'বনভোজনোর ব‍্যাপার' অষ্টম শ্রেণীর বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর - Online story

Friday 12 July 2024

'বনভোজনোর ব‍্যাপার' অষ্টম শ্রেণীর বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

 



অষ্টম শ্রেণির বাংলা

বনভোজনের ব‍্যাপার

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

হাতে-কলমে

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন্ বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা ?

উঃ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে অন্যতম স্মরণীয় টেনিদা চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা।


১.২ তাঁর রচিত দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

 উঃ। তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম হল শিলালিপি  এবং উপনিবেশ ।


২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :

২.১ বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ?

উঃ। টেনিদা, হাবুল, প্যালা, ক্যাবলা এই চারমূর্তির মধ্যে বনভোজনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল।


২.২ বনভোজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল ?

উঃ। বাগুইআটি ছাড়িয়ে চারটে স্টেশন পরে ক্যাবলার মামার বাড়ির বাগানবাড়িতে বনভোজনের আয়োজন হয়েছিল।


২.৩ বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে ?

উঃ। বাগুইআটি থেকে চারটি স্টেশন দূরে মার্টিন রেলে চেপে যেতে হবে। ওখান থেকে কাঁচা মাটির রাস্তায় হাঁটা পথে যেতে হবে।



২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল? 

উঃ। প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল।


২.৫ বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল ?

উঃ। বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী বাঁদরে সাবাড় করেছিল আর টেনিদা এক হাঁড়ি লেডিকেনি নিজে খেয়েছিল।


২.৬ কোন্ খাবারের কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হয়েছিল?

উঃ। খিচুড়ি রান্নার সামগ্রী আর আলু বাঁদরের পেটে চলে যাওয়ায় বাগানবাড়ির গাছের পাকা জলপাই খেয়ে চারমূর্তিকে খিদে মেটাতে হয়েছিল ফলে তাদের বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হয়েছিল।


৩. নীচের শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছেদ করো :

উঃ। মোগলাই = মোগল + আই।

পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা।

রান্না = রাধ + না।

বৃষ্টি = বৃষ্ + তি।

আবিষ্কার = আবিঃ + কার।



৪. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো :

উঃ-বিশ্রী) বিচ্ছিরি। স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ।

প্ল্যান-ট্যান ) এটি শব্দদ্বৈত। প্ল্যান ইংরাজি শব্দ। কিন্তু ট্যান শব্দের অর্থ হয় না। এটি অনুকার শব্দ ।

লিস্ট) লিস্টি। শব্দের মাঝে 'ই' ধ্বনির আগমন ঘটে মধ্যস্বরাগম হয়েছে।

ভদ্র) ভদ্দর। সমীভবন।

স্টুপিড ) ইস্টুপিড। আসল শব্দটি স্টুপিড, শব্দের আদিতে ই' ধ্বনির আগমনে আদিস্বরাগম হয়েছে।

নীচের বাক্যগুলি প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। 


৫. বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে নিয়ে লেখো :

৫.১ আর সে গাট্টা ঠাট্টার জিনিষ নয় জুতসই লাগালে স্রেফ গাল পাট্টা উড়ে যাবে।

উঃ। ঠাট্টা, গাট্টার সঙ্গে গালপাট্টার মিল ঘটানো হয়েছে। তিনটিতেই উচ্চারণে একটি ‘ট্ট' যুক্ত বর্ণটি একাধিক বার যোগ হয়েছে। একই বর্ণ একাধিক বার প্রয়োগ হওয়ায় অনুপ্রাস অলংকার হয়েছে।



৫.২ দ্রাক্ষা ফল অতিশয় খাট্টা। 

উঃ। বাক্যটিতে ‘দ্রাক্ষাফল' ও ‘অতিশয়' শব্দটি তৎসম শব্দ। ‘খাট্টা' শব্দটি হিন্দি শব্দ ।

