খেয়া' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক মনের যে গভীর ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অনুসারে লেখো। - Online story

Wednesday 8 May 2024

খেয়া' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক মনের যে গভীর ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অনুসারে লেখো।


 

 

 খেয়া' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক মনের যে গভীর ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অনুসারে লেখো।

অথবা, ‘খেয়া' কবিতার অন্তর্নিহিত ভাবসত্যটি নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর/ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চৈতালী' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল 'খেয়া' কবিতাটি। আলোচ্য কবিতায় গ্রামীণ জীবনের শান্ত-স্নিগ্ধ মানসিকতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কবির দার্শনিক মনের ভাবনাচিন্তারও প্রকাশ ঘটেছে।
জমিদারির স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে নদীবক্ষে খেয়া তরিতে করে ভ্রমণ করতে হত। তখনই নদীর দুই তীরের গ্রামগুলির শান্ত- সমাহিত স্নিগ্ধতা তথা সেখানকার মানুষের নিস্তরঙ্গ জীবনকে তিনি অনুভব করেছেন।
তিনি জানেন যে খেয়া নৌকা হল নদীর দুই  তীরের মানুষের সংযোগ রক্ষাকারী অদৃশ্য সেতু। কবির কাছে খেয়া করে পারাপারের মাধ্যম নয়, গ্রামীণ মানুষের প্রবহমান জীবনের নৌকাকে মানবজীবন প্রবাহের সঙ্গে তুলনা করে কবি বোঝাতে
চেয়েছেন যে—অনন্তকাল যেমন প্রবহমান, তেমনই মানুষের জীবনও এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে, অর্থাৎ জীবন প্রবহমান।
পৃথিবীর ইতিহাসের দ্বন্দ্বসংঘাত লেগেই আছে, রক্তক্ষয়ী ধ্বংসলীলার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন আবহমানকাল ধরেই চলে আসছে। স্বার্থান্বেষী
মানুষের সাম্রাজ্য-তৃয়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে মানবতা। তবুও ধীর লয়ে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে নদীর স্রোত তথা খেয়া তরির
মতোই। কালপ্রবাহ যেমন থেমে থাকে না, তেমনই মানবজীবন প্রবাহও বিরামহীন। এই দার্শনিক গভীর প্রজ্ঞারই প্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য কবিতায়।

এভাবেই ‘খেয়া' কবিতায় গ্রামীণ শান্ত-স্নিগ্ধ জীবনের
চিরপ্রবহমানতাকে তুলে ধরার সঙ্গে কবি গভীর দার্শনিক প্রজ্ঞারও পরিচয় দিয়েছেন।






'
সকাল হইতে সন্ধ্যা'—কবি কেন বলেছেন? দুই গ্রাম কীসের ব্যানা বয়ে এনেছে?

উত্তর:-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চৈতালী' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল 'খেয়া' কবিতাটি। কবিতাটির চতুর্থ পঙ্ক্তিতেই কবি বলেছেন— 'সকাল হইতে  সন্ধ্যা করে আনাগোনা।' দুই গ্রামের মাঝে বয়ে গেছে একটি নদী। খেয়া নৌকায় সওয়ার হয়ে দুই গ্রামের মানুষ নদী পারাপার হয় নিত্য দিন। এখানে মানবজীবনের প্রারম্ভকে ‘সকাল’ এবং জীবনের প্রান্তসীমাকে 'সন্ধ্যা'-র প্রতীকে রূপায়িত করেছেন কবি। অর্থাৎ জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হল 'সকাল হইতে সন্ধ্যা'।

কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে ভেসে উঠেছে নদীস্রোত, নদীর দুই পাশের দুটি দুই গ্রামের ব্যানা শান্ত-স্নিগ্ধ গ্রাম এবং সেখানকার মানুষের সহজসরল জীবনযাপন। ওই দুই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা নদীতেই খেয়া চলাচল করে অনন্তকাল ধরে। অপলক নয়নে
গ্রাম দুটি পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আবহমানকাল ধরেই যাত্রীগণ কেউ ঘর থেকে বাইরে যায় কর্মের তাগিদে আবার কেউ কাজ সেরে বাড়ি ফেরে। হিংসা, দ্বন্দ্বে লিপ্ত পৃথিবী থেকে গ্রাম দুটি নিজেদের পৃথক করে রেখেছে, তাই গ্রাম দুটিতে বিরাজ করছে শাস্তির পরিবেশ। সভ্যতার তৃয়া-ক্ষুধা-হলাহল স্পর্শ করতে পারেনি গ্রাম দুটিকে। কবি তাই বলেছেন—
"শুধু হেথা দুই তীরে, কেবা জানে নাম,
দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।
এভাবে আলোচ্য কবিতায় নদীর তীরের গ্রাম দুটি মানবসভ্যতার প্রবাহমান্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছে