বিভিন্ন আত্মকথা , ভ্রমণ এবং পরিবেশ বিষয় রচনা - Online story

Saturday, 29 July 2023

বিভিন্ন আত্মকথা , ভ্রমণ এবং পরিবেশ বিষয় রচনা







 ★রচনা

. দেশভ্রমণের উপকারীতা  / দেশভ্রমণের উপকারিতা



বৈচিত্র্যপূর্ণ এই বিশ্বে সুপ্রাচীন কাল থেকেই দেশভ্রমণের সূচনা। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনার দুর্নিবার আগ্রহে উৎসাহী আত্মপ্রতারী, বৈচিত্র্যসন্ধানী জ্ঞানপিপাসী মানুষের ভ্রমণ ছিল অব্যাহত। জ্ঞান লাভের আশায় উৎসুক ছাত্রেরা বিশ্বব্যাপী শান্তি আর মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন ধর্মপ্রচারকেরা। পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ প্রমুখ ভিন পাড়ি দিয়েছেন, রাজারা বেরিয়েছেন দিগ্বিজয়ে, বণিকেরা বাণিজ্যতরি চালিয়েছেন অকুল অজানা সমুদ্রপথে।

ভারতবর্ষে এসেছেন, দুঃসাহসিক অভিযানে সামিল হয়েছেন কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা, আমেরিগো ভেসপুচি, জনস্টন, মার্কোপোলো, হাডসন, স্কট, শ্যাকলটনের মতো অভিযাত্রীরা। ভূপর্যটক কুক-ম্যাংলিন, স্টানলি-লিভিংস্টোনের

কথাও সুবিদিত। এমনকি, নিছক আনন্দ আহরণের তাগিদেও ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে সাধারণ মানুষ পথে প্রবাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে মানুষ তার জয়ের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে, উড়িয়ে দিয়েছে তার বিজয় পতাকা। অসীম কৌতূহলে সে স্পর্শ করেছে সমুদ্রের সুগভীর তলদেশকে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নিজের আধিপত্যকে মানুষ কায়েম করছে। প্রতিকূল আর ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভ্রমণ আধুনিক যুগের নানান আবিষ্কারের সুবাদে এখন অনেক নিরাপদ, সুখকর, ও সুপরিকল্পিত হয়ে উঠেছে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ভ্রমণ স্থানগুলিতে বিলাসবহুল হোটেল, লজ, রিসর্ট, ভৌগোলিক দূরত্ব অতিক্রমকে সহজ ও অনায়াসসাধ্য করে দিয়েছে। এ ভাবেই কোনো দেশের পর্যটন শিল্প সেই দেশের

অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।।ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আমরা কোনো বিশেষ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, সেখানকার দর্শনীয় স্থান ও মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদানগুলি সম্পর্কে যেমন জানতে পারি, তেমনই সেখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রা, সভ্যতা সংস্কৃতি, ঐতিহা, উৎসব-অনুষ্ঠান, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, স্থাপত্য ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ভাষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এসবের সঙ্গে পরিচিত হই। আমাদের এই পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে মনের প্রসারতা বাড়ে, পরস্পরের মধ্যে শিক্ষা-সাংস্কৃতি ও ভাবের বিনিময় হয়, দেশবিদেশের মানুষের সান্নিধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বাতাবরণ রচিত হয়, জীবন সম্পর্কে এক

স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। বই পড়ার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দেশবিদেশের ভ্রমণবৃত্তান্ত পাঠের মধ্যে দিয়ে আমরা মানসভ্রমণের অপার আনন্দ লাভ করে থাকি।


■ শিক্ষামূলক ভ্রমণ :মানুষ নানান দেশে নানানভাবে বাস করে। কিন্তু তার মন একস্থানে খুশি হতে পারে না। তাই সে ছুটে চলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এই দেশভ্রমণই মানুষকে দেয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। ঘরের কোণে মানুষ যদি আবদ্ধ থাকে তাহলে তার

জীবন সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। তাই নদী, পর্বত, অরণ্যে সুশোভিত দৃশ্য দেখা প্রয়োজন। প্রকৃতির সাজানো দৃশ্য তৈরী সভ্যতার চেয়ে অনেক সুন্দর, অনেক আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিকস্থানে ভ্রমণ করলে আমাদের বইতে পড়া ইতিহাসকে আমরা যেন চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করি। এ ইতিহাস মুখস্ত করা নয়, এ হল ইতিহাসকে জাগিয়ে তোলা। ভ্রমণ হল শিক্ষার একটা

অন্যতম অঙ্গ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই শিক্ষাখাতে একটা অর্থ বরাদ্দ করা হয় শিক্ষামুলক ভ্রমণের প্রয়োজন। তবে শিক্ষকমহাশয়রা নিজেরাই উৎসাহ নিয়ে ছাত্রদের শিক্ষামূলক ভ্রমণে নিয়ে যান। এই ভ্রমণ এক আনন্দের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষের সমাজ যে নানা রকম হয় তা আমরা কীভাবে জানব? শুধুই বই পড়ে কি? বইতো অসংখ্য

আছে, সব মনীষীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দ প্রায় সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে দেশ ও বিদেশকে উপলব্ধি করেছিলেন। বহু ভূপর্যটক ও আবিষ্কারক তাঁদের ভ্রমণ ও অভিযানের দ্বারা শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামা, মার্কোপোলো, রামনাথ বিশ্বাস, প্রবোধকুমার স্যানাল, শঙ্কু মহারাজ প্রমুখ। তাই এযুগের ভ্রমণ শুধু অবসর যাপন বা ছুটি কাটানো নয়। দেশকে চেনা, মানুষের সম্বন্ধে জানা এসবই বহুমুখী শিক্ষার অন্যতম ধারা।



 ,   


■    রচনা

. একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা ও ধারণা মিলে জীবন গড়ে ওঠে। জীবনের সব ঘটনা বা অভিজ্ঞতা আমাদের মনে রাখা সম্ভব হয় না। তবে কিছু অভিজ্ঞতা জীবনে একটা ছাপ রেখে যায়। আমার জীবনে এরকমই এক ঝড়ের রাত ভয় ও বিস্ময় নিয়ে মনে স্থায়ী হয়ে গেছে। সময়টা ছিল এক আশ্বিনের সন্ধ্যা। দেখলাম ধীরে ধীরে কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। তারপর রাতের খাওয়া ও কাজকর্ম সেরে সবাই শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মাঝরাতে মেঘের প্রবল গর্জনে ঘুম ভেঙে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি সে যেন এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। প্রবল হাওয়ার দাপটে গাছগুলো নুয়ে পড়ছে। ঝড়ের দাপটে একটা দুটো টিনের চাল উড়ে যেতে দেখছি, ভেঙে পড়ছে কয়েকটি গাছ। ক্রমশ দুর্যোগ বাড়তে লাগল, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি। ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দের সঙ্গে ভেসে আসছে শাঁখের শব্দ, লোকের ভয়ার্ত চিৎকার। রাস্তার ইলেকট্রিকের দু-একটা খুঁটি পড়ে গিয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ। রাস্তার কুকুরগুলো ভয়ে চিৎকার করে উঠছে। ঘরের মধ্যে ছোটো ভাইটা ভয়ে কেঁদে কেঁদে উঠছে। আমিও যথেষ্ট ভয় পেয়েছি আর সবাইও ভয়ে জড়সড়। মনে হচ্ছে বাড়িটাও বোধহয় ভেঙে পড়বে। একঘণ্টা ধরে এই প্রলয় নাচন চলল আর আমার মনে হল যেন অনন্তকাল ধরে চলছে সেই তান্ডব। প্রকৃতির কাছে আমরা মানুষজন কত অসহায় সেই ভাবনাই আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। ধীরে ধীরে ঝড় থেমে এল। ঝড়ের পরবর্তী অবস্থা আরও বেদনাদায়ক। চারিদিকে ধ্বংসের চিত্র, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। ঝড়ের সেই তান্ডবলীলা আমি ভুলতে পারিনি।

প্রকৃতি যে কী ভয়াল রূপ ধারণ করতে পারে তা সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম। অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের কথা চিন্তা করে মনটা বেদনায় ভরে উঠল। বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির পরেও আমরা প্রকৃতির কাছে কীভাবে অসহায় হয়ে পড়ি।

আর এখন দেখলাম প্রকৃতি কত শাস্ত। কিন্তু তার সেইদিনের সেই ভয়াল রূপটি আমার মনে চিরস্থায়ী হয়ে রইল।



    রচনা

★. একটি শীতের দুপুরের অভিজ্ঞতা

শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের আমেজ এবং শীত এক ভিন্নরূপ ধারণ করে। এইরকমই এক শীতের দুপুরে বহরমপুরের গুপ্তিপাড়ায় এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেই দিনটির স্মৃতি আমার মনের মাঝে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে। বন্ধুর বাড়িটি ছিল শহর থেকে একটু ভিতরে। গাছপালা সমেত তাদের বাগানবাড়িটি বড়োই সুন্দর। সেদিন দুপুরটা কাটালাম বন্ধুর বাড়িতে। দুপুরবেলাটি ছিল বড়োই নির্জন প্রকৃতির। এক মাদকতার সঙ্গে রয়েছে শীতের জড়তা। কী একটা আবেশে আমার চোখ জুড়িয়ে আসছিল। গ্রামের দিকে দুপুরে কোনো মানুষের কাজকর্মের তাড়া নেই, তাই তারা অলস ও নিষ্কর্মা ভাবে শুয়ে রয়েছে। রাস্তায় দেখছি কুকুরগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে রোদে শুয়ে শীতের আরাম উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ বাদে কানে এল পাটালি গুড় ও মোয়া চাই বলে ফেরিওয়ালা হাঁক দিয়ে চলেছে। আমি আধা জাগ্রত অবস্থায় মনে করছি ছোটোবেলার কথা। এরকমই শীতের দিনে বাবা-মায়ের সঙ্গে মামারবাড়িতে বেড়াতে যেতাম। মামাদের বিরাট বাড়ি, সেখানে ভাইবোনদের সঙ্গে শীতের দুপুরে মাতামাতি করে বেড়াতাম। সেই সময় বাড়িতে বড়োরা যে যার ঘুমে বিশ্রাম নিতেন। এইসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ বন্ধু এসে ডাক দিতেই আমার তন্দ্রা গেল ছুটে। দেখলাম বন্ধুর বাড়িতে এক বিরাট খাটে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। দু'দিন সেখানে কাটিয়ে আবার শহরে ফিরে এলাম। পরে অনেকবারই সেই বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছি, অনেক দুপুরই কাটিয়েছি কিন্তু সেইদিনের শীতের নির্জন দুপুরটিতে প্রকৃতি যেভাবে আমার কাছে ধরা দিয়েছিল, সেই অনুভূতি আজও আমার মনে আঁকা আছে।