খুব বেশি টক বোঝাতে এই কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।



৫.৩ আহা-হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন?– 

উঃ। বঙ্গালি উপভাষা দ্বারা ব্যাক্যটি তৈরি।


৫.৪ এক চড়ে গালের বোম্বা উড়িয়ে দেব।—

উঃ। এখানে ‘বোম্বা' শব্দটি প্রয়োগে আঞ্চলিক কথ্যভাষার ব্যবহার ঘটেছে।



৬. সমাস নির্ণয় করো :

উঃ-

বনভোজন  > বনে ভোজন।

অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস


দলপতি > দলের পতি।

সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস


বেরসিক >রসিক নয় যিনি।

নঞর্থক তৎপুরুষ সমাস


দ্রাক্ষাফল – দ্রাক্ষা নামক ফল।

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস


 রেলগাড়ি রেলে চলাচলের গাড়ি।

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস


৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :

৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে)

উঃ। লাফিয়ে উঠেটেনিদা যেদিকে বাগান সেই দিকে ছুটল।


৭.২ চোখের পলকে বানরগুলো গাছের মাথায়। (জটিল বাক্যে

উঃ। যেই মাত্র চোখের পলক পড়ল সেইমাত্র বানরগুলো গাছের মাথায় উঠল।


৭.৩ দুপুরবেলায় আসিস, বাবা- মেজদা আফিসে যাওয়ার পরে। (একটি সরল বাক্যে)

উঃ। দুপুরবেলায় বাবা-মেজদা আফিস গেলে আসিস।


৭.৪ ইচ্ছে হয় নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)

উঃ। যদি ইচ্ছে হয় তবে নিজে বের করে নাও ।


৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে

উঃ। টেনিদা বলতে না দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।



৮. নীচের শব্দগুলোর সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করো এবং তা দিয়ে বাক্যরচনা করো :

চুরি, নষ্ট হওয়া, পালানো, গোলমাল করে ফেলা, লোভ দেওয়া, চুপ থাকা।


চুরি > (হাত সাফাই)

রাখাল হাত সাফাই এর কাজে সিদ্ধহস্ত।


নষ্ট হওয়া > (বারোটা বাজা)

খেলার বৃষ্টি শুরু হতে বারোটা বেজে গেল।


পালানো> (চম্পট)

বৃষ্টিতে ছেলে টি ছাতা নিয়ে চম্পট দিল।


গোলমাল করে ফেলা >(ভণ্ডুল করা),

দাদু মারা যেতে  আমাদের পুরী যাত্রা কারণে ভণ্ডুল

হয়ে গেল।


লোভ দেওয়া > (নজর দেওয়া)

আমার খাবারের ওপর অনেকেই নজর যাতে খেয়ে হজম না হয়।


চুপ থাকা > (স্পিকটি নট)

ঝগড়া করে সবাই শেষে স্পিকটি নট হয়ে যায়।।




৯. টীকা লেখো ঃ কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা

কলম্বাস : ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইউরোপীয় নাবিক, ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। পঞ্চদশ শতকে ইনি আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি যে নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি। আবিষ্কৃত ভূমির নাম তিনি রেখেছিলেন “ওয়েস্ট ইন্ডিজ”। তাঁর ধারণা ছিল তিনি ভারতবর্ষের কাছাকাছি এসে গেছেন। ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান।


লেডিকেনি : ছানা এবং ময়দা মেশানো একধরনের মিষ্টি। ছানা ও ময়দা একসঙ্গে মিলিয়ে গোল আকৃতির করে ঘিয়ে ভেজে তা লাল বর্ণ ধারণ করলে সেটিকে চিনির রসে ডোবানো হয়। জানা যায় কলকাতার বিখ্যাত ময়রা নবীনচন্দ্র দাস লর্ড ক্যানিং-এর স্ত্রীকে খুশি করতে এই মিষ্টি তৈরি করেন এবং লেডি ক্যানিং-এর নাম থেকে এই মিষ্টি লেডিকেনি।

