একটি তাল গাছের আত্মকথা রচনা
রচনা
একটি তালগাছের আত্মকথা
ভূমিকা : সব গাছ ছাড়িয়ে আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। অর্থাৎ আমি একটি তালগাছ। আমার আশপাশে এক সময় অনেক গাছ ছিল, কিন্তু এখন বিশেষ কোনো গাছ নেই। বাবুই পাখিরা আমার পাতায় বাসা বানায়। তাদের কিচির মিচির শব্দে আমার দিন-মাস-বছর কেটে যাচ্ছে।
জন্মঃ আমার জন্মের কথা বিশেষ মনে পড়ে না। মানুষের মতো আমার তো ঠিকুজি নেই। তাই সঠিক বয়স জানি না। তবে আজ থেকে যাট-পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার জন্ম। আমার পাশেই আর এক তালগাছ ছিল। সম্ভবত সেই গাছের পাকা তালের আঁটি থেকে আমার জন্ম। আগাছায় ঢাকা পুকুর পাড়ে আমি অযত্নে অবহেলায় একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাক্লাম। কারণ তালগাছের তো কেউ যত্ন নেয় না।
আমার গুরুত্ব ঃ আমার ফল অভিজাত নয়। তাহলেও আমি মানুষের নানা কাজে লাগি। আমার ফলের মাড় দিয়ে তৈরি বড়া সবাই খেতে ভালোবাসে। এছাড়াও তালের খাগরা, তালের রুটি, ক্ষীর, তালের লুচি প্রভৃতি নানারকম খাদ্য তৈরি হয়। কচি শাঁস খেতে ভালো। তালের পাটালিও অনেকের প্রিয় খাদ্য। আমার ফলের ওষধি গুণ কম নয়। তালশাঁস বাত কমায়, পিত্ত নাশ করে। পাকা তাল রক্ত বাড়ায়, এতে ভিটামিন ‘সি’ আছে। তবে বেশি খেলে ক্ষতি হয়। তালগাছের কাণ্ড নানা কাজে লাগে। পাতা দিয়ে পাখা তৈরি হয়। আমি অনেক পাখিকে আশ্রয় দিই।
কিছু স্মৃতি ঃ কিছু কিছু বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে। আমি তখন অনেক ছোটো। মাটি ছাড়িয়ে কিছুটা উপরে উঠেছি। এক রাতে দুজন চোর এসে মাছ ধরছিল। হঠাৎ পুকুরের মালিক লোকজন নিয়ে পুকুর পাড়ে আসে। চোর দুজন তাড়াতাড়ি মাছ ও জাল নিয়ে আমার পাতার আড়ালে বসে পড়ে। পুকুরের মালিক চারদিকে টর্চের আলো ফেলে কাউকে দেখতে না পেয়ে ফিরে গেল। তখন চোরগুলো সুযোগ বুঝে দৌড়ে পালাল। অবশ্য সে-পুকুর আজ আর নেই। একবার এই অঞ্চলে বন্যা হয়েছিল। আমার গোড়ায় তখন মানুষ।সমান জল। রাস্তা-ঘাট ফসলের মাঠ সব জলের তলায় চলে গেল। জলের তোড়ে কত মানুষ, গোরু-ছাগল ভেসে গেল। আমি শুধু দেখলাম আর চোখের জল ফেললাম। সে-দৃশ্য আমি কোনোদিন ভুলব না।
উপসংহার : আমার বয়স হয়েছে। আর হয়তো বেশি দিন বাঁচব না। অছাড়া চারদিকে যেহারে বাড়িঘর বাড়ছে তাতে আমাকে হয়তো যে-কোনো দিন কেটে ফেলা হতে পারে। বর্ষাকালে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, তখন আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু ভয় হয় যখন বাজ পড়ে। বাজ আমার বুকে আঘাত করলে আমার মৃত্যু অবধারিত।