ছোটদের রচনা পর্ব ১ চতুর্থ শ্রেণীর পঞ্চম শ্রেণীর ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য
ছোটদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা দেওয়া হলো
★গ্রীষ্মকাল
ভূমিকা : গ্রীষ্ম আমাদের প্রথম ঋতু। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে গ্রীষ্মকাল। এই ঋতু দিয়ে বাংলা বছর শুরু হয়।
প্রাকৃতিক অবস্থা : এই সময় সূর্যের তাপ প্রচণ্ড বাড়ে। দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয়। নদী-নালা পুকুরের জল এই সময় শুকিয়ে যায়। মাঠ ফেটে চৌচির
হয়ে যায়। সবুজ গাছপালা শুকিয়ে আসে। অসহ্য গরমে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খুব কষ্ট হয়। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে কালবৈশাখী ঝড় দেখা দেয়। তখন সামান্য বৃষ্টিও হয়।
উপকারিতা : গ্রীষ্মকালে নানারকম ফুল ও ফল পাওয়া যায়। এই সময় রজনীগন্ধা, বেল, জুঁই, গন্ধরাজ প্রভৃতি ফুল ফোটে। এই সময় আম, জাম,
কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, শসা প্রভৃতি সরস ফল পাওয়া যায়। ঝিঙে, পটল, উচ্ছে, কুমড়ো এই সময়ের তরিতরকারি। গ্রীষ্মকালে আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের চাষ শুরু হয়।
অপকারিতা : গ্রীষ্মকালে পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়। এই সময় কলেরা, আন্ত্রিক, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়। গ্রীষ্মকালে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। মানুষ অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে।
উপসংহার : গ্রীষ্মকালে মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। কিন্তু নববর্ষ উৎসব, জামাইষষ্ঠী, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন প্রভৃতি উৎসব অনুষ্ঠান মানুষের মনে আনন্দ এনে দেয়।
রচনা
◆বর্ষাকাল
ভূমিকা : গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষাকাল। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস নিয়ে বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপের পর যখন বর্ষা আসে, তখন প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রাণ
জুড়ায়।
প্রাকৃতিক অবস্থা : বর্ষাকালে সূর্য প্রায়ই দেখা যায় না। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে থাকে। মাঝে মাঝে মেঘ ডাকে, বিদ্যুৎ চমকায়। কখনও জোরে
আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে। গাছপালা সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে।।নদী-নালা, পুকুর, ডোবা জলে ভরে যায়। গ্রামে মাটির রাস্তায় কাদা হয়। ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। ময়ূর আনন্দে পেখম মেলে নাচে।
ফুল ও ফল- কদম, কেতকী, দোলন চাঁপা, কামিনী, জুঁই প্রভৃতি ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে যায়।
এই সময় নানারকম শাক-সবজি পাওয়া যায়। নদী-নালায় প্রচুর মাছ জন্মায়। তার ফলে নানা রকম মাছ পাওয়া যায়। ভালো বৃষ্টি হলে ধান ভালো ফলবে এই আশায় বর্ষাকালে চাষীর মন আনন্দে ভরে ওঠে।
অপকারিতা : বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির ফলে পথ-ঘাট ডুবে যায়। মাঝে মাঝে বন্যা হয়। বন্যা হলে ঘড়বাড়ি ভেসে যায় এবং ফসলের ক্ষতি হয়। মানুষ ও জীবজন্তু মারা যায়। মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকে না। তাতেও অনেক ক্ষতি হয়।
উপকারিতা : বর্ষাকালে ধানের চারা রোয়া হয়। এই সময় পাট চাষ হয়।
অপকারিতা-এই সময় পোকা-মাকড় এবং সাপের উপদ্রব হয়। বর্ষাকালে নানারকম পেটের অসুখ দেখা দেয়। গ্রামের পথে কাদা হয় বলে যাতায়াতের খুব অসুবিধা হয়।
উপসংহার : বর্ষাকালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দের মধ্যে বাড়িতে বসে লুডো খেলা, জলে কাগজের নৌকো ভাসানোর আকর্ষণ কম নয়। বর্ষা অনেকখানি