রচনা

"★অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ছোটোবেলা থেকেই জঙ্গল আমায় টানে। অরণ্য জীবনের গল্প শুনতে আমার ভারি ভালো লাগত। তাই যখন সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া হবে শুনলাম তখন অনেকদিনের ইচ্ছেপূরণ হবে ভেবে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে কাকদ্বীপ হয়ে আমরা পৌঁছোলাম গোসাবা। এটাই সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার। এখান থেকে জলপথে ছোটো বড়ো খাঁড়ি পেরিয়ে পৌঁছোতে হবে সুন্দরবনে। এই পথ একসময় ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা এখন নিরাপদ ও সুপরিকল্পিত। তাই ঠিক হল গাইডের সাহায্য নিয়ে এবং বনদপ্তরের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই অরণ্যে প্রবেশ করা হবে। সেই অনুযায়ী আমরা দলে ভাগ হয়ে দুটি লঞ্চে করে খাঁড়িপথে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চললাম। দুই ধারে জঙ্গল, মাটি কর্দমাক্ত, আকাশছোঁয়া বড়ো বড়ো গাছ চারধারে ঘিরে রয়েছে। মাটি থেকে বর্শার ফলার মতো বেরিয়ে রয়েছে ‘শূলো’ বা শ্বাসমূল। গাইড চিনিয়ে দিলেন চারপাশের গাছগুলো।এরমধ্যে সুন্দরী, গরান, গর্জন, হেতাল প্রভৃতি গাছ।হঠাৎ একটা চিৎকার শুনলাম।তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটে গেলাম। স্পিডবোট এর লোকজন খবর পাওয়া মাত্রই তাঁরা স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মানুষগুলিকে যখন পাড়ে আনা হল তখন তাদের মৃতপ্রায় অবস্থা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আমিও সাধ্যমতো তাদের সেবাশুশ্রুষায় হাত লাগালাম। বিপদগ্রস্ত মানুষগুলির কৃতজ্ঞতা ও আশীর্বাদে আমি যেন হারিয়ে যেতে লাগলাম। মানুষের প্রাণরক্ষায় সাহায্য করতে পেরেছি এর চেয়ে বড়ো কাজ আর কী করতাম? মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মতো বড়ো আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না। পাশাপাশি ভাবছিলাম ঈশ্বরের কৃপায় নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সেই মুহূর্তে আমি দেখতে পেয়েছিলাম। না হলে এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে যেত, তা ভেবেই আমার বুক কেঁপে উঠছিল। এই মানুষদের জন্য কিছু করতে পারার দিনটি আমার কাছে চিরকাল একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।



রচনা

★ বিদ্যালয় পত্রিকায় প্রথম তোমার লেখা মুদ্রিত হওয়ার অভিজ্ঞতা।


আমি একজন ছাত্র। জীবনে কবি বা গল্পলেখক হব এমন ইচ্ছে কোনোদিনই আমার সেভাবে ছিল না। কিন্তু সাহিত্য পড়তে ভালোবাসতাম, পড়ার বইয়ের পাশাপাশি আমি ছিলাম গল্পের বইয়ের পোকা। তাই শখ করে দু-একটা কবিতাও লেখা হয়ে গিয়েছিল। আমার এই লেখার বিষয়ে কেউই তেমন কিছু জানত না, শ্রেণির বন্ধুরা তো নয়ই। তবে তাদের।মধ্যে একজন, সহপাঠীর কাছে এই লেখার কথা লুকোতে পারিনি। সে হল প্রসুন, আমার সহপাঠী। একদিন ওই সংবাদ নিয়ে এসে আমাকে জানাল যে বেশ কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর আবার আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকা প্রকাশিত হতে চলেছে।

প্রধান শিক্ষক মহাশয় উৎসাহী ও আগ্রহী ছাত্রদের লেখা দিতে অনুরোধ করেছেন। প্রসূন আমাকে লেখা দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল। আমি কথাটি শুনে একেবারে উড়িয়ে দিলাম ব্যাপারটা, মনে ভাবলাম শিক্ষক মহাশয় ও উঁচু ক্লাসের বড়ো দাদারা কত ভালো লেখা পত্রিকায় দেবেন, যাতে বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে, সেখানে আমি একজন শখের

কবি খেলার ছলে লেখা কবিতা দিয়ে কি করব? যাই হোক প্রসুনের চাপে কবিতা দিতেই হল। অনেক ভেবেচিন্তে ‘সাঁওতাল’ নামে একটি কবিতা বিদ্যালয় পত্রিকায় দিলাম। কবিতাটি আমার খুব প্রিয় ছিল, কিন্তু সেটি যে পত্রিকার জন্য বিবেচিত হতে পারে তা কখনও বিশ্বাস করিনি। আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে বিদ্যালয় পত্রিকায় শিক্ষক মহাশয়গণ ও মাননীয়

ব্যক্তিদের লেখা বিষয়গুলির পরেই প্রথমে আমার কবিতাটি মুদ্রিত হল। শ্রেণিশিক্ষক মহাশয় আমার হাতে পত্রিকাটি দিয়ে পিঠ চাপড়ে বললেন ‘খুব ভালো লিখেছ’। আমার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ঠিক দেখছি তো? ছাপার অক্ষরে আমার নামই লেখা রয়েছে। রাতারাতি আমি বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষক মহাশয়দের কাছে প্রশংসার পাত্র হয়ে উঠলাম।

বন্ধুরাও অভিনন্দন জানাল। বাবা-মা খুশি হলেন কারণ তাঁরা আমার কবিতা লেখার ব্যাপারটা সেভাবে জানতেন না। তবে আমি সবচেয়ে খুশি হলাম আমার বন্ধু প্রসূনকে ধন্যবাদ জানিয়ে কারণ ওর উৎসাহ না থাকলে আমার লেখা কবিতাটি পত্রিকায় দেওয়াই হত না। তাই বিদ্যালয় পত্রিকায় প্রথম আমার লেখা মুদ্রিত হওয়ার পিছনে প্রসূনেরও বড়ো অবদান রয়েছে। এই স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তাই আমার কাছে খুবই আনন্দদায়ক হয়ে রয়েছে।




রচনা

★একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা

আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সারাবছরই বহু মেলার সমাবেশ দেখা যায়। এরকমই একটি বিখ্যাত মেলা বীরভূম জেলার কেঁদুলি গ্রামের বাউল মেলা। অজয় নদীর বাঁকে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে এই মেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের সমাগমে অজয়ের তীর ভরে ওঠে। ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের রচয়িতা ভক্ত কবি জয়দেবের স্মরণে এই মেলা বসে। বাউল।গানই এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া দেখলাম মেলার অন্যান্য চিরাচরিত বিষয়গুলিও রয়েছে। সকাল থেকেই মেলায়।পুণ্যার্থীদের ভিড় শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় বাউলরা আগের দিন থেকেই আসতে শুরু করে দেন। বিভিন্ন আখড়ায় তারা ছোটো ছোটো দলে সমবেত হয়ে ঘুঙুর পায়ে বিভিন্ন রঙের আলখাল্লা পরে গান করেন। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এই

গান শোনার আগ্রহে মেলায় উপস্থিত হন। পৌষমাসের প্রবল শীতকে সহ্য করে আমরাও এই মেলায় মেতে উঠলাম। সারারাত ধরে বিভিন্ন আখড়ায় ঘুরে ঘুরে আমরা গান শুনলাম। মাঝে মাঝে গরম জিলিপি, ঘুগনি এসব দিয়ে টুকটাক মুখ।চলতে লাগল৷ মেলাতে শোনা সেই অসাধারণ সব গানের রেশ আমার মনের মাঝে জেগে রয়েছে। বাউল মেলায় দেখলাম জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ এখানে এসে মিলেছেন। পরের দিন মেলা থেকে ফিরে এলাম বুকভরা এক আনন্দ নিয়ে। সব বাউল গানের অর্থ বুঝে উঠতে পারিনি। বাবা বললেন বাউলদের গান নানা হেঁয়ালিপূর্ণ আর দেহতত্ত্বের গান, সেগুলি

সহজে বোঝা যায় না। আমিও বুঝিনি, কিন্তু আমার ভালো লেগেছে গানের সুরগুলি আর মেলার আনন্দময় পরিবেশ।।তাই এই মেলা দেখার স্মৃতি আমার কাছে আজও অক্ষয় হয়ে আছে।


রচনা

★ একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা

মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কত মানুষ আমার ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়, পথভ্রামে ক্লান্ত মানুষ আমার তলায় বসে জিরিয়ে আমি একটি প্রাচীন বটগাছ। কবে ও কীভাবে আমার জন্ম হয়েছিল জানি না। কিন্তু আজ আমি বিরাট আকার নিয়ে শান্তি পায়। আমার হৃদয়ে জমে আছে কত হাসি-কান্না ভরা স্মৃতিকথা। তোমরা কি শুনবে আমার কথা? হতে পারে আমার আমি ছিলাম এক গ্রামের রক্ষাকর্তা গ্রাম্যদেবতা। কত মানুষ কত মানত নিয়ে আমার কাছে আসত। সিঁদুর-চন্দনে পুজো আমার জীবনে ঘটে গেছে। সব হয়তো বলার মতো নয়, আবার অনেক ঘটনা আছে যা ভুলতেই পারিনি। বহুদিন আগে জন্ম কোনো পাখির বিষ্ঠা থেকে। কিন্তু এজন্য আমার মনে কোনো দুঃখ নেই। কারণ আমি বড়ো তো হয়েছি। বহু ঘটনা করে তাদের কামনা জানাত। তাদের সব কামনা পূর্ণ না হলেও আমার প্রতি তাদের বিশ্বাস ছিল অটল। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে আমার চারপাশে মেলা বসত। বহু মানুষের কোলাহলে আমার চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠত। কিন্তু এসব এখন শুধুই স্মৃতি, সেসব ঘটনাও আজকাল লুপ্ত হয়ে গেছে। আমি এখন সময়ের সাক্ষী মাত্র। আগের মতো আমাকে নিয়ে কৌতূহল ও আনন্দ আর নেই। একসময় আমি মানুষের মনের ভিতরে ছিলাম আজ আর নেই। আজ শুধু বসে ভাবি কত মানুষ তার বিবাহের পর নতুন জীবনের সাক্ষী রেখে আমায় প্রণাম করে গেছে। দুরে নদীর ঘাটের মানুষেরা আমার কাছে।কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেছে। আবার কত অপরাধ, ডাকাতি ও হত্যার নানা পরামর্শও আমার তলায় বসে কিছু মানুষ করেছে। আমি তা শুনে শিউরে উঠেছি, কিন্তু অপরাধীকে আমি যেমন বাধা দিতে পারিনি তেমনই যাদের বিপদ তাদের সতর্ক করে দিতেও পারিনি। সে সব শুধুই স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। হয়তো একদিন আমিও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেব। এই কথা ভেবেই আমার মন দুঃখে ভরে ওঠে, চোখ জলে ভরে আসে।


