সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ৭ অধ্যায় অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ৭ অধ্যায়
ভেবে দেখো
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
খুঁজে দেখো
১. শূন্যস্থান পূরণ করো :
(ক) -–---টালি ও ইট/সিমেন্ট ও বালি/শ্বেত পাথর) ব্যবহার - করে বাংলায় সুলতানি ও মুঘল আমলে সাধারণ লোকের বাড়ি বানানো হত।
উঃ। টালি ও ইট।
(খ) কবীরের দুই পঙ্ক্তির কবিতাগুলিকে বলে--–
(ভজন / দোহা / কথকতা)।
উঃ। দোহা।
(গ) সুফিরা গুরু মনে করত - (পির/মুরিদ/বে-শরা)।
উঃ। পির।
(ঘ)------ (কলকাতা/নবদ্বীপ/মুর্শিদাবাদ) ছিল চৈতন্য আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র।
উঃ। নবদ্বীপ।
(ঙ) --–-(নানক/কবীর/মীরাবাঈ) ছিলেন শ্রীকৃয় বা গিরিধারীর সাধিকা।
উঃ মীরাবাঈ।
(চ) দীন-ই-ইলাহির বৈশিষ্ট্য ছিল মুঘল সম্রাট ও তাঁর অভিজাতদের মধ্যে ---(গুরু-শিষ্যের মালিক- শ্রমিকের/ রাজা-প্রজার) সম্পর্ক।
উঃ। রাজা-প্রজার।
(ছ) শ্বেতপাথরে রত্ন বসিয়ে কারুকার্য করাকে বলে –- (চাহার বাগ/পিয়েত্রা দুরা/টেরাকোটা)।
উঃ। পিয়েত্রা দুরা।
(জ) মহাভারতের ফারসি অনুবাদের নাম-–
(হমজানামা/ তুতিনামা/রজমনামা)।
উঃ। রজমনামা।
(ঝ) ----(দসবত্ত/মির সঈদ আলি/আবদুস সামাদ)পরিচিত ছিলেন ‘শিরিন কলম' নামে।
উঃ। আবদুস সামাদ।
(ঞ) জৌনপুরী রাগ তৈরি করেন-----(বৈজু বাওরা / হোসেন শাহ শরকি /ইব্রাহিম শাহ শরকি)
.উঃ। ইব্রাহিম শাহ শরকি।
(ট) শ্রীকৃয়বিজয় কাব্যের লেখকের নাম---কাশীরাম দাস/কৃত্তিবাস ওঝা/মালাধর বসু)।
উঃ। মালাধর বসু।
(ঠ) 'পারসিকচক্র’ কাজে লাগানো হত--—(জল তোলার জন্য/কামানের গোলা ছোড়ার জন্য/বাগান বানানোর জন্য)
উঃ -—(জল তোলার জন্য/
4। নিম্নলিখিত বিবৃতির সঙ্গে তার নীচের কোন ব্যাখ্যাটি তোমার সবচেয়ে মানানসই বলে মনে হয়?
(ক) নদীর (মাহনার শিল্পগুলি তৈরি হয়?
ব্যাখ্যা- নদীর বার শিল্প তৈরি করলে কর লাগতো না।
ব্যাখ্যা : কাল সব মানুষই নদীর ধারে থাকতো।
ব্যাখ্যা ৩ঃ কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি মাল রপ্তানির সুবিধা হত।
উঃ। ব্যাখ্যা ৩বাঁচামাল আমদানি ও তৈরি মাল রপ্তানির সুবিধা হত।
(খ) বিবৃতিঃ চৈতন্য বাংলা ভাষাকেই ভর্তি প্রচারের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।
ব্যাখ্যা-১: তিনি শুধু বাংলা ভাষাই জানতেন।
ব্যাখ্যা-২ঃ সেকালের বাংলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।
ব্যাখ্যা-ত: ভর্তি বিষয়ক সব এই বাংলায় লেখা হয়েছিল।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ ঃ সেকালের বাংলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।
(গ) বিবৃতিঃ চিশতি সুফিরা রাজনীতিতে যোগ দিতেন না।
ব্যাখ্যা-১: তারা বিশ্বাস করতেন যে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়।
ব্যাখ্যা-২ : তারা রাজনীতি বুঝতেন না।
ব্যাখ্যা-৩ঃ তারা মানবদরদী ছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-১ঃ তারা বিশ্বাস করতেন যে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়।
(ঘ) বিবৃত্তিঃ আকবর দিন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেন।
ব্যাখ্যা-১ঃ তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী ছিলেন।
ব্যাখ্যা-২: তিনি অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা-৩ঃ তিনি যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ঃ তিনি অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
(ঙ) বিবৃতিঃ মুঘল সম্রাটরা দুর্গ বানাতে আগ্রহী ছিলেন।
ব্যাখ্যা-১ঃ দুর্গ বানানোর খরচ ছিল কম।
ব্যাখ্যা-২: দুর্গ বানানো ছিল প্রাসাদ বানানোর চেয়ে সহজ।
ব্যাখ্যা-৩ঃ দুর্গ বানানোয় সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হত।
উঃ। ব্যাখ্যা-৩ঃ দুর্গ বানানোয় সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হত।
(চ) বিবৃতি ঃ জাহাঙ্গিরের আমলে ইউরোপীয় ছবির প্রভাব মুঘল চিত্রশিল্পে পড়েছিল।
ব্যাখ্যা-১: এই সময়ে ইউরোপীয় ছবি মুঘল দরবারে আসতে শুরু করেছিল।
