সিরাজদৌলা' নাট্যাংশে ঘসেটি বেগমের নারী চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
'সিরাজদৌলা' নাট্যাংশে ঘসেটি বেগমের স্বার্থান্বেষী , প্রতিহিংসাপরায়ণ, যুগোপযোগী এক বাস্তব নারীচরিত্র— বিশ্লেষণ করো।
উত্তর ঘসেটি বেগম ছিলেন নবাব আলিবর্দির বড়ো মেয়ে। তাঁর প্রকৃত নাম মেহেরুন্নিসা। তিনি ঢাকার শাসনকর্তা শাহজঙ্গ-এর স্ত্রী হওয়ায় প্রবল ধনসম্পদের অধিকারিণী ছিলেন। সিরাজ কখনোই তাঁর প্রিয়পাত্র ছিল। তাই আলিবর্দি যখন সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন তখন তা তিনি ভালোভাবে নেননি। সিরাজও এ কথা জেনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বৈরিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। ফলে আলিবর্দির মৃত্যুর পরে সিরাজ বাংলার নবাব হলে ঘসেটি তাঁকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
ঘসেটির লক্ষ্য ছিল পূর্ণিয়ার শাসনকর্তার পুত্র শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসানো। এ বিষয়ে দেওয়ান রাজবল্লভকে তিনি কাজে লাগান। এভাবেই সিরাজ ও ঘসেটির মধ্যে স্বার্থ আর প্রতিহিংসাপরায়ণতা চরম রূপ ধারণ করে। ক্রমে ক্রমে আলিবর্দির ভগ্নীপতি মীরজাফর এবং রায়দুর্লভ-জগৎশেঠ-উমিচাঁদ ও ইয়ারলতিফের মতো প্রভাবশালী সভাসদেরা সিরাজকে অপসারণের চক্রান্তে জড়িয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ক্ষিপ্ত সিরাজ ক্রমে ঘসেটির মতিঝিলের প্রাসাদ ও ধনসম্পদ অবরুদ্ধ করে শওকতজঙ্গকে যুদ্ধে হত্যা করেন এবং ঘসেটিকে নিজ প্রাসাদে নজরবন্দি করেন। ঈর্ষা ও হিংসায় অন্ধ, বন্দিনি ঘসেটির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয় সিরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অভিশাপ। এক অসহায় নারীর দীর্ঘশ্বাসে এবং অকল্যাণের কামনায় প্রতিনিয়ত শিকার হন সিরাজ ও লুৎফা। এমনকি সিরাজের দুর্দিনে তিনি যেমন মনের খুশি গোপন করেন না, তেমনই পলাশির প্রান্তরে নিজের মুক্তি এবং নবাবের নবাবির অবসান আসন্ন জেনে উৎফুল্ল হন।এভাবেই এক রাজপরিবারের অনাথা বিধবা ঈর্ষা-হিংসা ও স্বার্থপরতার জীবন্ত বাস্তব আর যুগোপযোগী চরিত্র হয়ে ওঠে।