অষ্টম শ্রেণীর ভাষাচর্চা দ্বিতীয় অধ‍্যায় ধ্বনি পরিবর্তন অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর - Online story

Sunday 4 February 2024

অষ্টম শ্রেণীর ভাষাচর্চা দ্বিতীয় অধ‍্যায় ধ্বনি পরিবর্তন অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

 



অষ্টম শ্রেণীর
বাংলা 
ভাষাচর্চা
দ্বিতীয় অধ্যায়
ধ্বনি পরিবর্তন

আমরা অনেকেই অনেক কথার মূল উচ্চারণ কে একটু বদলে নিয়ে বলে থাকি। যেমন 'স্কুল' কে ‘ইস্কুল’, ‘গ্লাস’ কে ‘গেলাস’ ইত্যাদি। তেমন একটি শব্দ হল ‘বিলাতি’, একে আমরা ‘বিলিতি’ বলি। আমরা জানি ই’ এবং ‘আ’ এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময়ে জিভ যথাক্রমে উপরে আর নীচে থাকে। এখন বিলাতি বলার সময় জিভকে ই-আ-ই কে উচ্চ-নিম্ন -উচ্চ অবস্থানে যেতে হয়। এই পরিশ্রম বাঁচাতে ‘বিলিতি' বললে জিভের খাটনি সবচেয়ে কম হয়। তাই বলা যেতে পারে ধ্বনি পরিবর্তনের মূল কারণ হল উচ্চারণের সরলীকরণের প্রতি বাগযন্ত্রের সহজাত প্রবণতা। কঠিন উচ্চারণকে এভাবেই শব্দের অন্তর্গত বিভিন্ন ধ্বনির পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সহজ করে নিই। ব্যাকরণে ও ভাষাতত্ত্বে এই বিষয়টিকেই বলা হয় ধ্বনি পরিবর্তন। মনে রাখতে হবে ধ্বনি পরিবর্তনের পর্যায়টি আকস্মিক নয়, একটি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের উচ্চারণ প্রবণতার অনুসারী এবং দীর্ঘমেয়াদি। ভাষার বিবর্তনের ইতিহাসের সঙ্গে তার যোগ সুস্পষ্ট।

১. ধ্বনি পরিবর্তনের মূল কারণ কোন্‌টি?
উঃ। ধ্বনি পরিবর্তনের মূল কারণ হল উচ্চারণের সরলীকরণের প্রতি বাগ্যন্ত্রের সহজাত প্রবণতা। শব্দের উচ্চারণকে শব্দের অন্তর্গত বিভিন্ন ধ্বনির পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সহজ করে নিই।

২. ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে?

উঃ। উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী শক্ত উচ্চারণকে সহজ করার জন্য আমরা কাছাকাছি ধ্বনিগুলির সন্নিবেশ করে নিতে চাই।
এতে শব্দের অর্থ একই থাকলেও ধ্বনিতাত্ত্বিক দিক থেকে শব্দের বহিরঙ্গে নানা রূপান্তর ঘটে। ব্যাকরণে ও ভাষাতত্ত্বে এই বিষয়টিকে বলা হয় ধ্বনি পরিবর্তন।

১. ধ্বনির আগমকে কটি ভাগে ভাগ করা যায়?
উঃ। ধ্বনির আগমকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, (ক) স্বরাগম ও (খ) ব্যঞ্ঝনাগম।

২. স্বরাগম কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী?

উঃ। ধ্বনি পরিবর্তনের মোট তিনটি ধারা দেখা যায়। (ক) ধ্বনির আগম, (খ) ধ্বনিলোপ, (গ) ধ্বনির রূপান্তর। ধ্বনির আগম

৩. ধ্বনি পরিবর্তনের কয়টি ধারা লক্ষ করা যায়?

