রচনা একটি সেতুর আত্মকথা / Rachana akti setur anatakatha
রচনা
একটি সেতুর আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি সেতু। একটি চওড়া খালের উপর পাকা সেতু। আমার বয়স প্রায় চল্লিশ বছর।
জন্ম ঃ শুনেছি আগে এখানে একটি কাঠের সেতু ছিল। সেই সেতুর উপর দিয়ে সাইকেল, রিক্সা ও ট্যাক্সি ছাড়া কোনো বড়ো গাড়ি যাতায়াত করতে পারত না। প্রায় ছমাস ধরে কাজ চলার পর আমাকে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। আজও সেই উদ্বোধনের দিনটির কথা মনে পড়ে। লোকে লোকারণ্য, ফুল, মালা দিয়ে আমাকে সাজানো হল। জেলাশাসক এলেন, মন্ত্রী এলেন। অনেক বক্তৃতা দিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারদের আনন্দের সীমা নেই। আমিও সবার কাজে লাগব ভেবে গর্বে বুকটা ফুলে উঠল।
বর্তমান অবস্থান : দীর্ঘ দিনের অবহেলায় আমার জরাজীর্ণ অবস্থা।যেখানে-সেখানে ছোটো ছোটো গর্ত। সেতুর দুধারের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। দু-এক জায়গায় লোহার খাঁচা বেরিয়ে পড়েছে। জন্মের পর থেকে মাত্র বার তিনেক মেরামত করা হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার আয়ু শেষ হয়ে আসছে। এখন কোনো বড়ো গাড়ি গেলে আমার বুকটা কেঁপে ওঠে। ভয় হয় এতো চাপ সহ্য করতে না পেরে হয়তো ভেঙে পড়বো।
দায়িত্ব পালন : জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব সমানভাবে পালন করে চলেছি। মানুষ ও বিভিন্ন পশু আমার ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে। সাইকেল, রিক্সা, মোটর সাইকেল, ট্যাক্সি, লরি সবই আমার ওপর দিয়ে পার হচ্ছে। রাত্রির অন্ধকার থাকতে থাকতেই মানুষ ও গাড়ি চলাচল শুরু হয়। চলে মাঝরাত্রি পর্যন্ত। তারপর আমি একটু বিশ্রাম পাই।
উপসংহার : কেউ চিরকাল বেঁচে থাকে না। আমি যে আর বেশি দিন বাঁচব না তা কেউ না বুঝুক আমি বুঝেছি। আমার ভেতরে যে লোহার খাঁচা আছে তাতে জং ধরতে শুরু করেছে।