ব্যাখ্যা-২ঃ মুঘল শিল্পীরা সবাই ছিল ইউরোপীয়।
ব্যাখ্যা-৩ঃ ভারতীয় শিল্পীরা এই সময় ইউরোপ থেকে ছবি আঁকা শিখে এসেছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-১৪ এই সময়ে ইউরোপীয় ছবি মুঘল দরবারে আসতে শুরু করেছিল।
(ছ) বিবৃতিঃ মধ্যযুগের মণিপুরি নৃত্যে রাধা-কৃয় ছিলেন প্রধান চরিত্র।
ব্যাখ্যা-১ঃ ভারতে নৃত্যের দেবদেবী হলেন কৃষ্ণও রাধা।
ব্যাখ্যা-২ এই সময় বৈয়বধর্ম মণিপুরে বিস্তার লাভ করেছিল।
ব্যাখ্যা-৩ঃ চৈতন্যদেব ছিলেন মণিপুরের লোক।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ এই সময় বৈবধর্ম মণিপুরে বিস্তার লাভ করেছিল।
(জ) বিবৃতি ঃ ভারতে প্রাচীনকালে তালপাতার উপরে লেখা হত।
ব্যাখ্যা- ১ সে আমলে কাগজের ব্যবহার জানা ছিল না।
ব্যাখ্যা- ২ঃ সে আমলে ভারতে কাগজের দাম খুব বেশি ছিল।
ব্যাখ্যা-৩ : সে আমলে ভারতীয়রা কাগজের উপরে লেখার কালি আবিষ্কার করতে পারেনি।
উঃ। ব্যাখ্যা-১৪ সে আমলে কাগজের ব্যবহার জানা ছিল না।
৩। সংক্ষেপে (৩০–৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন্ কোন্ ফল, সবজি ও শস্যের চাষ সবচেয়ে বেশি হত?
উঃ। সুলতানি ও মুঘল যুগে গাঙ্গেয় সমভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে আমের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। আঙুর,খেজুর, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারকেল প্রভৃতি ফলের চাষ হত। শস্যের মধ্যে ধান, গম, যব, ডাল, সরযে প্রভৃতির চাষ হত।
সবজির মধ্যে লংকা, আদা, নানা ধরনের মশলা, নানা ধরনের শাক, পটল, বেগুন প্রভৃতির ফলন হত।
(খ) মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা কারা ছিলেন?
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা ছিলেন নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবির, নানক, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই প্রায় খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকের মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া অলভার ও নায়নার সাধকেরা ছিলেন দক্ষিণের সাধক।
(গ) সিলসিলা কাকে বলে? চিশতি সুফিদের জীবনযাপন কেমন ছিল?
উঃ। সিলসিলা মানে হচ্ছে গোষ্ঠী।
চিশতি সুফিদের জীবন ছিল খোলামেলা। তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকতেন ‘খানকা বা আশ্রমে। তাঁরা ধর্ম, অর্থ, ক্ষমতার মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করতেন না। চিশতি সুফিরা রাজনীতি ও রাজদরবার
থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে রাজ্য পরিচালনার কাজে জড়িয়ে পড়লে কোনোভাবেই ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়। শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন এই গোষ্ঠী বা সিলসিলার অন্যতম সাধক।
(ঘ) দীন-ই-ইলাহি-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেমন ছিল?
উঃ । যিনি দীন-ই-ইলাহি গ্রহণ করতেন তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর জীবন (জান), সম্পত্তি (মাস), ধর্ম (দীন) ও সম্মান (নামুস) বিসর্জন (কুরবান) দেওয়ার শপথ নিতেন। শিষ্য (মুরিদ) যেমন তার সুফি গুরুর (পীর) পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে, তাঁকেও তেমনই বাদশাহের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হত। এরপর অনুষ্ঠান শেষ হলে বাদশাহ তাঁকে একটি নতুন পাগড়ি, সূর্যের একটি পদক ও পাগড়ির সামনে লাগানোর জন্য বাদশাহের নিজের ছোট্ট একটা ছবি দিতেন।
(ঙ) স্থাপত্য হিসাবে আলাই দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য কী?
উঃ। আলাই দরওয়াজা তৈরি হয় সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আমলে। এটি ছিল ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যশিল্পের একটি অসাধারণ নমুনা। লাল বেলেপাথরের তৈরি এই দরওয়াজা যেন সুলতান আলাউদ্দিনের ক্ষমতার প্রতিফলন ছিল। এর গায়ে আল্লাহর কথা নয়, খোদাই হয়েছিল সুলতানের প্রশংসা।
(চ) ক্যালিগ্রাফি ও মিনিয়েচার বলতে কী বোঝায়?