রচনা

★একটি অচল পয়সার আত্মকথা


আমি একটি অচল পয়সা। শুনবে আমার অভিজ্ঞতার কথা? একদিন আমিও সচল ছিলাম। যেদিন ট্যাকশাল থেকে আমার জন্ম হল সেদিন আমার কী রূপ ছিল জানো? আমি সোনার মতো চকচকে ছিলাম। একদিন সবার মতো আমিও প্যাকেট বন্দি হয়ে এলাম রিজার্ভ ব্যাংকে। সেখান থেকে এলাম একটি স্থানীয় ব্যাংকে, তারপর সেখান থেকে আমাকে এক দোকানদার নিয়ে এলেন। দোকানের ক্যাশব্যাক্সের মধ্যে পড়ে থেকে রোজই দেখতাম যে আমার অন্য বন্ধুরা একে একে অন্যের কাছে খুচরো হয়ে ফেরত চলে যাচ্ছে। একদিন আমারও পালা এল, এক বৃদ্ধ মানুষের পকেটে করে আমিও ক্যাশবাক্স থেকে বাইরের জগতে বেরিয়ে পড়লাম। ফেরার পথে বৃদ্ধ গেলেন এক কালীমন্দিরে। অনেকবার ‘মা’ ‘মা’ বলে ডেকে কপালে হাত জোড় করে প্রণাম করে তিনি পকেটে হাত দিলেন। আর ব্যাস, পড়বি তো পড় আমার গায়েই হাত! ঠুং করে ছিটকে পড়লাম প্রণামীর থালায়। ভারি রাগ হল, কেন রে! পয়সা বলে কি তার ব্যথা লাগতে নেই? ছুঁড়ে ফেলতে হবে। এরপর রাতে আবার প্যাকেট বন্দি হয়ে গেলাম পুরোহিতের বাড়ি। সেখানে তাঁর ছেলে আমার অনেক বন্ধু পয়সাদের মধ্যে আমাকেই বেছে নিল কারণ আমি তখনও যে নতুন আর চকচকে। ছেলেটি ছিল খুব ভালো, যত্ন করে সে আমাকে একটা টিনের কৌটোয় তুলে রাখল। জানলাম সে আমার মতো পয়সাদের জমায়। রইলাম বেশ কিছুদিন তার কৌটোতে। কিন্তু সবদিন তো সমান যায় না। একদিন দুপুরে এক বুড়ি এল ভিক্ষা চাইতে। বাড়িতে কেউ নেই, দয়ার শরীর ছেলেটি কৌটো খুলে আমাকেই দান করল বুড়ির হাতে। ব্যাস আবার আমার পথ চলা শুরু হল। এইভাবে এহাত ও হাত ঘুরে আমিও দিন কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ এল দুর্দিন। এক দোকানদার আমাকে নিতে গিয়ে বললেন এতো অচল আর চলবে না। আমিও তো শুনে অবাক! অচল মানে? জানলাম সিকি পয়সা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে আর তার কেউ নেয় না। আমাকে নিয়ে হিসেব করার নাকি খুব অসুবিধা, আর আমার মুল্যের জিনিস নাকি আর নেই। তাহলে বলতো আমার কী হবে? কেউ কি আমায় আর আগের মতো আদর করবে? জানি না ভাগ্যে কী আছে। একটা ভাঙা কৌটোয় বন্দি হয়ে পড়ে থাকি। মাঝে মাঝে গল্প শুনি আমাদের মতো পয়সাদের নাকি গলিয়ে ফেলা হবে। ভাবি আর শিউরে উঠি। জানি না কতদিন এই চেহারা নিয়ে তোমাদের মাঝে থাকতে পারব। কালকের দিনটা আবার দেখতে পাব কিনা!


রচনা

★একটি পোড়ো বাড়ির আত্মকথা

তুমি কে পথিক? অবাক হয়ে আমাকে দেখছ আর ভাবছ পথের ধারে এই পোড়ো বাড়িটা কেন রয়েছে। এতো বড়োই বেমানান! হ্যাঁ আমি একটি পোড়ো বাড়ি। শুনবে আমার কথা? একদিন আমি ছিলাম ঝকঝকে একটা অট্টালিকা, নাম ‘চন্দ্রভিলা’। জমিদার মোহন লাল চন্দ্র অনেক যত্ন করে আমায় তৈরি করেছিলেন। দু'বছর ধরে তিলে তিলে আমি গড়ে উঠেছিলাম। পঁচিশখানা ঘর, বাগান, বারান্দা নিয়ে মার্বেল পাথরে মোজাইক করে আমাকে বানানো হয়েছিল। বড়োই যত্নে ছিলাম, নিয়ম করে আমাকে ধোয়ামোছা করা হত। মোহনবাবু যতদিন ছিলেন আমিও তাঁর গর্ব হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর একদিন রাতে হঠাৎ বুকের ব্যথায় জমিদারবাবু চলে গেলেন। তাঁর শোকে বছরখানেকের মধ্যে গিন্নিমাও চলে গেলেন। শুরু হল দুর্দিন। এই যে আমার চারপাশে একদিন লোকজন, আত্মীয়-বন্ধু, চাকরবাকর গমগম করত, সেই আমি ধীরে ধীরে একা হতে লাগলাম। যদিও ততদিনে আমার নতুন মালিক হয়েছেন মোহনবাবুর ছেলে আমাদের ছোটোবাবু। তবে তিনি ছিলেন অন্যরকম, চন্দ্রবাবুদের তিন পুরুষের ব্যবসা তিনি ঠিকভাবে চালাতে পারলেন না। ফলে অর্থাভাব, ধারদেনা, বাড়তে লাগল। লোকজন, বন্ধুরা একে একে বিদায় নিল। একা ছোটো বাবু পড়ে রইলেন। আমি মুখ বুজে সব দেখলাম, আমি তো বলতে পারি না। দুঃখে মন ভরে উঠল। অবশেষে এক রাতে ছোটোবাবু বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথায় যেন চলে গেলেন। আমি চিৎকার করে বাধা দিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। আমি তো একটা বাড়িমাত্র। সেই থেকে সব হারিয়ে একা পড়ে আছি। ধীরে ধীরে আমার জৌলুস কমে এল, গাছের শিকড়ের চাপে ভেঙে যেতে লাগল আমার শরীরের নানা অংশ। মুখে মুখে আমার নাম রটে গেল পোড়োবাড়ি। হয়তো বেশিদিন আমি আর এই পৃথিবীর মাঝে থাকব না! কারণ আমাকে ভেঙে নতুন কোনো বাড়ি আবার গড়ে উঠবে। প্রায়ই দেখি, আমাকে দেখতে, মেপে নিতে লোক আসে, দরদাম চলে! আর আমি নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। বুক ভরে এই পৃথিবীর আলো বাতাসকে গ্রহণ করি আর ভাবি, কে জানে কালই হয়তো আমার শেষদিন।



রচনা

★একটি কাঠবেড়ালির আত্মকথা

আমার ছোটো বন্ধুরা আমায় চেনো কি? আমি একটি ছোটো কাঠবেড়ালি। তোমাদের স্কুলের বাগানে যে বড়ো জামগাছটি রয়েছে আমি তারই একটা কোটরে অনেকদিন ধরে থাকি। বাগানের জাম, ফলমূল এইসব খাই। তোমরা খেলতে এসে হয়তো মাঝে মাঝে আমাকে দেখতে পাও কিন্তু আমি তোমাদের সামনে যেতে চাই না। কারণ আমি যে বড়োই লাজুক আর ভীতু স্বভাবের। তবে হ্যাঁ দূর থেকে তোমাদের সব খেলা দেখি আর সব কথা শুনি। অনেকগুলো খেলা তো আমি শিখেই ফেলেছি। কিন্তু আমার তো কোনো সঙ্গী বা বন্ধু নেই তাই খেলতে পারি না। তোমাদের খেলা দেখেই আনন্দে লাফিয়ে উঠি। তোমরাও তো আমার সম্বন্ধে খুব কৌতুহলী তাই না। আমাকে দেখতে পেলেই তোমরা আনন্দে হইহই করে ওঠো। মাঝে মাঝে উঁকি মারো আমার গর্তের কাছে গিয়ে। কিন্তু আমি ভীতু হলেও চালাক বটে। সেই সময় আমিও হয় গাছের মগডালে অথবা অন্য কোনো গাছে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকি আর তোমাদের কান্ড দেখে হাসতে থাকি। তোমরা বন্ধুরা যখন আমার ফোলা লেজ আর আমার গায়ের দাগ নিয়ে আলোচনা করো তখন আমি মন দিয়ে শুনি। তবে আমার পিঠে যে হাতের মতো দাগ, তা কেন হয়েছে আমি সত্যিই জানি না। তোমরা একটা গল্প বলো না যে, রামায়ণে আছে ভগবান রামচন্দ্র লঙ্কায় সেতু বাঁধার সময়কালে আমার কোনো এক পূর্বপুরুষ তাঁকে সেতু বাঁধার কাজে নিজের সাধ্যমতো নাকি সাহায্য করেছিলেন। আর তাতেই নাকি খুশি হয়ে তিনি এই কাঠবেড়ালির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। আর তার ফলেই নাকি আমাদের সব কাঠবেড়ালি জাতির পিঠে তাঁর কোমল হাতের ছাপ রয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, এব্যাপারে আমি কিছুই কখনও শুনিনি। তবে তোমরা আমার বন্ধু, হয়তো তোমরা সত্যই জানো। তবে তোমরা যখন টিফিনের সময় বাদাম, রুটি, ফল আমাকে ছুঁড়ে খেতে দাও পরে আমি সেগুলো খুঁজে খুঁজে খাই। আর জানো আমার সবচেয়ে খেতে ভালো লাগে ওই চাউমিন না কি খাবার একটা দাও না সেইটা। তবে তোমাদের মধ্যে কয়েকটা দুষ্টু ছেলেও আছে। মাঝে মাঝেই আমাকে দেখে ঢিল ছোঁড়ে। বারণ করে দিও না ভাই। ভাবো যদি আমার লেগে যায়। আমি কি বাঁচব? হ্যাঁ একবার তো মরেই যেতাম, সেবার বর্ষার এক দিনে কোথা থেকে যেন একটা সাপ আমার গর্তের কাছে চলে এসেছিল কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছিলাম। অনেকদিন তোমাদের এখানে আছি প্রতি বছর নতুন নতুন বন্ধুদের দেখি। আবার পুরোনো বন্ধুদের যখন দেখি না তখন বুঝতে পারি তাদের স্কুলের পাঠ শেষ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে তাদের কথা ভেবে মন খারাপও হয়। একদিন আমিও হয়তো থাকব না। আর তোমরাও বড়ো হয়ে যাবে। তখন নিশ্চয়ই আমার কথা তোমাদের মনে পড়বে। সেই কথা ভেবেই তোমাদের সঙ্গে আমিও আনন্দ করে বেঁচে থাকি


