একটি চেয়ারের আত্মকথা রচনা
রচনা
একটি চেয়ারের আত্মকথা
ভূমিকা - আমি একটি বহু পুরোনো চেয়ার।মেহগনি কাঠের তৈরি ।তোমরা হয়তো মেহগনি কাঠের তৈরি করা চেয়ার তোমরা অনেকেই দেখোনি। অবশ্য নিজের গুনোগান করছি না, সত্যি কথা বলছি।আমার বয়স প্রায় একশো বছর। আমাদের স্বাধীনতা লাভের অনেক আগেই আমার জন্ম। ইংরেজ আমলে এক বাবু ব্যবসা করে বহু টাকা জমিয়েছিলেন। এদিন তিনি এক নামী কাঠের দোকানে গিয়ে একটি তৈরি অর্ডার দেন। চেয়ারখানা কেমন হবে সে-বিষয়ে তিনি বলে দেন । ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে কিনা তিনি প্রায় এসে দেখে যেতেন। পলিশের শেষ হওয়ার পর আমাকে দোকান থেকে কর্তার বাড়িতে আদর যত্ন করে পাঠানো হলো।
কিছু স্মৃতি:- আমার করা সকাল সন্ধ্যায় আমার কোলে না বসলে শান্তি পেতেন না। আমি ছিলাম তাঁর অতি প্রিয়। বাড়ির আর কারুর সাহস ছিল না যে, আমাকে ব্যবহার করে। কর্তা ছিলেন অত্যন্ত রাশভারী মানুষ। তিনি নিয়মিত আমার যত্ন নিতেন। এইভাবে প্রায় পঁচিশ বছর কেটেগেল । নিয়তির বিধানে তিনি কোনো এক কঠিন রোগে পড়েন। ধীরে ধীরে তিনি শয্যাশায়ী হলেন। সেই অবস্থায় তিনি বেশ কিছু বছর বেঁচে ছিলেন। প্রতিদিন বিকেলে ধরাধরি করে তাকে চেয়ারে বসানো হতো।আমার স্পর্শে কর্তা যেন কিছুটা আরাম পেতেন। এক সময় কর্তা মারা গেলেন। তারপর দীর্ঘ দিন আমি স্টোর রুমে পড়ে রইলাম। আমার।কথা সবাই ভুলে গেল।।শেষে একদিন বাবুর বড়ো ছেলের নজর পড়ল আমার উপর। আমি আবার আশার আলো দেখতে পেলাম।তিনি ঠিক আমাকে ব্যবহার করবেন। তিনি একজন অধ্যাপক। প্রতিদিন কলেজ থেকে ফিরে বাবার প্রিয় চেয়ারে বসে নানা ধরনের বই পড়তেন। দেখতে প্রায় কুড়ি বছর কেটে গেল। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিলেন। এখন তার অনেক বয়স হয়েছে।
উপসংহার : আমারও বয়স কম হল না। পাগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে।আমার পালিশ অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এবার হয়তো আমাকে বাতিল হতে হবে। আমিও আর বাঁচতে চাই না। অনেক দেখেছি, অনেক শুনেছি। আর বাঁচাতে ইচ্ছা করে না। আমি ও নিয়তির ডাক একদিন চলে যাবো।তোমরাও আমার কথা ভুলে যাবে।