পথচলতি' অষ্টম শ্রেণীর বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর - Online story

Sunday 14 July 2024

পথচলতি' অষ্টম শ্রেণীর বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর




 অষ্টম শ্রেণীর বাংলা

পথচলতি

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়

হাতে-কলমে

অনুশীলনী প্রশ্ন ও উত্তর


১.১ শুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কী।। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম 'জীবনকশা।

১.২ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।

উঃ। ভাষাতত্ত্বের উপর তাঁর The Origin and Development of the Bengali Language অল্পটি রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।



২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও।

২.১ লেখকের কোন ট্রেন ধরার কথা ছিল। 

উঃ। লেখকের দেহরাদুন এক্সপেল ধরার কথা ছিল।



২.২ একটি তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় নেই কেন?

কামরায় কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার বগিটিতে লোকের ভিড় ছিল না।


২.৩ পাঠানদের মাতৃভাষা কী? 

উঃ পাঠানদের মাতৃভাষা হল পুশতু।


২.৪ পাঠানদের ডেরা বাংলাদেশের কোথায় ছিল?

উঃ। বৃদৎ পাঠালের জেলা ছিল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার পটুয়াখালি অঞ্চলে।


২.৫ খুশ-হাল কে ছিলেন?

উঃ। খুশ-হাল হলেন পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। তিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ের মানুষ।




২.৬ আদম খাঁ দুরখানির কিসসার কাহিনি কেমন?

উঃ। আদম খাঁ দুরখানির কিসসার কাহিনি ছিল খুব দুঃখের, পাঠানদের ভাষায় 'দিলভাঙা' কাহিনি।


২.৭ এই পাঠ‍্যে কোন বাংলা মানিকপরের উল্লেখ আছে? 

উঃ। এই পাঠ্যে বাংলা মাসিক "প্রবর্তক" পত্রিকার উল্লেখ আছে।


২.৮ রোজার উপোসের আগে কাবুলিওয়ালারা ভরপেট কী খেয়েছিলেন?

উঃ। কাবুলিওয়ালারা পাঠান “রোটা" অর্থাৎ রুটি আর কাবাব খেয়েছিলেন।


২.৯ “তসবিহ” শব্দের অর্থ কী?

 উঃ। “তসবিহ” শব্দের অর্থ জপের মালা।



২.১০ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে কী বলা হয়?,

উঃ। আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে “নব্বদ-ও -নও অসমা-ই-হাসানা” বলা হয়।



৩. নিম্নলিখিত শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছেদ করো : হুংকার, স্বস্তি, বিষয়ান্তর।

উঃ। হুংকার- হুম্ + কার। 

স্বস্তি – সু + অস্তি। 

বিষয়ান্তর -বিষয় + অন্তর।


৪. নিম্নলিখিত শব্দগুলির প্রকৃতি প্রত্যয় নির্ণয় করো ঃ ফিরতি, আভিজাত্য, জবরদস্ত, নিবিষ্ট, উৎসাহিত।

উঃ। ফিরতি—ফির্ + তি

আভিজাত্য –অভিজাত + য। 

জবরদস্ত – জবরদস্ত + অ। 

নিবিষ্ট—নি + বিশ্ + ত।

উৎসাহিত – উৎ+সহ+অ+ইত।



৫. ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো : শীতবস্ত্র, মাতৃভাষা, শিশুসুলভ, ত্রিসীমানা

উঃ। শীতবস্ত্র ঃ শীত হইতে রক্ষা পাবার জন্য যে বস্তু।

(মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)


মাতৃভাষা : মায়ের ভাষা।(সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)


শিশুসুলভ ঃ শিশুর পক্ষে সুলভ।(মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)


ত্রিসীমানা ঃ তিন সামানার সমাহার।(দ্বিগু সমাস)



৬. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :

৬.১ গাড়িতে সেদিন অসম্ভব ভিড় দেখা গেল। (না-সূচক বাক্যে)

উঃ। গাড়িতে সেদিন ভিড় কম ছিল না।


৬.২ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিলনা। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)

উঃ। কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল কি?