রচনা

★একটি ব্যস্ত রেলস্টেশনের আত্মকথা

আমি শহরের এক প্রান্তের একটি রেলস্টেশন। সারাদিনরাত ধরে অজস্র মানুষের কোলাহলের মাঝে আমি মুখ খুঁজে পড়ে থাকি। দূরপাল্লার গাড়ি আর লোকাল ট্রেন দুটোই এখানে থামে। তাই আমার নির্জনে থাকা আর হয়ে ওঠে না। সমস্তদিন ধরে মানুষের যাওয়া আসা দেখি আর ভাবি একসময় এই স্টেশন চত্বর কত ফাঁকা ছিল কতটা স্বস্তি ছিল। এখন যুগ বদলেছে, পুরোনো দিনের মতো ধীরে সুস্থে চলার সময় এখন মানুষের হাতে নেই। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের জীবন হয়েছে দ্রুতগামী। তাই এই রেলস্টেশনে আগের চেয়ে গাড়িও বেড়েছে অনেক। উন্নত হয়েছে স্টেশন চতুর। আগের চেয়ে স্টেশন চত্বরে অনেক বেশি দোকানপাট বেড়েছে, বহুরকমের স্টল হয়েছে। কত মানুষ এখানে আসে বাইরে বা কাজে যাওয়ার প্রয়োজনে, অপেক্ষা করে আমার চত্বরে। একের পর এক গাড়ি আসে আর বগিগুলি থেকে মানুষের ঢল নেমে আসে স্টেশনের মাঝে। তাছাড়া ব্যস্ত জনজীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে মেট্রো রেলকে আমার চত্বরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ভালোই হয়েছে, মানুষ তো সুবিধা পেয়েছে। মানুষকে আমি বড়োই ভালোবাসি। যতই হোক, মানুষ না এলে তো আর স্টেশনের মর্যাদা থাকে না। সারাদিন কত যে হকার ভাইরা আমার প্ল্যাটফর্মে এসে নানা ধরনের জিনিস বিক্রি করে তার ইয়ত্তা নেই। কতরকমের পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্র, ঘর-গৃহস্থালীর জিনিস, ওষুধপত্র খাবার দাবার আরও কত কী। মানুষের চলাফেরা, কুলি ভাইদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে থাকে আমার প্ল্যাটফর্মগুলি। তবে মাঝে মাঝে মনে বড়ো কষ্ট হয় জানো। এই যে আমি একটি রেলস্টেশন সারাদিন মুখ বুজে মানুষের সবরকম প্রয়োজন মিটিয়ে চলি, মানুষ কি একবারও আমার কথা ভাবে? ভাবলে কি আর আমাকে এতটা অপরিষ্কার রাখত। যেখানে সেখানে পানের পিচ,থুতু, আবর্জনা ফেলত? আচ্ছা একবার কি তোমরা ভাবো না যে, আমি তো তোমাদের জন্যই আছি। আমাকে নোংরা করা মানে তো তোমাদের নিজের প্রয়োজনীয় স্থানকেই নোংরা করা। একটু ভাবো বন্ধুরা। যাঁরা আমাকে পরিষ্কার রাখতে চান তাদের কথা ভাবো। আর ভাবো তো, কত অসুস্থ মানুষ এখান থেকে যাওয়া আসা করেন কাজের প্রয়োজনে, চিকিৎসার প্রয়োজনে। তাই আমার চারপাশ অপরিষ্কার থাকলে তাঁরা তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাছাড়া দৃশ্যদূষণও তো ঘটে এত অপরিষ্কার থাকলে। তাই নিজেদের ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করো। এতে তোমরা নিজেরাও ভালো থাকবে আর আমিও আনন্দের সঙ্গে তোমাদের মাঝে থাকতে পারব, তোমাদের কাজে লাগতে পারব।


রচনা

★একটি পথের আত্মকথা 

আমি একটি পথ। একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছড়িয়ে রয়েছি মানুষের সুবিধায়। পথের বন্ধু পথিক, তুমি কি শুনবে আমার আত্মকথা? অনেক সুখ দুঃখের স্মৃতিকথা আমার মনের মাঝে জমা হয়ে রয়েছে। কবে কার ইচ্ছায় আমি তৈরী হয়েছিলাম তা আজ আর আমার মনে নেই। তবে বহুকাল আগে আমার পথটি ছিল মাটির কাঁচাপথ। সে সময় কোনো যানবাহনই দেখা যেত না। মাঝে মাঝে শোনা যেত পালকির হুম্না হুম্না শব্দ। কোনো সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়ির মানুষ পালকিতে চড়ে যেতেন। আর কিছু মানুষ যেতেন ঘোড়ায় চড়ে। সেসময় আমার চারপাশে ছিল বড়ো বড়ো গাছের জঙ্গল। তাতে ছিল অনেক বন্যজন্তুর বাস। গোরুর গাড়িতে করে শস্য যেত আমার ওপর দিয়ে আর সেই শস্য ছড়িয়ে পড়ত আমার ওপর। কত যে পাখি আমার ওপর পড়ে থাকা সেই শস্যদানা খাওয়ার জন্য চরে বেড়াত তার ইয়ত্তা নেই। বড়ো ভালো ছিল সে সব দিন। পথচারী সাধারণ মানুষ আমার ধারে রান্নাবান্না করে বিশ্রাম নিয়ে আপন গন্তব্যস্থলে যেত। কত লুঠপাঠ দেখেছি আমার পথের ওপরে। কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে সেইসব দস্যু ডাকাতদের হাতে। খুনও হয়েছে অনেকে। আমি সাধারণ মানুষকে সাবধান করে দিতে চেয়েছি। নিষেধ করেছি ডাকাতদের এই অন্যায় কাজ করতে। কিন্তু তারা কেউই বোঝেনি আমার ভাষা, বেদনায় মুষড়ে পড়েছি আমি। আবার আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছি, যখন দেখেছি কোনো নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রী আমার পথ ধরে চলেছে নিজেদের নতুন সংসারে। দিন বদলেছে, আমার কাঁচা পথ ধীরে ধীরে পাকা হয়েছে, পিচ ঢেলে তা মসৃণ করা হয়েছে। পথে এসেছে অনেক যানবাহন। কিন্তু পথের ধারের সেই নিবিড় জঙ্গল আজ আর নেই, বন্যজন্তুরাও চলে গেছে। তার বদলে সেখানে গড়ে উঠেছে অজস্র বাড়িঘর, দোকানপাট, হোটেল,  লজ ইত্যাদি। মানুষ আজও আসে আমার পথের উপরে। নতুন নতুন সাজে নতুন কাজের প্রয়োজনে তারা এগিয়ে চলে দূর-দূরান্তে। আমি এই পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আজও একইভাবে রয়ে গেছি। আজও একইভাবে দিনরাত মানুষের মাঝে আমি পড়ে আছি আর পুরোনো স্মৃতিকথা মনে করে আনন্দ বেদনায় ভরে আছি।





রচনা

★একটি পুরোনো খাতার আত্মকথা

আমি একটি জীর্ণ পুরাতন খাতা। কোনো একসময়ে আমাকে কিনে আনা হয়েছিল লেখার কাজে। আজ আমার সমস্ত পাতাই ভরে গেছে নানান লেখায়। একটি পরিবারে আমি এসেছিলাম একটি বালিকার গান লেখার প্রয়োজনে। বালিকাটি যত্ন করে আমায় রাখত। ভারি সুন্দর হাতের লেখা ছিল তার। মুক্তোর অক্ষরে সে কয়েকখানি ভক্তিমূলক গান আর রবি ঠাকুরের গান আমার পাতায় লিখেছিল। তারপর একদিন তার গান শেখার পাঠ শেষ হল। আমি পড়ে   থাকলাম একা। তখন আমার বাকি পাতাগুলিতে যে যখন যা পারত লিখত। কিছুদিন বাড়ির ছেলেটি আঁকাবাঁকা হাতে লেখার অভ্যাস শুরু করল। আমাকে সে দুমড়ে মুচড়ে লিখত। খুব ব্যথা হতো শরীরে । মুখ বুজে সব সহ্য করতাম। তারপর আবার হাতবদল হল, আমি এলাম গৃহকর্তার ঘরে। আমার পাতা জুড়ে শুরু হল বাজার খরচ আর আয়ব্যয়ের হিসাব লেখা। সে বড়োই বিরক্তিকর। ভুলভাল হিসেবে আমার পাতা ভরে উঠতে লাগল। আমি বিরক্ত হতাম, কিন্তু আমি তো একটা খাতা মাত্র। আমার তো ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের উপায় নেই। এভাবেই কাটতে লাগল সময়। একসময় ভরে গেল আমার সমস্ত পাতাগুলো। আর আমার স্থান হল পুরোনো কাগজপত্র রাখার তাকে। ধুলো জমে উঠল আমার শরীর জুড়ে। বছরের পর বছর পড়ে থাকায় বিবর্ণ হয়ে এল আমার রঙিন মলাট, জীর্ণ হয়ে উঠল আমার পাতাগুলো। একদিন যারা ভালোবেসে বা নিজের প্রয়োজনে আমাকে ব্যবহার করেছিল তারা কেউই আর নেই। ঘরের এক তাকে পড়ে থেকে তাদের কোনো সাড়াও আমি পাই না। জীর্ণ শরীর নিয়ে মনের দুঃখে দিন কাটাই। মনে ভাবি আমার চেনা কেউ হয়তো একদিন আমাকে হঠাৎ খুঁজে পাবে। আর ধুলো ঝেড়ে বলে উঠবে ‘এইতো আমার খাতাটা, এতদিন কোথায় যে ছিল।' সেদিন আমার মনটা আবার চেনা মানুষের ছোঁয়ায় একটু শান্তি পাবে। সেই আশাতেই এখন আমার দিন কাটে। আশা নিয়ে থাকি, হয়তো।সেদিনটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে।



রচনা

★একটি খেলার মাঠের আত্মকথা

আমি গ্রামের একটি খেলার মাঠ। ছেলেমেয়েদের খুব প্রিয় বন্ধু। গ্রামের প্রায় সব ছেলেমেয়েই রোজ একবার করে আমার কাছে আসে। আমাকে তারা খুবই ভালোবাসে। অনেক বছর ধরে আমি এদের সঙ্গে রয়েছি। এদের সুখ-দুঃখ, ভালোমন্দের সহেগ আমি জড়িয়ে গিয়েছি। কত ঘটনার স্মৃতি রয়েছে আমার বুক জুড়ে। সে সব মনে করে আনন্দ ও বেদনার মাঝে আমি বেঁচে রয়েছি। বহু বছর আগে গ্রামের জমিদারবাবু আমার মাটিতেই কুস্তি ও লাঠি খেলার প্রতিযোগিতার আসর বসিয়েছিলেন। প্রতি বছর এটি বসত আর একে কেন্দ্র করেই আমার চারপাশে জমে উঠত একটি বড়ো মেলা। এখন সে সব অতীত। নামে আমি খেলার মাঠ হলেও খেলাধুলার পাশাপাশি আমার মাটিতে একটি বারোয়ারি দুর্গাপুজোও হয়। সেই কদিন আমার বড়োই আনন্দ। কত মানুষজন এই মাঠে আসেন। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা নতুন জামাকাপড় পড়ে হাসিমুখে সারাদিন সেখানে দাপিয়ে বেড়ায়। আর সারাবছর ধরে এখানেই প্রতিদিন ফুটবল আর শীতের

