বাণী ঋষি শ্রীঅরবিন্দের অমৃতকথা • - Online story

Monday 6 February 2023

বাণী ঋষি শ্রীঅরবিন্দের অমৃতকথা •

 •



ঋষি শ্রীঅরবিন্দের অমৃতকথা •


★ভগবত্তা মানবতার চেয়ে অনন্ত গুণে বৃহৎ হলেও মানবত্বের মধ্যে তাকে চিনতে
সেবা করতে হবে।....ভগবৎ স্বরূপকে নিজের জীবনে ফুটিয়ে তোলাই মনুষ্যত্বের উদ্দেশ্য।


★ভগবান অদ্বিতীয়, কিন্তু তাঁর প্রকাশ শুধু একত্বের মধ্যে বন্দী নয়। সৎস্বরূপ সেই
অসীম একক-ই অসংখ্য হয়ে আছেন। প্রকাশে আমরা শুধু তার অংশ মাত্রই নয়,
আমরা স্বরূপতঃ তিনিই।


★কেউ যদি আদর্শ রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, সাময়িক পতনে তার কিছু আসে যায় না,
সে আবার উঠে দাঁড়ায়, এগিয়ে চলে।


★ইচ্ছাশক্তি, চরিত্রবল, সংযম, সক্রিয়তা — মানবতার উন্নতির জন্য অপরিহার্য,
মেরুদন্ডস্বরূপ।......ভয় সর্বদা পরিত্যজ, কারণ ভয় ভয়ের বস্তুকেই ডেকে আনে।...


★অধ্যাত্মিকতার মূল ভিত্তি হল “সত্য” আর সৎ সাহস হল তার আত্মপ্রত্যয়।


আত্মশক্তির বিচিত্র রূপায়ণের নিঃশর্ত উল্লাসে, আত্মস্বরূপ নিজেরই মাঝে নিজেকে
ফুটিয়ে তুলছেন অবিরাম লীলাছন্দে। এই অদ্বিতীয় লীলায়, তিনিই নট, তিনিই নাটক,
তিনিই নটরঙ্গ।



★সাধুত্বের জন্য যেমন পবিত্রতার প্রয়োজন, তেমনই সুবিচার ও ন্যায়নিষ্ঠার সার্থকতার
জন্য প্রয়োজন নির্ভীক যোদ্ধার তরবারি।


★সমস্ত অভিব্যক্তি তাঁরই চৈতন্যশক্তির লীলা, সুতরাং স্বরূপতঃ সবই সত্য।....অখন্ড
দৃষ্টিতে সবই তাঁর সঙ্গে অভিন্ন হলেও লীলাদৃষ্টিতে এক অথচ পৃথক
আবার আর এক দৃষ্টিতে যেন চিরকাল পৃথক, কারণ নিত্যলীলায় সবই নিত্য বিদ্যমান,
ব্যক্ত ও অব্যক্তভাবে।


★প্রতি জীবধারে ব্রহ্মের চিৎশক্তি গুহায়িত আছে “চিৎ-কর্ণ” রূপে। এটি অন্তরাত্মা
প্রতি জীবের চেতনারূপে পৃথক পৃথক ভাবে বর্তমান। “চৈত্যসত্তা” নামেও পরিচায়িত
এটিই জন্মান্তরের মাধ্যমে ক্রমবিকশিত হয়ে চলেছে পূর্ণ অভিব্যক্তির লক্ষ্যে।

★প্রতি জীবের নিজস্ব যে বোধবৃত্তি “সূক্ষ্মদেহে”র কেন্দ্রে “কারণ দেহে” বাহিত হয়
তাকে “চৈত্যসত্তা” বলা যায়। এই সত্তাই বিবর্তনের ক্রমবিকাশ এগোয়, যা জীবের
“স্থূলদেহে” জন্মের (সৃষ্টির) সময় প্রবেশ করে, মৃত্যুর সময় দেহ ছেড়ে যায়। এটিতেই
শুদ্ধ পরমাত্মবোধ ব্যষ্টি—আত্মা বা জীবাত্মারূপে প্রতিফলিত হয়।...এই সত্তা (বা
চৈত্যপুরুষ) জীবের অতীত সকল অভিজ্ঞতার নির্যাসটুকু সঞ্চিত করে সংস্কাররূপে
রাখে, স্মৃতিতে রাখে ততটুকুই, নতুন জন্মে প্রাপ্ত দেহে ও পরিবেশে চেতনার
ক্রমোন্নতির জন্য ঠিক যতটুকু দরকার।


★দিব্যমানবগণ আত্মবোধে সকলেই বিশ্বাত্মক একই চেতনার হলেও আধারের প্রকাশ তারতম্যে সক্রিয়তায় তাঁরা অবশ্যই হবেন ভিন্ন। বিবর্তনের ক্রমবিকাশের পরিণতিতেগড়ে উঠবে দিব্যমানবের প্রজাতি ও সমাজ; বিশ্বচেতনার রূপান্তরে তাঁরাই হয়ে
উঠবেন সার্থক অধিনায়ক।


★তোমার অন্তর্নিহিত শক্তিকে অনুভব করো; যা কিছু করো তাতে যেন তোমার ক্ষুদ্র
“অহং”-এর প্রকাশ না হয়। তা যেন হয় আন্তরিক সত্যের অভিব্যক্তি। তোমার
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যাতে দিব্যসত্তার আলোকে উদ্ভাসিত হয়, তোমার মননের
উৎস হয় সেই প্রেরণার নির্ঝর, তোমার সকল গুণ ও ক্ষমতা যাতে তোমার অন্তরের
সেই মহাশক্তির সেবায় নিয়োজিত হয়, তার জন্য প্রয়াসী হও।....তখন আর তোমার
কোনো পথ-প্রদর্শকের প্রয়োজন হবে না, নিজের মধ্যেই খুঁজে পাবে তাঁকে।