বিশ্রামের সুযোগ এনে দেয়।
রচনা
◆শরৎকাল√
ভূমিকা ঃ বর্ষার পর আসে শরৎকাল। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস নিয়ে শরৎকাল।এই সময় বর্ষার কালো মেঘ আকাশ থেকে বিদায় নেয়।
প্রাকৃতিক অবস্থা : এই ঋতুতে নীল আকাশে সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। এই সময় প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে ওঠে। মাঠে মাঠে সবুজ ধান খেত মাথা নাড়ে ।সবুজ গাছের উপর জ্যোৎস্নার আলো পড়ে অপূর্ব দেখায়। সকাল বেলা ঘাসের ডগায় শিশিরের
উপর সূর্যের আলো পড়ে চিক্চিক্ করে।
ফুল -শিউলি, কাশ, শেফালি, পদ্ম প্রভৃতি ফুল এই সময় ফোটে। শরতের রূপের তুলনা হয় না। এই সময়ের আবহাওয়া মনোরম থাকে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপ বা শীতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কোনোটাই এই
সময় থাকে না।
উৎসব : শরৎ আনন্দের ঋতু, উৎসবের ঋতু। এই ঋতুর প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত চারদিন এই পূজা হয়। এই পূজা উপলক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সবই বন্ধ থাকে। প্রবাসী বাঙালি ঘরে ফেরে। মানুষ দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট, ক্লান্তি ভুলে যায়। নতুন পোশাক পরে মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। দুর্গাপূজার পর আসে সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা। তারপর
একে একে আসে কালীপূজা, দেওয়ালী, ভাইফোঁটা, জগদ্ধাত্রী পূজা ইত্যাদি।
উপকারিতা-অপকারিতা : শরৎকালে ধানের মাঠ আমাদের মনে আশা জাগায়। আর বিভিন্ন উৎসব আনন্দ দেয়, ক্লান্তি দূর করে। বিভিন্ন উৎসবকে
কেন্দ্র করে বিভেদ ভুলে মানুষ একসঙ্গে মিলিত হয়। শরৎকালে অসুখ-বিসুখ কম হয়। কিন্তু কোনো কোনো বছর আশ্বিন মাসে প্রচণ্ড ঝড় হয়, তাতে ফসল,গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়।
উপসংহার : মানুষের মনে আনন্দ জাগিয়ে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ ভুলিয়ে শরৎকাল বিদায় নেয়। শরৎকাল সবার প্রিয় ঋতু।
রচনা
শীতকাল
ভূমিকা : শীত পঞ্চম ঋতু। হেমন্তের পর আসে শীতকাল। পৌষ ও মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল। প্রাকৃতিক অবস্থা : শীতকালে উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা শুষ্ক বাতাস বইতে
থাকে। সূর্য এই সময় দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। সূর্যের তাপ অনেক কমে যায়।। এই সময় রাত্রে শিশির পড়ে। ভোরবেলা চারিদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়। শীতকালে
দিন ছোটো এবং রাত্রি বড়ো হয়। কোনো কোনো গাছের পাতা ঝরে যায়। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা এবং নানারকম মুরশুমি ফুলে চারদিক ভরে যায়।
ডৎসব : শীতকালের প্রধান উৎসব সরস্বতী পূজা। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে এবং বাড়িতে এই পূজা হয়। এছাড়া আছে বড়োদিন, নবান্ন, পৌষ পার্বণ। বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠে পায়সের আয়োজন। ভ্রমণ এবং বনভোজনের উপযুক্ত সময় এই শীতকাল। শীতকালে সার্কাস ও নানারকম মেলা বসে।
উপকারিতা : শীতকালে নানারকম শাক-সবজি জন্মায়। যেমন—পালং,
মুলো, বিভিন্ন রকম কপি, টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, আলু, শিম, মটরশুঁটি, বীট, গাজর ইত্যাদি। খেজুরের রস এবং খেজুর গুড় এই সময় পাওয়া যায়। এই
সময়ের প্রধান ফল কুল, কমলালেবু এবং নাসপাতি। শীতকালে মানুষের পরিশ্রম
এবং হজম করার ক্ষমতা বাড়ে। এই ঋতুতে অসুখ-বিসুখও কম হয়।
অপকারিতা : দরিদ্র মানুষ শীতের প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে পারে না তারা শীতে খুব কষ্ট পায়। এই সময় হাত-পা ফেটে যায়।
উপসংহার : ধীরে ধীরে উত্তরের বাতাস কমে আসে। দিন বড়ো হতে
থাকে। শীতের বিদায় নেওয়ার সময় এগিয়ে আসে।