উঃ। মুঘল যুগে সুন্দর হাতের লেখা শিল্পের সেকালে খুব চর্চা হত। একে ইংরেজিতে বলে Calligraphy
(ক্যালিগ্রাফি)। বাংলায় একে হস্তলিপি বিদ্যা বা হস্তলিপি শিল্প বলা হতো।। বই-এর প্রতিটি পৃষ্ঠা সাজানো হতো সূক্ষ্ম হস্তলিপি ও ছবি দিয়ে। আকার ও আয়তনে ছোটো এই ছবিগুলিকে বলা হয় Miniature (মিনিয়েচার)। মিনিয়েচার কথাটি ইংরেজী।বাংলায় তাকে অনুচিত্র বলা যেতে পারে।
(জ) শিবায়ন কী? এর থেকে বাংলার কৃষকের জীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
উঃ। সুলতানি আমলে শিবকে নিয়েও সাহিত্য লেখা হয়েছে। সেই লেখাগুলিকে ‘শিবায়ন’ বলে। পুরাণে শিব বিষয়ে যে কাহিনি তার সঙ্গে শিব-দুর্গার ঘর-সংসারের কথা জুড়ে শিবায়ন কাব্যগুলি লেখা হয়েছে। শিবায়নে গরিব শিব-দুর্গা ও তাদের জীবনের কথা লেখা হয়েছে। শিব সেখানে চাষবাস করে রোজগারের চেষ্টা করে। এই লেখাগুলিতে সেই সময়ের বাংলাদেশের গরিব কৃষক পরিবার যেন শিব-দুর্গার পরিবারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।
(ঝ) কাগজ কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল? মধ্যযুগের ভারতে কাগজের ব্যবহার কেমন ছিল তা লেখো।
উঃ। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়।
অল্প কিছুকালের মধ্যেই ভারতে কাগজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে লেখাপড়ার কাজ সহজ হয়।
চতুর্দশ শতকে কাগজ এতটাই সস্তা হয়েছিল যে ময়রা মিষ্টি দেবার জন্য কাগজ ব্যবহার করতো।
৪। বিশদে (১০০–১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) মধ্যযুগের ভারতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা লেখো।
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করতেন। কৃষি-পণ্যকে ভিত্তি করে গ্রামে কারিগরী শিল্প চলত। সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। গরিব কৃষক পরিবারে নারী- পুরুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার ও খামারে পরিশ্রম করতে হত। সাধারণ গরিব জনগণের বসতির জন্য সামান্য কিছু উপকরণ লাগত। একটি পাতকুয়া, ডোবা বা পুকুর থাকলেই বসতি তৈরি করে নিতে পারত গ্রামের মানুষ। ঘর তোলার জন্য কয়েকটি গাছের গুঁড়ি, চাল ছাইবার জন্যে কিছু খড়।এতেই তারা মাথা গোঁজবার ঠাঁই করে নিত।
সরকারি খাজনা ও নানা পাওনা মিটিয়ে ফসলের কিছু অংশ কৃষকের হাতে থাকতো। সেটাই ছিল তার রোজকার ব্যবহারের সম্বল। বছরের কয়েকটা ঋতুতে কৃষক পরিবারগুলি দিনরাত পরিশ্রম করত। গরিবরা মাংসের স্বাদ প্রায় জানতোই না। তাদের রোজকার খাবার ছিল খিচুড়ি। তাই দিয়েই সারাদিনে একবার মাত্র তারা শুকনো পেট ভরাতো। পরবার পোশাকও যথেষ্ট ছিল না। একজোড়া খাটিয়া ও রান্নার দু-একখানা বাসনই ছিল তাদের ঘর-গৃহস্থালি। বিছানার চাদর ছিল একটা বা দুটো। তাই তারা পেতে শুতো, দরকারে গায়ে দিত। গরমের দিনে তা যথেষ্ট হলেও দারুণ শীতে তাদের ভীষণই কষ্ট হতো। পালা-পার্বণে আনন্দ-উৎসব ছিল একঘেয়ে জীবনের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম। সে যুগের খেলাধূলার মধ্যে কুস্তি ছিল একটি জনপ্রিয় খেলা। লোকগান, নাটক , জাদুকরের খেলা, সং প্রভৃতি ছিল সাধারণ মানুষের আনন্দের উপকরণ।
(খ) কবীরের ভক্তি ভাবনায় কীভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক হয়ে গিয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
উঃ। রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে সম্ভবত একজন ছিলেন কবীর। বারাণসীতে মুসলিম জোলাহা
(তাঁতি) পরিবারে পালিত কবীর ছিলেন চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের একজন বিখ্যাত ভক্তিসাধক।
ইসলামের একেশ্বরবাদের সাথে বৈয়ব, নাথযোগী এবং তান্ত্রিক বিশ্বাসও এসে মিশেছিল কবীরের
ভক্তিচিন্তায়। তাঁর কাছে সব ধর্মই ছিল এক, সব ভগবানই সমান। তাঁর মতে রাম, হরি, গোবিন্দ,
আল্লাহ্, সাঁই, সাহিব ইত্যাদি ছিল এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন নাম। তাঁর এই দর্শন তখনকার সমাজে
হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যের বিভেদ ও বিরোধ মেটাতে খুবই সাহায্য করেছিল। কবীর বিশ্বাস করতেন যে মানুষ তার ভক্তি দিয়ে নিজের মনেই ঈশ্বর কে খুঁজে পাবে। তার জন্য মন্দির বা মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই মূর্তি পুজো বা গঙ্গাস্নান বা নামাজ পড়া তাঁর কাছে ছিল অর্থহীন। তখনকার সামাজিক জীবনে কবীরের ভাবনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁর রচিত দোহা এবং গান শুনলে বোঝা যাবে তিনি ধর্মের লোক দেখানো আচারের বিরোধী ছিলেন।
