রচনা চন্দ্রযান -3 /চন্দ্রযান -3 অভিযানে ইসরোর বিজ্ঞানের ভূমিকা/চাঁদের দেশে ভারত
রচনা উত্তরকাশী ট্যানেল বিপর্যয় দেখুন
রচনা চন্দ্রযান -3
রচনা চন্দ্রযান -3 / চন্দ্রযান -3 অভিযানে ইসরোর বিজ্ঞানের ভূমিকা / চাঁদের দেশে ভারত
ভূমিকা- আদিম মানুষ যখন বনজঙ্গলে থাকতো তখন থেকেই প্রকৃতিকে চিনতে শিখেছিল।প্রকৃতিকে বশে আনার জন্য তারা নিত্য নতুন কিছু আবিষ্কারের কথা ভাবত। সে ভাবনা আজও শেষ নেই। এই বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও তাই বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে অজানাকে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মহাকাশ গবেষণাগার "নাসা" নতুন নতুন তথ্য এনে দিচ্ছে। বিশ্ব সৃষ্টি আদি কথা জানার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র 'ইসরো' আজ পৃথিবীর বুকে পরিচিত লাভ করেছে। পূর্ণিমা রাতে গোল চাঁদকে দেখে ঠাকুমারা তাদের নাতি নাতনিকে চাঁদ দেখিয়ে বলতো "আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা"। তখন হয়তো কেউ ভাবতে পারিনি। ওই চাঁদ মামার মাটিতে কেউ পৌঁছাতে পারবে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে আজ ভারতকে অনেক উঁচু জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে । ভারতের দ্বিতীয় মিশনের চরম ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সফল হয়েছে। এটা শুধু ভারতেই গৌরব নয়, সারা পৃথিবীর গৌরব হয়ে ইতিহাসের খাতায় নতুন করে নাম লিখিয়েছে ভারত।
অন্য দেশের সাফল্য: - ২০০৮ সালে প্রথমে আমেরিকা । পরে রাশিয়া ,জাপান, ইউরোপের পর পঞ্চম স্থানে চন্দ্রযান পাঠিয়েছিল ভারত ।
উদ্দেশ্য:- এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ ও সুরক্ষিত অবতরণ লোহারের নির্জনে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদনা করা। জলের সন্ধান করা প্রাণের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা সেটারও সন্ধান করা।
যাত্রা শুরুর সময়কাল:- ২০২৩ সাল ১৪ই জুলাই দুপুর ২ বেজে ৩৫ মিনিটে শ্রী হরি কোটার সতীশ ধাওয়ান সেন্টার থেকে LVM মার্ক -৩ রকেটের পিঠে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল । ৪২ দিনের সময় ধার্য করে এগিয়ে যায় চন্দ্রযান -৩। লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরু তে অবতরণ। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ। সফল হল ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিটে। ইতিহাসের খাতায় নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখল ভারত। এর আগে চীন চাঁদের মাটিতে যান পাঠিয়েছিল । তবে দক্ষিণ মেরুতে নয় । ভারতের চন্দ্রযান দক্ষিণ মেরু জয় করে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে জায়গা দখল করে নিল।
চন্দ্রযান-৩ গঠন ও বর্ণনা:- চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারের নাম বিক্রম এবং রোভারের নাম প্রজ্ঞান। এর ওজন ৩৯০০ কেজি। প্রায় চার টনের কাছাকাছি। এর মধ্যে পোপালশান মডিউলটির ওজন ২ হাজার ১৪৮ কেজি । রোভারের ছিল ছয়টি পা। পা গুলি ছিল খুব শক্তপোক্ত ১০° অ্যাঙ্গেলে বেঁকে গেলেও বিক্রম ঠিকমতো ল্যান্ড করতে পারত। সেভাবেই এটাকে তৈরি করা হয়েছিল। বিক্রমের মাথায় রাখা হয়েছিল ভারতের পতাকা।রোভার ওজন ছিল ২৬ কেজি। ল্যান্ডার এর গতি কমানোর জন্য ছিল থ্রাস্টার।
চাঁদের অবস্থা-ল্যান্ডিং এর সময় চাঁদের তাপমাত্রা ছিল -২৩৮ ডিগ্রি
ইসরোর বিজ্ঞানী ভূমিকা:- তৃতীয় চন্দ্র অভিযানের নেতৃত্ব দেন "রকেট ওম্যান"ঋতু ক্যারিধান শ্রীবাস্তব।
চন্দ্রজান টু ব্যর্থ হওয়ার পর তার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চন্দ্রযান-৩ মিশন এর কাজ শুরু করেন। সফলতাও পান। এর সফলতা তারা দেশবাসীকে উজার করে দেন । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন।
ভারতবাসীর আবেগ:- ২০১৯ সালে চন্দ্রযান টু অভিযান শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষের মন হতাশ হয়ে পড়ে গিয়েছিল। আর সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য ২৩ তারিখ সকাল থেকে দিনভর উত্তেজনা ,উদ্দীপনা অবস্থায় টিভির পর্দায় চোখ রেখে দেখতে পাচ্ছিল চন্দ্রযান-৩ অবতরণের সময় কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। চন্দ্রযান পাঠানো ছবিগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছেছিল ।বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে , বিভিন্ন তীর্থস্থানে চন্দ্রযান শুভকামনা পূজা দিতে মানুষকে দেখা গেছে। টিভি পর্দায় বিভিন্ন ধারাভাষ্যকার , বিভিন্ন অভিজ্ঞ মহাকাশ গবেষকদের নিয়ে এসে বিভিন্ন পর্যালোচনা করা হচ্ছিল ,সেগুলি মানুষ মনোযোগ সহকারে শুনছিল। অফিসে ট্রাম এ বাসে সকলের মুখে একই কথা চন্দ্রযান -৩। ইসরোর বিজ্ঞানীরা ছিল চরম ব্যস্ততার মধ্যে । সবাই তাকিয়ে ছিল সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিট সেই মহেন্দ্রখন সময়ের জন্য।
ভারতের গবেষণা কেন্দ্র ইসরো থেকে বৈকাল ৫টা ২০ থেকে লাইভ টেলিকাস্ট লেখাতে শুরু করেছিল । মানুষ দেখেছিল অভাবনীয় দৃশ্য।চাঁদের বুকে পা রাখতে বিক্রমে ১৫ মিনিট সময় ধার্য করা হয়েছিল। চন্দ্রপৃষ্ঠে ৮০০ থেকে ১৫০ মিটার উচ্চতায় নামার পথে বিক্রমের গতি ৬০ মিটার / সেকেন্ড রাখা হয়েছিল। বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবতরণ করেছিল।
শেষ ১৮ মিনিট খুব চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বিক্রম। অবশেষে সেই সময় এসে গেল । চন্দ্রযান,-৩ পাখির পালকের মত ভাসতে ভাসতে চাঁদের মাটিতে নেমেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ভারতবাসী উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিল।
উপসংহার :-বিজ্ঞানের মানুষের কাছে অনেক আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ মঙ্গল গ্রহে যান পাঠাচ্ছে। চাঁদের মাটিতে জান পাঠাচ্ছে একদিন হয়তো মানুষ মহাকাশে কৃত্রিম স্টেশন তৈরি করবে, পৃথিবী অনেক এগিয়ে যাবে পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে জানার জন্য মানুষ আজ উদগ্রীব হয়ে উঠেছে একদিন হয়তো তা সত্যটা আসল বার করে ফেলবে। বিজ্ঞানের হবে জয়জয়কার।