রচনা
বসন্তকাল
ভূমিকা : উত্তরের বাতাস বিদায় নেওয়ার পর শীতের আমেজ কমে যায়।
দক্ষিণের বাতাস বইতে শুরু করে। আসে বসন্তকাল। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস নিয়ে বসন্ত কাল। এটিই হল বছরের শেষ ঋতু। বসন্ত কালকে ‘ঋতুরাজ’ অর্থাৎ ঋতুর রাজা বলা হয়।
প্রাকৃতিক অবস্থা : শীতকালে কোনো কোনো গাছের পাতা ঝরে যায়। বসন্তকালে সেইসব গাছে নতুন কচি পাতা জন্মায়। বসন্তকালে শীত থাকে না,
আবার গরমও বিশেষ পড়ে না। তার ফলে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে। প্রকৃতি এই সময় সুন্দর সাজে সেজে ওঠে। পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অশোক,
শিমূল, বকুল, চাঁপা প্রভৃতি গাছে ফুল ফোটে। আম গাছে মঞ্জুরী দেখা দেয়। গাছের ডালে লুকিয়ে থাকা কোকিলের কুহু কুহু ডাক শোনা যায়। দক্ষিণ দিক
থেকে বাতাস বইতে থাকে। কবি গেয়েছেন—
“ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে—
ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।”
ডৎসব : বসন্তকালের সবচেয়ে বড়ো উৎসব দোলযাত্রা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সকলে দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট, পরস্পরের মধ্যে বিভেদ ভুলে,
রঙের খেলায় মেতে ওঠে। এই ঋতুর আরও কয়েকটি উৎসব হল—বাসন্তী পূজা, শিবরাত্রি, গাজন ইত্যাদি। এই ঋতুর বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কোথাও
কোথাও মেলা বসে।
অপকারিতা : বসন্তকাল ঋতুর সেরা। কিন্তু এই ঋতুতে কয়েকটি রোগ দেখা যায়। যেমন—হাম, কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড প্রভৃতি। তার ফলে মানুষকে দুঃখ-কষ্ট পেতে হয়।
উপসংহার : এক সময় বসন্তের বিদায় নেওয়ার সময় এগিয়ে আসে। শেষ হয়ে আসে একটি বছর। সূর্যের উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। শুরু হয় নতুন একটি বছর।
রচনা
রচনা বন্যা√
ভূমিকা : খরা, বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প—এগুলি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সমস্ত প্রাচীন সভ্যতা বড়ো বড়ো নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। সভ্যতার বিকাশে নদী যথেষ্ট সাহায্য করেছে। আবার এই নদী যখন ভাঙ্কর হয়ে ওঠে তখন বন্যা দেখা দেয়।
বন্যার কারণ : পলি জমে নদী ভরাট হয়ে আসে। তখন নদীর জল ধরে।রাখার এবং জল বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে জল নদীর দুই তীর ছাপিয়ে জনপদ ডুবিয়ে দেয়। হঠাৎ নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেলেও বন্যা দেখা দেয়। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলেও বন্যা হয়। জলাধার থেকে বেশি পরিমাণে জল
অপকারিতা : বন্যার ফলে মানুষের দুঃখ কষ্টের শেষ থাকে না। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে। ফসলের ক্ষেত জলে ডুবে যায়। অনেক সময় মানুষ ও গৃহপালিত পশু ভেসে যায়। মারাও যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়। খাদ্য ও পানীয়।জলের অভাব দেখা দেয়। আগ্নিক, কলেরা প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।
উপকারিতা : বন্যার কিছু উপকারিতাও আছে। বন্যা সমস্ত আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে যায়। বন্যা হলে জমিতে পলি জমে উর্বরতা বাড়ে। তার ফলে ফসল
প্রতিকার : বন্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নদী থেকে পলি সরিয়ে।নদীর গভীরতা বাড়ানো দরকার। নদীতে বড়ো বড়ো বাঁধ এবং জলাধার তৈরি
উপসংহার : আমাদের দেশে প্রতি বছরই কোথাও না কোথাও বন্যা হয়। বন্যা প্রতিরোধের জন্য অনেক নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে এবং জলাধার তৈরি করা হয়েছে। তা সত্বেও প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য আরও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
রচনা-
ভূমিকম্প
..
