অষ্টম শ্রেণীর বাংলা শিকল পড়ার গান কাজী নজরুল ইসলামহাতে-কলমে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
শিকল পড়ার গান
কাজী নজরুল ইসলাম
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উঃ। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১.২ তিনি কী কী ধরনের গানের রচয়িতা?
উঃ। তিনি শ্যামাসঙ্গীত, গজল, দেশাত্মাবোধক, ইসলামি প্রভৃতি নানা ধরনের গানের রচয়িতা।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো :
২.১ 'শিকল পরা ছল’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উঃ। 'শিকল-পরা ছল’ বলতে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা যে একটা অভিনয়, ছলনা এমনটাই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।
২.২ ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়’।—‘বাঁধন-ভয়’ ক্ষয় করতে কারা, কোথায় এসেছেন?
উঃ। বাঁধন-ভয় ক্ষয় করতে স্বাধীনতাকামী দেশবাসীরা কারাগারে এসেছেন।
২.৩ “মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা” কীভাবে রচিত হয়?
উঃ। কান্না দিয়ে নয়, শিকলের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার ঝংকারের ঐক্যবদ্ধ পদশব্দ দিয়ে মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ বন্দনা করা হয়।
২.৪ ‘মোদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল'—পংক্তিটিতে ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন?
উঃ। পৌরাণিক যুগে যেমন ঋষি দধিচির অস্থি দিয়ে বজ্র নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেই বক্স দ্বারা ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করেছিলেন। তেমনই আবার স্বাধীনতাকামী মানুষদের অস্থি দিয়ে বজ্র তৈরি হবে। তাঁদের আত্মত্যাগেই দেশের স্বাধীনতা আসবে। একথা বোঝাতেই কবি এখানে “আবার” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৩.১ স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা কীভাবে শিকল পরার গান কবিতায় ধরা পড়েছে তা আলোচনা করো।
উঃ। ‘বিষের বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া 'শিকল পরার গান’ কবিতায় বারবার ধ্বনিত হয়েছে মুক্তির বাসনা। মুক্তির জন্যে মানুষের বলিদানকে তার দুর্বলতা নয়, তার সবলতা রূপেই দেখানো হয়েছে কবিতাটিতে। যে অত্যাচারীরা শিকল পরিয়ে স্বাধীনতাকামী মানুষদের বন্দি করেছে, তারা সেই বন্দিত্বকেই অস্বীকার করে বারবার উচ্চকণ্ঠে গর্জে উঠেছে। কবিতাটিতে বন্দিত্ব একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ বন্দি হওয়াটাই স্বাধীনতাকামী মানুষের একটা ছলনা মাত্র। ভারতমাতার বন্ধনের কাছে যে এ বন্ধন কিছুই না, সেটাই দেখানো হয়েছে। যাঁরা বন্দি হয়ে কারাগারে আসছেন তাঁরা সর্বদা এই প্রচেষ্টাই করেছেন যে যতটা সম্ভব এই বন্ধনের ভয় থেকে সকলকে মুক্ত করা যায়। কারণ যারা ভয়কে জয় করতে পারে তারা অত্যাচারের জবাব দিতেও পারে। যে পায়ে অত্যাচারীরা শিকল বেঁধেছে, একদিন সেই পা দিয়েই শিকল চূর্ণ হবে, এটাই মানুষের ধারণা। যারা সমগ্র জগৎ-এর সবাইকে অত্যাচারের কারাগারে বন্দি করেছে, যারা ভাবছে ভয় দেখিয়ে বিধাতার শক্তিকেও অগ্রাহ্য করবে সেই বর্বর জাতিদের শেষ করতে হলে সকলকে বিজয়মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। বলহীনকে ভয় মুক্ত হয়ে সফল হতে হবে। যে ভয়কে আশ্রয় করে অত্যাচারীরা অত্যাচার করছে সেই ভয়কেই সবার আগে ধ্বংস করতে হবে। ওই ভয়ানক অত্যাচারীদের অত্যাচারকে দুর্বলতায় পরিণত করতে হবে। মৃত্যুকে জয় করতে হবে ফাঁসি গ্রহণ করে। অর্থাৎ ‘হাসি হাসি পরব ফাঁসি’-র মতো স্বাধীনতাকামী মানুষ মৃত্যুকে উপহাস করে মৃত্যুর পরেও অমর হয়ে।থাকবে। যে শিকলের শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে কারাগারের দিকে দিকে সেখানে কান্না নয়, আরাধনা করা উচিত মুক্তি পথের অগ্রদূতদের। মুক্তির বাসনায় আজ লাঞ্ছিতরাই অত্যাচারীদের জবাব দিতে পারছে। আবার এই বিপ্লবীদের অস্থি দিয়ে নতুন।করে নির্মাণ হোক বজ্রের। মুক্তির তীব্র বাসনা এভাবেই বারবার ধরা পড়েছে আলোচ্য কবিতায়।
৩২ 'বাঁধন-ভয়কে করব মোরা জয়'—কেন এই বাঁধন? কারা, কীভাবে এই ‘বাঁধন-ভয়’-কে জয় করবে?