দিনে গ্রামের ছেলেদের ব্যাট হাতে ক্রিকেট খেলা চলতেই থাকে। কত ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছে আমার মাটিতে। জেতা দলের উল্লাস আর হেরে যাওয়া দলের বিষণ্ণতা সবই আমি নীরবে দেখে গেছি। মাঝে মাঝে বড়ো খারাপ লাগে জানো! ভাবি আমাকে নিয়ে মানুষ কি ভাবে, কেউ তো আমাকে যত্ন করার কথা ভাবে না। আমাকে সাজানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেয় না। হ্যাঁ, গর্বও হয় আমার নিজেকে নিয়ে একটা ঘটনায়। এই তো বছর চারেক আগের এক সন্ধ্যায় পাঁচদিন ব্যাপী ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পুরস্কার দিতে মাঠে এসেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। মাঠ ভর্তি মানুষের সঙ্গে আমিও আনন্দে ফেটে পড়েছিলাম। তবে সেটা কেউ শুনতে পায়নি। ইদানীং একটা ব্যাপারে আমি বড়োই চিন্তায় রয়েছি। এখন শহরের আধুনিকতার ছোঁয়া গ্রামের বুকেও লেগেছে। কিছু মানুষ চাইছে এই মাঠকে ঘিরে বহুতল বাড়ি বানাতে। তলে তলে পরামর্শ, কথাবার্তা চলছে আমি দেখছি, কিন্তু বন্ধুরা আমি নিরুপায়, আমার থাকা না থাকা এখন তোমাদের আর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের হাতে। সবাই যদি আমায় রাখতে চায় তাহলেই আমি সকলের মাঝে থাকতে পারব। না হলে একদিন এই ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গলে আমিও হারিয়ে যাব। তাই আমি আশা নিয়ে বাঁচি যে তোমাদের মাঝে বন্ধু হয়ে আমি।অনেকদিন থাকব।



    রচনা

★পরিবেশ  ও তার উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা


পরিবেশ  ও তার উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই সেই পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এরজন্য তারা যা করতে পারে তা হলো (ক) পরিবেশ সম্বন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া। (খ) সবরকম দূষণের কারণ সম্বন্ধে আলোচনার দ্বারা তা বন্ধ করার জন্য। কর্মসূচি গ্রহণ। (গ) নিজেদের বাসস্থানের পয়ঃপ্রণালী ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন হওয়া। (ঘ) হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা। (ঙ) বিদ্যালয় রাস্তাঘাট পার্ক, বাস, ট্রেন, প্রভৃতি জায়গায় পরিত্যক্ত খাবারের প্যাকেট না ফেলা। প্লাস্টিক ব্যবহারে ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা। (চ) ধুমপান, মদ্যপান, গুটখা, ড্রাগসেবন প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা। (ছ) পরিবেশের উপযোগী গাছ লাগানো ও পুরানো গাছ না কাটা। (জ) দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন পোস্টার, চাট তৈরী করে শোভাযাত্রার মাধ্যমে গাছ আমাদের বন্ধু এবং রোগ প্রতিরোধে গাছের ভূমিকা আছে তা প্রচার করা। (ঝ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। এই বিষয়ে জনশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ছাত্রদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে দেশের সরকারকেও। দৃঢ় পদক্ষেপ ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষাকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ছাত্র সমাজকে ভবিষ্যত উন্নয়নে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বাহক হতে হবে। তবেই হয়তো আগামী দিনে আবার পরিবেশ হয়ে উঠবে নির্মল ও দূষণমুক্ত।





রচনা

 ★পরিবেশ পরিষেবায় অরণ্য

মানবজীবনকে গতিময় রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে অরণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যে মানুষ তার জীবন বিকাশের উপাদান একদিন বন থেকে আহরণ করেছিল, সেই মানুষ নিজেদের স্বার্থে অরণ্য ধ্বংসে প্রবৃত্ত হল। ফলস্বরূপ দেখা দিল প্রাকৃতিক দূষণ। পৃথিবীর যে জীবমন্ডলে অক্সিজেনের ভাগ বাড়িয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাবকে সম্ভব করেছে উদ্ভিদ তথা অরণ্য সেই জীবজগতের পালনকর্তা এটা আমাদের মনে রাখা দরকার। তাই একটি শিশু যেমন বাঁচবার

জন্য মায়ের ওপর নির্ভরশীল তেমনি মানুষ সহ সমগ্র জীবকুল জীবনধারণের জন্য অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল। গাছ যে শুধু আমাদের খাদ্যের যোগান দেয় তা নয়। তারা খরা, ও ভূমিক্ষয় রোধ করে আবহাওয়ার সমতা রক্ষা করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই জীবসমাজকে টিকিয়ে রাখতে গেলে বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়।। উঁচু জমিতে বৃষ্টিপাত যখন হয় সেখানে থাকা বনভূমি সেই জল শিকড়ের সাহায্যে শোষণ করে নেয়। এতে জমির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং গাছের পাতার মধ্যে দিয়ে ওই জল আবার জলীয় বাষ্পরূপে বাতাসে ফিরে আসে এবং আবহাওয়ার শুষ্কভাবকে দূর করে। বনভূমি থাকার ফলে বহু প্রাণী মাটির নীচে বাস করে এবং মাটির উপরে ঝরে পড়া লতাপাতা ও মৃতপ্রাণীর।দেহাবশেষ থাকায় মাটির জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃষ্টির সব জল নদীতে নামে না। এতে বন্যার আশঙ্কা কম।হয়। অরণ্য প্রকৃতির জলচক্র ও অন্যান্য স্বাভাবিক চক্রগুলিকে সচল রাখায় মানুষের জীবনধারণের উপাদানগুলি পাওয়া

যায়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অরণ্য তথা গাছ এবং তার অংশ উপাদানরূপে কাজ করে চলেছে। গাছের কাঠ থেকে আমাদের বাড়িঘরের উপাদান এবং বহুমূল্য আসবাবপত্র তৈরী হয়। গাছের পাতা আমাদের দেয় জীবনদায়ী ঔষধ, এছাড়া গাছের নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। গাছের থেকে আমরা শিখতে পারি অপরের।জন্য ত্যাগ করতে এবং সহনশীল হয়ে শত্রু মিত্র ভেদাভেদ না করতে। সুতরাং অরণ্যের ওপর আমাদের নির্ভরতাই তাকে যৌথ সমন্বয়। সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা ও দায়বদ্ধতা থাকার অঙ্গীকার গ্রহণ। বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র গুরুত্ব। সেজন্য দরকার মানুষের সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি। এজন্য প্রয়োজন পরিবেশবিদ ও সরকারের যৌধ সমন্ময়।


রচনা

★আমাদের জীবনে পরিবেশের ভূমিকা

মানুষ জন্মের পর থেকে তারা পরিবেশের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। উপযুক্ত পরিবেশই মানবজীবনকে গতিশীল ও কর্মময় করে তোলে। মানুষকে ঘিরে যাবতীয় জড় ও সজীব উপাদানগুলিকে একত্রে পরিবেশ বলে। আমাদের প্রত্যেকের চারপাশে অবস্থিত জল, বায়ু, মাটি, উয়তা, সূর্যালোক ইত্যাদি ভৌত পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। এরসাথে রয়েছে উদ্ভিদ, প্রাণী ও।আনুবীক্ষণিক জীব, যাঁরা জৈব পরিবেশের অন্তর্গত। মানবজীবনে এদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। পরিবেশের দুটি রূপ—প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃত্রিম পরিবেশ। মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রাকৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই পরিবেশ থেকে যে মানুষ শুধুমাত্র জল, অক্সিজেন, খাদ্যগ্রহণ করে তা নয়, মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে।ঋতু পরিবর্তন, দিনরাত্রির পরিবর্তন এই পরিবেশের প্রভাবেই ঘটে। অন্যদিকে কৃত্রিম পরিবেশ হল মানুষের দ্বারা সৃষ্ট।এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ইত্যাদি। কৃত্রিম পরিবেশের মধ্যে পারিবারিক পরিবেশের প্রভাব মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি। জন্মের পর থেকে মানুষের প্রথম আশ্রয় তার পরিবার। মানুষ পরিবার থেকেই অন্য মানুষের সঙ্গে পরিচয়, রীতিনীতি, ন্যায়বোধ, এমনকি অশালীন আচরণও শেখে। পরিবারই মানুষকে সুস্থ ও আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বিদ্যালয় থেকে একজন শিশু তার চারিত্রিক গুণাবলি আয়ত্ত করে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুকে সাহায্যও করে। এই পরিবেশ থেকেই সে সততা, সম্প্রীতি, দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধ, সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসায় প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। একজন শিশু যখন বিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকে বেরিয়ে সামাজিক নানা বিষয় বা কর্মের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন সে সামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধের শিক্ষা হয় সামাজিক পরিবেশ থেকে। প্রতিটি মানুষেরই কাম্য সুস্থ সামাজিক পরিবেশ। একমাত্র সামাজিক পরিবেশ থেকেই মানুষ নিজেকে গড়ে তোলে সামাজিক জীবরূপে। যে পরিবেশ থেকে মানুষ একজন সভ্য নাগরিক হয়ে ওঠার প্রেরণা লাভ করে তা হল সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এই।পরিবেশের মাধ্যমেই মানুষের দেশ ও জাতি সম্পর্কে চেতনা জাগে। তাই মানুষের জীবনে পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম।।পরিবেশের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অসীম ও অপার শুভশক্তি, যার দ্বারা মানুষ তার জীবনকে উন্নততর করে তুলতে পারে। তাই পরিবেশের সুস্থতা বজায় রাখতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকেই সচেতন হতে হবে, তা না হলে তার অস্তিত্বের সংকট

দেখা দেবে।



রচনা

★প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধে ছাত্রসমাজ

মানুষ সৃষ্টির সময়কাল থেকেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, প্রকৃতিকে যথার্থভাবে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা বিকশিত হয়েছে। কিন্তু পরিবেশের পরিবর্তনশীলতাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সূচনা ঘটিয়েছে। কখনও বা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে আবার কখনও বা মানুষের নিজেদের অবহেলায় এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভূকম্পন, ধ্বস, অগ্নুৎপাত, বন্যা, সুনামি, টাইফুন প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের কাছে এক অশুভ সংকেত নিয়ে আসে। এই সব বিপর্যয় মোকাবিলায়

ছাত্রসমাজকে অগ্রণী হতে হবে। ছাত্রসমাজ হল তারুণ্যের প্রতীক। অদম্য উৎসাহ ও উদ্দীপনার উৎস তাদের মধ্যে রয়েছে।।তাদের প্রাণ দয়া, প্রেম ও মানবতায় পরিপূর্ণ। ছাত্রসমাজকে যদি সঠিক পথে পরিচালনা করা যায়, তাদের দ্বারা অসম্ভবকে সম্ভব করা যেতে পারে। আগে মানুষ ভাবত একমাত্র অধ্যয়ন করাই ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়, নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের সেবায় তাদের নিয়োজিত করতে হবে। প্রাকৃতিক