ভূমিকা : ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভূমিকম্প হঠাৎ দেখা দেয়। আগে থেকে সাবধান হওয়ার কোনো সুযোগ পাওয়া যায় না। কোন এলাকায় ভূমিকম্প হবে তা আগে থেকে জানার কোনো উপায় নেই। পৃথিবীর উপরিভাগ
হঠাৎ কেঁপে উঠলে তাকে ভূমিকম্প বলে৷
কারণ ঃ ভূমিকম্প নানা কারণে হতে পারে। আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তার আশেপাশে ভূমিকম্প হয়। মাটির তলায় সঞ্চিত বাষ্প উপর দিকে চাপ দিলে ভূমিকম্প হয়। মাটির তলায় শীলাস্তরে ফাটল দেখা দিলে ভূমিকম্প হয়। এছাড়া আরও অন্যান্য কারণ আছে।
ভূমিকম্প দেশে বিদেশে : পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভূমিকম্প হয় জাপানে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশে এবং হিমালয়, আল্পস, প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে ভূমিকম্প খুব বেশি হয় সাম্প্রতিক কালে পেরু, মেস্কিকো, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, চিন প্রভৃতি দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। আমাদের দেশে অসম, মুঙ্গের ও দ্বারভাঙ্গা, হিমাচলপ্রদেশ, দিল্লি প্রভৃতি অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বড়ো ধরনের ভূমিকম্প
হয়েছে। ১৯৯৩ সালে মহারাষ্ট্রে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখা দিয়েছিল।
ফলাফল : ভূমিকম্প সাধারণতঃ কয়েক সেকেণ্ড স্থায়ী হয় কিন্তু তার ফল হয় ব্যাপক। এর ফলে গ্রাম এবং শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ে কিংবা মাটির তলায় চলে যায়। মানুষ, জীব-জন্তু মারা যায়। মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। ভূমিকম্পের ফলে কোনো নীচু স্থান উঁচু হয়ে ওঠে কিংবা উঁচু স্থান নীচু হয়ে বসে যায়।
উপসংহার : যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা যায় কিন্তু কোথায় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে তা বোঝার মতো কোনো যন্ত্র এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তার ফলে আগে থেকে সাবধান হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিছু কিছু ভূমিকম্প- প্রবণ এলাকা আছে। সেইসব স্থানে সাবধানতা অবলম্বন করা সম্ভব।
রচনা
সুনামি
ভূমিকা : বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতির মতো সুনামি একটি প্রাকৃতিক
বিপর্যয়। ‘সুনামি' একটি জাপানি শব্দ। এর অর্থ সমুদ্রের বিশাল ঢেউ। সুনামির ক্ষেত্রে কিছুটা আগে থেকে জানা সম্ভব।
সুনামির কারণ : যে কারণেই হোক সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্পের সৃষ্টি
হলে প্রবল জলস্ফীতি দেখা দেয়। জলের তলার বিশাল ঢেউ প্রবল বেগে সমুদ্রের উপকূলে আছড়ে পড়ে। সুনামিতে সমুদ্রের উপকূল অশান্ত হয়ে উঠলেওঅন্য অংশ শান্ত থাকে।
ফলাফল : সুনামির ফলে সমুদ্রের উপকূল অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি
উপকূল অঞ্চল জলে ডুবে যায়। ঢেউর আঘাতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রেললাইন বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের স্তম্ভ ভেঙে তছনছ হয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ মারা চাষের জমি জলের তলায় চলে গেলে ফসলের ক্ষতি হয়। মাছ ধরার নৌকু
টুলার প্রভৃতি জলের তলায় তলিয়ে যায়। সুনামির ফলে খাদ্য, পানীয়
প্রভৃতির অভাব দেখা দেয়। আন্ত্রিক, কলেরা প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।
উপসংহার : ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালবেলা ভারত মহাসাগরে যে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মায়ানর
প্রভৃতি দেশের অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে কোথাও বিমান বন্দর, কোথাও রেলপথ, সেতু ধ্বংস হয়েছে। সমুদ্রের তল ভূপৃষ্ঠেও নানা পরিবর্তন ঘটেছে।
রচনা
গ্রামের সন্ধ্যা#
ভূমিকা : গ্রামে সন্ধ্যার রূপের তুলনা হয় না। বিভিন্ন ঋতুতে এই রূপের সামান্য পরিবর্তন হয়। মাটির রাস্তা, মাটির ঘরবাড়ি, পানাঢাকা পুকুর, ঝোপ ঝাড়, আম-জাম-কাঁঠাল, অশ্বত্থ-বট ইত্যাদি গাছ, ধান ক্ষেত কিংবা ফাঁকা মাঠ ,এই হল গ্রামের পরিবেশ। এর মাঝে সন্ধ্যার রূপটি বড়ো সুন্দর।