★অসীম পরমকে নিজের সীমিত আধারের ভেতরে প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে মানুষের
পূর্ণতার বিন্যাস। সেই পূর্ণতা অন্তরে যতখানি ফুটিয়ে তোলা যায়, মানুষের বাহ্য
আধারেও তদনুপাতেই সেই পূর্ণতা প্রকটিত হতে পারে।...পূর্ণযোগের লক্ষ্যই হল
ভগবতী শক্তিকে জীবাধারের প্রকাশে প্রত্যক্ষ নিয়ে আসা।


★অন্যকে সহায়তা করার আগে নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করো। অপরকে সবচেয়ে
বেশি সহায়তা করা যায় বুদ্ধি ও হৃদয় দিয়ে অবিচলিতভাবে মঙ্গলাকাঙ্খী থেকে।
সাধারণ চেতনার মানুষ বলতে, শিক্ষার সুযোগহীন, দলিত বা দরিদ্রকে বোঝায় না,
বোঝায় সেই মানুষদের, যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ চাহিদা, অধিকার ও সুখভোগের
সংরক্ষণের ক্ষুদ্র গণ্ডি নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
চৈতন্যসত্তা শাশ্বত ও স্বয়ংক্রিয় শক্তিসম্পন্ন। তাই তাঁর লীলাও সত্য। কারণ এই জগৎ
তাঁর অবিকৃত পরিণাম। কেননা স্বরূপতঃ চৈতন্যই এই জগতের সর্বকালীন মূলসত্তা।
একমাত্র আত্মচৈতন্য সত্য, তাই জগতে যা কিছু দৃষ্ট হচ্ছে সবই সেই আত্মাই স্বভাবগত
ইচ্ছাশক্তিতে রচিত নামরূপে প্রকাশিত, অর্থাৎ কোনো ভ্রান্তিমূলক বিকারে নয়।


★ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ভাবসহ সকল কর্মই, কবিতা, শিল্প, সঙ্গীত, থেকে মিস্ত্রি
বা রুটি নির্মাতা তথা ঘর পরিস্কারের কর্ম অবধি সবই হওয়া উচিত ঠিক ঠিক ভাবে
বহির্মুখে অন্তর্মুখে দু'দিকেই সর্বাঙ্গীন নিষ্ঠা সহকারে। একমাত্র তখনই সেই কাজ
হয়ে ওঠে পূর্ণভাবে নিবেদনের যোগ্য।
ভগবৎ—ইচ্ছায় প্রকৃতিই আমাদের সব কর্ম করে চলেছে এবং সে সব কর্ম নির্ধারিত
রয়েছে আমাদের স্ব-ভাব অনুযায়ী। কর্ম সমর্পণের এই শ্রেষ্ঠ উপলব্ধিটির পরই
প্রত্যক্ষবোধে সব ভগবৎ-কর্ম হয়ে যায়, কারণ ভগবান স্বতন্ত্রশক্তি সম্পন্ন সম্পূর্ণ
স্বাধীন মুক্তসত্তা।


★আমাদের প্রকৃত সত্তা হল সত্যস্বরূপ আত্মা। মন, প্রাণ, দেহাদি তাদের অপূর্ণতা দিয়ে অহং-এর মুখোসটি গড়ছে, কিন্তু ওইগুলিই যোগ্য হয়ে উঠলে সবকটি মিলে ঐকতানে সত্যস্বরূপ আত্মবোধের প্রকাশাধার হয়ে ওঠে।

★আমাদের ঊর্দ্ধে, আমাদের মধ্যে, আমাদের সর্বদিকে রয়েছে সেই সর্বশক্তি সমন্বিত
আধার এবং তাঁরই ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে নিজেদের কর্মসাধনের জন্য,
উন্নতির জন্য, রূপান্তরের জন্য। আমরা যদি সর্বকর্মে আমাদের আধারগত— যোগ্যতাসহ
তাঁর পরিচালিকা মহাশক্তিকে বরণ করে পূর্ণ বিশ্বাসে চলতে পারি, তাহলে বিভিন্ন
সমস্যা, বিপদ ও ব্যর্থতার সম্মুখীন হলেও, সেই শক্তি আমাদের মধ্যে জাগবে
এবং..আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পূর্ণ শক্তিলাভ—পূর্বক উন্নত থেকে উন্নততর
আধারে পরিণত হবে।


★অদ্বিতীয়া আদ্যাপরা শক্তিরূপা জগন্মাতা সমস্ত সৃষ্টির উর্দ্ধে তাঁর নিত্য চৈতন্যবোধে
পরম দিব্যতাসহ বিরাজমানা।
ভগবানের অস্তিত্বের অনুকূলে বা বিরোধিতায় তর্কবিচারের প্রাবল্য দিয়ে সিদ্ধান্ত করা
যায় না, তার প্রাপ্তি হয় অহংবোধকে ছাড়িয়ে সম্পূর্ণ সমর্পিতভাবে, অস্পৃহার মধ্য
দিয়ে অনুভবে।

★অর্থের জন্য বিত্তশালীর কাছে মাথা নত করবে না; তাদের আড়ম্বর, প্রতিপত্তি ও
প্রভাবের বশীভূত কখনো হবে না।