বলে লোকমুখে প্রচারিত হয়।


বিরিয়ানি : এটি একটি বাদশাহী খানা, মোগল বাদশাহরা এই খাবার খেতেন। সুগন্ধি চাল, মাংস, বিভিন্ন সুগন্ধি মশলা ও আতর সহযোগে এই রান্না করা হয়। আফগানিস্তান থেকে এই রান্নাটি এদেশে এসেছে।


ইউরেকা ঃ এটি একটি ইংরেজি শব্দ। এই শব্দের অর্থ ‘পেয়েছি’। প্রসিদ্ধ গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস বিভিন্ন সোনায় কতটা খাদ আছে তা পরীক্ষা করতে গিয়ে সফল হয়ে এই শব্দ ব্যবহার করে চিৎকার করে ওঠেন। সেই থেকে পৃথিবীর বহুদেশে ‘পেয়েছি’ অর্থে উল্লাস প্রকাশ করে

'ইউরেকা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়।



১০. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাও :

১০.১ বনভোজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল? তা বাতিল হল কেন?

উঃ। টেনিদার তৈরি বনভোজনের প্রথম তালিকায় খাদ্যের পদ ছিল – বিরিয়ানি, পোলাও, রুইমাছের কালিয়া, মাংসের কোর্মা, মুর্গমুসল্লম, মশলা দোসা, চাউ চাউ, সামি কাবাব, কোপ্তা, কাবাব, দুই রকম মাছের চপ।

তা বাতিল হল কারণ, চাঁদা উঠেছিল দশ টাকা ছ-আনা। এই রান্নার জন্য একজন বাবুর্চি, একটা চাকর, একটা মোটর লরি ও খরচ ছিল দুশো টাকা। এই সামান্য টাকায় ওই মোগলাই খাবারের আয়োজন করা সম্ভব ছিল না।



১০.২ বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল?

উঃ। বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় ছিল খিচুড়ি, আলুভাজা, পোনামাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা ও লেডিকেনি। খিচুড়ির দায়িত্ব কে নেবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, ঠিক হয়েছিল প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনবে। আলু ভাজা –ক্যাবলা ভাজবে, পোনামাছের কালিয়া – প্যালা রাঁধবে, আমের আচার – হাবুলের দিদিমার ঘর থেকে হাত সাফাই হবে, রসগোল্লা ও লেডিকেনি দোকান থেকে ধারে ম্যানেজ হবে।



১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা করো।

উঃ। বনভোজনে রাজহাঁসের ডিমের ডালনা হবে ঠিক হয়েছিল আর ডিম আনার ভার পড়েছিল প্যালার ওপরে। প্যালা পাড়ার এক ওস্তাদ ছেলে ভন্টাকে দুই আনার পাঁঠার ঘুঘনি ও ডজন খানিক ফুলুরি খাইয়ে ম্যানেজ করেছিল যে তাদের বাড়ি থেকে রাজহাঁসের ডিম আনবে। ভন্টা জানায় প্যালাকে নিজের হাতে ডিম বের করে আনতে হবে। সে নিজে ময়লা ঘেঁটে ডিম বের করতে পারবে না। ভন্টার বাবা ও মেজদা দুপুরে অফিস যান ও ভন্টার মা নাক ডেকে ঘুমোন।

ভন্টার কথামতো প্যালা দুপুরে তাদের বাড়ি যায়। উঠোনের একপাশে ছিল কাঠের বাক্স, তার ভিতর সার সার খুপরি। এর মধ্যে গোটা দুই রাজহাঁস বসে ডিমে তা দিচ্ছে। প্রচন্ড ময়লা ও বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে, আর হাঁস দুটো ঠোট ফাক করে ভয় দেখাচ্ছে। ভন্টার কথা মতো প্যালা কাঠের বাক্সের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে খোপের মধ্যে হাত দিতেই রাজহাঁসটি খটাং করে প্যালার হাত কামড়ে ধরল। প্যালা হাঁইমাই করে চেঁচিয়ে ওঠায় ভন্টার মা জেগে উঠে ভন্টাকে প্রশ্ন করলেন,নীচে এত কীসের গোলমাল হচ্ছে। হ্যাঁচকা টানে হাত ছাড়িয়ে প্যালা ছুটে পালিয়ে এল। তার হাত দিয়ে তখন দরদর করে রক্ত পড়ছে।



১০.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল ?