পূর্বের অবস্থা : দিনের শেষে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। সূর্যের তাপ ও আলো কমে আসে। পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে আসে। পাখিরা বাসায় ফিরতে শুরু করে। রাখাল গোরুর পাল নিয়ে ফিরতে থাকে। গোরুর পায়ে লেগে যে ধুলো উড়তে থাকে তাকে ‘গোধূলি’ বলে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা খেলা শেষে বাড়ি ফেরে। দূরের গাছ পালাগুলি আবছা হয়ে আসে।
সন্ধ্যার আগমন ঃ এর পর সন্ধ্যা আসে। আকাশে তারাগুলি স্পষ্ট হতে থাকে। ঝোপ ঝাড়ে জোনাকির আলো দেখা যায়। তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বলে
ওঠে। চারদিক থেকে শাঁখের শব্দ ভেসে আসে। মন্দিরে কাঁসর ঘণ্টা বাজে। গীর্জায় প্রার্থনা শুরু হয়। মসজিদে আজান শুরু হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে বসে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কোল ঘেঁসে বসে গল্প শোনার
জন্য। দূর থেকে শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক ভেসে আসে। জ্যোৎস্না রাত্রি হলে আকাশে চাঁদ ওঠে। বর্ষাকালে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে বলে এবং শীতকালে কুয়াশার ফলে সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়ে।
উপসংহার : সন্ধ্যার পর আসে রাত্রি। চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে আসে। দু-একটি ঝিঝি পোকার ডাক তখন শোনা যায়।
রচনা
শীতের সকাল#
ভূমিকা বছরের প্রতিটি দিনেই সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা আসে। কিন্তু ঋতুর পার্থক্যে সকালের রূপের পার্থক্য ঘটে। শীতের সকালের নিজস্ব
বৈশিষ্ট্য ও রূপ আছে। গ্রামে শীতের সকাল খুব ভোরবেলায় চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে। গাছের পাতা থেকে টুপ টাপ শব্দে শিশিরের ফোঁটা ঝরে পড়ে। তখনও বেশিরভাগ লোক লেপের তলায় থাকে। এরই মধ্যে যায় আগুন জ্বেলে ভাগ পোহাচ্ছে। কেউ বা গোরু ও লাঞ্চল নিয়ে মাঠের দিকে। মুখ, মশুর বোনার জন্য জমি তৈরি করতে হবে। আবার কেউ চলেছে খেজুরের রস দিয়ে। একটু পরেই খেজুরের রসে জ্বাল দেওয়া হবে।
দেখতে দেখতে পুব আকাশে থালার মতো লাল সূর্য হাজির হয়। কুয়াশা চাদর ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসে। ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুতে সূর্যের আলো পড়ে চিক্ চিক্ করে ওঠে। ছোটো ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে পাঠশালায় যায়। ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়। ঘুরে নদীর বুকে পালতোলা নৌকা ভেসে চলে শহরের উদ্দেশ্যে। পাঠশালায় ছাত্রছাত্রীরা সুর করে নামতা পড়ছে। সূর্যের
আলোর তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। সূর্যও আকাশে উপর দিকে উঠতে থাকে।।শহরে শীতের সকাল শহরেও শিশির পড়ে তবে ঘাসর ডগায় গাছের পাতায় নয়, পিচের রাস্তায়। কুয়াশায় চারদিক অন্ধকার হয়ে থাকে। গাড়িঘোড়ার শব্দ্যে, ট্রামের ঘণ্টির শব্দে শহরবাসীর ঘুম ভাঙে। খুব ভোরেই দেখা মেলে খবরের কাগজওলার মুখ। দেখতে দেখতে সূর্য আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু সকালের রোদ শহরের অলিতে-গলিতে প্রবেশের সুযোগ পায় না। উঁচু বাড়িগুলো বাধা হয়ে
শহরের কর্মব্যস্ত মানুষ শীতের সকালের স্তুপ উপভোগ করার সময় পায় না।
উপসংহার: একের পর এক ঋতুগুলো আসে আর যায়। বিভিন্ন ঋতু সকাল তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। তাতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই।
রচনা
গ্রীষ্মের দুপুর"#
ভূমিকা ও দিনের মাঝের অংশ দুপুর। সকালের পরে ও বিকেলের আগে দুপুরের অবস্থান। গ্রীষ্মের দুপুরের আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রূপ। এই সময় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। গ্রামে গ্রীষ্মের দুপুর