(গ) বাংলায় বৈষুব আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছিল বিশ্লেষণ করো।
উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বাংলায় শ্রীচৈতন্য যে ভক্তি আন্দোলন প্রচার করেন তার ফলে বাংলায় বৈষুব ভক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। শ্রীচৈতন্য বাংলায় পূর্বের বৈয়ব ধর্মের ঐতিহ্য ও ভক্তিবাদের ভাবনাকে একাকার করে দেন। জাত ধর্ম-বর্ণ এই ভেদাভেদের বিরুদ্ধে বৈষুব ভক্তির একটি আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিক থেকে বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব কমতে থাকে। চৈতন্যদেব ও তাঁর অনুগামীরা জাতিভেদ না-মানলেও সমাজে ভেদাভেদ থেকেই গিয়েছিল।
সবরকম ভেদাভেদ পুরো দূর করতে না পারলেও, সেগুলোকে তুচ্ছ করা যায়—এ কথা চৈতন্যদেব জোর দিয়েই প্রচার করেন। সেকালের তুলনায় চিন্তা করলে এটাই ছিল একটা বড়ো সাফল্য। তবে চৈতন্য ও তাঁর ভক্তি আন্দোলনের সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়েছিল বাংলার সংস্কৃতিতে। সাধারণ মানুষের বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়ে সেই ভাষাতেই ভক্তি প্রচার করেন চৈতন্যদেব। শ্রীচৈতন্যের জীবন ও বৈষ্ণব ভক্তিবাদ নিয়ে অনেক সাহিত্য এই সময়ে রচিত হয়। শ্রীচৈতন্যের জীবন এবং কাজ নিয়ে অনেক বৈষুব কবি কাব্য রচনা করেন। এগুলিকে চৈতন্য জীবনী কাব্য বলা হয়। তার ফলে বাংলা-ভাষার বিকাশের পথ তৈরি হয়।
(ঘ) বাদশাহ আকবরের দীন-ই-ইলাহি সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
উঃ। ১৫৮০-এর দশকের মাঝামাঝি আকবর দীন-ই-ইলাহি নামে এক নতুন মতাদর্শ চালু করেন।
একসময় ভাবা হত দীন-ই-ইলাহি বোধহয় বাদশাহ আকবরের প্রচলিত এক নতুন ধর্ম। ইসলাম ধর্মের নানা ব্যাখ্যার মধ্যে থেকে তিনি সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য মতটি মেনে নিতেন। নানা ধর্মের গুরুদের সাথে আলোচনা করে তিনি বিভিন্ন ধর্ম থেকে নিজের পছন্দ মতো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেছে নিতেন। সেই
বৈশিষ্ট্যগুলিকে এক করে আকবর দীন-ই-ইলাহি তৈরি করেন।
।
(ঙ) মুঘল সম্রাটদের আমলে বাগান তৈরি ও দুর্গ নির্মাণ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘলরা ভারতে নতুন এক বাগান তৈরির কৌশল নিয়ে আসেন। পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে মুঘলরা এই কৌশল নিয়ে আসেন। সম্রাট বাবর, জাহাঙ্গির ও শাহাজাহানের ছিল বাগানের খুব শখ। চারভাগে ভাগ করা একরকম সাজানো বাগান মুঘল আমলে বানানো হত। তাকে ‘চাহার বাগ’ বলে। জাহাঙ্গিরের সময়ে বাগ বানানোর উদ্যোগ আবার শুরু হয়। আগ্রায়, কাশ্মীরে বানানো বাগানগুলির কথা সম্রাট জাহাঙ্গির লিখেছেন আত্মজীবনী জাহাঙ্গিরনামায়। মুঘল স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ শুরু হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকে। দুর্গ-
শহর, প্রাসাদ বানানোয় আকবর মনযোগী ছিলেন। এতে একদিকে যেমন সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হয়েছিল, আবার একই সাথে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশও ঘটেছিল।
চ) বাংলার স্থাপত্যর নীতির পর্যায়ক্রমিক মুল বৈশিষ্ট্য গুলি কী ছিল?
উঃবাংলার স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসকে তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।'প্রথম পর্যায় (১২০১–১৩৩৯), দ্বিতীয় পর্যায় (ইলিয়াস শাহি শাসনঃ (১৩৩৯–
১৪৪২) এবং তৃতীয় পর্যায় (১৪৪২–১৫৩৯) ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্প। প্রথম পর্যায়ে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ত্রিবেণীতে জাফর খানের সমাধির ভগ্নাবশেষ এবং বসিরহাটে ছড়িয়ে থাকা কিছু স্তূপ ছাড়া এসময়কার কোনও
মসজিদ। এ ছাড়া হুগলি জেলায় ছোটো পাণ্ডুয়ার মিনার ও মসজিদ এবং গৌড়ের শেখ আকি
দ্বিতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হলো পাণ্ডুয়ায় সিকন্দর শাহের বানানো আদিনা মসজিদ।
তৃতীয় পর্যায়ে বাংলায় ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্প সবচেয়ে উন্নত হয়। সুলতান জালালুদ্দিন মাহমুদ শাহের সমাধি বা একলাখি সমাধি ছিল এই ধাঁচের সেরা নিদর্শন।
(ছ) মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতিতে মুঘল বাদশাহের কী ভূমিকা ছিল?