উঃ। শব্দের আদি, মধ্যে বা অন্তে সংযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে তার আগে, পরে বা মধ্যে একটি স্বরধ্বনির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে উচ্চারণ প্রয়াস হ্রাস করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় স্বরাগম। স্বরাগম তিন প্রকার, (ক) আদি-স্বরাগম, (খ) মধ্য-স্বরাগম,
(গ) অন্ত্যস্বরাগম।


৩. আদি-স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের শুরুতেই যুক্তব্যগুন থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে যুক্তব্যঞ্ঝনটির পূর্বে একটি সুবিধাজনক স্বরধ্বনির আগমন ঘটে। একেই বলা হয় আদি-স্বরাগম। যেমন : স্পর্ধা > আস্পর্ধা। স্টেশন > ইস্টেশন ইত্যাদি।

৪. মধ্য-স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের মধ্যে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে উচ্চারণ প্রয়াস কমানোর খাতিরে, সরলীকরণের প্রয়াসে অথবা ছন্দের কারণ যুক্তব্যঞ্জন দুটির মধ্যে একটি স্বরধ্বনির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শব্দের সৌকর্য বৃদ্ধির রীতিকে বলা হয় মধ্য-স্বরাগম।
যেমন : কর্ম > করম। গ্রাম > গেরাম।

৫. মধ্য-স্বরাগমকে স্বরভক্তি বলা হয় কেন?
উঃ। এই স্বরাগমে স্বরধ্বনি সহযোগে যুক্তব্যগুনকে বিভক্ত করা হয় বলে মধ্য-স্বরাগমের অপর নাম ‘স্বরভক্তি'।

৬. মধ্য-স্বরাগমকে বিপ্রকর্ষ বলা হয় কেন?
উঃ। এই প্রক্রিয়ায় শব্দের সৌকর্য তথা উৎকর্ষকে বিশেষরূপে ও প্রকৃষ্টভাবে বর্ধিত করা যায় বলে এই প্রক্রিয়াকে‘বিপ্রকর্ষ’-ও বলা হয়ে থাকে।

৭. কোন্ কোন্ শব্দে স্বরভক্তি ও বিপ্রকর্ষের প্রবণতা দেখা যায় তা উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দাও।
উঃ। সাধারণত যেসব শব্দে ‘র’, ‘ল’, ‘ন’ ও ‘ম’ সংযুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন তৈরি করছে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষের বিশেষ প্রবণতা সেখানেই দেখা যায়। যে স্বরধ্বনিগুলির আগম তার মধ্যে পড়ে সেগুলি হল : অ, ই, উ, এ এবং ও
যেমনঃ নির্মল > নিরমল। বর্ষণ > বরিষণ। শ্লোক > শোলোক ইত্যাদি।


৮. অন্ত্যস্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের অন্তে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে উচ্চারণের শ্রম কমাতে ও উচ্চারণের আড়ষ্টতাকে সহজ করার জন্য অতিরিক্ত যে স্বরধ্বনির আগম ঘটে, তাকে অন্ত্য-স্বরাগম বলা হয়। যেমন : দুষ্ট > দুষ্টু। সত্য > সত্যি। বেঞ > বেঞ্জি ইত্যাদি।


৯. ব্যঞ্জনাগম বলতে কী বোঝ?
উঃ। শব্দের মধ্যে অনেক সময় বাইরে থেকে একটি ব্যানধ্বনি এসে জায়গা করে নেয়, একে বলে ব্যাঞ্জনাগম।স্বরাগমের মতোই ব্যঞ্ছনাগম ও আদি, মধ্য ও অন্ত্য, তিনস্থানেই হতে পারে। তবে বাংলাভাষায় আদি-ব্যগুনাগম প্রায় দুর্লভ।
.
১০. উদাহরণ সহ আদি-ব্যঞ্ঝনাগম সম্বন্ধে লেখো।
উঃ। শব্দের আদি ও ব্যঞ্জন ধ্বনির আগম কদাচিৎ ঘটে। বাংলা ভাষার বিশেষ আঞ্চলিক বৈচিত্র্যেই এমন দেখা যায়।
যেমন : আম > রাম।


১১. মধ্য-ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদহারণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের মধ্যে যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে, এমনকি না থাকলেও অনেক সময় একটি ব্যঞ্জনের আগম ঘটে। একে মধ্যয ব্যঞ্জনাগম বলা হয়। যেমন : অম্ল > অম্বল। পোড়ামুখী > পোড়ারমুখী ইত্যাদি।


১২. য়-শ্রুতি বলতে কী বোঝ?
উঃ। দুটি স্বরধ্বনি পাশাপাশি থাকলে উচ্চারণের আড়ষ্টতা কাটাতে অনেক সময় একটি ‘য়’ ধ্বনির আগম ঘটে। একে য়-শ্রুতি বলে। যেমন : ছাআ > ছায়া। গোআলা > গোয়ালা ইত্যাদি।