গ্রামের মানুষ সকাল থেকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকার পর দুপুরে খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নেয়। পথঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। বটগাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক আশ্রয় নেয়। দু-একটা কুকুর নিজেদের মধ্যে স্বাগড়া করে। কখনও কখনও নদীর ঘাটে বড় বোঝাই নৌকা বাঁধা থাকে। নদীর ঘাট জনমানব শূন্য। গ্রীষ্মের দুপুরে সূর্যের তাপে প্রকৃতিও ঝিমিয়ে পড়েছে। গাছের তলায় শুয়ে রাখাল অলসভাবে আকাশে মেঘের উড়ে যাওয়া দেখছে। আর।গোরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। গ্রামের বধূরা খাওয়া-দাওয়া সেরে পুকুর পাড়ে বাসন।মাজছে। তারাও এবার বিশ্রাম নেবে। সূর্যের তাপে পুকুরের জল শুকিয়ে এংসছে। মানুষ ও প্রকৃতিকে যেন আলস্য গ্রাস করেছে। শহরে গ্রীষ্মের দুপুর ও গ্রামে ও শহরে গ্রীষ্মের দুপুরের পার্থক্য অনেক। শহরের মানুষ দুপরের তাপকে গ্রাহ্য না করে কাজে ব্যস্ত থাকে। জীবন
স্বাভাবিক ভাবেই চলে। পথে লোকজন একটু কম দেখা যায়। শহরের টুপুরের নিজস্ব কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। যানবাহনের শব্দ, মানুষের কোলাহল একইভাবে শোনা যায়। তবে মানুষের মধ্যে ক্লান্তিবোধ থাকে।
উপসংহার : গ্রীষ্মের দপুরে মানুষ অপেক্ষা করে থাকে কখন বিে আসবে। বিকেল এলে সূর্যের তাপ একটু কমবে। দক্ষিণের বাতাস বইবে।
রচনা
হেমন্তকাল
ভূমিকা : বাংলায় হেমত চতুর্থ ঋতু। শরতের পর আসে হেমন্ত। কার্তিক
ও অগ্রহায়ণ এই দুমাস নিয়ে হেমন্তকাল।
প্রাকৃতিক অবস্থা । হেমন্তে প্রকৃতিতে রঙের বাহার থাকে না। থাকে না মাঠে মাঠে
ফুল ফলের সমারোহ। সকালে থাকে হালকা কুয়াশার চাদর।
সোনার ধান ফলে থাকে তা কাটার আয়োজন চলে এই হেমন্তে। গোলায় ধান তোলার জন্য কর্মব্যস্ততা শুরু হয়। হেমন্ত কৃষকের ধানের গোলা ভরে
দেয়। ধান কাটার পর পড়ে থাকে ফাঁকা মাঠ।
উৎসব : বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে কয়েকটি উৎসব আছে হেমন্তকালে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য— দেওয়ালি উৎসব।
“হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করংলা গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো—দীপালিকায় জ্বালাও আলো
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয ধরিত্রীরে।
জগন্ধাত্রী পুজো, রাসপূর্ণমা, শিশুদিবস, কার্তিকপুজো প্রভৃতি। নতুন ধান ঘরে ওঠার আনন্দে ঘরে ঘরে পালন করা হয় নবান্ন উৎসব। এছাড়া আছে মুসলিমদের উৎসব।
উপকারিতা : হেমন্তকাল খামার পূর্ণ করে দেয়। ফলে সারা বছরের
অস্ত্রের জোগাড় হয় এই ঋতুতে। সেদিক থেকে হেমন্তকালের গুরুত্ব অপরিসীম। হেমন্তে মানুষের মন আনন্দে ভরে থাকে। এই সময়ে নানারকম সব্জি ও ফল পাওয়া যায়।
উপসংহার : এক সময় হেমন্ত তার 'হিমের ঘন ঘোমটাখানি' সরিয়ে
শিশিরভেজা ঘাসের উপর দিয়ে চুপি চুপি বিদায় নেয়। এরপর শীতের ঝাপি নিয়ে হাজির হয় শীতকাল।
আত্মপরিচয় বিষয়ক
রচনা
আমাদের বাড়ি√
ভূমিকা : আধুনিক সভ্য মানুষ বাড়িতে বাস করে। মানুষের সামর্থ্য অনুসারে এবং স্থান বিশেষে সেই বাড়ি নানা রকমের ও নানা আকারের হয়। কেউ বাস করে নিজের বাড়িতে, কেউ বাস করে ভাড়াবাড়িতে। বাড়ির বিবরণ : আমরা যে বাড়িতে বাস করি, সেটি আমার দাদু তৈরি করেছিলেন। আমার জন্মের বহু বছর আগেই। এটি একটি দোতলা পাকাবাড়ি। বাড়ির সামনে আছে ছোট্ট উঠোন। বাড়ির সামনে আছে সরকারি রাস্তা। বাড়িতে আছে দু-খানা বড়ো শোয়ার ঘর। এছাড়া আছে পড়াশোনার ঘর, বসার ঘর,।খাওয়া-দাওয়ার ঘর। এগুলি অবশ্য আকারে ছোটো। আর আছে রান্নাঘর ও বাথরুম। বাড়ির বাইরে বিশেষ কারুকার্য নেই। কিন্তু বাড়ির ভেতরটা বেশ সুন্দরভাবে সাজানো। সবাই প্রশংসা করে। প্রতি দু-বছর অন্তর বাড়িটি রং করা হয়। তার ফলে বাড়িটি যে বেশ পুরনো তা বোঝাই যায় না। বাড়িটিতে অনেক দরজা জানলা থাকায় আলো-বাতাস খেলে।
