একটি বটগাছের আত্মকথা রচনা
একটি বটগাছের আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি বটগাছ। আমার বয়স একশো বছরেরও বেশি। আমার এই দীর্ঘ জীবনে বহু ঘটনা ঘটেছে। দেশের, সমাজের বহু ইতিহাসই আমার জানা।
আত্মকথা : যেদিন প্রথম দুটি কচিপাতা মেলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, সেদিনের কথা আজও ভুলিনি। রাস্তার পাশে এক ঝোপের পাশে আমার জন্ম।একটু একটু করে বড়ো হতে থাকলাম। একদিন স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাকে দেখে থমকে দাঁড়াল। তারপর আমাকে মাটি থেকে তুলে রাজপথের পাশে যত্ন করে লাগিয়ে চারদিকে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিল। নিয়মিত জল দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে তুলল। এরপর আমি দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকলাম। ডালপালা ছড়িয়ে, ঝুরি নামিয়ে এক বিশাল জায়গা দখল করলাম। পথের পাশে রোদ বৃষ্টি ঝড় সহ্য করে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলাম। আমার শাখায় ও কোটরে বহু পাখি, গিরিগিটি, সাপ প্রভৃতি বাস করে আসছে। পথিকরা আমার শীতল ছায়া আশ্রয় নেয়।
বহু ঘটনার সাক্ষী : আমি এক দিকে দেখেছি ইংরেজ শাসকদের অমানুষিক অত্যাচার। অপর দিকে দেখেছি এদেশের তরুণদের দেশের জন্য গভীর ভালোবাসা। দেশ স্বাধীন করার জন্য তারা হাসিমুখে কত অত্যাচার সহ্য করেছে। তারা আমার তলায় গোপনে কত মিটিং করেছে। আমি সেসব দেখেছি, তাদের গোপন আলোচনা শুনেছি। যখন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল, তখন প্রায় মাস তিনেক আমার ছায়ায় স্কুল বসত। তখন গর্বে আমার বুক ফুলে উঠত। আবার চোর ডাকাতেরা আমার তলায় বহুবারই তাদের চুরি-ডাকাতির মাল ভাগ করেছে। সেসবও দেখেছি।
উপসংহার : এখন আমার বয়স হয়েছে। শিকড়গুলো মাটির উপরে জেগে উঠেছে। ঝড় উঠলেই ভয় পাই, হয়তো বা আমার ডালগুলো ভেঙে পড়বে। হয়তো বা আমি মাটি থেকে উপড়ে পড়ব।