১৩. ব-শ্রুতি বলতে কী বোঝ?
উঃ। দুটি স্বরধ্বনি পরস্পর সন্নিহিত থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে অনেক সময় একটি অন্তঃস্থ-ব ধ্বনির আগম ঘটে থাকে। একে বলা হয় ব-শ্রুতি। যেমন : শোআ > শোবা (শোওয়া)। ধোআ > ধোবা (ধোওয়া) ইত্যাদি।

১৪. অন্ত্য-ব্যঞ্ঝনাগম কাকে বলে?
উঃ। শব্দের অন্তে যুক্তব্যগুন থাকলে কিংবা না থাকলেও অনেক সময় একটি ব্যানধ্বনির আবির্ভাব ঘটে। একে অন্ত্য-ব্যঞ্ঝনাগম বলা চলে। যেমনঃ ধনু > ধনুক। নানা > নানান। সীমা > সীমানা। জমি > জমিন ইত্যাদি।
| ধ্বনিলোপ
১. ধ্বনিলোপ কাকে বলে? ধ্বনিলোপ কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ। উচ্চারণের ক্ষেত্রে অনেক সময় শব্দের অন্তর্গত বিশেষ বিশেষ কোনও ধ্বনির উপর বেশি জোর পড়ে। এর ফলে অন্য একটি ধ্বনি লুপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ধ্বনি-লোপ। ধ্বনি-লোপও মূলত দু-প্রকার, (ক) স্বরধ্বনিলোপ (খ)
ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ।


২. স্বরলোপ কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ। শব্দের অন্তর্গত কোনও স্বরধ্বনি লুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় স্বরলোপ। লুপ্ত স্বরধ্বনিটির স্থানানুসারে স্বরলোপ তিন প্রকার, (ক) আদি-স্বরলোপ, (খ) মধ্য-স্বরলোপ (গ) অন্ত্য-স্বরলোপ।

৩. আদি-স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের আদিতে অবস্থিত স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হলে তাকে আদি-স্বরলোপ বলা হয়। যেমন : অলাবু > অলাউ > লাউ।
উদ্ধার > উধার > ধার। অভ্যন্তর > ভিতর ইত্যাদি।


৪. মধ্য-স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ। শব্দের মধ্যস্থিত স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার প্রক্রিয়ার নাম মধ্য-স্বরলোপ বা সম্প্রকর্ষ। যেমন— বসতি > বস্তি।
৫. মধ্য স্বরলোপকে সম্পকর্ষ বলা হয় কেন? এটি কার বিপরীত প্রক্রিয়া?
উঃ। এইভাবে শব্দের সৌকর্য তথা উৎকর্ষ সম্যকভাবে ও প্রকৃষ্টরূপে বাড়ানো সম্ভব বলে ‘সম্প্রকর্ষ', নাম দেওয়া হয়েছে। এটি বিপ্রকর্ষের বিপরীত প্রক্রিয়া। যেমন : জানালা > জানলা। বসতি > বস্তি। ভগিনী > ভগ্নী। নাতিনী > নাতনী।
নারিকেল > নারকেল ইত্যাদি।


৬. ধ্বনিলোপের কোন্ পদ্ধতি বাংলাভাষার অন্যতম বিশিষ্ট ধ্বনিতাত্ত্বিক লক্ষণ? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের শেষে থাকা স্বরধ্বনির লোপকেই বলা হয় অন্ত্য-স্বরলোপ। বাংলা ভাষায় শব্দের অন্ত্য-অ প্রায়শই লোপ পায়। বস্তুত, বাংলাভাষার অন্যতম বিশিষ্ট ধ্বনিতাত্ত্বিক লক্ষণের মধ্যেই এটি পড়ে। আমরা লিখি ‘জীবন’, বলি ‘জীবন্’।
লিখি ‘নর’, বলার সময় হয়ে যায় ‘নর্'। ভাষার বিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়াটি যে ক্রিয়াশীল তা দেখানো যায়।
যেমন: হস্ত > হত্ত > হাত্। চন্দ্ৰ > চন্দ > চান্দ > চাঁদ। ভক্ত > ভত্ত > ভাত্ ইত্যাদি।