বাড়ির বাসিন্দা : আমরা বাড়িতে মোট চারজন বাস করি। বাবা, মা, আমি ও আমার ছোটো বোন। বাবা চাকরি করেন, মা গৃহস্থালির কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন। আমি স্কুলে পড়ি। আমার ছোটো বোন এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করে নি। আর আছে বাঘা নামে একটি কুকুর। সেটি আমাদের বাড়ি পাহারা দেয়।
উপসংহার : আমাদের বাড়িটি আমাদের সবার কাছে খুবই প্রিয়। তাই বাড়িটিকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে খুব কষ্ট হয়।
রচনা
আমার বাবা-মা
ভূমিকা : ছেলেমেয়েদের জীবনে বাবা-মায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ছোটোবেলায় তারা বাবা-মায়ের সঙ্গেই কাটায়। বাবা-মা তাদের দেখাশোনা, আদর-যত্ন করেন। আমার বাবা : আমার বাবা আমাদের পরিবারের প্রধান। তাঁর বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। তিনি একজন ডাক্তার। রোগিদের চিকিৎসা করেন। গরিব রোগীদের।অল্প পারিশ্রমিকে চিকিৎসা করেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। বাড়ির সবার স্বাস্থ্য ও অন্যান্য চাহিদার বিষয়ে তিনি খুব সচেতন। আমি আমার।বাবাকে খুব ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি।
আমার মা : আমাদের পরিবারে মা একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি কোনো চাকরি করেন না। সারাদিন বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকেন। রান্না-বান্না, বাড়িঘর সাজানো ও পরিষ্কার রাখা, দৈনন্দিন খরচের হিসেব রাখা, আমাদের পড়ানো,
পুজো করা, সময় মতো খাওয়ার পরিবেশন করা এসব তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে। সবার স্বাস্থ্য, খাওয়ার, পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি তাঁর সতর্ক দৃষ্টি থাকে। সময় পেলে তিনি খবরের কাগজ পড়েন, টিভি দেখেন। আমাদের যেমন ভালোবাসেন, তেমনি অন্যায় করলে বকুনি দেন। তিনি আমাদের পাঠ্যবই যেমন পড়ান তেমনি নীতি ও আদর্শ বিষয়ে শিক্ষা দেন, মাঝে মাঝে নানারকম গল্পও শোনান। আমরা ভাই-বোন মাকে খুব ভালোবাসি, শ্রদ্ধা।করি। মাকে ছেড়ে দু-একদিন থাকতেও খুব কষ্ট হয়।
উপসংহার : আমি আমার বাবা-মায়ের জন্য গর্ববোধ করি। আমাদের কখন কি প্রয়োজন, কীসে আমাদের ভালো হবে সে-বিষয়ে তাঁরা সবসময়।সচেতন থাকেন। আমিও তাঁদের প্রতি কর্তব্য বিষয়ে কোনো দিন ভুলে যাব না।
রচনা
আমাদের গ্রাম
ভূমিকা ঃ আমি গ্রানে বাস করি। আমাদের গ্রামের নাম দৌলতপুর। এটি মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত।
গ্রামের পরিচয় : আমাদের গ্রামটি ছোটো। মাটির বাড়ি ও পাকা বাড়ি মিলিয়ে প্রায় আড়াইশোটি বাড়ি আছে। গ্রামে যেমন চাষের জমি আছে তেমনি আম-কাঁঠালের বাগানও আছে। গ্রামের এক পাশ দিয়ে গেছে পাকা রাস্তা। গ্রামের বাকি সব রাস্তা কাঁচা অর্থাৎ মাটির। গ্রামে আছে একটি পুরনো শিবমন্দির, আছে একটি বড়ো কালীমন্দির। একটি মসাজানও আছে। গ্রামে সৃষ্টি প্রাথমিক স্কুল আছে কিন্তু কোনো হাইস্কুল নেই। তবে আমাদের পাশের
আছে একটি হাইস্কুল। গ্রামে বিভিন্ন পেশার মানুষ বাস করে। কয়েক সরকারি চাকরিও করেন। তবে কৃষকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। পাওয়ার সুবিধা থাকায় সারা বছরই চাহাবাদ চলে। কেউ কেউ কলকায়। ও তার আশেপাশে কলকারখানায় চাকরি করে। গ্রামের মানুষরো একে অপরের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসে। বিভিন্ন উৎসবে সবধর্ম ও বর্ণের মানুষ পরস্পরের মধ্যে সবরকম বিভেদ ভুলে অংশগ্রহণ করে। আমাদের গ্রামের চড়ক মেলার আশ-পাশের বেশ কয়েকটি মানুষ জড়ো হয়। বর্ষাকালে খুব বেশি বৃষ্টি হলে রাস্তায় কাদা হয়, দু-একটি রাস্তা জলে ডুবে যায়। তখন আমাদের খুব কষ্ট হয়। আমাদের গ্রামে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র
নেই, হাসপাতালও বেশ দূরে। দু-একজন হাতুড়ে ডাক্তার থাকলেও ভালে কোনো ডাক্তার নেই। ফলে অসুখ-বিসুখে মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না।
উপসংহার : আমাদের গ্রাম আমার কাছে অতি প্রিয়। অনেক কিছুই আমাদে গ্রামে নেই, তবুও আমি আমার গ্রামকে ভালোবাসি। এখানেই আমি জন্মেছি
রচনা
★আমাদের বিদ্যালয়√
