অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস চার অধ্যায় অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর - Online story

Thursday 20 July 2023

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস চার অধ্যায় অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

 



অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস চার অধ্যায়
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
ভেবে দেখো

 

 

১. ঠিক শব্দটি বেছে শূন্যস্থান পূরণ করো ৪
(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন – (হেস্টিংস/কর্নওয়ালিস/ডালহৌসি)।
 উঃ। কর্নওয়ালিস।
পাঁচ অধ্যায় ইতিহাস অনুশীলনী প্রশ্নের উত্তর দেখুন।

(খ) মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল – (বাংলায়/উত্তর ভারতে/দক্ষিণ ভারতে)।
 উঃ। উত্তর ভারতে।
 

(গ) দাদন বলতে বোঝায় (অগ্রিম অর্থ/আবওয়াব/বেগার শ্রম)।
 উঃ। অগ্রিম অর্থ।



(ঘ) ঔপনিবেশিক ভারতে প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়েছিল – (রিষড়ায়/ কলকাতায়/বোম্বাইতে)। উঃ। রিষড়ায়।


(৩) দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে বলে – (সম্পদের বহির্গমন/ অবশিল্পায়ন/বর্গাদারি ব্যবস্থা)।
উঃ। সম্পদের বহির্গমন।


২. নীচের বিবৃতিগুলির কোনটি ঠিক কোন্‌টি ভুল বেছে নাও
(ক) ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা চালু হয়।
উঃ। ভুল।


(খ) নীল বিদ্রোহ হয়েছিল মাদ্রাজে।
উঃ। ভুল।
(গ) দাক্ষিণাত্যে তুলা চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ বিষয়টি জড়িত ছিল।
উঃ। ঠিক।


(ঘ) রেলপথ বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল।
উঃ। ভুল।


(৬) টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা কোম্পানি শাসনের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল।
উঃ। ঠিক।


৩. অতিসংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪০টি শব্দে) ঃ
(ক) 'সূর্যাস্ত আইন' কাকে বলে?
উঃ। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের রাজস্ব দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন ধার্য করে দেওয়া হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের আগেই জমিদারকে কোম্পানিকে দেয় রাজস্ব মিটিয়ে দিতে হতো। নতুবা জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার কোম্পানির ছিল। একে 'সূর্যাস্ত আইন' বলে।


(খ) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বোঝ?
উঃ। ঔপনিবেশিক শাসনে ভারতীয় অর্থনীতির একটি বিশেষ দিক ছিল কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ। অর্থাৎ বাণিজ্যের কাজে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কৃষিজ ফসল চাষের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াকে কৃষির
বাণিজ্যিকীকরণ বলে। অতিরিক্ত রাজস্বের চাপে জর্জরিত কৃষক শ্রেণি মহাজনদের থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। আয় নিশ্চিত করতে মহাজনেরা কৃষকদের অর্থকরী ফসল যেমন নীল, পাট, তুলো ইত্যাদি চাষ করতে বাধ্য করে। এভাবেই কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ঘটে।



(গ) 'দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা' কেন হয়েছিল?


উ। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। দাক্ষিণাত্যে তুলোর চাষ  প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যুদ্ধ থেমে গেলে ১৮৭০ সাল নাগাদ তুলোর চাহিদা একদম কমে যায়। ফলে কৃষক সমাজ দারুণ দুর্দশার মুখে পড়ে—এর সুবিধা নেয় সাহুকার শ্রেণি। তারা চাষিদের ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে ফসলের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করত। এর বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের তুলো চাষিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। দাক্ষিণাত্যে এই সাহুকার বা মহাজনদের দখলে থাকা কাগজপত্র বিদ্রোহীরা পুড়িয়ে দেয়। আহমদনগর ও পুনা জেলায় এই বিদ্রোহ তীব্র আকার ধারণ করে। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা ওই বিদ্রোহকে 'দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা' বলা হয়।



(ঘ) সম্পদের বহির্গমন কাকে বলে?
উঃ। পলাশির যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানি অষ্টদশ শতকের মধ্যভাগে বাংলা ও ভারতের নানা প্রান্ত থেকে ভারতের সম্পদকে ব্রিটেন নানাভাবে স্থানান্তরিত করত। তার প্রতিদানে অবশ্য ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতি হতো না। এইভাবে দেশের সম্পদ বিদেশে চালান হওয়াকেই সম্পদের বহির্গমন বলে উল্লেখ করা হয়।



(ঙ) অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো?