৭. অন্ত্য-অ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির লুপ্ত হওয়ার দুএকটি উদাহরণ দাও।
উঃ। অন্ত-অ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির ক্ষেত্রেও লুপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যেমনঃ রাত্রি > রাতি > রাত্। খানি
> খান্ ইত্যাদি। এছাড়া, বাংলা সন্ধির ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বরলোপ ঘটে। যেমন : কাঁচা + কলা = কাঁচকলা,
মিশি + কালো = মিশকালো।


৮. ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? এটি কয় ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
উঃ। পদের আদি, মধ্য বা অন্তে অবস্থিত স্বরধ্বনিযুক্ত বা স্বরধ্বনিবিহীন কোনো ব্যানধ্বনির লোপ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ব্যানলোপ। ব্যনলোপ তিনটি ভাগে বিভক্ত, (ক) আদি-ব্যগুনলোপ, (খ) মধ্য-ব্যগুনলোপ এবং
(গ) অন্ত্য-ব্যানলোপ।


৯. আদি-ব্যঞ্ঝনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের আদিতে থাকা ব্যানধ্বনির লোপ পাওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় আদি-ব্যজ্বনলোপ।
যেমন: স্থান > থান। বই > উই। স্পর্শ > পরশ ইত্যাদি।


১০. মধ্য-ব্যঞ্ঝনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের মধ্যস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পাওয়ার ঘটনাকে মধ্য-ব্যগুনলোপ বলা হয়।
যেমন : ফাল্গুন > ফাগুন। অশ্বত্থ > অশথ। কর্ম > কম্ম। শৃগাল > শিয়াল। বেহাই > বেয়াই ইত্যাদি।


১১. অন্ত্য-ব্যঞ্ঝনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের শেষে থাকা ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্য-ব্যানলোপ বলা যায়।
যেমন : গাত্র > গা। বড়দাদা > বড়দা। মেজদিদি > মেজদি। ছোটোদাদা > ছোড়দা।


১. ধ্বনির রূপান্তরকে কয়টি ধারায় বিভক্ত করা যায় ও কী কী?
উঃ। ধ্বনির রূপান্তরের ধারাকে প্রধানত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন : (ক) অপিনিহিতি, (খ) অভিশ্রুতি,
(গ) স্বর-সংগতি, (ঘ) ব্যান সংগতি বা সমীভবন (ঙ) ধ্বনি-বিপর্যয় বা বিপর্যাস।


২. অপিনিহিতি কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের মধ্যে ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনি থাকলে অনেক সময় তাদের যথানির্দিষ্ট উচ্চারণ স্থানের ঠিক আগে উচ্চারিত হওয়ার একটি বিশেষ প্রবণতা দেখা যায়। এই রীতিকে ‘অপিনিহিতি’ বলা হয়।

যেমন, (করিয়া = ক + অ + র্ + ‘ই’ + য্ + আ + ক + অ + ই + র্ + য্ + আ + কইর‍্যা) একই রকমে হয়, চলিয়া
> চইল্যা। বলিয়া > বইল্যা।
৩. অপিনিহিতির কয়েক প্রকারের উদাহরণগুলি জেনে নাও।
উঃ। ই-কারের অপিনিহিতি ঃ রাতি > রাইত। আজি > আইজ। কালি > কাইল। চারি > চাইর। ভাবিয়া > ভাইব্যা।
বাদিয়া > বাইদ্যা ইত্যাদি।
উ-কারের অপিনিহিতি ঃ চক্ষু > চউখ। সাধু > সাউধ। জলুয়া > জউলুয়া। মাছুয়া > মাউছুয়া। নাটুয়া > নাউটুয়া ইত্যাদি।
য [ ই + অ ] -ফলার অন্তর্গত ই-কারের অপিনিহিতি ঃ শব্দে য-ফলা থাকলে সেখানেও অপিনিহিতি হয়ে থাকে।
যেমন : কন্যা > কইন্যা। [ক + অ + ন্ + ই’ + আ > ক + অ + ই’ + ন্ + ই + আ]
ক্ষ ও জ্ঞ থাকলে অপিনিহিতি ঃ বাংলা ভাষায় ‘ক্ষ’-র উচ্চারণ ‘খিয়’ আর ‘জ্ঞ’-র উচ্চারণ অনেকটা যেন ‘গাঁ’। এর কারণে শব্দে ‘ক্ষ’ বা ‘জ্ঞ’ থাকলে অপিনিহিতি সংঘটিত হয়ে থাকে।
যেমন: লক্ষ > লইকয়। যক্ষ > যইকথ। যজ্ঞ > যইগগোঁ ইত্যাদি।