ভূমিকা : বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিদ্যালয়ের গুরুত্ব অপরিদীন। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের বিদ্যালয় অতি প্রিয়।
বিদ্যালয়ের পরিচয় : আমাদের বিদ্যালয়ের নাম নেতাজি বিদ্যানিকেতন। এখানে সকালে প্রাথমিক স্কুল ও দুপুরে হাইস্কুল বসে। আমি সবে দুপুরের স্কুলে অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছি। দুপুরের স্কুলের ছাত্রসংখ্যা সাতশোরও বেশি। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীর মোট সংখ্যা পঁচিশ। দোতলা স্কুলে ঘরের সংখ্যা অনেক। ঘরগুলি বেশ বড়ো এবং আলো বাতাসযুক্ত। স্কুলে একটি পাঠাগার আছে। তাতে পাঠ্যবই, অন্যান্য বই ও পত্রপত্রিকার সংখ্যা কম নয়। বিদ্যালয়ের পেছনে একটি বড়ো খেলার মাঠ আছে। সেখানে নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুল হয়। প্রতি বছর খেলাধুলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চাশ বছরেরও বেশি। স্কুলের একটি বাৎসরিক পত্রিকা আছে। নাম অঙ্কুর।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক : আমাদের বিদ্যালয়ের মান এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক খুব ভালো। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের স্নেহ করেন, পড়াশোনার প্রতি নজর দেন। তেমনি ছাত্ররাও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথেষ্ট শ্রণা করে। পড়া না পারলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বার বার বুঝিয়ে দেন। স্কুলের বাৎসরিক পরীক্ষার ফল যেমন বেশ ভালো তেমনি মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল আশপাশের স্কুলগুলির চেয়ে বেশ ভালো। শুধু পড়াশোনাই নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের নীতি ও আদর্শ, আচার ও আচরণ বিষয়ে শিক্ষা দেন। আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের বাগানের পরিচর্যা করি। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি।
উপসংহার : আমরা আমাদের বিদ্যালয়টিকে ভালোবাসি। এই বিদ্যালয়ের জন্য গর্ব বোধ করি।
রচনা
আমার প্রিয় বন্ধু
ভূমিকা : কমবেশি বন্ধু, ছোটো বড়ো সবারই থাকে। স্কুলের বন্ধু, পাড়ার
রচনা
বাংলার উৎসব
ভূমিকা : বলা হয় বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ'। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাঙালির উৎসবের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
বিভিন্ন উৎসব : বাংলা বছরের প্রথম দিনই নববর্ষ উৎসব পালন করা হয়। এরপর আষাঢ় মাসে আসে রথযাত্রা। ভাদ্রমাসে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।
তারপর আসে বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। চারদিন ধরে দুর্গাপূজা চলে। মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। কার্তিকের অমাবস্যায় আসে দেওয়ালি উৎসব। পৌষমাসে পৌষ পার্বণে ঘরে ঘরে পিঠে পায়সের আয়োজন চলে। মাঘ মাসে শুক্লা পঞ্চমীতে দেবী সরস্বতীর আরাধনা চলে। ফাল্গুন মাসে আসে দোল উৎসব। সবাই রং আবীরের খেলায় মেতে ওঠে। চৈত্রমাসে বাঙালি মেতে ওঠে শিবরাত্রি ও গাজনের উৎসবে। মকর সংক্রান্তি, শিবরাত্রি, রাখি পূর্ণিমা, বুদ্ধ পূর্ণিমা, গুরু
নানকের জন্মদিন, বাসন্তীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, বিশ্বকর্মা পূজা, কার্তিক পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা প্রভৃতিতে বাঙালিরা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে। এছাড়া আছে বাঙালি মুসলমানদের উৎসব। যেমন—ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত, ইদলফেতর, ফতেয়া দোয়াজ দাহম। এছাড়া আছে খ্রিস্টানদের বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে উৎসব। বিভিন্ন মহাপুরুষদের জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস প্রভৃতি বাঙালির উৎসবের মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবও আছে।
উপসংহার : বিভিন্ন উৎসবে বাংলার মানুষ ধনী-দরিদ্র, জাতি-ধর্ম ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। নিজেদের মধ্যে বিবাদ ভুলে যায়।