৬.৩ কলকাতার ভাষা তার আয়ত্ত হয়নি। (জটিল বাক্যে)

উঃ। কলকাতার যা ভাষা তা তাঁর আয়ও হয়নি।


৬.৪ দুই-একজন মাঝে মাঝে এক আধ লৰ্জ ফারসি বলল বটে, কিন্তু এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগোল না। (সরল বাক্যে)

উঃ। দুই একজন মাঝে মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললেও এদের বিদ্যে বেশিদূর এগোল না।


৬.৫ বাংলাদেশে তোমার ডেরা কোথায়? (নির্দেশক বাক্যে) উঃ। বাংলাদেশে তোমার ডেরার কথা জানতে চাইছি।


৭. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টীকা লেখো : কাবুলিওয়ালা, পশতু, ফারসি, আফগানিস্তান, বরিশাল, গজল, উর্দু, নমাজ।

উঃ। কাবুলিওয়ালা—আফগানিস্তানের লোক। এরা জাতিতে পাঠান। বৃদ্ধ ও পর্বতসংকুল দেশের বাসিন্দা হওয়ার জন্য এরা প্রচণ্ড শক্তিশালী দেহের অধিকারী। এরা ভারতে আসত মূলত হিং-এর ব্যবসা এবং টাকা ধার দেওয়ার কারবার করতে। এছাড়াও তারা আখরোট, পেস্তা বাদাম, কিশমিশ প্রভৃতি শুকনো ফল বিক্রি করত। এদের মাতৃভাষা ছিল পশতু।পাঠা রচনাংশটিতে কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে লেখকের দেখা হয়েছিল দেহরাদুন এক্সপ্রেসের কামরায়।


পশতু—পাঠানদের ভাষা এবং আফগানিস্তানের আঞ্চলিক ভাষা। এটাই তাদের প্রথম ভাষা তবে সেখানে শিক্ষিত জনের ভাষাও এটি নয় এবং আফগানিস্তানে পশতু ভাষার তেমন একটা সম্মান ছিলনা। কাবুলিওয়ালারা নিজেদের মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে। এই ভাষায় প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। উর্দু জানা থাকলে পশতু ভাষা বুঝতে পারা যায়। পাঠ্য রচনাটিতে ট্রেনের কামরায় কাবুলিওয়ালারা নিজেদের মধ্যে পুশতু ভাষায় কথা বলছিল। লেখকের পশতু ভাষায় বিশেষ জ্ঞান ছিল না।


ফারসি – আফগানিস্তানের শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের ভাষা। আফগানিস্তানের সরকারি ভাষা ফরাসি। পাঠানরা এই ভাষা বিশেষ জানত না। এটি পারস্যের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে উদ্ভূত। পথচলতি রচনাটিতে লেখক এই ভাষাতেই ট্রেনে থাকা কাবুলিওয়ালাদের সাথে আলাপ জমান এবং কথা বলেন।


আফগানিস্তান—অবিভক্ত ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র আফগানিস্তান। সারাদেশে প্রচুর পাহাড় পর্বত, বৃদ্ধ ও ঊষর দেশ। মূলত মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানকার অধিবাসী। কাবুলিওয়ালারা




বরিশাল:-বর্তমান বাংলাদেশের নদীবহুল একটি জেলা। মূলত কৃষিপ্রধান, এছাড়া এটি একটি বন্দর। পথচলতি মার ট্রেনের বৃদ্ধ পাঠানটির ডেরা ছিল বরিশালের পটুয়াখালি অঞ্চলে।


গজল — ধ্রুপদি সংগীত বিশেষ গজল হল। আরব থেকে গজলের উৎপত্তি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বিকাশলাভ করে। পরবর্তীকালে এটি উর্দু ভাষায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। গজল হালকা মেজাজের পদ্ম শাস্ত্রীয় সংগীত সুলতানদের হাত ধরে এই সংগীত ভারতে প্রবেশ করে। আমির খসরু, মীর্জা গালিব, গোরখপুরী ছিলেন প্রখ্যাত লেখক। পথ চলতি রচনাংশটিতে এক পাঠান কাবুলিওয়ালা খুশ-হাল খট্টকের গজল খুব দরদ দিয়ে গেয়ে শুনিয়ে ছিলেন।