উঃ। বনভোজনের জন্য টেনিদা হাবুল ক্যাবলা ও প্যালা গিয়েছিল ক্যাবলার মামার বাড়ি। স্টেশন থেকে নেমে মাইলখানেক হেঁটে যাবার পর ক্যাবলার মামার বাড়ি। রাস্তা কাঁচা, তার ওপর গতরাতে একপশলা বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা কাদায় ভরা। এর মধ্যেই চারজন গাঁটরি বোঁচকা কাঁধে ফেলে হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু তিন পাও যেতে হলো না, হাবুল টেনে একটা রাম আছাড় খেলো। সারা গায়ে কাদামেখে হাবুল যখন উঠে দাঁড়াল তখন তার হাতের ডিমের পুঁটলি থেকে ডিম ফেটে হলুদ রস গড়াচ্ছে। এর পরেই হঠাৎ প্যালার পা যেন শূন্যে উড়ে গেল আর তারপর কাদা মেখে প্যালা যখন উঠে দাঁড়াল তখন তার মাথা-মুখ বেয়ে আচারের তেল গড়াচ্ছে। এরপরই কাদায় লম্বা হলো টেনিদা । তার রসগোল্লার হাঁড়ি সাত হাত দূরে ছিটকে গেল এবং কাদায় পড়ে সেগুলো যেন লেবুর আচার হয়ে গেল। ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে এভাবেই বিপদ ঘটেছিল।



১০.৫ ‘মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল’—“মাছের কালিয়া সম্পর্কে এরকম বলার কারণ কী ?

উঃ। বনভোজনে প্যালার দায়িত্ব ছিল মাছের কালিয়া রাঁধার। আসলে প্যালা রান্না করতে জানে না। ক্যাবলার মা মাছয কেটে নুন মাখিয়ে দিয়েছিলেন। কড়াইতে তেল চাপিয়ে প্যালা তাতে মাছ ঢেলে দিল। শুরু হলো বিপর্যয়, মাছ দেবার সঙ্গে সঙ্গে কড়াই ভর্তি ফেনা হয়ে মাছগুলো তালগোল পাকিয়ে গেল। তেল ভালো করে গরম হওয়ার আগেই মাছ দিয়ে দেওয়ায় সেগুলো মাছের কালিয়ার বদলে যেন মাছের হালুয়া হয়ে গেল। কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় এই পরিণতি হল। ফলে মাছের কালিয়া রান্না আর হল না। তাই ক্যাবলা আদালতের পেয়াদার মতো ঘোষণা করে বলেছিল মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল।




১১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :

১১.১ এই গল্পের নাম 'বনভোজন' না হয়ে 'বনভোজনের ব্যাপার হলো কেন ?

উঃ। বনভোজন হলো সবাই মিলেমিশে একজোট হয়ে পরিচিত গণ্ডির একটু বাইরে বের হয়ে খাওয়াদাওয়া করে আনন্দ করা। এখানে সবই হয়েছিল, চাঁদা দেওয়া থেকে শুরু করে খাবারের তালিকা প্রস্তুত করা, কাজের ভার নেওয়া, : ট্রেনে চেপে পরিচিত গণ্ডির বাইরে যাওয়া—কিন্তু এরপর যা ঘটল তা অভাবনীয়। অদ্ভুত ও হাস্যকর ঘটনায় একে একে সমস্ত খাবার নষ্ট হলো, শেষপর্যন্ত বনের টক মিষ্টি জলপাই খেয়ে খিদে মেটাতে হলো। বনভোজনে যাবার সময় নানা বিপত্তি ও বাগানবাড়িতে পৌঁছে কীভাবে বনভোজন পড় হলো তার সরস বর্ণনা লেখক এই গল্পে তুলে ধরেছেন। সেই সমস্ত ঘটনার ঘনঘটায় তাই ঠিক বনভোজন আর না হওয়ায় লেখকের ভাষায় এটি ‘বনভোজনের ব্যাপার' হয়েছে।



