহ্মণ্য সভ্যতা ঃ বৌদ্ধযুগের পূর্বে ভারতের সভ্যতা বস্তুত ব্রাহ্মণ্য সভ্যতা, বৌদ্ধরা
ব্রাহ্মণ্য প্রভাবের গভীরতা ও বিস্তৃতি উপলব্ধি করিতে পারে নাই। যেসব দেশে বৌদ্ধধর্ম
স্থায়ী হইয়াছে—সেখানে ব্রাহ্মণদের মত প্রভূত প্রভাব বুদ্ধিশালী কোনো জাতি ছিল না।

ভয় জয় করার উপায় শক্তি সাধনা। দুর্গা, কালী প্রভৃতি মূর্তি শক্তির রূপবিশেষ।
শক্তির যে কোনো রূপ মনে মনে কল্পনা করিয়া তাঁহার নিকট শক্তি প্রার্থনা করিলে এবং
জীহার সঙ্গে মনের দুর্বলতা ও মলিনতা যদি মনে মনে করিলে মানুষ শক্তি লাভ
অতএব ভারতের মঙ্গাই আমাদের মঙ্গল।
 ে
কে উন্নতি যদি কোনোদিন হয় সেটা আসলে এই Power of the People.
এর ভিতর দিয়া।
ভারতের জাতীয়তাবোধ সংকীর্ণও নয়, স্বার্থপরও নয়, জঙ্গীও নয়। কারণ আমাসের
জাতীয়তাবোশ্বের আদর্শ মানবজাতির পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শবাদ—সত্যম্-শিশুস্ সুন্দর
হো কিন্তু সত্য, মঙ্গলময় ও সুন্দর হইতে উৎসারিত।
কোন "om"-বা মতবাদের দ্বারা মানবজাতির উদ্ধার হইতে পারে না, যদি
সর্বাহে আমরা মানুষোচিত চরিত্রবল লাভ না করিতে পারি।
বহুদিন আমাদের মহাপুরুষদের আমরা উপযুক্তভাবে সম্মান করিতে না শিখি
ততদিন এ বাঙালির --এ ভারতের উদ্ধার নাই।
মায়ের আরাধনা করিতে শিখো, মাতৃজাতিকে ভক্তি কর, শ্রদ্ধা কর, নিজের দেশের
মাতৃজাতির সম্মান অক্ষুপ্ত রাখিবার জন্য কৃতসম্বর হও।
মানুষ কেবল অয়েই বেঁচে থাকে না, তার নৈতিক ও আর্থিক সৃষ্টির প্রয়োজন
ভুলো না, মানুষের সবচেয়ে বড়ো অভিশাপ গোলাম হয়ে বেঁচে থাকা। ভুলো না,
জন্যতম অপরাধ অন্যায় ও অবিচারের সঙ্গে আপস করা। মনে রেখো শাশ্বত সেই
বিধান, জীবন যদি পেতে চাও, জীবন তা হলে দিতে হবে। মনে রেখো, সেই
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, তার জন্যে যত মূল্য দিতে হোখ