উর্দু—–আফগানিস্তানের ভাষা। এতে আর'ব ও ফারসি শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। পাল্টিস্তানও ভারতে এই ভাষা প্রচলিত। ‘উর্দু’ শব্দটি তুর্কি এবং 'গুরু' শব্দ থেকে এসেছে, এর অর্থ শিবির। বেশিরভাগ প্রাচীন ইসলাম সাহিত্য ভাষাতেই রচিত। 'পথচলতি' রচনাটিতে লেখকের উর্দু ভাষায় জ্ঞান থাকায় তিনি পাঠানদের কথা বুঝতে পেরেনি। দুই কাবুলিওয়ালার কথোপকথনে এই ভাষা বিস্তর ছিল।



নমাজ – নমাজ হল মুসলিমদের প্রার্থনা। এটি তারা তাদের আল্লাহর উদ্দেশ্যে করে থাকে। মুসলিম মর্মে সুতোয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার রীতি রয়েছে। কর্মপ্রাণ মুসলমানগন পাঁচবারই নামাজ পড়েন। 'পদম্পতি রচনায় লেখক দেখেছিলেন ট্রেনে কাবুলিওয়ালারাও ভোরবেলায় নামাজ পড়ছিল।



৮. নীচের প্রধাগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো

৮.১ স্টেশনে পৌঁছে লেখক কী দেখেছিলেন।

উঃ। লেখক স্টেশনে পৌঁছে দেখলেন যে দেহরা-দুন এক্সপ্রেস গাড়ির মধ‍্যম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় জবরদস্তু ভিড়। সমস্ত ট্রেনটি ঘুরে দেখার জন্য উদ্ভিসের দিকে যেতে গিয়ে লেখক দেখলেন একখানি তৃতীয় শ্রেগির কামরা একেবারেই ফাকা। সেখানে অল্প কয়েকজন জবরদস্ত চেহারার কাবুলিওয়ালা কামরাটি দখল করে রয়েছে। কেউ সেখানে গেলে বা জানালা দিয়ে উকি মারলে তারা ফুকোর ও ধমক দিয়ে বলছে, ইয়ে গাড়ি তোমারা ওয়াস্তে উদর। রেলকর্মচারী বা পুলিশ ও তাদের ত্রি-সীমানাতেও ঘেঁষছে না।



৮.২ দু-চারটি ফারসি কথা বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে কীরকম সাহস দিয়েছিল?

উঃ। লেখক ভিড়ে ঠাসা গাড়ি দেখে ঠিক করেছিলেন যে এই কাবুলিওয়ালাদের কামরাতেই তিনি উঠবেন। তিনি জানতেন ফারসি ভাষা হচ্ছে আফগানিস্তানের শিক্ষিত লোকেদের ভাষা ও সরকারি ভাষা। তিনি তাই ভেবেছিলেন যে ফারসি বলতে পারা লোকেদের কাবুলিওয়ালারা সম্মান করবে। তাই তিনি বাবুলিয়ালা অধ্যুষিত কামরাতে সাহস করে প্রবেশ করেন।



৮. ৩ "আলেম” শব্দের মানে কী? লেখককে কারা কেন "এক আলেম" ভেবেছিলেন।

উঃ। 'আলেম' শব্দের মানে হলো সর্বন্ধ বা জামী। দেহরা-মুন এক্সপ্রেসের কামনায় কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে লেখক ফারসি ভাষায় কথা বলছিলেন। একজন বাঙালির মুখে অনর্গল ফারসি ভাষা মুখে কাবুলিওয়ালারা তাকে "এক মস্ত আলেম ভেবেছিলেন।


৮.৪ আগা- সাহেব সম্পর্কে যা জানা, সংক্ষেপে লেখো।

উঃ। দেহরা-মুন এক্সপ্রেসের কামরায় কাবুলিওয়ালাদের সহযাত্রী লেখকের সঙ্গে এক বৃদ্ধ আগা সাহেবের পরিচয় হয়েছিল। আগা সাহেবের বাণিজ্যের স্থান বাংলাদেশের পটুয়াখালি বন্দর। তাঁর মূল ব্যবসা টাকা ধার দেওয়া, শীতবস্ত্র আর হিং বিক্রি করা। বরিশালের ভাষা তিনি তাঁর মাতৃভাষার মতোই বলতে পারেন। কিন্তু কোলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয় নি। তিনি ট্রেনের উপরের বারে শুয়েছিলেন, লেখক কে দেখে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসেছিলেন এবং লেখক কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি বাংলাদেশ থেকে আসছেন কি না। লেখক পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলেন যে আগা সাহেব অনেক আগে উঠে বসে আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নাম নিয়ে তসবিহ বা মালা জপ করছেন।



