রচনা একটি অচল পয়সার আত্মকথা
রচনা
একটি নদীর আত্মকথা দেখুন
একটি বন্দি পাখির আত্মকথা দেখুন
একটি কলমের আত্মকথা দেখুন
একটি পথের আত্মকথা দেখুন
একটি অচল পয়সার আত্মকথা
আমি একটি অচল পয়সা। শুনবে আমার অভিজ্ঞতার কথা? একদিন আমিও সচল ছিলাম। যেদিন ট্যাকশাল থেকে আমার জন্ম হল সেদিন আমার কী রূপ ছিল জানো? আমি সোনার মতো চকচকে ছিলাম। একদিন সবার মতো আমিও প্যাকেট বন্দি হয়ে এলাম রিজার্ভ ব্যাংকে। সেখান থেকে এলাম একটি স্থানীয় ব্যাংকে, তারপর সেখান থেকে আমাকে এক দোকানদার নিয়ে এলেন। দোকানের ক্যাশব্যাক্সের মধ্যে পড়ে থেকে রোজই দেখতাম যে আমার অন্য বন্ধুরা একে একে অন্যের কাছে খুচরো হয়ে ফেরত চলে যাচ্ছে। একদিন আমারও পালা এল, এক বৃদ্ধ মানুষের পকেটে করে আমিও ক্যাশবাক্স থেকে বাইরের জগতে বেরিয়ে পড়লাম। ফেরার পথে বৃদ্ধ গেলেন এক কালীমন্দিরে। অনেকবার ‘মা’ মা' বলে ডেকে কপালে হাত জোড় করে প্রণাম করে তিনি পকেটে হাত দিলেন। আর ব্যাস, পড়বি তো পড় আমার গায়েই হাত। ঠুং করে ছিটকে পড়লাম প্রণামীর থালায়। ভারি রাগ হল, কেন রে। পয়সা বলে কি তার ব্যথা লাগতে নেই? ছুঁড়ে ফেলতে হবে। এরপর রাতে আবার প্যাকেট বন্দি হয়ে গেলাম পুরোহিতের বাড়ি। সেখানে তাঁর ছেলে আমার অনেক বন্ধু পয়সাদের মধ্যে আমাকেই বেছে নিল কারণ আমি তখনও যে নতুন আর চক্চকে। ছেলেটি ছিল খুব ভালো, যত্ন করে সে আমাকে একটা টিনের কৌটোয় তুলে রাখল। জানলাম সে আমার মতো পয়সাদের জন্মায়। রইলাম বেশ কিছুদিন তার কৌটোতে। কিন্তু সবদিন তো সমান যায় না। একদিন দুপুরে এক বুড়ি এল ভিক্ষা চাইতে। বাড়িতে কেউ নেই, দয়ার শরীর ছেলেটি কৌটো খুলে আমাকেই দান করল বুড়ির হাতে। ব্যাস আবার আমার পথ চলা শুরু হল। এইভাবে এহাত ও হাত ঘুরে আমিও দিন কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ এল দুর্দিন। এক দোকানদার আমাকে নিতে গিয়ে বললেন এতো অচল আর চলবে না। আমিও তো শুনে অবাক। অচল মানে? জানলাম সিকি পয়সা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে আর তার মূল্য নেই কেউ নেয় না। আমাকে নিয়ে হিসেব করার নাকি খুব অসুবিধা, আর আমার মূল্যের জিনিস নাকি আর নেই। তাহলে বলতো আমার কী হবে? কেউ কি আমায় আর আগের মতো আদর করবে? জানি না ভাগ্যে কী আছে। একটা ভাঙ কৌটোয় বন্দি হয়ে পড়ে থাকি। মাঝে মাঝে গল্প শুনি আমাদের মতো পয়সাদের নাকি গলিয়ে ফেলা হবে। ভাবি আর শিউরে উঠি। জানি না কতদিন এই চেহারা নিয়ে তোমাদের মাঝে থাকতে পারব। কালকের দিনটা আবার দেখতে পান কিনা!