৪. অভিশ্রুতি কাকে বলে? উদাহরণ সহ দেখাও।
• ঊঃ। অপিনিহিতির পরের স্তরটি হল অভিশ্রুতি। অপিনিহিতির কারণে পূর্বে উচ্চারিত ‘ই’ বা ‘উ’ সন্নিহিত স্বরধ্বনিগুলিকে প্রভাবিত করে এবং নিজেরাও প্রভাবিত হয়ে চলিত বাংলায় ধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটায় তাকে অভিশ্রুতি বলে।
যেমনঃ করিয়া > কইরা > করে। [ ক + অ + র্ + ই + য্ + আ ] > [ ক + অ + ই + র্ + য্ + আ ] > [ ক্ + অ+র্+ এ ]


৫. অভিশ্রুতির কতকগুলি প্রকারভেদ উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উঃ। অভিশ্রুতি সাধারণত ‘অ’ এবং ‘আ’ ধ্বনির সঙ্গে ই’ও ‘উ’ ধ্বনির মিলনে ঘটে। এর কতগুলি প্রকারভেদ হলো:
[ অ + ই > ও ] ঃ বলিয়া > বইল্যা > বলে। ধরিয়া > ধইরা ধরে। চলিতে > চইলতে > চলতে ইত্যাদি।
[ আ + ই > আ, এ ] ঃ আজি > আইজ > আজ। গাঁঠি > গাঁইট > গাঁট। ভাবিয়া > ভাইব্যা > ভেবে ইত্যাদি।
[ অ + উ > ও ] ঃ জলুয়া > জউলুয়া > জোলো। চক্ষু > চউখ > চোখ ইত্যাদি।
[ আ + উ > এ ] ঃ মাঠুয়া > মাউঠুয়া > মেঠো। মাছুয়া > মাউছুয়া > মেছো ইত্যাদি।


৬. স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ সহ লেখো।
উঃ। শব্দের মধ্যে একাধিক স্বরধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সময় তারা পরস্পরকে প্রভাবিত করে একটি সংগতিসাধন করে। অর্থাৎ, বিষম স্বর থাকলে তাকে সমস্বরে বদলে ফেলে। শব্দের অন্তর্গত স্বরধ্বনিগুলির মধ্যে সংগতিসাধনের এই
প্রবণতাকেই বলা হয় স্বরসংগতি। যেমন : উনান > উনোন > উনুন।


৭. স্বরসংগতি কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ। স্বরসংগতি দুই প্রকার, (ক) পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন, (খ) পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তন।


৮. কয়েকটি সূত্রের সাহায্যে পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন কীভাবে হয়ে থাকে জেনে নাও।
উঃ। (ক) পূর্ববর্তী ‘উ’ ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ‘আ’ ধ্বনি ‘ও’ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়।
যেমন : তুলা > তুলো। বুড়া > বুড়ো। ছুতার > ছুতোর। দুয়ার > দুয়োর ইত্যাদি।
(খ) পূর্ববর্তী ‘ই’ ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ‘আ’-ধ্বনি ‘এ’ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়।
যেমন : ভিক্ষা > ভিক্ষে। মিথ্যা > মিথ্যে। হিসাব > হিসেব। বিকাল > বিকেল ইত্যাদি।
(গ) পূর্ববর্তী ‘ই’-ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ‘আ’-ধ্বনি ‘ই’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়।
যেমন : বিলাতি > বিলিতি। ভিখারি > ভিখিরি ইত্যাদি।
(ঘ) পূর্ববর্তী ‘উ’-ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ‘আ’-ধ্বনির ‘উ’
যেমন : ধুনাচি > ধুনুচি। কুড়াল > কুড়ুল। উড়ানি > উড়ুনি ইত্যাদি।
(ঙ) পূর্ববর্তী ‘ঔ’ (ও + উ)-ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ‘আ’-ধ্বনির ‘ও’-ধ্বনিতে পরিবর্তন ঘটে।
ধ্বনিতে রূপান্তর ঘটে।
যেমন : নৌকা > নৌকো। চৌকা > চৌকো ইত্যাদি।