৮.৫ লেখকের সামনে বেরি দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা করছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

উঃ। লেখকের সামনের বেঞ্চির দুই পাঠান সহযাত্রী নিজের মধ্যে থেকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তারা লেখকের বিষয় পশতু ভাষার আলোচনা করছিলেন।

লেখক পশতু ভাষা বিশেষ জানতেন না। কিন্তু এই ভাষায় প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দ থাকাতে এবং উর্দু ভাষা তাঁর জানা থাকায় লেখক পাঠান সহযাত্রীদের কথা বুঝতে পেরেছিলেন।




১৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :

১৯.১। পাঠ্য-গদ্যটির ভাবের সঙ্গে “পথচলতি” নামটি কতখানি সংগতিপূর্ণ হয়েছে, বিচার করো।

উঃ। 'পথচলতি' কথার অর্থ পথ চলার মাঝে অর্থাৎ পথের মাঝে কারো সাথে ক্ষণিকের কথা বা ক্ষণিকের দেখা হওয়া ইত্যাদি। পথচলতি রচনাটির পুরোটাই লেখকের চলার পথের বর্ণনায় ভরা। লেখকের সঙ্গে কয়েকজন কাবুলিওয়ালার আলাপ হয় একটি কলকাতাগামী দেহরা-দুন এক্সপ্রেসের কামরায়। সেখানে কাবুলিওয়ালাদের সাথে লেখক এক রাত ট্রেনে কাটিয়েছিলেন। সেখানে কাবুলিওয়ালাদের সাথে বিস্তর আলাপ, আলোচনা, গল্প, গান ইত্যাদি হয়েছে। পথের এই বন্ধুদের সাথে লেখকের হয়তো আর কখনও এইভাবে দেখা হবে না। তবু পথের এই বন্ধুরা লেখকের সাথে আপন হয়ে গেছেন। পাঠানদের সাহিত্য সংস্কৃতি কথা জানায় তারা লেখককে আপন করে নিয়েছে এবং তাকে মস্ত এক আলেম মনে করেছে। পুরো গল্পটিই যাত্রাপথের আলাপ ও দেখার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। তাই গল্পটির নাম 'পথচলতি’ খুবই সংগতিপূর্ণ হয়েছে।




৯.২ পাঠ্য গদ্যাংশটি থেকে কথকের চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি তোমার চোখে ধরা পড়েছে? বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে লেখো।


উঃ। পাঠ্য গদ্যাংশটিতে লেখক তার চলার পথের অভিজ্ঞতা নিজেই বর্ণনা করেছেন। তাই এই রচনাটিতে কথকের নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই লক্ষ করা যায়। এখানে কথকের প্রাথমিক যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে তা হলো তাঁর দুঃসাহস।

তিনি কেবল তাঁর ফারসি ভাষাজ্ঞানকে সম্বল করে ওইরকম জবরদত্ত চেহারার কাবুলিওয়ালাদের কামরায় উঠে পড়েছেন। যেখানে রেলের কোনো কর্মচারী বা পুলিশ ও পা রাখতে সাহস পায়নি। এরপর দেখা গেছে যে তিনি তাদের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ

আচরণ করেছেন। তিনি তাদের কাছে সম্মানীয় হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে কুকথা বলেন নি। বরং তাদের সাথে গানে গল্পে মেতে উঠেছেন। তিনি একই সাথে আলাপী, রিচক্ষণ ও বিছান। তাঁর ভাষা জ্ঞান অত্যন্ত গভীর। উর্দু, আরবি ও ফরাসি ভাষায় তাঁর জ্ঞান প্রবল। এই কারণেই তিনি পাঠানদের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। এছাড়া লেখকের সাহিত্য জ্ঞান ও সংগীতের প্রতি অনুরাগের পরিচয়ও আমরা পাই। তিনি সুদূর কাবুল দেশের এক অবহেলিত ভাষার গীত এবং গল্প সম্পর্কে যথেষ্ট খবর রাখেন। তাই তিনি পশতু ভাষায় রচিত আদম খী দুরখানির ভাষায়

