রচনা "একটি পোড়োবাড়ির আত্মকথা"/Rachana akti pro barir anatakatha
একটি সেতুর আত্মকথা দেখুন
রচনা
একটি পোড়োবাড়ির আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি পোড়োবাড়ি। বয়সের সঠিক হিসেব আমার মনে নেই। তবে দুশো বছরের বেশি, সেটা জোর দিয়ে বলা যায়। এখন এখানে কোনো মানুষ নয় সাপ, ইঁদুর, ছুঁচো, পেঁচা, বাদুড় প্রভৃতি বাস করে।
জন্ম : আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা। বাড়ির মালিক পুরুত মশাইকে নিয়ে এসে ভিত পুজো করলেন। তার কয়েক দিন পরে মাপজোক করে ভিত কেটে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হল। বাড়ির মালিক সকালে ও বিকেলে এসে রাজমিস্ত্রী ও তাদের লোকদের নানারকম নির্দেশ দিতেন। মাস চারেকের মধ্যেই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হল। তারপর গৃহপ্রবেশ। কত লোকজন এল, হৈ-হুল্লোড় হল। এ বাড়িতেই মালিকের তিন 'ছেলে জন্মালো, বড়ো হল। একসময় বাড়ির মালিকের মৃত্যু হল। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন প্রতি বছরই বাড়ি রং করাতেন। এরপর তিন ভাই আলাদা হয়ে গেল। আমি ছোটো ছেলের ভাগে পড়লাম।
জীবন কাল : এরপর থেকে শুরু হল আমার প্রতি অবহেলা। বাইরের দেওয়ালে তিন চার বছর অন্তর রং পড়তে থাকল। কোথাও কোথাও ফাটল দেখা দিল।এইভাবে বছরের পর বছর কাটল। ক্রমশ পলেস্তারা খসে পড়তে থাকল। বর্তমান মালিকও বৃদ্ধ হল। তার একমাত্র ছেলে বিদেশে পড়তে চলে গেল। বছর তিনেক পরে সেখানেই চাকরি পেয়ে স্থায়ীভাবে থেকে গেল। এরপর বাড়ির মালিকও একসময় মারা গেলেন। ততদিনে বাড়ির ছাদ দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়তে শুরু করেছে।দেওয়ালের দু-এক জায়গা ভেঙে পড়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর গৃহকর্ত্রী মাস দুয়েক এ-বাড়িতে থেকে বাপের বাড়ি চলে গেলেন। তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে চোরেরা এক এক করে দরজা-জানলা খুলে নিয়ে গেল। এক বড় বৃষ্টির রাতে ছাদটা ধ্বসে পড়ল।
উপসংহার : এখন আমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছি। উত্তর এবং পূর্ব দিকের দেওয়াল যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাকে বট ও অশ্বত্থ গাছ ঢেকে দিয়েছে।