৯. কয়েকটি সূত্রের সাহায্যে পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তন কীভাবে হয়ে থাকে জেনে নাও।
উঃ। (ক) পরবর্তী ‘আ’-ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ‘উ’-ধ্বনি ‘ও’-ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়।
যেমন : উড়া > ওড়া। শুনা > শোনা। বুঝা > বোঝা ইত্যাদি।
(খ) পরবর্তী আ’ ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ‘ই’ ধ্বনি ‘এ’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমনঃ লিখা > লেখা। শিয়াল > শেয়াল ইত্যাদি।
(গ) পরবর্তী ‘ই’ ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ‘এ’-ধ্বনির ই’-ধ্বনিতে রূপান্তর ঘটে। যেমন : দেশি > দিশি। বেটি>বিটি ইত্যাদি।
(ঘ) পরবর্তী ‘ই’ ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ‘আ’-ধ্বনিরও 'ই' ধ্বনিতে রূপান্তর ঘটে। যেমন : সন্ন্যাসী > সন্নিসি।
(ঙ) পরবর্তী ই’ বা ‘উ’-ধ্বনির কারণে পূর্ববর্তী ‘অ’-ধ্বনির পরিবর্তে ‘ও’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। বস্তুত, বাংলা ভাষার
এটি একটি বিশিষ্ট চরিত্র লক্ষণ। যেমন : কবি > কোবি। মন > মোন। অপু > ওপু। মধু > মৌধু ইত্যাদি।
(চ) পরে ‘ক’, ‘খ’, ‘ঙ’, ‘চ’ বা ‘ল’ ধ্বনি থাকলে এক অক্ষর (Syllable)-বিশিষ্ট শব্দের আদিতে থাকা ‘এ’-ধ্বনিটি
অনেক সময় ‘অ্যা’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন : এক > অ্যাক। বেং > ব্যাং।
দ্বি-অক্ষর বিশিষ্ট শব্দের ক্ষেত্রে 'ক', 'খ', 'ঙ', ‘চ’ বা ‘ল’ ধ্বনির সঙ্গে আ-কার যুক্ত থাকলে শব্দের আদিস্থিত
‘এ’-ধ্বনিটি পালটে ‘অ্যা’ ধ্বনি হয়ে যায়। আ-কার যুক্ত থাকলে শব্দের আদিস্থিত ‘এ’-ধ্বনিটি পালটে ‘অ্যা’ ধ্বনি হয়ে যায়।
যেমন : দেখা > দ্যাখা। ঢেঙা > ঢ্যাঙা। বেচা > ব্যাচা। মেলা > ম্যালা ইত্যাদি।


১০. ব্যঞ্জন-সংগতি বা সমীভবন কাকে বলে?
উঃ। ভিন্ন ভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনি পদের মধ্যে সন্নিবিষ্ট হলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য একে অপরকে অথবা উভয়েই পরস্পরকে প্রভাবিত ও রূপান্তরিত করে। একেই বলা হয় ব্যপ্তন-সংগতি বা সমীভবন।


১১. প্রগত সমীভবন কাকে বলে?
উঃ। পূর্ববর্তী ব্যানধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী অসম ব্যঞ্জনধ্বনিটি পূর্ববর্তী ব্যপ্তনের আকার প্রাপ্ত হলে তাকে প্রগত সমীভবন বলা হয়। যেমনঃ (পদ্ম =প+অ+দ+ম+অ+ প + অ + দ + অ = পদ্দ) এখানে পরবর্তী ‘ম’ ধ্বনি
পূর্ববর্তী ‘দ’-ধ্বনির সদৃশ হয়ে যাচ্ছে। এই রকমে, চক্র > চকক। চন্দন > চন্নন।


১২. পরাগত সমীভবন কাকে বলে?
উঃ। পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী 'অসম ব্যঞ্জনধ্বনিটির পরবর্তী’ ব্যঞ্জনের রূপ ধারণকে বলা হয় পরাগতয়সমীভবন। যেমন, (কর্ম = ক + অ + ‘র’ + ম + অ > ক + অ + ‘ম’ + ম + অ = কম্ম) এখানে পূর্ববর্তী ‘র’ ধ্বনি পরবর্তী
‘ম’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। একই রকমে, কর্তা > কত্তা। কর্পূর > কপপুর। যতদূর > যদ্দূর ইত্যাদি।