বিপর্যয় এমন একটি সমস্যা সেখানে সেবা ও শুশ্রূষার কাজে বহু মানুষের প্রয়োজন। উদ্ধারকার্যে তরুণ প্রজন্মে প্রয়োজন হবেই। বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ এলাকায় উদ্ধারকার্য ও সেবাকার্যে অংশ নিতে পারে। কারণ ছাত্রদের মধ্যে কয়েকটি মহৎ গুণ দেখা যায়। এগুলি হল সুশৃঙ্খলতা ও সংযম। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহ বিভিন্ন সেবাশ্রম সংস্থা নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে পুরোভাগে থাকে।উদ্দীপ্ত তরুণ ছাত্রসমাজ। তাদের মনের অসীম সাহস ও অদম্য প্রাণ শক্তির দ্বারা তারা প্রবল উদ্যমে এইসব সংকটের মুহূর্তে হাসিমুখে এগিয়ে আসে। আজকের দিনে সব অভিভাবকরাই চান সন্তানকে ‘ক্যারিয়ারিস্ট' করে তুলতে। কিন্তু দেশ ও দশের কল্যাণে ও দেশের বিপর্যয়ে এগিয়ে আসাও তো প্রয়োজন। তার শিক্ষাও তো আমাদের ছাত্রজীবনেই আমরা পাই। তাই।ছাত্রসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যতের সুনাগরিক। নিজের কর্তব্যকে অবহেলা করে নয়, যে দেশ তথা সমাজ থেকে তারা বড়ো হয়েছে তার বিপর্যয়ের মুহুর্তে, মানুষের জন্য কিছুটা সময় ছাত্রদের দিতে হবে। এটাই মানবকল্যাণ, এটাই কাম্য হওয়া উচিত।



 রচনা

★ উন্নয়ন বনাম পরিবেশ

বিবর্তনের পথে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে সেই সঙ্গে ঘোষিত হয়ে চলেছে উন্নয়নের জয়শঙ্খ। জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে প্রয়োজন উন্নয়নের এবং সেই উন্নয়নের ফলে বাড়ে পরিবেশের অবনমন। তখনই সৃষ্টি হয় সমস্যার, যে সমস্যা আজ পৃথিবীব্যাপী। তা বলে উন্নয়নের গতিকে তো স্তব্ধ করা যায় না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। সুসংগঠিত পরিকল্পনার দ্বারা উন্নয়নের এই জয়রথকে চালিত করতে হবে, কারণ উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশও সম্পৃক্ত। পরিবেশকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন সংঘটিত হয়। ব্যাপক অর্থে পরিবেশ বলতে বোঝায় প্রকৃতি, মানুষ ও জীবজন্তু। বর্তমানে সামাজিক মানসিক জনসংখ্যা ও বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তা করতে হয়। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যে, এর ফলে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। এই দেশে খাদ্যের জোগানের জন্য কৃষির উন্নয়ন অপরিহার্য। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের জোগান রাখতে জমিকে করতে হয় বহুফসলা। ফলে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন প্রভৃতি দিকে নজর দিতে হবে। বায়ু, জল, মাটি দুষণকারী বস্তু সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। ফলে সমাজে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় আশঙ্কা থাকে ভূমিকম্পের। এরপরই প্রয়োজনীয় শিল্প উন্নয়ন দ্বারা দেশের বেকার সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্ন থাকে। কিন্তু শিল্পের উন্নয়নের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বড়ো বড়ো কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে পতিত হওয়ার ফলে নদী ও সমুদ্রের জল ক্রমশ দূষিত হয়ে চলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ ও জলজ প্রাণীরা। কলকারখানার ধোঁয়া বাতাসকে ক্রমাগত দূষিত করছে। যানবাহনের ব্যাপক ব্যবহার ও সড়ক নির্মাণের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়। কিন্তু যেই সংখ্যায় বৃক্ষ আর লাগানো সম্ভব নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্ব পরিবেশ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন, পরমাণু গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়, মহাকাশযানের উৎক্ষেপনের জন দূষণ প্রভৃতির কথা বলাই বাহুল্য৷ মেরু অঞ্চল ও পর্বতশৃঙ্গে নানা অভিযান ও গবেষণার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে সেখানকার পরিবেশ ও জলবায়ু। তাই উন্নত মানুষের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে সুনামি, ভূমিকম্প, বিশ্ব উষ্বায়ন, ওজোনস্তর হ্রাস, অ্যাসিড বৃষ্টি প্রভৃতি ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বর্তমানে মানবসভ্যতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে গেলে উন্নয়ন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পরিবেশের উন্নয়ন না মানব সভ্যতার অর্থনৈতিক সংকট দূরীকরণ আগে সেই প্রশ্নও আসে। তাই উন্নয়ন বজায় রেখে পরিবেশের অবনমনকে প্রতিহত করতে প্রয়োজন—ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা প্রতিরোধ, সার্বিক সচেতনতা ও সদিচ্ছার বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা। বিভিন্ন বর্জ্য থেকে কীভাবে নতুন সম্পদ তৈরী করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি। তাই এখন করণীয় হল পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি তার যথাসম্ভব অল্প ব্যবহার ও অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের পর সেই শক্তি পুনরায় নবীকরণের মাধ্যমে নতুন শক্তি সৃষ্টি করা। এতে পরিবেশও বাঁচবে আর উন্নয়নও ব্যহত হবে না। এতেই হবে পৃথিবী তথা মানুষের মঙ্গল।



 রচনা

. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার


প্রকৃতির কোলেই প্রথম মানুষ তার বসতি গড়ে তুলেছিল। নিশ্চিত্তে আরামে এবং প্রকৃতি ও মানুষ ও মানুষ পাশাপাশি হাত ধরে সহাবস্থান করতে শুরু করেছিল। কিন্তু এই সহাবস্থানে মানুষের এগিয়ে চলার নেশার তাকে স্থির হতে দিল না। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে চাইল আর তার হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। জল, স্থল, আকাশে মানুষ প্রভুত বিস্তার করল

বিজ্ঞানের সাহায্যে। বিজ্ঞানের নিত্যনব আবিষ্কারের ফসল তার চাহিদা আরও বৃদ্ধি করল। মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখল সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বন কেটে স্থাপিত হল বসতি। পর্ণকুটিরের স্থানে ইট, কাঠ, কংক্রিটের নির্মিত অট্টালিকা শহরের শোভা বাড়িয়ে তুলল। মাটির বক্ষ বিদীর্ণ করে লোহার লাইনের উপর দিয়ে ছুটে চলল বাষ্পীয় ইঞ্জিন। তার ধোঁয়ায় হল আকাশ বাতাস। জলে চলল জাহাজ, তার নিঃশ্বাসে বিষাক্ত হল নদী ও সমুদ্র। জলজ প্রাণী পড়ল সংকটে। সভ্যতার তাগিদে নির্মিত হল কলকারখানা, নানা যানবাহন। তার থেকে বিষাক্ত গ্যাস এবং বর্জ্য পদার্থ আকাশ ও নদী উভয় জগতে আলোড়ন ফেলে দিল। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডে পূর্ণ হল বায়ুমন্ডল। বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে তাদের নিজস্ব স্রোতকে রুদ্ধ করে দেওয়া হল। তারপর এল পারমাণবিক যুগ। পারমাণবিক দহনের ফলে পরিমাণ তার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি হল দুষণের বিশুদ্ধ অক্সিজেন এবং সমানুপাতিক অন্যান্য গ্যাস পরিপূর্ণ বায়ুমন্ডল। বর্তমানে সেই বায়ুমণ্ডলেও দূষণের ছোবল পড়েছে। যথেচ্ছ বনভূমি ছেদনের ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এ ছাড়া বায়ুমন্ডল ভেদ করে চলছে আকাশ যান ও মহাকাশযান। যার ফলে বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হচ্ছে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর মাটিতে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধির ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃষ্টির পরিমাণ হ্রাস, খরার প্রাদুর্ভাব, শস্যহানি এবং ঝড়, জল।ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়ে চলেছে। ফলে মানুষ হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত।।জলের আর এক নাম জীবন। বর্তমানে জলদূষণের নানা কারণ বর্তমান। কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ এবং শহরের যত দূষিত জল সব নালা দিয়ে নদ, নদী, খাল বিলে পতিত হয়। ফলে সেখানকার জল হয় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত।।গ্রামের মানুষ পুকুরের জলে স্নান করা, কাপড় কাচা, পুকুরের পাড়ে দেহের বর্জ্য পদার্থ বর্জন করার ফলে জল দূষণ ঘটছে। তাইতো গঙ্গা সহ বৃহৎ নদীগুলির জল আজ ব্যবহারের অযোগ্য। দূষণ শুধু জল ও বায়ুতে নয়, শব্দও দূষণ দ্বারা আক্রান্ত।

শব্দদানবের আক্রমণে জনজীবন ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত। কলকারখানার শব্দ, যানবাহনের হর্ন, মাইকের বজ্রঘোষণা, মানুষের সহাসীমার অতীত হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানান রোগে, বাড়ছে অনিদ্রা, রক্তচাপ ও স্নায়ুবিক অস্থিরতা।

এই পরিবেশ দূষণের প্রভাব আজ সর্বব্যাপী। এভাবে পৃথিবীতে যদি উত্তরোত্তর পরিবেশদূষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে একদিন জীবকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। সেজন্য রাষ্ট্রসংঘের ব্যবস্থাপনায় এবং প্রতিবছর পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধকল্পে ৫ জন বিশ্ব পরিবেশ দিবস রূপে পালিত হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য। তাই আবার নতুন করে অরণ্যসৃজন করা প্রয়োজন, গৃহ-প্রাঙ্গণে ও রাস্তার দু'পাশে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ যাতে সরাসরি নদীতে না ফেলা হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে রকেট নিক্ষেপ ও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। নানা প্রচার ব্যবস্থার দ্বারা গ্রাম-গঞ্জ ও শহরের মানুষকে পরিবেশ দূষণ

সম্বন্ধে সচেতন করা এবং তার প্রতিকারের উপায় গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্য, সম্পদপূর্ণ দূষণমুক্ত একটি সুন্দর পৃথিবী অর্পণ করার অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।




রচনা

★একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

গত বছর মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম হুগলির সপ্তগ্রামে মাসির বাড়িতে। সেই প্রথম আমার গ্রামে যাওয়া। গ্রামটিতে।পৌঁছে মনে হল এক মধুর ও সরল পল্লিজীবনের মাঝে এসে পড়েছি। সত্যিই মনে হল পল্লি বা গ্রাম যেন আমাদের মা।।গ্রামটি যেন তার সন্তানের মতো করে গ্রামের মানুষজনকে প্রতিপালন করছে। গ্রামের ছোটো ছোটো কুঁড়েঘরগুলি

