অষ্টম শ্রেণীর বাংলা "সুভা" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাতে-কলমে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর - Online story

Monday 7 August 2023

অষ্টম শ্রেণীর বাংলা "সুভা" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাতে-কলমে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

 




অষ্টম শ্রেণীর বাংলা

সুভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


হাতে-কলমে

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন?

উঃ। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘ভারতী’ ও ‘বালক’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন।



১.২ ভারতের কোন্ প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান ‘জাতীয় সংগীত' হিসাবে গাওয়া হয়?

উঃ। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসাবে গাওয়া হয়।



. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :

২.১ সুভার প্রকৃত নাম কী ? 

উঃ। সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী।



২.২ সুভার বাবা কে?

 উঃ। সুভার বাবা হলেন বাণীকণ্ঠ।



২.৩ সুভা কোন্ গ্রামে বাস করত?

 উঃ। সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত।



২.৪ গল্পে সুভার কোন্ কোন্ বন্ধুর কথা রয়েছে?

উঃ। গল্পে সুভার বাড়ির গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে বন্ধুর কথা রয়েছে। এছাড়া গোঁসাইদের ছোটো।ছেলে প্রতাপের সঙ্গেও সুভার বন্ধুত্ব ছিল।



২.৫ কে সুভাকে 'সু' বলে ডাকত? 

উঃ। গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।



৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

৩.১ ‘সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন’—সুভা সম্পর্কে এরকম উপনা, লেখক ব্যবহার করেছেন কেন?

উঃ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'সুভা' গল্পের মূল চরিত্র সুভা কথা বলতে পারে না। তার বড়ো বড়ো কালো চোখে।মনের ভাব ছায়া ফেলত। তার চোখের এই অনুভব বোঝা সাধারণ মানুষের সাধ্যতীত ছিল। সকল অভিব্যক্তিতেই তার।ঠোঁট নবীন কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত। তার মুখের মধ্যে ছেয়ে থাকত অসীম উদারতা ও গভীরতার অতুল স্পর্শ। তাই বালক-বালিকারা একপ্রকার ভয়ে তার সাথে খেলা করত না। দ্বিপ্রহর অর্থাৎ দুপুরবেলায়-যেমন পথঘাট নির্জন এবং শব্দহীন হয় সেভাবেই সুভার ভাষা ব্যবহারের অক্ষমতাকে বোঝাতে লেখক নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো তা শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন এই উপমাটি ব্যবহার করেছেন।



৩.২ চণ্ডীপুর গ্রামের বর্ণনা দাও।

উঃ। চণ্ডীপুর গ্রামটি এক তন্বী নদী দিয়ে ঘেরা। নদীটি বাংলাদেশের একটি ছোটো নদী। গৃহদ্ধ ঘরের মেয়েটির মতো, বহুদূর পর্যন্ত তার প্রসার নয়। গ্রামের দু-ধারের সকলের সঙ্গেই তার একটা-না-একটা সম্পর্ক আছে। দু-ধারে লোকালয় এবং তরুছায়াঘন উচ্চতট, নিম্নতল দিয়ে গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বিনী আত্মবিস্মৃত দ্রুতপদক্ষেপে প্রফুল্ল হৃদয়ে আপনার অসংখ্য কল্যাণকর্ম করে চলেছে। সুভার বাবা কালীপ্রসন্ন চণ্ডীপুর গ্রামেই বাস করতেন।




৩.৩ সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গুলির সম্পর্ক কীরকম ছিল?

উঃ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'সুভা গল্পে সুভা ছিল আজন্ম বোবা। সাধারণ মানুষের সুভার এই নীরব ভাবের কোনো মূল্য ছিলনা। সুভার মতো সর্বশী ও পাঙ্গুলিও নির্বাক ছিল। কারণ তারা ছিল সুভার গোয়ালের দুটি গাভী। সুভা সকল কথা বুঝতে পারলেও প্রকাশ করতে পারত না, এই গাভী দুটি ছিল তার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তার পায়ের আওয়াজ তাঁরা চিনত।

.তাই সুভা কখন তাদের আদর করছে আর কখন ভর্ৎসনা করছে তারা মানুষের অপেক্ষা ভালো বুঝত। তাই বলা যায় সর্বশী ও পাঙ্গুলির সাথে সুভার একটা আন্তরিক সম্পর্ক বর্তমান ছিল।



৩.৪ ‘এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত’—প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত, তা গল্প অবলম্বনে লেখো।

উঃ। চণ্ডীপুর গ্রামের গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ। সাংসারিক কাজে সে অকর্মণ্য ছিল। তার প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা। কারণ এতে অনেকটা সময় কাটানো যায়। আর প্রতাপ যেকোনো কাজে একটা সঙ্গী পেলে ভালো থাকে। মাছ

ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বশ্রেষ্ঠ, এই জন্যই প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত। সে সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত। প্রতাপ পান খেত তাই সুভা নিজে সেটি সেজে এনে তাকে দিত।



৩.৫ তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল'—কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

উঃ। 'সুভা' গল্পে সুভার মা-বাবার সম্পর্কে একথা লেখক রবীন্দ্রনাথ বলেছেন।

সুভা জন্ম থেকেই বোবা ছিল। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই বালিকা শুভা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। এই অরক্ষনীয়া বোবা মেয়ের বিয়ের বিয়ে সুভার বাবা মা চিন্তিত ছিলেন। তাছাড়া লোকে নিন্দা করা শুরু করেছিল, তাদের একঘরে করা হতে পারে এমন জনরব ও শোনা যেতে লাগল। কিন্তু তার মা-বাবা সেকথা কলিকাতার পাত্রের কাছে অজ্ঞাত রেখে সুভার বিবাহ দিলেন এতে তাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হলো বলে লেখক কটাক্ষ করেছেন।

বিবাহের কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী জানলেন যে শুভা বোবা। তখন তাকে সংসার সুখ থেকে বঞ্চিত করে তার স্বামী ভাষা বিশিষ্ট একটি মেয়েকে পুনরায় বিবাহ করে আনলেন। সমাজের ঐতিহ্য করতে সুভাষ হৃদয় হীন পিতা-মাতা তাকে জীবনের,  এক নির্মম পরিণতির দিকে ঠেলে দিলেন এই কারণেই লেখকের উল্লিখিত মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ।



. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :


৪.১ ‘প্রকৃতি যেন তাহার ভাষার অভাব পূরণ করিয়া দেয়'—মানুষের ভাষার অভাব কীভাবে প্রকৃতি পূরণ করতে পারে তা আলোচনা করো।

উঃ। যেকোনো মানুষই প্রকৃতির অনুশাসন দ্বারা পরিচালিত। আর সুভা একটি বোবা মেয়ে তার সঙ্গে প্রকৃতির যে একটি বিশেষ সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে সে তার সমস্ত ব্যথা-বেদনা প্রকৃতির সঙ্গে ভাগ করে নেয়। কারণ প্রকৃতি নিজে কথা বলে না। বোবা হওয়ার কারণে প্রকৃতির ইঙ্গিত, ভঙ্গি ভাষার সাথেই সুভার একাত্মতা স্থাপিত হয়। আর এভাবেই মানুষের ভাষার অভাব প্রকৃতি পূরণ করে দেয়।




৪.২ সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখো।

উঃ। সুভার সঙ্গে মানুষের খুব একটা সম্পর্ক না থাকলেও মনুষ্যতর প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক তথা বন্ধুত্ব খুব ভালোই ছিল। সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে দুটি গাভী।এবং একটি বিড়াল শাবক ও একটি ছাগল ছিল সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারা যেমন সুভার দুঃখে দুঃখিত হতো তেমনি সুভার আদর, ভৎসনা, মিনতি সবই তারা বুঝতে পারত। সুভা যখন দুহাত দিয়ে সর্বশীর গলা জড়িয়ে তার কানের কাছে। নিজের গাল ঘষত, তখন পাঙ্গুলি স্নেহের দৃষ্টিতে দেখে তার গা চেটে দিত। বাড়িতে কেউ কোনো কঠিন কথা বললে সুভা এই মূক বন্ধু দুটির কাছে চলে আসত, আর তারাও যেন সহিষ্ণু শান্ত দৃষ্টিতে কোনও এক অনুমান বলে সুভার মনোবেদনা বুঝতে পারত। তার কাছে এসে হাতে শিং ঘষে তাকে সান্ত্বনা দিত। গোয়ালের গাভী ছাড়াও ছাগল এবং বিড়ালছানাও ছিল সুভার বন্ধু। বিড়ালশিশুটি সুভার কোলে ঘুমোতে এলে সে তার ঘাড়ে ও পিঠে আঙুল বুলিয়ে ঘুমের সহায়তা করত।



৪.৩ শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী?