১৩. অন্যোন্য সমীভবন কাকে বলে?
উঃ। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দুটি অসম ব্যঞ্জনধ্বনি পরস্পরকে প্রভাবিত করে রূপান্তরিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলা হয়ে থাকে। যেমন : উৎশ্বাস > উচ্ছ্বাস। মহোৎসব > মোচ্ছব। বৎসর বচ্ছর ইত্যাদি।
হাতে কলমে ঃ অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর


১. ঠিক বিকল্পটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখো :
১.১ যুক্তি > যুকতি, হলো—
(ক) স্বরভক্তির উদাহরণ (খ) মধ্য স্বরাগমের উদাহরণ (গ) স্বরসংগতির উদাহরণ (ঘ) অপিনিহিতির উদাহরণ।
উঃ। (খ) মধ্য স্বরাগমের উদাহরণ।


১.২ ইঞ্চি > ইঞ্জি—এক্ষেত্রে ঘটেছে—
(ক) মধ্যস্বরলোপ (খ) স্বরসংগতি (গ) অন্ত্যস্বরলোপ (ঘ) অন্তস্বরাগম।
উঃ। (ঘ) অন্ত্যস্বরাগম।


১.৩ জানালা থেকে জানলা হয়েছে-
(ক) অভিশ্রুতির কারণে (খ) প্রগত সমীভবনের কারণে (গ) অন্যোন্য সমীভবনের কারণে (ঘ) মধ্য স্বরলোপের কারণে।
উঃ। (ঘ) মধ্যস্বরলোপের কারণে।

১.৪ পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বর পরিবর্তিত হলে তাকে বলা হয়
(ক) মধ্যগত স্বরসংগতি (খ) অভিশ্রুতি (গ) প্রগত স্বরসংগতি (ঘ) সমীকরণ।
উঃ। (ক) মধ্যগত স্বরসংগতি।


১.৫ ধোঁকা > ধুঁকো হলো। এক্ষেত্রে ঘটেছে-
(ক) অন্যোন্য সমীভবন (খ) অন্যোন্য স্বরসংগতি (গ) অপিনিহিতি (ঘ) মধ্যস্বরাগম।
উঃ। (খ) অন্যোন্য স্বরসংগতি।


১.৬ শব্দের মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত ‘ই’ কার বা উ’ কার কে সেই ব্যঞ্জনধ্বনির আগেই উচ্চারণ করার
রীতিটি হলো—

(ক) অভিশ্রুতি (খ) ব্যঞ্ছনসংগতি (গ) অপিনিহিতি (ঘ) বিপৰ্যাস।
উঃ। (গ) অপিনিহিতি


১.৭ রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে। এক্ষেত্রে ঘটেছে-
(ক) ধ্বনি বিপর্যয় (খ) মধ্যস্বরলোপ (গ) অন্ত্যস্বরলোপ (ঘ) অভিশ্রুতি।
উঃ। (ঘ) অভিশ্রুতি।


১.৮ সমাক্ষর লোপের একটি দৃষ্টান্ত হলো-
(ক) ফলাহার > ফলার (খ) বড়দিদি > বড়দি (গ) পোষ্য > পুষ্যি (ঘ) দেশি > দিশি।
উঃ। (খ) বড়দিদি > বড়দি।

১.৯ গাত্র > গা। এটি—
(ক) অন্ত্যব্যঞ্জন লোপের উদাহরণ (খ) মধ্যগত স্বরসংগতির উদাহরণ (গ) অন্যোন্য স্বরসংগতির উদাহরণ
(ঘ) সমাক্ষর লোপের উদাহরণ।
উঃ। (ক) অন্ত্যব্যঞ্জন লোপের উদাহরণ।


১.১০ একাধিক ধ্বনি পরিবর্তন প্রক্রিয়ার যোগফল হলো-
(ক) য়-শ্রুতি (খ) অপিনিহিতি (গ) অভিশ্রুতি (ঘ) ব-শ্রুতি।
উঃ। (গ) অভিশ্রুতি।


২. নির্দেশ অনুযায়ী নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
২.১ ধ্বনি পরিবর্তনের মূল কারণগুলি উল্লেখ করো।
উঃ। ধ্বনি পরিবর্তনের মূল কারণ হলো উচ্চারণের সরলীকরণের প্রতি বাগযন্ত্রের সহজাত প্রবণতা। উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী কাছাকাছি ধ্বনিগুলির সন্নিবেশ করে শক্ত উচ্চারণকে শব্দের অন্তর্গত বিভিন্ন ধ্বনিকে পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজ
করে নেওয়া হয়। ধ্বনি পরিবর্তনের ধারা হলো তিনটি, (ক) ধ্বনির আগম, (খ) ধ্বনিলোপ এবং (গ) ধ্বনির রূপান্তর।


