রচনা বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক বিজ্ঞানের অভিশাপ / বিজ্ঞান : আশীর্বাদ না অভিশাপ√
বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক বিজ্ঞানের অভিশাপ / বিজ্ঞান : আশীর্বাদ না অভিশাপ√
প্রাককথন : প্রদীপের নীচে যেমন থাকে অন্ধকার, তেমনি বিজ্ঞানের বর্তমান আলোকরশ্মিময় উজ্জ্বলতার পিছনেও সুপ্ত আছে মানবসভ্যতা ধ্বংসের বীজ। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যখন ছিল তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের করাল ধ্বংসলীলার কাছে শিশুর মতোই অসহায়, সেই মুহূর্তে অগ্নি সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করা।ছিল অভিনব বিষয়। মানুষ এখানে চাঁদে পা দিয়েছে। মঙ্গলগ্রহ আবিষ্কার করেছে। সৌরকলঙ্ক, চন্দ্রকলঙ্ক, ছায়াপথ, নক্ষত্রজগৎ সম্পর্কে কত অজানা তথ্য জেনেছে। মহকাশ, মহাসমুদ্র, মহাদেশ এখন মানুষের ঘরবাড়ির মতোই চিরচেনা। এখন যেমন সত্যি; তেমন সত্যি যুদ্ধ, হানাহানি, ক্ষমতার অপব্যবহারে মানুষের মৃত্যু। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ রূপ : বর্তমান মানবসভ্যতার কাছে সর্বোৎকৃষ্ট পাওনা হল বিজ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞান মানুষের।কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। বৃক্ষকোটর অথবা প্রাকৃতির গুহার কন্দরে যে মানুষ বাস করত, সেই মানুষ আজ বাস করছে প্রবাদপ্রতিম আকাশচুম্বী অট্টালিকায়, পরিধানের জন্য যে নির্ভর করত বৃক্ষলতার উপর, সেই আজ
প্রসাধনের জন্য ডুবুরি সেজে সমুদ্রের অতল গহ্বর থেকে তুলে আনছে মণিমাণিক্যের রত্নমালা। রাতের আকাশের অস্পষ্ট নীহারিকার মায়াজালকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে এই বিজ্ঞানই প্রাত্যহিক কর্ম থেকে বিনোদনে বিজ্ঞান : জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সে জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজন খাদ্যই হোক কিংবা বিনোদন, সবেতেই আমরা কাজে লাগিয়েছি বিজ্ঞানকে। কৃষিক্ষেত্রে এনেছি সবুজ বিপ্লব,
রাজস্থানের বালুকাময় মৃত্তিকাকে আমরা বিজ্ঞানের কল্যাণেই চাষযোগ্য করে তুলেছি। নিত্যনতুন যানবাহন আবিষ্কারের ফলে আমরা খুবই অল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
অভাধিক বিজ্ঞান-নির্ভরতা এবং তার পরিণাম : বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে অনেক কিছুই কিন্তু সেই সঙ্গে নিয়েছে আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলিকে। আমাদের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা অনুভূতির নরম তন্ত্রীগুলিকে ছিন্ন করেছে। মানুষ আজ পরিণত হয়েছে যন্ত্রমানবে, তাই অপরের দুঃখে তার হৃদয় আর পূর্বের মতো ব্যথিত হয় না। চার দেওয়ালের মধ্যেই মানুষ আজ সমগ্র বিশ্ব এবং তার বিনোদনের সামগ্রীকে পেয়ে যাওয়ায় সে আজ নিজের ঘরেই নিজে বন্দি। বিজ্ঞানের ধ্বংসলীলা : প্রকৃতির অফুরান শক্তির অনন্ত ভাণ্ডারের গুপ্তধনের সন্ধান এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। অবাক বিস্ময়ে সে প্রত্যক্ষ করেছে পারমাণবিক শক্তিকে। যার ফল হল পারমাণবিক বোমা। এই শক্তিকে কাজ লাগিয়ে মঙ্গলকামী মানুষ এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে সভ্যতার রথচক্রকে। কিন্তু মানুষের কুবুদ্ধি আর স্বার্থলিপ্সা এই শক্তির অপব্যবহার করে চলেছে। যার বিস্ময় ফল দেখি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পতিত পারমাণবিক বোমা। ফলশ্রুতি স্বরূপ, আজও এখানে জন্ম নেয় বিকলাঙ্গ শিশু। নিত্য নতুন আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানুষ ক্রমে আরও যুদ্ধ মত্ততায় মেতে উঠেছে। কে নেবে-এর দায় : মানবিকতার কাঠগড়ায় কাকে দাঁড় করাব এই ধ্বংসলীলার জন্য? মানুষকে না বিজ্ঞানকে? কিন্তু বিজ্ঞান তো মানুষের সৃষ্টি এবং তার দ্বারাই পরিচালিত, মানুষই ঠিক করবে তাকে কী হিসেবে ব্যবহার করবে। ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে না সৃষ্টির চাবিকাঠি হিসেবে। ক্ষমতাবৃদ্ধির লোভে পড়েই তো মানুষ একের পর এক সঞ্চয় করে তুলেছে পারমাণবিক শক্তিভাণ্ডারের অক্ষয়ত্বণ। এর জন্য তো বিজ্ঞান দায়ী নয়। অর্থাৎ মানুষই ঠিক করবে বর্তমান মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ স্বরূপ।
শেষকথা : বিজ্ঞানের মায়াবী হাতের স্পর্শে যে মানবসভ্যতাকে তিল তিল করে তিলোত্তমা করে তুলেছি, তাকে আমরা আমাদের চোখের সামনে বিলীন হতে দিতে পারি না। এই সভ্যতা আমাদের, তাই একে টিকিয়ে রাখার দায়ও আমাদের।