উঃ। সুলতানি চিত্রশিল্পের ধারা মুঘল যুগে আরও পরিণত ও উন্নত হয়। বইতে ছবি আঁকা বা অলংকরণ সম্রাট বাবরের সময়ে দেখা যায়। এ ব্যাপারে সম্রাট হুমায়ুনেরও খুব উৎসাহ ছিল। সম্রাট আকবরের সময়ে ছোটো ছবি বা মিনিয়েচার দিয়ে বই সাজানো হত। যেমনঃ তুতিনামা, রজমনামা ইত্যাদি।
মিনিয়েচারকে বাংলায় অনুচিত্র বলা যেতে পারে। বই অলংকরণের পাশাপাশি প্রতিচ্ছবি আঁকাও আকবরের থেকে শুরু হয়। আকবরের আমলে বহু চিত্রকর পরিচিতি পান। প্রতি সপ্তাহে দারোগা ও কেরানিরা সমস্ত চিত্রকারদের ছবি বাদশাহ কে দেখাত। তিনি শিল্পীর গুণের বিচার করে পুরস্কার ঘোষণা করতেন বা মাস মাইনে বাড়িয়ে দিতেন। জাহাঙ্গিরের আমলে তা আরও উন্নত হয়। সেসময় থেকেই ইউরোপীয় ছবি আঁকার রীতিনীতির ছাপ মুঘল চিত্রশিল্পে পড়েছিল। ছবিতে বাস্তবতা ও প্রকৃতিবাদ-এর ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলেই শিল্পীরা প্রথম ছবিতে স্বাক্ষর করতে শুরু করেন। তাতে বোঝা যেত কোন ছবি কার আঁকা। বাদশাহি বা অভিজাত নারীরা অনেকেই ছবি আঁকার ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। তবে বাইরের শিল্পীদের দিয়ে অন্দরমহলের মহিলাদের ছবি আঁকানোর রেওয়াজ খুব বেশি ছিল না। নাদিরাবানু, সাহিফাবানুর মতো মুঘল নারীরা নিজেরাও ছবি আঁকতেন। সম্রাট শাহজাহানের সময়ে ছবির মধ্যে কাছে-দূরে বোঝানোর পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়। পাদশাহনামা গ্রন্থের অলংকরণ এই সময়ের বিখ্যাত কাজ। এইসব ছবিগুলি শিল্প হিসাবে অসাধারণ। পাশাপাশি এই ছবিগুলি সমকালীন ইতিহাসের উপাদানও হয়ে উঠেছে। শাহজাহানের পর মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতি খুব একটা দেখা যায় না।
(জ) মধ্যযুগের ভারতে কীভাবে ফারসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল তা বিশ্লেষণ করো।
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে ফারসি সাহিত্যের শুরু সুলতানি শাসনের হাত ধরে। দশম শতাব্দীতে তুর্কিরা যখন ভারতে আসে সম্ভবত তখন থেকেই ফারসির প্রচলন ঘটে। কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিশ ফারসি ভাষার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে খলজি যুগের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় লাহোর শহর হয়ে ওঠে ফারসি ভাষা চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
সেসময় ফারসি সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের মধ্যে আমির খসরু ছিলেন সবচেয়ে বিখ্যাত। খসরু ফারসি সাহিত্যের এক নতুন রচনাশৈলী সবক-ই-হিন্দ-এর আবিষ্কারক। সারাজীবন তিনি ফারসি কাব্য লেখার নানা প্রদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এসময়ে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ফারসি হয়ে ওঠে অতি পছন্দের ভাষা। মধ্যযুগে বহু রচনা মূল সংস্কৃত থেকে হারসিতে অনুবাদ করা হয়। এই ধারার প্রথম লেখক ছিলেন জিয়া নকশাবি। ফারসিতে অনুবাদের রেওয়াজ সমানভাবে।
(ঝ) সুলতানি ও মুঘল আমলে সামরিক ও কৃষি প্রযুক্তিতে কী কী পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল বলে তোমার মনে
উঃ। সামরিক ঃ সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই যুগে বড়ো রকমের একটা বদল দেখা যায়। চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে
বারুদ ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র চিন থেকে মোঙ্গলদের হাত ঘুরে প্রথমে ভারতে এসে পৌঁছায়। পরে ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হয় বারুদ-চালিত রকেটের ব্যবহার। পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মামেলুক শাসিত মিশর থেকে বন্দুকের প্রযুক্তি আসে ভারতে। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোর্তুগিজরা এই প্রযুক্তি দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেয়। এই সময়ের কাছাকাছি মুঘলরাও উত্তর ভারতে যুদ্ধে ব্যাপক হারে বন্দুক ও কামানের ব্যবহার চালু করে। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধের সময় সৈনিকের পা রাখার পাদানি বা রেবকাবের ব্যবহার তুর্কি বাহিনীকে বাড়তি সুবিধা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই এই সামরিক প্রযুক্তি
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
কৃষি ঃ ত্রয়োদশ শতক নাগাদ পারস্য দেশ থেকে ভারতে আসে পারসি চক্র বা সাকিয়া।
মাপের জলাধার খনন করে তার থেকে ছোটো নালা বা খালের মাধ্যমে চাষের জমিতে জল পৌঁছে দেওয়া হতো।
৫। কল্পনা করে লেখোঃ (১০০–১৫০টি শব্দের মধ্যে)
(ক) রাজনীতি, জীবনযাপন ও ধর্ম নিয়ে একজন সুহরাবর্দি সুফি সাধকের সঙ্গে কবীরের কাল্পনিক সংলাপ লেখো।
দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য
আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন:- কৃষিপণ্যকে ভিত্তি করে কোন্ শিল্প চলত?