১১.২ এই গল্পে ক'টি চরিত্রের সাথে তোমার দেখা হলো? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।

উঃ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বনভোজনের ব্যাপার গল্পে আমরা টেনিদা হাবুল, ক্যাবলা ও প্যালা এই চারটি চরিত্রকে দেখতে পাই ।

টেনিদা ঃ গল্পটিতে টেনিদা দলের নেতা, একটু মাথা গরম, আয়েশি ও পেটুক প্রকৃতির। খাবার কথায় সে আর লোভ সামলাতে পারে না। তার আচরণে একটা গুরুগম্ভীর ভাব দেখা যায়। কথাও বলে বেশি এবং সবার ওপর হুকুম করতে ওস্তাদ।' বাস্তব জ্ঞানবুদ্ধির অভাব থাকলেও তার কথার ভঙ্গিতে যথেষ্ট মজা পাওয়া যায়।

ক্যাবলা ঃ দলের মধ্যে বুদ্ধিমান ও ঠান্ডা মাথার ছেলে। কাজ গুছিয়ে করতে ভালবাসে এবং হিসেবিও। মজার ঘটনার সময় সুন্দর উক্তি করতে পারে। সে অনেকদিন পশ্চিমে থাকায় তার কথার মধ্যে এক-আধটা হিন্দি কথা এসে যায়।

চারজনের মধ্যে ক্যাবলাই বাস্তববোধ সম্পন্ন ছেলে।

হ্যাবলা : হাবুল চন্দ্র সেন কাজের ছেলে, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে ও পূর্ববঙ্গীয় বাঙাল ভাষায় কথা বলে। হাস্যরসের জোগান দেয়। সে সবকিছু মানিয়ে নিতে পারে এবং গোলমাল হলে সামলে দেবার চেষ্টা করে।

প্যালা ঃ এটি গল্পের কথকের চরিত্র এবং এই চরিত্রটি স্বয়ং লেখকের। প্যালা বুদ্ধিমান হলেও ভীতু, একটু পেটরোগা, কিন্তু খেতে ভালোবাসে। সে সরল ও শান্ত স্বভাবের নিরীহ ছেলে। সে টেনিদাকে ভালোবাসে এবং করে।



১১.৩ এই গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছো লেখো।

উঃ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত টেনিদার কাহিনিগুলির প্রধান উপকরণ হাস্যরস, তা সঞ্চারিত করতেই গল্পে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। প্রথমেই তিনি উপাদেয় খাদ্যের উল্লেখ করেছেন – ডিমের ডালনা, মাছের কালিয়া, মাংসের কোর্মার সাথে যোগ করেছেন মুর্গ মুসল্লম, বিরিয়ানি, পোলাও, চাউ চাউ, সামি কাবাব। তিনি হাস্যরস সৃষ্টি করার জন্য নানারকম ধন্যাত্মক শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন বারোটা বাজা, চোচা দৌড়, স্পিকটি নট, ফেরেববাজ প্রভৃতি। হাবুল সেনের মুখ দিয়ে ‘আহা-হা-চেইত্যা যাইত্যাছ কেন' প্রভৃতি হাস্যরস যুক্ত বাঙাল ভাষার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। টেনিদার অন্য চরিত্রগুলির ওপর খবরদারি করা এক মজার পরিবেশ তৈরি করেছে। এখানে সবকটি চরিত্র মজাদার, খাবার নষ্ট হওয়ার পর খিদের চোটে জলপাই খাওয়ার ঘটনাও কম মজার নয়। প্রত্যেকের সংলাপেই লেখক এক সরস ভঙ্গি বজায় রেখেছেন।