কিসসা শুনতে চেয়েছেন। পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ হাল খাঁ খট্টকের গজল শুনতে চাওয়ার মধ্যে দিয়ে লেখকের সংগীত প্রেমিক মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি তাদের ধর্ম সম্বন্ধেও খবর রাখেন তার পরিচয় পাওয়া যায়, পাঠানরা কীভাবে তাদের ধর্ম পালন করে তার পরিচয় নানের মধ্য দিয়ে। পরিশেষে আমরা কথকের বাস্তববুদ্ধির পরিচয়ও পাই। তিনি যে ভালোভাবেই ফিরেছেন এবং ক্ষণিকের জন্য কয়েকজন ভিন্ন জাতির বন্ধুর সঙ্গসুখ তিনি পেলেন একথা জানতে তিনি




৯.৩। কথকের সঙ্গে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথোপকথোনটি সংক্ষেপে বিবৃত করো।

উঃ। কথক ভিড় ট্রেনের মধ্যে একখানি ঝামরা ফাঁকা দেখে তাতে চড়তে গিয়ে দেখলেন যে তাতে কিছু কাবুলিওয়ালা সওয়ার হয়ে রয়েছে তিনি সেই কামরায় উঠতে যাওয়াতে কাবুলিওয়ালারা তাকে হুংকার দিয়ে বলে উঠল–যে কিন্তু ভাতে হো।" হয়ে গাড়ি তুম লোগ কে ওয়াতে নেহি, সিফ হম পঠান লোগ ইসমে জাতে হৈ" অর্থাৎ যে এই গাড়িটি শুধু তাদের। প্রথম লেখক তাদের ফারসিতে উত্তরে বললেন সে এই গাড়িতে শুধু তার একার জায়গা দিতে। কাবুলিওয়ালারা ফারসি জানত না। তাই তারা চকচকিয়ে গেল। এই বুঝে লেখক আর একটু গলা চড়িয়ে উপহাস ও তাচ্ছিল্যের ভাব দেখিয়ে বললেন।

যে তারা আফগানিস্তানের কোন অঞ্চল থেকে আসছে যারা ফারসি বোঝে না। এতে কাবুলিওয়ালারা অবাক হয়ে গেল। এমন সময় গাড়ির ভিতর থেকে এক ছোকরা কাবুলিওয়ালা তাকে বলে যে সে ফারসি জানে, লেখক কী বলতে চান? লেখক তাকে বলেন যে তিনি এই কামরাতে জায়গা চান। এরপর

সে জিজ্ঞাসা করে যে লেখক কোথায় যাবেন। লেখক বলেন যে তিনি কলকাতা শহরে যাবেন। তখন তারা তাকে একটা বেঞ্চ ছেড়ে দেয় । এইভাবে কাহিনির শুরুতে লেখকের সাথে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথোপকথন শুরু হয়।




৯.৪ কথক কেন বলেছেন—“যেন এক পশতু-সাহিত্য-গোষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম।”— সেই সাহিত্য সম্মেলনের বর্ণনা দাও।

উঃ। লেখক দেহরাদুন এক্সপ্রেসের কামরায়ষো লোজন শক্তিশালী চেহারার পাঠান কাবুলিওয়ালার সঙ্গে গয়া থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন। লেখক ‘বহুভাষাবিদ’ কিন্তু পশতু ভাষা জানেন না। আর পাঠানরা ফারসি জানে না, তারা জানে তাদের মাতৃভাষা পশতু। লেখককা বুলিওয়ালাদের সাথে সৌভ্রাতৃত্ব দেখিয়ে তাদেরকে প্রথমে পাঠানদের পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ-হাল খাঁ খট্টকের গজল গাইতে অনুরোধ করলেন। তখন এক পাঠান ভাবের আতিশয্যে কখনো কানে হাত দিয়ে কখনো বুকে হাত দিয়ে শতু ভাষার গজল গাইতে শুরু করলেন। তারপর তিনি আদম খাঁ আর দুরখানির মহব্বতের দিলভাঙা কিসসা শুনতে চান। এরপর এক পাঠান এই কিসসা কতকটা গান করে কতকটা পাঠ করে শোনাতে লাগল।

এইভাবে ট্রেনের কামরায় যেন পশতু ভাষায় গান এবং সাহিত্যের আসর বসে গেল। তাই লেখক বলেছেন যেন এক পশতু-সাহিত্যগোষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম।



