একটি পথের আত্মকথা রচনা /AKTI PATHER ANATAKATHA RACHANA
রচনা
একটি পথের আত্মকথা
আমি একটি পথ। একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছড়িয়ে রয়েছি মানুষের সুবিধায়। পথের বন্ধু পথিক, তুমি কি শুনবে আমার আত্মকথা? অনেক সুখ দুঃখের স্মৃতিকথা আমার মনের মাঝে জমা হয়ে রয়েছে। কবে কার ইচ্ছায় আমি তৈরী হয়েছিলাম তা আজ আর আমার মনে নেই। তবে বহুকাল আগে আমার পথটি ছিল মাটির কাঁচাপথ। সে সময় কোনো যানবাহনই দেখা যেত না। মাঝে মাঝে শোনা যেত পালকির হুম্না হুম্না শব্দ। কোনো সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়ির মানুষ
পালকিতে চড়ে যেতেন। আর কিছু মানুষ যেতেন ঘোড়ায় চড়ে। সেসময় আমার চারপাশে ছিল বড়ো বড়ো গাছের জঙ্গল। তাতে ছিল অনেক বন্যজন্তুর বাস। গোরুর গাড়িতে করে শস্য যেত আমার ওপর দিয়ে আর সেই শস্য ছড়িয়ে পড়ত আমার ওপর। কত যে পাখি আমার ওপর পড়ে থাকা সেই শস্যদানা খাওয়ার জন্য চরে বেড়াত তার ইয়ত্তা নেই।
বড়ো ভালো ছিল সে সব দিন। পথচারী সাধারণ মানুষ আমার ধারে রান্নাবান্না করে বিশ্রাম নিয়ে আপন গন্তব্যস্থলে যেত। কত লুঠপাঠ দেখেছি আমার পথের ওপরে। কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে সেইসব দস্যু ডাকাতদের হাতে। খুনও হয়েছে অনেকে। আমি সাধারণ মানুষকে সাবধান করে দিতে চেয়েছি। নিষেধ করেছি ডাকাতদের এই অন্যায় কাজ করতে। কিন্তু
তারা কেউই বোঝেনি আমার ভাষা, বেদনায় মুষড়ে পড়েছি আমি। আবার আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছি, যখন দেখেছি কোনো নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রী আমার পথ ধরে চলেছে নিজেদের নতুন সংসারে। দিন বদলেছে, আমার কাঁচা পথ ধীরে ধীরে পাকা হয়েছে, পিচ ঢেলে তা মসৃণ করা হয়েছে। পথে এসেছে অনেক যানবাহন। কিন্তু পথের ধারের সেই নিবিড়
জঙ্গল আজ আর নেই, বন্যজত্তুরাও চলে গেছে। তার বদলে সেখানে গড়ে উঠেছে অজস্র বাড়িঘর, দোকানপাট, হোটেল, লজ ইত্যাদি। মানুষ আজও আসে আমার পথের উপরে। নতুন নতুন সাজে নতুন কাজের প্রয়োজনে তারা এগিয়ে চলে দূর-দূরান্তে। আমি এই পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আজও একইভাবে রয়ে গেছি। আজও একইভাবে দিনরাত মানুষের মাঝে আমি পড়ে আছি আর পুরোনো স্মৃতিকথা মনে করে আনন্দ বেদনায় ভরে আছি।