রাধারাণী' গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর মায়ের যে পরিচয় পাও তা নিজের ভাষায় লেখো। - Online story

Thursday 13 June 2024

রাধারাণী' গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর মায়ের যে পরিচয় পাও তা নিজের ভাষায় লেখো।

  


 

রাধারাণী' গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর মায়ের যে পরিচয় পাও তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'রাধারাণী' গল্পের মূল চরিত্র রাধারাণী হলেও, তার মায়ের চরিত্রটিও ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। জীবনের প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি হেরে যেতে চাননি, লড়াইয়ের মানসিকতা তাঁর চরিত্রকে মহত্তম করেছে।
আলোচ্য গল্পে তাঁর চরিত্রের যে দিকগুলি পরিস্ফুট হয়েছে তা হল-
[দৃঢ়চেতা] জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় হেরে পূর্বপুরুষের সম্পত্তি থেকে চ‍্যুত হয়েছেন রাধারাণীর মা। মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন, তবু লড়াই থেকে সরে আসেননি। অলংকারাদি বিক্রয় করে 'প্রিবি কৌন্সিলে’ আবেদন করেছেন ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য। এ থেকে তাঁর চরিত্রের সংগ্রামী ও দৃঢ়চেতা মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।
[পরিশ্রমী] সর্বস্ব হারিয়েও রাধারাণীর মা জীবনপথ থেকে সরে আসেননি। তাই বালিকা রাধারাণীকে নিয়ে একটি কুটিরে আশ্রয় নিয়েছেন এবং কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে কষ্টে-ক্লিষ্টে জীবন অতিবাহিত করছিলেন তিনি।

[বাস্তবতা] রাধারাণীর মায়ের চরিত্রের উল্লেখযোগ্য গুণ হল তাঁর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক ‘নোট’ ফেলে যাওয়া সম্পর্কে মেয়েকে বলেছেন— 'তোমাকে দিয়া গিয়াছেন। অর্থাৎ তাদের সাংসারিক দারিদ্র্য সম্পর্কে জেনেই যে উক্ত ব্যক্তি নোটটি দিয়ে গেছেন তাদেরকে—সেই বাস্তবতা তিনি অনুভব করেছিলেন।

[নির্লোভী] নোটটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই পরের দিন মা-মেয়ে শ্রীরামপুর ও নিকটবর্তী অঞ্চলে রুক্মিণীকুমার রায়কে অনেক খুঁজেছে। উক্ত ব্যক্তিকে না-পেলেও নোটটি তারা তুলে রাখে। এ থেকে বোঝা যায় যে রাধারাণীর মা নির্লোভী ছিলেন।
রাধারাণীর মায়ের অক্ষরজ্ঞানও ছিল। আলোচ্য গল্পে রাধারাণীর মায়ের পূর্বোক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিই প্রকাশিত হয়েছে।



'যে ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছিল, সে বলিল,- 'সে' কে? তাঁর সঙ্গে রাধারাণীর কী কথাবার্তা হয়েছিল।তা নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, রথের মেলা থেকে ফিরে আসার পথে রাধারাণীর সঙ্গে কার সাক্ষাৎ ঘটেছে। উভয়ের কথোপকথন নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর:-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'রাধারাণী' গল্পে দেখা যায় বৃষ্টিতে রথের মেলা ভেঙে গেলে রাধারাণী অন্ধকার পিচ্ছিল পথে কুটিরের দিকে আসছিল। সেই সময় অপরিচিত এক পুরুষ অনিচ্ছাকৃতভাবেই
রাধারাণীর গায়ে এসে পড়েছিলেন – 'সে' বলতে এখানে সেই অজ্ঞাত পরিচয় পুরুষের কথা বলা হয়েছে। গল্পের শেষাংশে জানা যায় তাঁর নাম রুক্মিণীকুমার রায়। অন্ধকার পথে কাদতে কাদতে রাধারাণী যখন বাড়ির দিকে ফিরছে জনৈক ব্যক্তি তার ঘাড়ে এসে পড়লে, ভীত রাধারাণী
উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠে। তখন ব্যক্তিটি তাকে জিজ্ঞাসা করেন—'কে গা তুমি কাদ।' পুরুষের কন্ঠস্বরে রাধারাণী বুঝতে পারে তিনি দয়ালু।
তাই সে কান্না বন্ধ করে নিজের মনের কথা উক্ত পুরুষকে জানিয়ে বলে যে—সে দুঃখীলোকের মেয়ে। মা ছাড়া তার কেউই আর আপনজন নেই। সেই ব্যক্তি রাধারাণীর কাছে জানতে চান যে, সে কোথায় গিয়েছিল।
উত্তরে রাধারাণী বলে – সে রথ দেখতে গিয়েছিল, এখন বাড়ি যাবে কিন্তু অন্ধকারে বৃষ্টিতে পথ দেখতে
পাচ্ছে না। পুরুষ বলেন যে, তিনি শ্রীরামপুরেই যাবেন তাই রাধারাণীকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। তিনি রাধারাণীতে তাঁর হাত ধরতে বলেন, না-হলে পিছল পথে পড়ে যেতে পারে রাধারাণী।
পথে যেতে যেতেই পুরুষটি বালিকার নাম, রথের মেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে জেনে রাধারাণীর মালাগুলি কিনে নিতে চান। মালার বিনিময়ে তিনি মুদ্রা দিলে রাধারাণী বলে-পয়সা বড়ো বড়ো ঠেকছে, অন্ধকারেও চক্চক করছে, ভুল করে টাকা দেননি তো।
পুরুষ জানান নতুন কলের পয়সা বলে চক্চক করছে। তখন রাধারাণী তাকে বলে যে তাদের কুটিরের সামনে একটু দাঁড়াতে হবে, প্রদীপের
আলোতে যদি দেখা যায় পয়সা নয় টাকা, তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে।
এমন কথাবার্তাই হয়েছিল মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে অচেনা ব্যক্তি ও রাধারাণীর।