গাছগাছালির সবুজ বনানীতে ছাওয়া। গ্রামের গেরুয়া রাঙা আঁকা-বাঁকা পথ গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের যাবার পথে মিশে গেছে।।এখানে ফাঁকা মাঠ, সবুজ ঘাস, গাছপালা, বিরাট আকাশ, নদীর কল্লোল, পাখির গান। এই খোলা-মেলা উন্মুক্ত পরিবেশে

প্রাণটা যেন ভরে গেল। গ্রামের সকালটি বড়োই মধুর আবার সন্ধ্যায় ঝিঁঝির শব্দে নিবিড় হয়ে আসে পল্লি প্রকৃতি। তখন।শহরের বৈদ্যুতিক আলোয় উজ্জ্বল পরিবেশের কথা মনে পড়লেও গ্রামের পরিবেশটি যেন বড়োই শান্ত মনে হচ্ছিল।।জীবনধারণের জন্য টাটকা ফলমূল, শাকসবজি পল্লিগ্রামে প্রচুর, দেখলাম শস্য পরিপূর্ণ ধানখেত। এক নিবিড় ঐক্য লক্ষ করলাম পল্লিগ্রামের মানুষদের মধ্যে। এখানে সুখে দুঃখে অভাব অনটনে মানুষ পরস্পর পরস্পরের কাছে ছুটে যায়। পল্লির মানুষের এই আন্তরিকতা পল্লিজীবনের বৈশিষ্ট্য। গ্রামটিতে প্রায় সারা বছর আনন্দ উৎসব লেগে থাকে। বাঙালির বারমাসে তেরো পার্বণ শহরে আমরা সেভাবে না অনুভব করলেও গ্রামে সবসময়ই তাঁর ছোঁয়া লাগে। সবাই আনন্দ উপভোগ করে।।পুজোপলক্ষ্যে যাত্রানুষ্ঠান ও মেলা বসে।।গ্রামের পরিবেশকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যপূর্ণ করে তোলার জন্য বর্তমান সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন তা বুঝতে পারলাম। গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও বয়স্কদের শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। আমার মনে হল গ্রামীণ সংস্কৃতি ও পল্লি শিল্প পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চলেছে। গ্রামের নারীপুরুষ অল্পবিস্তর শিক্ষিত হলেই গ্রামের পরিবেশ আরও উন্নত হয়ে উঠবে। ফিরে আসার সময় গ্রামের সুনিবিড় পরিবেশের টান মনকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। মনে পড়ছিল সেখানকার মানুষজনের।আন্তরিক ব্যবহারের কথা।



রচনা

★দেশভ্রমণের উপকারীতা

বৈচিত্র্যপূর্ণ এই বিশ্বে সুপ্রাচীন কাল থেকেই দেশভ্রমণের সূচনা। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনার দুর্নিবার আগ্রহে বিশ্বব্যাপী শান্তি আর মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন ধর্মপ্রচারকেরা। পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ প্রমুখ দেশাত্তরে পাড়ি দিয়েছেন, রাজারা বেরিয়েছেন দিগ্বিজয়ে, বণিকেরা বাণিজ্যতরি চালিয়েছেন অকুল অজানা সমুদ্রপথে। সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, বৈচিত্র্যসন্ধানী জ্ঞানপিপাসী মানুষের ভ্রমণ ছিল অব্যাহত। জ্ঞান লাভের আশায় উৎসুক ছাত্রেরা।ভারতবর্ষে এসেছেন, দুঃসাহসিক অভিযানে সামিল হয়েছেন কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা, আমেরিগো ভেসপুচি, হ্যারি জনস্টন, মার্কোপোলো, হাডসন, স্কট, শ্যাকলটনের মতো অভিযাত্রীরা। ভূপর্যটক কুক-ম্যাংলিন, স্টানলি-লিভিংস্টোনের কথাও সুবিদিত। এমনকি, নিছক আনন্দ আহরণের তাগিদেও ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে সাধারণ মানুষ পথে প্রবাসে ঘুরে কৌতুহলে সে স্পর্শ করেছে সমুদ্রের সুগভীর তলদেশকে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নিজের আধিপত্যকে মানুষ কায়েম বেড়িয়েছেন। সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে মানুষ তার জয়ের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে, উড়িয়ে দিয়েছে তার বিজয় পতাকা। অসীম

সুপরিকল্পিত হয়ে উঠেছে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ভ্রমণ স্থানগুলিতে বিলাসবহুল হোটেল, লজ, রিসর্ট, প্রতিকূল আর ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভ্রমণ আধুনিক যুগের নানান আবিষ্কারের সুবাদে এখন অনেক নিরাপদ, সুখকর, ও গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার পাশাপাশি ‘হোম স্টে’তে থাকার সুবিধাও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। দ্রুতগামী যানবাহন ভৌগোলিক দূরত্ব অতিক্রমকে সহজ ও অনায়াসসাধ্য করে দিয়েছে। এ ভাবেই কোনো দেশের পর্যটন শিল্প সেই দেশের

করেছে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আমরা কোনো বিশেষ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, সেখানকার দর্শনীয় স্থান ও মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদানগুলি সম্পর্কে যেমন জানতে পারি, তেমনই সেখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রা, সভ্যতা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, উৎসব-অনুষ্ঠান, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, স্থাপত্য ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ভাষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এসবের সঙ্গে পরিচিত হই। আমাদের এই পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে মনের প্রসারতা বাড়ে, পরস্পরের মধ্যে শিক্ষা-সাংস্কৃতি ও ভাবের বিনিময় হয়, দেশবিদেশের মানুষের সান্নিধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বাতাবরণ রচিত হয়, জীবন সম্পর্কে এক

স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। বই পড়ার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দেশবিদেশের ভ্রমণবৃত্তান্ত পাঠের মধ্যে দিয়ে আমরা মানসভ্রমণের অপার আনন্দ লাভ করে থাকি।






রচনা

★শিক্ষামূলক ভ্রমণ

মানুষ নানান দেশে নানানভাবে বাস করে। কিন্তু তার মন একস্থানে খুশি হতে পারে না। তাই সে ছুটে চলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এই দেশভ্রমণই মানুষকে দেয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। ঘরের কোণে মানুষ যদি আবদ্ধ থাকে তাহলে তার জীবন সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। তাই নদী, পর্বত, অরণ্যে সুশোভিত দৃশ্য দেখা প্রয়োজন। প্রকৃতির সাজানো দৃশ্য তৈরী সভ্যতার চেয়ে অনেক সুন্দর, অনেক আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিকস্থানে ভ্রমণ করলে আমাদের বইতে পড়া ইতিহাসকে আমরা যেন চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করি। এ ইতিহাস মুখস্ত করা নয়, এ হল ইতিহাসকে জাগিয়ে তোলা। ভ্রমণ হল শিক্ষার একটা অন্যতম অঙ্গ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই শিক্ষাখাতে একটা অর্থ বরাদ্দ করা হয় শিক্ষামূলক ভ্রমণের প্রয়োজন। তবে শিক্ষকমহাশয়রা নিজেরাই উৎসাহ নিয়ে ছাত্রদের শিক্ষামূলক ভ্রমণে নিয়ে যান। এই ভ্রমণ এক আনন্দের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষের সমাজ যে নানা রকম হয় তা আমরা কীভাবে জানব? শুধুই বই পড়ে কি? বইতো অসংখ্য আছে, সব লেখক সব বিষয়ে একমত নাও হতে পারেন। ভ্রমণ সেই জানা ও চেনার বাধাকে দূর করে। আমাদের দেশের

মনীষীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দ প্রায় সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে দেশ ও বিদেশকে উপলব্ধি করেছিলেন। বহু ভূপর্যটক ও আবিষ্কারক তাঁদের ভ্রমণ ও অভিযানের দ্বারা শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামা, মার্কোপোলো, রামনাথ বিশ্বাস, প্রবোধকুমার স্যানাল, শঙ্কু মহারাজ প্রমুখ। তাই এযুগের ভ্রমণ শুধু বিসর যাপন বা ছুটি কাটানো নয়। দেশকে চেনা, মানুষের সম্বন্ধে জানা এসবই বহুমুখী শিক্ষার অন্যতম ধারা।





রচনা

★একটি প্রাচীন জলাশয়ের আত্মকথা

কে তুমি একলা কিশোর এই ঘন দুপুরবেলায় আমার বদ্ধ জলে ঢিল ছুঁড়ে ঘুম ভাঙালে? কী খেলছ?

এদিকে এসো। পুরোনো দিনের কথা শোনাই তোমায়। পুরোনো সব মানুষজন, রীতিনীতি আর এই আমি, আমিও তো দেখতে দেখতে অনেক পুরোনো হয়ে গেলাম। আজ আমার জলে পানা আর মানুষের ফেলা প্লাস্টিক আর অন্যান্য বর্জ্যে বোঝাই হয়ে আছে। দেখে বুঝতেই পারবে না আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে যখন আমায় খনন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন এই জল কত স্বচ্ছ আর সুন্দর ছিল। এ তল্লাটের সকল মানুষ তখন পানীয় হিসেবে আমার জলকেই ব্যবহার করত। আমার পাড়

ছিল বাঁধানো, চারিদিকে ছিল চারটি সুদৃশ্য ঘাট। সকালে বিকেলে কলশি কাঁখে মেয়েদের চপল

হাসিতে, শিশুদের কলরোলে আর বয়স্ক মানুষদের সমাগমে আমার পাড়গুলি জমজমাট হয়ে উঠত।

ওই যে দূরে দেখতে পাচ্ছ ভাঙা অট্টালিকা, এটাই ছিল তখন জমিদারবাড়ি। তাঁরা ছিলেন দয়ালু।

সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে তাঁরা কখনো মুখ ফিরিয়ে নেননি। শুনেছি আমার প্রতিষ্ঠার বছরে

প্রবল অনাবৃষ্টি ও খরায় মানুষের দুঃখ দেখে জমিদারের মা-ঠাকুরানির আজ্ঞায় আমাকে খনন করা হয় ৷ সেই থেকে আমি কত মানুষের তৃয়া মিটিয়েছি, কত পাখি, কত মাছ, কত জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ আমার আশ্রয়ে কত প্রজন্ম পার করে দিল— আমার নিজেরই তা খেয়াল নেই। সেইসব দিনের সাক্ষী কেবল ওই বুড়ো বট, আমি তার শিকড়ে রস যোগাই, সে আমার বুকে ছায়া ফেলে। শুনেছি, জমিদার বংশের উত্তরাধিকারীরা এই জমি-বাড়ি বেচে দেবে। ওই অট্টালিক থাকবে না, কাটা পড়বে বুড়ো বট, আমাকেও হয়তো বুজিয়ে ফেলা হবে। তারপর একদিন এখানে এসে তুমি দেখবে চোখ বাঁধানো সুদৃশ্য নতুন ইমারত। তার আগে আমার পাশে

এসে একটু বোসো আর কান পাতো। বুড়ো বটের দীর্ঘশ্বাসে আমার বুকের ওঠা ঢেউয়ের তালে

তালে জমা থাকা গল্পগুলো হয়তো শুনে ফেলতেও পারো।





রচনা

★পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা


আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের

পরিবেশ। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুস্থ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। অথচ সেই পরিবেশই মানুষের অনন্ত চাহিদা আর অপরিমেয় লোভের শিকার হয়ে ক্রমশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। বাতাস, জল,