উঃ। শিল্পায়নের বিপরীতধর্মী অবস্থাই হলো অবশিল্পায়ন। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের বাজারের একচেটিয়া অধিকার চলে যায়। সেই সময় ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্য ভারতে আমদানি করা হতে থাকে। তার ফলে নানারকম বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে ভারতের দেশীয় শিল্পগুলি ক্রমে ধ্বংস হতে থাকে। ভারতীয়
শিল্পের অবলুপ্তির ওই প্রক্রিয়াকে অবশিল্পায়ন বলে।





৪. নিজের ভাষায় লেখো : (১২০–১৬০টি শব্দে) :
(ক) বাংলায় কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল?
উঃ। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়। কর্নওয়ালিস আশা করেছিলেন এর মাধ্যমেই জমিদারদের স্বার্থ ও কৃষির উন্নতি দুই-ই নিশ্চিত হবে। তাঁর ধারণা ছিল জমিদারদের অধিকারকে স্বায়ী ও নিরাপদ করা হলে তারা কৃষির উন্নতির জন্য অর্থ বিনিয়োগ করবেন। এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের সমৃদ্ধি বাড়লেও কৃষকদের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তারা জমিদারদের অনুগ্রহ নির্ভর হয়ে পড়েছিল। প্রাক ঔপনিবেশিক আমলে জমির ওপর কৃষকের দখলি স্বত্ব ছিল। জমির উপর কৃষকদের স্বত্বকে খারিজ করে তাদের প্রজায় পরিণত করা হয়। উঁচু হারে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কৃষকদের করের বোঝা চাপত। তাছাড়া প্রায়ই নানা অছিলায় কৃষকদের থেকে বে-আইনি কর আদায় করা হতো।
পাশাপাশি নির্দিষ্ট খাজনা দিতে না পারলে কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার জমিদারদের দেওয়া হয়। ফলে নানা দিক থেকে চাপে পড়ে কৃষকের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বাস্তবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন নয় ভারতীয় সমাজে ও অর্থনীতিতে কোম্পানির কর্তৃত্ব দৃঢ় হয়েছিল।


(খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সঙ্গে রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তগুলির তুলনামূলক আলোচনা করো। তিনটির মধ্যে কোনটি তোমার কৃষকদের জন্য কম ক্ষতিকারক বলে তোমার মনে হয়? যুক্তি দিয়ে লেখো।
উঃ। ১৭৯৩ সালে কোম্পানি দশশালা ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা বলে ঘোষণা করে। এর ফলে জমিদারদের কাছ থেকে সরকার তাদের প্রাপ্যগুলি সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়। করের হার চড়া হয়েছিল। কর দিতে না পারলে জমিদারগণ চাষিকে যে কোনো সময় উচ্ছেদ করতে পারত। জমির উপর চাষিদের কোনো অধিকার ছিল না। অন্যদিকে, মহলওয়ারি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রেও রাজস্ব আদায়ের জন্য ঔপনিবেশিক সরকার মহলের জমিদার বা প্রধানের
সঙ্গে চুক্তি করেছিল। অবশ্য চুক্তির সঙ্গে গোটা গ্রাম সমাজকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কৃষকদের সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। উঁচু হারে রাজস্ব দিতে না পারলে তা মেটাতে গিয়ে কৃষকদের ধার করতে হতো। ধার শোধ করতে না পারলে অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হতো কৃষকদের। জমিগুলি মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেখানে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়। এই বন্দোবস্তের শর্ত ছিল ঠিক সময়ে রায়তকে ভূমি-রাজস্ব জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজস্বের পরিমাণ সংশোধন করা হতো। জমিতে কৃষকদের কোনও অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। কৃষকরা আসলে ঔপনিবেশিক শাসনের
ভাড়াটে চাষি হিসাবে জমিতে চাষের অধিকার পেয়েছিল। মোট উৎপাদনের ৪৫-৫৫ শতাংশ খাজনা হিসাবে নেওয়া হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও খাজনা কমত না।