উঃ। কারিগরী শিল্প।
প্রশ্ন:- মধ্যযুগে সমাজ কীরূপ ছিল?
উঃ। মধ্যযুগে সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক।
প্রশ্ন:- মধ্যযুগে কোন্ খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল?
উঃ। কুস্তি খুব জনপ্রিয় খেলা ছিল।
প্রশ্ন:- শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোন্টি? এটি কোন্ লিপিতে লেখা?
উঃ। শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম গুরু গ্রন্থসাহিব। এটি গুরুমুখি লিপিতে লেখা।
প্রশ্ন:- মীরাবাঈ রচিত অমূল্য সম্পদ কোন্গুলি?
উঃ। মীরাবাঈ রচিত পাঁচশোরও বেশি ভক্তিগীতি, ভারতীয় সংগীত ও সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
প্রশ্ন:- ‘দোহা’ কাকে বলে?
উঃ। হিন্দি ভাষায় দুই পংক্তির কবিতাকে বলে দোহা।
প্রশ্ন:- ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ। মইনউদ্দিন চিশতি।
প্রশ্ন:- সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ। বদরউদ্দিন জাকারিয়া।
প্রশ্ন:- বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রসার কার চেষ্টায় জোরদার হয়?
উঃ। শ্রীচৈতন্যদেবের চেষ্টায়।
প্রশ্ন:- চৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থ কে রচনা করেন?
উঃ। কৃষ্ণদাস কবিরাজ।
প্রশ্ন:- ইসলামীয় স্থাপত্যশিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উঃ। এই স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খিলান ও গম্বুজ
প্রশ্ন:- কুতুবমিনার বানানোর কাজ কে শেষ করেন?
উঃ। সুলতান ইলতুৎমিশ।
প্রশ্ন:- শের শাহের সমাধি-সৌধটি কোথায় অবস্থিত?
উঃ। বিহারের সাসারামে অবস্থিত।
প্রশ্ন:- সম্রাট জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনীর নাম কী?
উঃ । তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি।
প্রশ্ন:- টেরাকোটার কাজ করা মন্দির কোথায় দেখা যায়?
উঃ। বাকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে।
প্রশ্ন:- আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন?
উঃ। সিকান্দার শাহ পাণ্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ তৈরি করেন।
প্রশ্ন:- গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ কোনটি?
উঃ। বড়োসোনা মসজিদ।
প্রশ্ন:- বৈজু বাওরা কে ছিলেন? উঃ। বৈজু বাওরা ছিলেন সেই যুগের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী।
,‘
প্রশ্ন:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য কে রচনা করেন?
উঃ। বড় চণ্ডীদাস।
প্রশ্ন:- রামায়ণ ও মহাভারত কারা বাংলায় অনুবাদ করেন?
উঃ। রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা এবং মহাভারত অনুবাদ করেন কাশীরাম দাস।
প্রশ্ন:- হুমায়ুননামা কে রচনা করেন?
উঃ। ফারসি ভাষার হুমায়ুননোমা রচনা করেন গুলবদন বেগম।
প্রশ্ন:- আবুল ফজল কোন্ কোন্ গ্রন্থ রচনা করেন?
উঃ। আকবরনামা ও আইন-ই আকবরি।
প্রশ্ন:- শ্রীকৃষ্ণবিজয় কে রচনা করেন?
উঃ। মালাধর বসু।
প্রশ্ন:- কার রচিত কোন্ কাব্যে আলাউদ্দিন খলজির চিতোর অভিযানের কথা রয়েছে?
উঃ। সৈয়দ আলাওল রচিত পদ্মাবতী কাব্যে।
প্রশ্ন:- ভারতে ‘চরকা’ যন্ত্রটির উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়?
উঃ। ভারতে ‘চরকা’ যন্ত্রের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ইমামির ফুতুহ-উস-সালাতিন গ্রন্থে।
প্রশ্ন:- ভারতে কবে ‘ব্লক’ ছাপাইয়ের সূচনা হয়?
উঃ। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতক থেকে ভারতে ব্লক ছাপাইয়ের সূচনা হয়।
প্রশ্ন:- জৌনপুরী রাগ কে তৈরি করেন?
উঃ। হোসেন শাহ শবকি নিজে সংগীত রাগ তৈরি করেছিলেন, একে হোসেনি বা জৌনপুরী রাগ বলে।
প্রশ্ন:- সুফ কথার অর্থ কী?
উঃ। পশমের তৈরি এক টুকরো কাপড়।
প্রশ্ন:- অসমে কে ভক্তিবাদের প্রচার করেছিলেন?
উঃ। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব।
প্রশ্ন:- মির্জা নাথান কে ছিলেন? উঃ। সম্রাট জাহাঙ্গিরের সেনাপতি।
প্রশ্ন:- বিজাপুরের গোলগম্বুজ কে নির্মাণ করেন?
উঃ। মহম্মদ আদিল শাহ।
প্রশ্ন:- হাম্পি কোন্ রাজ্যের রাজধানী ছিল?
উঃ। বিজয়নগর।
প্রশ্ন:- নৃত্যের জন্য কুমিল পোশাক কে তৈরি করেন?
উঃ। মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্ৰ।
প্রশ্ন:- রাজতরঙ্গিনী কে রচনা করেন?
