অষ্টম স্বাধীনতা বাংলা "জেলখানায় চিঠি"" সুভাষচন্দ্র বসু হাতে-কলমে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
অষ্টম স্বাধীনতা বাংলা
"জেলখানায় চিঠি"
সুভাষচন্দ্র বসু
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন?
উঃ। ভারতবিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক এটেন সাহেবকে প্রহারের অভিযোগে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।
১.২ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?
উঃ। রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।
২. অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
২.১ তোমার পাঠ্য পত্রখানি যে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন?
উঃ। এই পাঠাখানি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেল থেকে তাঁর পর দিলীপ রায়কে লিখেছিলেন।
২.২ কোন ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন?
উঃ। ইংরেজ শাসিত পরাধীন ভারতের শৃঙ্খলমোচনের ভার লেখক নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে তার জেলে বন্দি থাকার ব্যাপারটিকে লেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন
২.৩ বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?
উঃ। সাধারণত একটা দার্শনিকভাব বন্দিদশায় মানুষের অন্তরে শক্তির সংখ্যার করে। মানুষের আস্তরে যদি ভাবনাচিত্তার বিষয় যথেষ্ট পরিমাণে থাকে তাহলে বন্দিদশাতেও তার মানসিক কষ্ট খুব একটা হয় না।
২.৪ মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত?
উঃ। মান্দালয় জেল ব্রাদেশে অর্থাৎ আজকের ময়ানায়ানমার-এ অবস্থিত।
২.৫ ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?
উঃ। লেখকের বেশি উদ্যম ও শক্তি থাকলে ভারতীয় কোনো বিষয়ে একখানা বই লিখে ফেলার চেষ্টা তিনি করছেন, কিন্তু সে চেষ্টার উপযুক্ত শারীরিক সামর্থ শক্তি ও উদ্যম লেখক সুভাষচন্দ্রের না থাকায় তাই একখানা বই তিনি লিখতে পারেননি।
২.৬ সুভাষচন্দ্ৰ কেন দিলীপ রায়কে প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?
উঃ। লেখক সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর পরম বন্ধু দিলীপ রায়ের পাঠানো বইগুলি সব পেয়েছিলেন। কিন্তু এই বইগুলি পড়ার।জন্য জেলে অন্য অনেক পাঠক ছুটে যাওয়ায় সেগুলি তিনি আর ফেরত পাঠাতে পারেননি।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো :
৩.১ নেতাটি ভবিষ্যতের কোন কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য কি করেছেন।
কারা-শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?
উঃ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর প্রিয়বন্ধু দিলীপ রায়কে লিখেছেন ভবিষ্যতে কারা সংস্কার করা হবে তাঁর একটা লেখকের মতে কোনো ভদ্র বা সুশিক্ষিত ব্যক্তি কখনোই কারাবাস করতে পারে না। কারণ জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত ও অমানুষ করে তোলারই উপযোগী এবং এই কথাটা মনে জেলের পক্ষেই প্রযোজ্য।কারবাসে অধিকাংশ অপরাধীদের কোনো নৈতিক উন্নতি হয় না বরং তারা যেন আরোও হীন হয়ে পড়ে। তাই ভবিষ্যতে কারা-শাসন প্রণালী সংস্কার করার কর্তব্য স্থির করেছেন।।কারা শাসন প্রণালী বিষয়ে লেখক সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ প্রণালীর পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস-এর মতো উন্নত দেশগুলির ব্যবস্থাই অনুসরণ করতে চান। কারণ তাঁর মতে কারা শাসনে ব্রিটিশ প্রণালী একটি খারাপ আদর্শের অনুসরণ মাত্র
৩.২ ‘সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।'—বক্তা কে? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?
উঃ। এই উক্তিটির বক্তা হলেন লেখক সুভাষচন্দ্র বসু স্বয়ং।
লেখকের বন্ধু দিলীপ রায়ের ২৪/০৩/১৯২৫ তারিখের চিঠি পেয়ে লেখক খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। বন্ধু দিলীপ আশঙ্কা করেছিলেন যে মাঝে মাঝে যেমন হয় তেমনি চিঠিখানাকে double distillation-এর ভিতর দিয়ে আসতে হবে ।কিন্তু এবার তা হয়নি, তাই লেখক খুবই খুশি হয়েছেন।
৩.৩ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।'—কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেবার কথা বলা হয়েছে?
উঃ। এই উক্তিটির বক্তা হলেন লেখক সুভাষচন্দ্র বসু।
তিনি এই কথা তাঁর পরম মিত্র দিলীপ রায়কে বলেছিলেন। দিলীপ রায়ের লেখা চিঠি তাঁর হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমলভাবে স্পর্শ করে চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল যে, লেখকের পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন ব্যাপার ছিল।
৩.৪ পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যেজন ভুক্তভোগী।'—উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও?
উঃ। উদ্ধৃতিটির একটি সমার্থক বাক্য হলো—আমার মনে হয় না আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।
লেখক একজন মানবতাবাদী মানুষ। অপরাধীদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল, তাদের প্রবৃত্তিগুলিকে মানসিক ব্যাধি।বলেই তিনি ধরতে চান এবং সেইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন। তিনি নিজে কারাবাস করে বুঝলেন।কবে বুঝেঝছেন, অপরাধীদের প্রতি ষৈধকমূলক দন্ডবিধির বদলে তিনি সংস্কারমূলক দন্ডবিধির প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
৩.৫ আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব। —কোন প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হবার কথা বলেছেন?