২.২ ‘স্বরাগম' বলতে কী বোঝ?
উঃ। কোনো শব্দের আদি, মধ্যে বা অন্তে সংযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে তার আগে, পরে বা মধ্যে একটি স্বরধ্বনির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে উচ্চারণ প্রয়াস হ্রাস করার প্রক্রিয়াকে স্বরাগম বলা হয়।


২.৩ মধ্যস্বরাগমের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করো।
উঃ। শব্দের মধ্যে যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে উচ্চারণের প্রয়াস কমানো, সরলীকরণের প্রয়াস বা ছন্দের কারণে দুটি যুক্ত ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি স্বরধ্বনির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শব্দের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা হয়। এই রীতিকে মধ্যস্বরাগম বলা হয়।
যেমনঃ নির্মল > নিরমল। বর্ষণ > বরিষণ।


২.৪ শব্দের শুরুতে ব্যঞ্ঝনাগম ঘটেছে এমন একটি উদাহরণ দাও।
উঃ। সাধারণত বাংলা ভাষায় শব্দের শুরুতে ব্যঞ্জনাগম কদাচিৎ দেখা যায়, এমন একটি উদাহরণ হলো : আম > রাম।

২.৫ ব-শ্রুতি ঘটার কারণ কী?
উঃ। দুটি স্বরধ্বনি পরস্পর সন্নিহিত থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে অনেক সময় একটি অন্তঃস্থ -ব ধ্বনির আগম ঘটে থাকে। একেই ব-শ্রুতি বলা হয়। যেমন : শোআ > শোবা (শোওয়া)।



২.৬ ভক্ত > ভত্ত – এক্ষেত্রে ধ্বনি পরিবর্তনের কোন নিয়মটি লক্ষ করা যায়?
উঃ। এক্ষেত্রে ধ্বনি পরিবর্তনের প্রগত ব্যান সংগতি বা সমীভবন নিয়মটি লক্ষ করা যায়।

২.৭ অভিশ্রুতিকে অপিনিহিতির পরবর্তী স্তর বলা হয় কেন?
উঃ। অভিশ্রুতিকে অপিনিহিতির পরের স্তর বলা হয় কারণ অপিনিহিতির কারণে পূর্বে উচ্চারিত ই’ বা ‘উ’ সন্নিহিত স্বরধ্বনিগুলিকে প্রভাবিত করে এবং নিজেরাও প্রভাবিত হয়ে চলিত বাংলায় ধ্বনির পরিবর্তন ঘটায়।


২.৮ সমীভবনকে ব্যঞ্জন সংগতি বলার কারণ কী?
উঃ। ভিন্ন ভিন্ন ব্যানধ্বনি পদের মধ্যে সন্নিবিষ্ট হলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য একে অপরকে, অথবা উভয়েই পরস্পরকে প্রভাবিত ও রূপান্তরিত করে। তাই সমীভবন কে ব্যঞ্জন সংগতি বলা হয়।


২.৯ 'ক্ষ' ও 'জ্ঞ’ এই দুই ক্ষেত্রে কীভাবে অপিনিহিতি লক্ষ করা যায়?
উঃ। বাংলা ভাষায় ‘ক্ষ’-র উচ্চারণ ‘থিয়’ এবং ‘জ্ঞ’-র উচ্চারণ অনেকটা ‘গ’-এর মতো। এই দুই ক্ষেত্রে অপিনিহিত যেভাবে দেখা যায় তা হলো : লক্ষ > লইকখ। যজ্ঞ > যইগগোঁ।


২.১০ ধ্বনিবিপর্যয় বলতে কী বোঝ?
উঃ। উচ্চারণকালে বিপর্যয়জনিত কারণে শব্দের মধ্যবর্তী ধ্বনিগুলির স্থান পরিবর্তিত হলে তাকে ধ্বনি-বিপর্যয় বলা হয়। বলা যেতে পারে যে উচ্চারণের ভূলে ধ্বনির স্থান অদল-বদল হয়ে যাওয়াকেই ধ্বনি বিপর্যয় বলে।
যেমনঃ রিকশা > রিশকা। আলনা > আতৃতীয়