উঃ। কবি কলহন।
প্রশ্ন:- বাবরের আত্মজীবনীর নাম কী?
উঃ। তুজুক-ই-বাবরি।
প্রশ্ন:- কিতাব-উল-হিন্দ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উঃ। অল বিরুনি।
প্রশ্ন:- কোথায় প্রথম কাগজ আবিষ্কার হয়?
উঃ। চিনদেশে।
প্রশ্ন:- ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা কারা করেন?
উঃ। ইউরোপীয় মিশনারিরা।
প্রশ্ন:- ‘চরখি’ কী?
উঃ। তুলো বুনবার যন্ত্র।
প্রশ্ন:- শিরিন কলম' কার ছদ্মনাম ছিল?
উঃ। চিত্রশিল্পী খোয়াজা আবদুস সামাদের ছদ্মনাম ছিল শিরিন কলম।
১। কোন্ সাধকদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হয়েছিল?
উঃ। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের গোড়ায় অলভার এবং নায়নার সাধকদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হয়েি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
টীকা লেখো :
ভক্তিবাদঃ ভগবানের প্রতি ভক্তের ভালোবাসা বা ভক্তি হলো ভক্তিবাদের মূল কথা। এই ভক্তির দুটি বৈশিষ্ট্য। একটি হলো ভগবানের কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করা। অন্যটি হলো ঈশ্বরলাভের জন্য জ্ঞান বা যোগ ছেড়ে ভক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া।
মীরাবাঈ ঃ রাজস্থানের এক ক্ষত্রিয় বংশে সাধিকা মীরাবাঈ তাঁর সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছিলেন গিরিধারী বা।শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিতে। মীরাবাঈ রচিত পাঁচশোর বেশি ভক্তিগীতি ভারতীয় মীরাবাঈ সংগীত এবং সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
কুতুব মিনার : তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভের পর কুতুবউদ্দিন আইবক কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ বানাতে শুরু করেন। এই মসজিদের মিনারটি হসল কুতুবমিনার। এই মিনার সুলতানি শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সাকিয়া বা পারসিক চক্র ঃ পারস্যদেশ থেকে
বেল্ট ও গিয়ার লাগানো সাকিয়া বা পারসিক চক্র যন্ত্রটি ভারতে আসে। ছোটো নাগরদোলার মতো দেখতে কাঠের তৈরি এই যন্ত্রটির মাধ্যমে পশুশক্তির সাহায্যে কুয়ো বা খাল থেকে জল তোলা যেত। তবে যন্ত্রটি ছিল দামী। তাই এটি সেভাবে কৃষিসমাজে জনপ্রিয় হয়নি।
তানসেন : মুঘল যুগে সবচেয়ে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ছিলেন তানসেন। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তিনি দীপক, মেঘমল্লার প্রভৃতি রাগ সৃষ্টি করেন। শোনা যায় তাঁর সংগীতসাধনা এমনই ছিল যে তাতে প্রদীপ নিজে থেকে জ্বলে উঠত৷ কখনও বা অকালে বর্ষা নেমে যেত।
১. সুফি কথাটি কোথা থেকে এসেছে?
উঃ। অনেকের মতে সুফি কথাটি এসেছে সুফ্ থেকে। যার অর্থ আরবিতে পশমের তৈরি এক টুকরো কাপড়। বিশ্বাস করা হয় যে সুফি সাধকরা এরকম কম্বল জাতীয় জিনিস গায়ে দিতেন।
২. ‘পিয়েত্রা দুরা’ কাকে বলে?
উঃ। মুঘল যুগে শ্বেতপাথরের উপর রত্ন বসিয়ে একরকম কারুকার্য করার চল দেখা যায়। তাকে পিয়েত্রা দুরা বলে। জাহাঙ্গিরের সময় বানানো ইতিমাদ্-উদ্-দৌলার সমাধি সৌধে এই পিয়েত্রা দুরা কারুকার্যের ব্যবহার দেখা যায়।
৩. তাজমহল সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
ইতিমাদ্-উদ্-দৌলা
উঃ। মুঘল স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তাজমহল। সম্রাট শাহজাহানের সময় বানানো
এই স্মৃতিসৌধটি এক আশ্চর্য স্থাপত্য। পাথরের ব্যবহার, কারুকার্য ও শিল্পরীতির দিক থেকে
তাজমহল অতুলনীয়।
৪. ‘রত্ন’ স্থাপত্য শিল্পরীতি কী ছিল?
উঃ। বাংলার স্থাপত্য রীতিতে সাধারণ আয়তাকার কাঠামোর উপর একাধিক চূড়া দিয়ে মন্দির তৈরি করা হতো। এই মন্দিরগুলির নাম রত্নমন্দির। একটি চূড়া থাকলে সেটি একরত্ন মন্দির। এভাবে পাঁচটি চূড়া থাকলে পঞ্চরত্ন, নয়টি থাকলে নবরত্ন প্রভৃতি নামের মন্দির তৈরি হতো।
৫. ভারতবর্ষে ধ্রুপদী নৃত্যগুলির নাম লেখো। এর মধ্যে মণিপুরী নৃত্য সম্বন্ধে কী জানা যায়?