১১.৪ শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো/গল্প লেখো।

উঃ। আমরা একবার মন্দারমণি পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মন্দারমণি তখন প্রায় নির্জন জায়গা ছিল। এখনকার মতো পর্যটকের এত ভিড় ছিল না। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো হয়নি। প্রাকৃতিক পরিবেশ এতো সুন্দর যে শুধু দুই চোখ মেলে দেখতে ইচ্ছা করে। মন্দারমণির কাছাকাছি এক গ্রামে আমার বন্ধু সৌরভের মামার বাড়ি। সবাই মিলে সমুদ্রের ধারে ঝাউবনে রান্নাবান্নার আয়োজন করেছিলাম। রান্নাবান্না শেষ হবার পর ভাবলাম সমুদ্রের ধারে বসে একটু পরে খাওয়াদাওয়া সারব। নীল সমুদ্র, বালির পাহাড়, জেলে নৌকার সারি দেখতে দেখতে হঠাৎ শুনলাম এক চিৎকার, গেল গেল ডুবে গেল! দেখলাম দুই অতি উৎসাহী সমুদ্রে নেমেছিল, তাদেরই একজন স্রোতের পাকে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে । শেষপর্যন্ত একটা জেলে নৌকা তার প্রাণ বাঁচল। খুবই সুখের কথা যে ছেলেটি মারা যায়নি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে

চিকিৎসা করতে হলো। এই সব হইচই-এর মাঝে এত উপাদেয় রান্না ঠিকভাবে মুখে উঠল না। কোনোরকমে খাওয়াদাওয়া সেরে আবার বন্ধুর বাড়ি ফিরলাম।

১১.৫ টেনিদা-র মতো আরো কয়েকটি ‘দাদা' চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উঃ। কেল্টুদা ঃ নারায়ণ দেবনাথ রচিত এইরকম একই চরিত্র হলো কেল্টুদা। সে হাঁদা ভোঁদাকে সামনে রেখে রাজত্ব চালায়। তার মাথায় একটু দুষ্টুবুদ্ধি, কিন্তু শেষে সে-ই বিপদে পড়ে।

ঘনাদা : প্রেমেন্দ্র মিত্রের কিশোর সাহিত্যে ঘনাদা চরিত্র এক অনবদ্য সৃষ্টি। হাস্যরস জোগাতে এবং সকলের কাছে নিজেকে জাহির করতে এনার জুড়ি নেই। যত রাজ্যের অবাস্তব ঘটনার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ঘটনা জুড়ে তাঁর গল্প বলা। অদ্ভুত আচরণের জন্য এই চরিত্রটি কিশোরদের

কাছে খুবই জনপ্রিয়।

ফেলুদা : সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট এক প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী চরিত্র ফেলুদা। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিধর গোয়েন্দা। মগজাস্ত্রের প্রয়োগ ঘটিয়ে অনেক ধুরন্ধর অপরাধীদের তিনি ধরেছেন। এককথায় ফেলুদার মতো শিক্ষিত, মার্জিত দাদা ও গোয়েন্দা চরিত্র বাংলা সাহিত্যে খুব কমই রয়েছে।

অন্য গুলি দেখুন

বোঝাপড়া

অদ্ভুত আতিথেয়তা

চন্দ্রগুপ্ত

বনভোজনের ব‍্যাপার

সবুজ জামা

চিঠি

আলাপ

পরবাসী

পথচলতি

একটি চড়ুই পাখি

দাঁড়াও

অন্য টা দেখুন দাঁড়াও

পল্লীসমাজ

ছন্নছাড়া

গাছের কথা

হাওয়ায় গান

কি করে বুঝবো

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি

নাটোরের কথা

অন‍্যটা দেখুন নাটোরের কথা

গড়াই নদীর তীরে

জেলখানায় চিঠি

স্বাধীনতা

আদাব

অন্যটা দেখুন আদাব

শিকল পরার গান

হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়

ঘুরে দাঁড়াও

সুভা

পরাজয়

মাসিপিসি

টিকিটের অ্যালবাম

লোকটা জানলই না



পথের পাঁচালী (১)

পথের পাঁচালী(২)

পথের পাঁচালী(৩)

পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর

ভাষাচর্চা (১)

ভাষা চর্চা (২)