উঃ। শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মন বেদনায় ভারাক্রান্ত ছিল। তার জীবনের করুন গ্লানি তাকে মনে মনে অস্থির করে।তুলেছিল। সকলকে ছেড়ে চলে যাবার আশঙ্কায় সে তার শয়নকক্ষ থেকে বাইরে এসে তার চিরপরিচিত নদীর তীরে ঘাসের শয্যায় লুটিয়ে পড়ে সেই নীরব ধরণীমাতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিল যে মা যেন তাকে যেতে না দেন, দুই বাহু বাড়িয়ে তিনি যেন তাকে ধরে রাখেন। কারণ, কলিকাতায় সুভার বিবাহের জন্য পাত্র দেখা হয়েছিল। তাই তাকে কলিকাতায় যেতে হতো। সে তার এই গ্রাম ও বাল্যসঙ্গীদের ছেড়ে যেতে চায়নি। সে কথা বলতে পারে না, নিজের অক্ষমতা সে জানত তাই বড়ো হয়ে ওঠার ফলে, সমাজের কঠিন দৃষ্টিও সে বুঝতে পেরেছিল। তার মূকজীবন তাকে বঞ্চিত করলেও পিতার স্নেহ, প্রতাপ এবং দুটি অবলা জীবের সান্নিধ্য ও সাহচার্য থেকে সে বঞ্চিত হয়নি। তার সেই চিরচেনা পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য জগতে সে যে ভালো থাকবে না এই কথা বুঝতে পেরে মানসিক বেদনায় শুভা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল।




৪.৪ গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়োজন আলোচনা করো।

উঃ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'সুভা' গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি হলো ‘এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্নেন্দ্রিয়ের- দ্বারা পরীক্ষা করিয়া একাভাষাবিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল।'‘সুভা' গল্পে বোবা মেয়ে সুভার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা না ভেবে নিজেদের জাতি ও পরকাল রক্ষার জন্য পাত্রপক্ষকে লুকিয়ে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ তার বিয়ে দেন। তাঁরা বোঝার চেষ্টাই করলেন না যে কথা বলতে না পারার অক্ষমতার কথা না জানালে সুভার জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। আসলে লেখক শেষের এই বাক্যটির মাধ্যমে আমাদের সমাজকে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করেছেন। কারণ আমাদের সমাজ অনুশাসন অনুযায়ী পাত্র মেয়ে তথা পাত্রীকে চক্ষু কর্ণের দ্বারা পরীক্ষা করেই তবে বিবাহ করেন। কিন্তু সুভা কথা বলতে না পারায় তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিদায় দেওয়া হয়। তাই সমাজের অবস্থা বোঝাতে বাক্যটির প্রয়োজন অনিবার্য ছিল। শেষ বাক্যটির মধ্যে দিয়ে লেখক সুভার স্বামীর মানসিকতাকে কটাক্ষ করেছেন এবং এতে পাঠকের কাছে সুভার জীবনের করুণ পরিণতির এক ভবিষ্যত চিত্রও তুলে ধরেছেন। এই কারণেই গল্পের শেষ বাক্যটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে এনেছে।





৪.৫ মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরো দু একটি গল্পের নাম লেখো এবং ‘সুভা' গল্পটির সঙ্গে তুলনা করো।

উঃ। মানুষ ও মনুষ্যতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরো দুটি গল্প হলো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘মহেশ’ এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘আদরিনী'।

মহেশ ও আদরিণী গল্পে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব, ও ভালোবাসার কাহিনি বর্ণিত হলেও সুভা গল্পের প্রধান চরিত্র সুভা ছিল মানুষ। এই গল্পে সুভা মনুষ্যেতর প্রাণীদের ভালোবেসে তার বেদনার প্রকাশ ও ভাব বিনিময় করেছে। মনুষ্যেতর প্রাণীগুলির চরিত্র গল্পে প্রাধান্য পায়নি।


অন্য গুলি দেখুন

বোঝাপড়া

অদ্ভুত আতিথেয়তা

চন্দ্রগুপ্ত

বনভোজনের ব‍্যাপার

সবুজ জামা

চিঠি

আলাপ

পরবাসী

পথচলতি

একটি চড়ুই পাখি

দাঁড়াও

অন্য টা দেখুন দাঁড়াও

পল্লীসমাজ

ছন্নছাড়া

গাছের কথা

হাওয়ায় গান

কি করে বুঝবো

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি

নাটোরের কথা

অন‍্যটা দেখুন নাটোরের কথা

গড়াই নদীর তীরে

জেলখানায় চিঠি

স্বাধীনতা

আদাব

অন্যটা দেখুন আদাব

শিকল পরার গান

হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়

ঘুরে দাঁড়াও

সুভা

পরাজয়

মাসিপিসি

টিকিটের অ্যালবাম

লোকটা জানলই না



পথের পাঁচালী (১)

পথের পাঁচালী(২)

পথের পাঁচালী(৩)

পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর

ভাষাচর্চা (১)

ভাষা চর্চা (২)