উঃ। ভারতবর্ষে ধ্রুপদী নৃত্যগুলি হল ভারতনাট্যম, কথাকলি, ওড়িশি, কুচিপুড়ি, কথক ও মণিপুরী। অষ্টাদশ শতকে মণিপুরী সংস্কৃতিতে ভক্তির প্রবল প্রভাব দেখা যায়। এর ফলে তাদের আদি
নৃত্যধারার সঙ্গে যুক্ত হয় সংকীর্তন ও রাসলীলা। রাধাকৃয়কে রাসলীলাগুলি তৈরি হয়।
মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্রের হাতেই মণিপুরী রাসলীলার ধারাগুলি বিকশিত হয়। নাচের জন্য
কুমিল পোশাকও তিনি তৈরি করেন। সংকীর্তনে পুঙ্গ নামে ঢোল বাজিয়েই ছেলেরা মূলত নাচে।
কেন্দ্র করে
৬. পদাবলি সাহিত্য কাকে বলে?
উঃ। ভক্তিধর্মের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে কাব্য লেখার পাশাপাশি রাধাকৃয়কে
নিয়ে পদ কবিতা লেখার ধারা শুরু হয়। একেই বলা হয় পদাবলি সাহিত্য।
৭. নাথ-সাহিত্য কাকে বলে?
উঃ। বাংলায় নাথ যোগী নামের এক ধর্মসম্প্রদায় ছিল। এদের দেবতা শিব। এই নাথ যোগীদের ধর্মকর্ম, আচার- আচরণ নিয়েও এই সময়ে সাহিত্য লেখা হয়। একে বলা হয় নাথ সাহিত্য। এই লেখাগুলিতে সন্ন্যাস জীবনযাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
৮. মান সিং তোমর কে ছিলেন
উঃ। মান সিং তোমর ছিলেন গোয়ালিয়রের রাজা। (১৪৫০-১৫২৮) তিনি ছিলেন সংগীত প্রেমী। তাঁর সময়ে শাস্ত্রীয়।ধ্রুপদ সংগীতগুলি সংস্কৃত থেকে হিন্দিতে অনুবাদ করা হয়। তাঁর সময়ের একটি বিখ্যাত সংগীত গবেষণা গ্রন্থ হল মান কৌতূহল। তাঁর আমলের একজন বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ছিলেন বৈজু বাওরা।
৯. মধ্যযুগের ভারতে বস্তুবয়ন শিল্পে কী ধরনের পরিবর্তন আসে?
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে বস্ত্রশিল্প ও বয়ন প্রযুক্তিতে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে মধ্য এশিয়া থেকে তুলো বুনবার যন্ত্র ‘চরখি’ ভারতে আসে। এই সময়ই কাপড় বুনবার জন্য তাঁতের প্রচলন হয়। এর কিছু পরে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে তুর্কি শাসনের সাথে ভারতে আসে চরকা। তুলো থেকে সুতো তৈরি করার প্রযুক্তি এই যন্ত্রের দ্বারা ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যযুগীয় ভারতে কাপড় রং করা ও ছাপার পদ্ধতি ছিল খুবই উন্নত।
শিল্প ক্রমশ নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের তৈরি চতুর্দশ শতক থেকে ভারতে ব্লক ছাপাইয়ের প্রচলন হয়। ছাপা কাপড় মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে রপ্তানিতে করা হত।
৪. ভক্তিবাদ উত্থানের কারণ কী ছিল?
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ধর্ম। পুরোনো আমলের ব্রাহ্মণ্যবাদ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের।প্রভাব মানুষের মনের উপর থেকে ধীরে ধীরে কমে আসছিল।
এই অবস্থায় উত্থান হয় ভক্তিবাদের। ভক্তিবাদের মূলে
ছিল ভগবানের প্রতি ভক্তের ভালবাসা বা ভক্তি। এর উত্থানের কারণগুলি হল-খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক নাগাদ উত্তর ভারতে হর্ষবর্ধনের পতনের পর রাজপুত রাজারা ক্ষমতশালী হয়ে ওঠে। এদের সমর্থন করেন ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা। ফলে ব্রাহ্মণ্যধর্মের বাইরে নতুন কোনো ধর্মভাবনা উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের গোড়ায় দক্ষিণ ভারতে অলভার এবং নয়নার সাধকদের হাত ধরে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হতে থাকে। পুরোনো ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম গুলিতে রীতিনীতি ও আচারের ওপর জোর দেওয়া হত এতে মানুষের আবেগের কোনো স্থান ছিল না। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ ও চতুদর্শ শতকে ভক্তির এই ধারা ক্রমশ উত্তর ও পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তুর্কি আক্রমণে রাজপুত রাজারা
পরাজিত হলে তাদের সাথে সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ব্রাহ্মণদের প্রভাব কমতে থাকে। পাশাপাশি খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকে নামদেব, জ্ঞানেশ্বর তুকারাম, রামানন্দ, কবার, গুরু নানক, শঙ্করদেব, চৈতন্যদেব, মীরাবাই প্রমুখ ভক্তিবাদী সাধক সাধিকাদের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষের নানা দিকে তাদের লেখা গান, কবিতা ও উপদেশ ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে ভক্তিবাদের আদর্শ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
১০. পাঁচালি কী?
উঃ। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এখনকার মতো ছিল না।তখনকার সাহিত্যে দেবদেবীর মহিমা প্রচার করাই দেখা যেত। তখন যা লেখা হত তাঁর বেশিরভাগই সুর করে গাওয়া হত। তাই এই সময়ের অনেক লেখালেখিকে পাঁচালি বলা হত।
শেষ