উঃ। আলোচ্য কবিতায় বাঁধন হ’ল পরাধীনতার বন্ধন। যা ইংরেজরা ভারতমাতার সারা দেহে জড়িয়ে দিয়েছিল।।বাঁধন ছিল সেইসব মানুষের বাঁধন যারা ভারতমাতার প্রকৃত সস্তান। এই স্বাধীনতাকামী মানুষেরা নিজেদের ইংরেজদের বন্ধনে আবদ্ধ করে সাধারণ মানুষের মন থেকে বন্ধন-ভয়কে দূর করে এই বাঁধন-ভয়কে জয় করার জন্যে যারা এগিয়ে এসেছেন তারা হলেন বিপ্লবী ও স্বাধীনতাকামী মানুষ। চায়। তারা শিকলে ধরা দিয়ে শিকলকে ভাঙার কাজই করে চলেছে। যারা নিজেদের শাসনে ভারতকে পদতলে পিষ্ট তাদের সর্বনাশ করার জন্য বলহীনদের মধ্যে বিজয়মন্ত্র সঞ্চারিত করছে এরা। বারবার জীবনকে উৎসর্গ করে এরা মৃত্যুকে পরাজিত করেছে। এরা নিত্য উপাসনা করেছে মুক্তির পথ প্রদর্শকের। এরা অত্যাচারিতদের মধ্যে সেই নিভে যাওয়া আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে যা মুক্তির পথকে সত্বর আরও কাছে নিয়ে আসবে। এভাবেই তাঁরা এই বাঁধন-ভয়কে জয় করবে।
৪. দল বিশ্লেষণ করো : বন্ধনী, ঝঞ্ঝনা, বজ্রানল, সর্বনাশ, অস্থি।
উঃ। বন্ধনী→ বন্ + প্ + নী
কল্পনা → ঝন্ + ঝ + না
বজ্রানল→ বজ্ + রা
সর্বনাশ - সর্ + ব্ + নাশ
অস্থি - অস্ + থি।
৫. ধ্বনি পরিবর্তনের কোন নিয়ম এখানে কাজ করেছে দেখাও : বাঁধন, পরে।
উঃ। (ক) বাঁধন→ বন্ধন > বাঁধন→ (নাসিক্যভবন)। (খ) পরে→ পরিয়া > পইরা > পরে→ (অভিশ্রুতি)।
৬. বাক্য রূপান্তর করো :
৬.১ ভয় দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ (জটিল বাক্যে)
উঃ। যে ভূত ভয় দেখায়, তার আমরা সর্বনাশ করব।
৬.২ মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যুজয়ের ফল। (যৌগিক বাক্যে)
উঃ। মোরা ফাঁসি পরব এবং হেসে মৃত্যুজয়ের ফল আনব।
৬৩ তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয় (চলিত গদ্যে)
উঃ। তোদের বন্ধ কারায় আমরা বন্দী হতে আসিনি।
৭. পদ চিহ্নিত করো :
৭.১ তোমার বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্বগ্রাস।
উঃ। বিশেষ্য: বন্ধ, বন্ধনী, ঘর, বিশ্বগ্রাস।
ক্রিয়া করছ, সর্বনামঃ তোমরা।
৭.২ মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যুজয়ের ফল।
উ। বিশেষ্য : ফাঁসি, হাসি, ফল, মৃত্যু, জয়।
ক্রিয়া : আনব, পরে, সর্বনামঃ মোরা।
৭.৩ এবার আনব মাভৈঃ বিজয়-মন্ত্র বলহীনের বল?
উঃ। বিশেষ্য : বিজয়, বল, মঞ্জু। ক্রিয়া : আনব।
বিশেষণ : বলহীন। অব্যয় : এবার।
৮. ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো :
উঃ।
শিকল ঝঞ্ঝনা— শিকলের ঝঞ্ঝনা
সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস
চরণ বন্দনা- চরণের বন্দনা
সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস
বজ্ৰানল— বছরূপ অনল
রূপক কর্মধারয় সমাস
মৃতুজয় মৃত্যু হতে জয়
অপাদান তৎপুরুষ সমাস
অন্য গুলি দেখুন
আলাপ
অন্য টা দেখুন দাঁড়াও
অন্যটা দেখুন আদাব
পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর
ভাষাচর্চা (১)