৯.৫। “পথচলতি” রচনায় ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকা সত্বেও যে সহজ বন্ধুত্ব ও উদার সমানুভূতির ছবিটি পাওয়া যায় তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। বর্তমান সময়ে এই বন্ধুত্ব ও সমানুভূতির প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে দাও।

উঃ। “পথচলতি” রচনায় দুটি বহু দুরবর্তী স্থানে বসবাসকারী একদমই ভিন্ন দুটি জাতির মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। একজন বাঙালি ও অন্যরা কাবুলিওয়ালা। অথচ একই পথের সহযাত্রী হয়ে এরা একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে। অন্য ভাষার গান, সাহিত্য বুঝতে কারোর অসুবিধে হয় না। পশতু ভাষী পাঠান কাবুলিওয়ালারা লেখকের বন্ধুত্বপূর্ণভা বের জন্যই বুঝেছে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বাঙালি বাবুর সম্মান রয়েছে। বিজাতীয় হলেও ভদ্রতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ ও উদার মনোভাবের জন্যই তারা তাঁকে মস্ত ‘আলেম' বলে মনে করেছে। ঘুম থেকে ওঠার পর একে অন্যের কুশল জিজ্ঞেস করেছে। এইভাবে দুই ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকের মধ্যে সহজ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বর্তমানে যখন ভারতবর্ষের নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির জাগরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ বহুলাংশে বেড়ে চলেছে,

, দৈনন্দিন হিংসায় সমাজ জর্জরিত হচ্ছে। তখন এই প্রকার ঘটনা আমাদের কাছে সুস্থ ও সুন্দর বার্তা বয়ে নে। সেই বার্তা মানুষে মানুষে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব এবং একে অপরকে সম্মান দেওয়ার কথা বলে। বর্তমানে সমাজে এই ধরনের মানুষের বড়োই প্রয়োজন যাদের অনুভব ও সম্মানবোধ সমাজে একতার পরিবেশ গড়ে তুলবে। ভারতের ক্যশক্তিকে জাগরিত করবে। পাশাপাশি উদারতা, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও মুক্তচিন্তা এই বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে আমাদের মুক্তি দেবে।



১০. রেল ভ্রমণের সময় অচেনা মানুষের সঙ্গে তোমার বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি রম্যরচনা লেখো।

তোমার লেখাটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ছবি আঁকো।

উঃ। একবার আমি বাবা মায়ের সঙ্গে বিষ্ণুপুর বেড়াতে গিয়েছিলাম। ট্রেনে করে যাবার সময় একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ । ভদ্র-লোকটি ছিলেন ভারি মজার। প্রথমে তিনি ট্রেনে উঠে খাবার খেলেন। খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।

এইভাবে কয়েকবার করার পর আমরা ব্যাপারটা লক্ষ করছি দেখে তিনি বললেন “আসলে আমার খেলে ঘুম পায়, ঘুম থেকে উঠলে খিদে পায়। আমার এই অভ্যাসের জন্য স্ত্রী আমায় সারাদিনে আধপেটা খেতে দেয়। আর আজকে অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি। ছাড়া পেয়ে তাই আনন্দে খাচ্ছি আর ঘুমোচ্ছি। এই শুনে আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।



অন্য গুলি দেখুন

বোঝাপড়া

অদ্ভুত আতিথেয়তা

চন্দ্রগুপ্ত

বনভোজনের ব‍্যাপার

সবুজ জামা

চিঠি

আলাপ

পরবাসী

পথচলতি

একটি চড়ুই পাখি

দাঁড়াও

অন্য টা দেখুন দাঁড়াও

পল্লীসমাজ

ছন্নছাড়া

গাছের কথা

হাওয়ায় গান

কি করে বুঝবো

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি

নাটোরের কথা

অন‍্যটা দেখুন নাটোরের কথা

গড়াই নদীর তীরে

জেলখানায় চিঠি

স্বাধীনতা

আদাব

অন্যটা দেখুন আদাব

শিকল পরার গান

হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়

ঘুরে দাঁড়াও

সুভা

পরাজয়

মাসিপিসি

টিকিটের অ্যালবাম

লোকটা জানলই না



পথের পাঁচালী (১)

পথের পাঁচালী(২)

পথের পাঁচালী(৩)

পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর

ভাষাচর্চা (১)

ভাষা চর্চা (২)