উঃ। ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতে মান্দালয় জেলে সুভাষচন্দ্র দীর্ঘকাল বন্দি ছিলেন। জেলের মধ্যে যে নির্জনতায় মানুষকে।বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয়, সেই নির্জনতাই তাঁকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বোঝবার সুযোগ করে দেয়। লেখক নিজের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, যে আমাদের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত জীবনের অনেক জটিল প্রশ্নই বছরখানেক
আগের চেয়ে এখন যেন অনেকটা সমাধানের দিকে পৌঁছে দিচ্ছে এই প্রসঙ্গেই বক্তার এই উক্তি।
লেখক সুভাষচন্দ্র মনে করেছেন কারাবাস তাঁকে আধ্যাত্মিক দিক থেকে লাভবান করবে। যে সমস্ত মতামত এক সময়ে নিতান্ত ক্ষীণভাবে চিন্তা বা প্রকাশ করা যেত, যে সমস্যাগুলির সঠিক সমাধান তিনি করতে পারছিলেন না, জেল জীবনের নির্জনতার মধ্যে তা যেন সমাধানের পথে এগিয়েছে বলে লেখক মনে করেছেন। আজ যেন সেগুলো স্পষ্ট ও সরল হচ্ছে উঠেছে। অন্য কারণে না হলেও শুধু এই জন্যই লেখক সুভাষচন্দ্র মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অনেকখানি লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেছেন।
3.6 Martyrdom' শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?
উঃ। Martyrdom শব্দটির অর্থ হলো আত্মবলিদান।
লেখকের পরমবন্ধু দিলীপ রায়, কারাবাসকে একটা Martyrdom বলে অভিহিত করেছেন। প্রসঙ্গে লেখক সুভাষচন্দ্রের বক্তব্য হলো—এটা বন্ধুর গভীর অনুভূতি ও প্রাণের মহত্ত্বেরই পরিচায়ক। কিন্তু লেখকের সামান্য কিছু bhumoun ও Proportion-এর জ্ঞান আছে (অদ্ভুত লেখকের আশা তা আছে) তাই নিজেকে Martye বলে মনে করবার মতো থা
তার নেই। স্পর্ধা বা আত্মম্ভরিতা জিনিসটা তিনি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে চান, অবশ্য সে বিষয়ে কতখানি তিনি সফল হয়েছেন তা শুধু লেখকের বন্ধুরাই বলতে পারেন। তাই Martyrdom জিনিসটা লেখকের কাছে বড়োাজ্যের একটি মহৎ
৩.৭ যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায়। —কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? তাদের মূল্য' বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলোচনা করো।
উঃ। আলিপুর জেলে ইউরোপীয় কয়েদিদের জন্য বিভিন্ন মনের খুনমূলক ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেছেন। কিন্তু ভারতীয়দের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ভারতীয় কয়েদিরা নীরস বুদ্ধ প্রকৃতির হয়, তাদের মনে বিকৃত্তিভাব দেখা দেয়। সবাইকে।ছেড়ে নির্জনে থাকার অনুভূতি কেমন তা তখনই বোঝা যায় যখন কাটাকে জোর করে বন্দি রাখা হয়। ফলস্বরূপ দীর্ঘদিন কারাবাস মানুষকে ধারে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ করে তোলে। তখনই স্বাধীনতার মূল্য বোঝা যায়। এই প্রসঙ্গে লেখক এইরকম উত্তি করেছেন। এখানে ‘তাদের মূল্য' বলতে লেখক সেই বস্তুগুলিকে বুঝিয়েছেন যা মানুষ বন্দিজীবনে পায় না। জেলে বন্দিত্ব মানুষকে দেহে ও মনে মৃতপ্রায় করে তোলে। পিকনিক, বিশ্রস্তালাভ, সংগীতচর্চা, সাধারণ বক্তৃতা, খেলার জায়গায় খেলাধূলা করা,
মনোমত কাব্য সাহিত্যের চর্চা এই সব মানুষের জীবনকে কতখানি সরস করে তোলে তা আমরা সাধারণ মানুষ হিসাবে বুঝতে পারি না। কিন্তু আমাদের যখন বন্দি করে রাখা হয় তখনই এগুলির মূল্য কতটা অপরিসীম তা আমরা বুঝতে পারি।
৩.৮ 'মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়। —যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলব্ধি ঘটে।তার পরিচয় দাও।
উঃ। কারাজীবনের নানা অসুবিধা প্রসঙ্গে বহু দিলীপ রায়কে লেখা পত্রটিতে লেখক সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন জেলে দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট সরচেয়ে বেশি। যেখানে অত্যাচার ও অপমানের আঘাত যথাসম্ভব কম আসে সেই বন্দি জীবনটা ততটা যন্ত্রণাদায়ক হয় না। এই সমস্ত সূক্ষ্ম ধরনের আঘাত উপর থেকেই আসে, জোলের কর্তাদের এ বিষয়ে
কিন্তু হাত থাকে না। অন্তত লেখকের সেইরকম অভিজ্ঞতা। এই যে সব আঘাত, উৎপীড়ন এগুলো আঘাতকারীর প্রতি মানুষের মনকে আরো বিরূপ করে তোলে। সেই দিক দিয়ে দেখলে মনে হয় এইগুলোর উদ্দেশ্য ব্যর্থ, কিন্তু পাছে আমরা
আমাদের পার্থিব অস্তিত্ব ভুলে যাই এবং নিজেদের অন্তরের মধ্যে একটা আনন্দের জগৎ গড়ে তুলি, তাই এই সব আঘাত আমাদের উপর বর্ষণ করে স্বপ্নাবিষ্ট আত্মাকে জাগিয়ে বলে দেয় মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়।
অন্য গুলি দেখুন
আলাপ
অন্য টা দেখুন দাঁড়াও
অন্যটা দেখুন আদাব
পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর
ভাষাচর্চা (১)