মাটিতে দুষণের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে।

যানবাহন আর কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষ সর্দিকাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়ার মতো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে বা তার ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, এমনকী জড় জগৎও। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার আর কীটনাশক জ্বালানি, হিসেবে ব্যবহৃত তেল জলকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে তুলছে। এসব বর্জ্যে, শহরাঞ্চলের আবর্জনায় আর জঞ্ঝালে মাটিও দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের প্রবল শব্দ, শব্দবাজি, মাইক্রোফোনের উচ্চশব্দ স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দিচ্ছে, বধিরতা সৃষ্টি করছে, হৃৎস্পন্দনের হারে তারতম্য ও রক্তচাপের হ্রাস বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠছে। পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও অস্ত্র পরীক্ষা তেজস্ক্রিয় দূষণকে ত্বরান্বিত করে তুলেছে।

যন্ত্রসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মূল্য দিতে মানুষ তার উন্নতি আর স্বাচ্ছন্দ্যের লক্ষ্যে পরিবশেকে প্রতিনিয়ত আঘাত করেছে। উপেক্ষা করেছে প্রকৃতিকে।বাসস্থানের প্রয়োজনে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করেছে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির লক্ষ্যে ভুলে গেছে

পরিবেশের ভারসাম্যের দিকটিকে। এই দূষণের কবল থেকে বাঁচতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব

নিতে হবে। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার পাশাপাশি তাকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা

নিতে পারে অদম্য প্রাণশক্তিতে উদ্দীপ্ত তরুণ ছাত্রসমাজ। কেননা তারাই ভবিষ্যতের সুনাগরিক।

পরিবেশ সুরক্ষার পরিকল্পনা ও পরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্ব তারা নিলে তাদেরই ভবিষ্যৎ অনেক

সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে। যারা সচেতন নয়, তাদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীরা

এগিয়ে আসতে পারে। দলবদ্ধভাবে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পোস্টার, চার্ট, ফেস্টুন তৈরি করে

শোভাযাত্রার মাধ্যমে, বিদ্যালয়ে অরণ্য সপ্তাহ বা বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ কাজে তারা সামিল হতে পারে।

বৃক্ষরোপণ ও বনসংরক্ষণের ব্যাপারে, বায়ুদূষণ শব্দদূষণ বা জলদূষণ রোধে ছাত্রছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট

সরকারি দপ্তরে নিজেদের দাবি জানাতে পারে। প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত

করতে পারে। দূষণমুক্ত পরিবশে গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে আলোচনা সভা ও পথনাটিকার

আয়োজন করতে পারে। এছাড়াও ক্যুইজ, বক্তৃতা, বিতর্ক, আলোচনাসভা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে, পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প নির্মাণ, প্রাচীরপত্র লিখন,দেয়াল পত্রিকা লিখন এবং সংবাদপত্রে প্রতিবেদন রচনার মাধ্যমেও পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।




রচনা

★ দেশভ্রমণ

বৈচিত্র্যপূর্ণ এই বিশ্বে সুপ্রাচীন কাল থেকেই দেশভ্রমণের সূচনা। অদেখাকে দেখা, অজানাকে জানা আর অচেনাকে চেনার দুর্নিবার আগ্রহে সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, বৈচিত্র্যসন্ধানী চলিয়ু মানুষের ভ্রমণ

ছিল অব্যাহত। জ্ঞানার্জনস্পৃহায় উৎসুক ছাত্রেরা দেশান্তরে পাড়ি দিয়েছেন, রাজারা বেরিয়েছেন

দিগ্বিজয়ে, বণিকেরা বাণিজ্যতরী চালিয়েছেন অকূল অনন্ত সমুদ্রে। বিশ্বব্যাপী শান্তি আর মৈত্রীর

বাণী প্রচার করেছেন ধর্মপ্রচারকেরা। পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং প্রমুখ ভারতবর্ষে এসেছেন, দুঃসাহসিক অভিযানে সামিল হয়েছেন কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা, আমেরিগো ভেসপুচি, হ্যারি জনস্টন, মার্কোপোলো, হাডসন, স্কট, শ্যাকলটনের মতো অভিযাত্রীরা। ভূপর্যটক

কুক-ম্যাংলিন, স্টানলি-লিভিংস্টোনের কথাও সুবিদিত। এমনকী, নিছক আনন্দ আহরণের তাগিদেও ঘরের নিশ্চিত্ত আশ্রয় ছেড়েছে সাধারণ মানুষ। সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে সে তার স্পর্ধিত পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে, উড়িয়ে দিয়েছে তার বিজয় পতাকা। অসীম কৌতূহলে সে স্পর্শ করেছে সমুদ্রের সুগভীর

তলদেশকে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নিজের আধিপত্যকে কায়েম করেছে। প্রতিকূল আর ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভ্রমণ আধুনিক যুগের নানাবিধ আবিষ্কারের সুবাদে এখন অনেক নিরাপদ, সুখকর, স্বচ্ছন্দ ও সুপরিকল্পিত হয়ে উঠেছে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ভ্রমণ স্থানগুলিতে বিলাসবহুল হোটেল, লজ, রিসর্ট, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার পাশাপাশি

‘হোম স্টে’তে থাকার সুবিধাও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। দ্রুতগামী সব যানবাহন ভৌগোলিক দূরত্ব

অতিক্রমকে সহজ ও অনায়াসসাধ্য করে দিয়েছে। এ ভাবেই পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে

ইতিবাচক প্রভাব গড়ে তোলে। ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আমরা কোনো বিশেষ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, সেখানকার দর্শনীয় স্থান ও মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদানগুলি সম্পর্কে যেমন অবহিত হই, তেমনই সেখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, উৎসব-অনুষ্ঠান, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, স্থাপত্য ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ভাষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এসবের সঙ্গে পরিচিত হই। আমাদের এই পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে হৃদয়ের প্রসারতা বাড়ে, পরস্পরের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ভাবের বিনিময় হয়, দেশবিদেশের মানুষের সান্নিধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বাতাবরণ রচিত হয়, কূপমণ্ডূকতা ঘুচে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।

বই পড়ার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, প্রাণবন্ত ও আনন্দময় হয়ে

ওঠে। পুথিসর্বস্ব নীরস তথ্যনির্ভর শিক্ষার আবেষ্টন ছেড়ে আমরা নতুন চেতনায় ভাস্বর হয়ে উঠি

ভ্রমণ সাহিত্যের ধারাটিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দেশবিদেশের ভ্রমণবৃত্তান্ত পাঠের মধ্যে দিয়ে আমর

মানসভ্রমণের অপার আনন্দ লাভ করে থাকি।






রচনা

★আমার প্রথম বাজার করার অভিজ্ঞতা



বাজারে তো ছোটোবেলা থেকেই যাই। ক্লাস ফাইভের পর থেকে বাবা প্রতি রবিবার নিয়ম করে আমাকে নিয়ে বাজারে যান। বাবা বাজার করেন আর আমাকে বলতে থাকেন দুনিয়ার হাল হকিকত। আমিও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি কর্মব্যস্ত মানুষের চলাফেরা, হাঁকাহাঁকি, দরদাম, দেখি কীভাবে প্রকাণ্ড সব বোঝা মাথায় নিয়ে মুটে চলেছেন, মাছওলা মস্ত বড়ো বঁটি দিয়ে ঘ্যাচ

ঘ্যাঁচ করে মাছ কাটছেন, বুড়ি তরকারিউলি চোখের একদম সামনে হাত এনে গুনে নিচ্ছেন

খুচরো পয়সা। এইভাবে বাজারের অনেকের সঙ্গেই আমার বেশ আলাপ হয়ে গেছে। এই

তো সন্ধ্যা পিসি আছেন, তরকারি বেচেন, আমি গেলেই হাতে একটা শশা কি টমেটো কি কতকগুলো মটরশুঁটি ধরিয়ে দেবেন, তক্ষুনি খেতে হবে। দাম দিতে গেলে কী রাগারাগি । আমি বাবার দেখাদেখি সক্কলকে ‘আপনি’- করে বলি আর বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করি। এভাবেই বাজারের সবাই আমার পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই, প্রথম যেদিন আমাকে একা বাজারে যেতে হয়েছিল, আমি মোটেও ভয় পাইনি। বাবা কোনো একটা কাজে বাইরে গেছিলেন। হঠাৎ খবর পাওয়া গেল ছোটোমামারা আসছেন। মা তো একইসঙ্গে খুব খুশি আর ভয়ানক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। বাড়িতে এত কাজ অথচ বাজার প্রায় কিছুই নেই। তখন আমিই বললাম যে, চিন্তার কিছু নেই, আমি তো বাজার কীভাবে করতে হয় জানিই। মা প্রথমে ভরসা করতে না পারলেও শেষ অবধি অন্য উপায় না দেখে বাজারের থলে, জিনিসপত্রের ফর্দ আর দু'শো টাকার একটা নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। এত টাকা এর আগে কখনো ছুঁইনি। নিজেকে বেশ দায়িত্বপ্রাপ্ত আর বড়ো-বড়ো মনে হতে লাগল। বুক ফুলিয়ে বাজারে ঢুকতেই কিন্তু চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো আমার সাহসও দমে গেল। এত লোক, হই-হট্টগোল আর দৌড়াদৌড়ির মধ্যে নিজেকে বেশ অসহায় লাগছিল। বাবার হাতটা শক্ত করে ধরতে না পারলে এখনো যে বাইরের পৃথিবীটাকে অচেনা আর কঠিন মনে হয়, বুঝতে পারলাম। পাড়ার একজন পরিচিত ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘একা একা বাজার করতে এসেছ?’

আমি ‘হ্যাঁ’ বলায় ভদ্রলোক একটু অবাকই হলেন মনে হলো। একে একে ফর্দ মিলিয়ে সবকিছু কিনে নিলাম ৷ দোকানিরাও আমাকে একা দেখে অবাক, খুশিও। বুড়ি দিদা অনেকগুলো পিঁয়াজকলি ফাউ দিলেন। ফাউ এনেছি শুনলে মা বকবেন, তাই আমি বারবার দিদাকে বলে দিলাম যাতে কাউকে না বলেন ৷

বাজার শেষ হবার পর পয়সা-টয়সা গুনে দেখা গেল তেত্তিরিশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা বেঁচেছে মা থলে দেখে বললেন, ‘চমৎকার বাজার হয়েছে, সবাই যেন তোমাকে বেশি বেশি করে সবজি আর মাছ দিয়েছে।' মায়ের কথা শুনেই বুঝলাম মা যথেষ্ট খুশি। প্রথমদিন এক একা বাজার করতে ভীষণ ভালো লাগল আমার।



রচনা লিষ্ট নীচে রচনা গুলি দেখুন





পত্ররচনা বাবা কে