'একটি চড়ুই পাখি' অষ্টম শ্রেণীর বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
একটি চড়ুই পাখি
তারাপদ রায়
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ তারাপদ রায় কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উঃ। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তারাপদ রায় জন্মগ্রহণ করেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উঃ। তারাপদ রায় এর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল জলের মতো কবিতা এবং দারিদ্র্যরেখা।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর লেখো :
২.১ কবিতায় চড়ুই পাখিকে কোথায় বাসা বাঁধতে দেখা গেছে?
উঃ। কবি তার ঘরের মধ্যে চড়ুই পাখিটিকে বাসা বাঁধতে দেখা গেছে।
২.২ চড়ুই পাখি এখান-সেখান থেকে কী কী সংগ্রহ করে আনে?
উঃ। চড়ুই পাখিটি এ বাড়ি থেকে খড়কুটো, ও বাড়ি থেকে ধান প্রভৃতি সংগ্রহ করে আনে।
২.৩ কবির ঘরের কোন্ কোন্ জিনিস চড়ুই পাখিটির চোখে পড়ে?
উঃ। কবির ঘরের জানালা, দরজা, টেবিল, ফুল-দানি, বই-খাতা এ সবই চড়ুই পাখিটির চোখে পড়ে।
২.৪ ইচ্ছে হলেই চড়ুই পাখি কোথায় চলে যেতে পারে ?
উঃ। ইচ্ছে হলেই চড়ুই পাখিটি এ পাড়ায় ওপাড়ায়, বোসেদের, পালেদের বাড়ি চলে যেতে পারে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলি কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো :
৩.১ ‘চতুর চড়ুই এক ঘুরে ফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে’—চড়ুই পাখিকে এখানে চতুর বল৷ হলো কেন ?
উঃ। কবির মনে হয়েছে চড়ুই পাখিটি খুবই চতুর। সে জানে কবি তার ঘরে একা থাকেন। সকালে বের হলে সে সন্ধেবেলায় ফেরেন। তাই ঘরটি নিরিবিলি, এখানে বাসা করলে কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। তাই কবির ঘরটি তার বাসা বাধার উপযুক্ত মনে করেছিল। যদিও সে এমন ভাব করে যেন সে দয়া করে কবির ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারে তবে যায় না। সে যেন বোঝে কবির একাকীত্ব, তাই ইচ্ছে করলেও কবি তাকে তাড়িয়ে দেবেন না। তাই কবি 'চড়ুই পাখিটির বিচক্ষণতা কে অনুভব করেই তাকে চতুর বলেছেন।
৩.২ কবিতার বিধৃত চিত্রকল্পগুলি দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।
উঃ। কবি তারাপদ রায় শব্দ দিয়ে কবিতাটিতে নানা চিত্র এঁকেছেন। এই চিত্রকল্প গুলি পাঠকের মনের মাঝে চিত্রটি ফুটিয়ে তোলে। হল কবির বিবৃত উল্লেখযোগ্য চিত্রকল্পগুলো হলো—একটা চড়ুই পাখি কার্নিশে বসে উদাসীন ভাব দেখাচ্ছে।
(১) কার্নিশে বসে চাহনিতে তাচ্ছিল্য মজার এই চিত্রটি শুধু কবির নয় পড়ার সময় পাঠকের মনেও দৃশ্যটি ফুটে ওঠে।
যেন এই বাজে ঘরে দয়া করে আছি, কারণ দয়ার শরীর।
(২) কখনো কবিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখে ভাবে এই লোকটা চলে গেলে এই ঘর-দোর-জানালা-টেবিলের
ফুলদানি-বইপত্র সব বিধাতা তাকে দেবে।
(৩) অন্ধকার ঠোটে নিয়ে সন্ধ্যা ফেরে—সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার নামে আমরা সবাই তা জানি, এখানে অন্ধকার নামার সঙ্গেই চড়ুই পাখিটিও ঘরে ফিরছে, একে বোঝাতেই সন্ধ্যা ও চড়ুই পাখিটিকে সমার্থক করে কবি এক অপূর্ব চিত্রকল্প রচনা করেছেন।
৩.৩ হয়তো ভাবে.....—চড়ুই পাখি কী ভাবে বলে কবি মনে করেন?
উঃ। কবি মনে করেন যে চড়ুই পাখিটি হয়ত ভাবে কবি চলে গেলে কবির ঘর, জানলা, দোর, টেবিলের ফুলদানি, বইখাতা সব চড়ুই পাখিটির হবে। বিধাতা তাকেই কবির সব জিনিস দিয়ে দেবেন।
৩.৪ ‘আবার কার্নিশে বসে চাহনিতে তাচ্ছিল্য মজার,... - তাচ্ছিল্য ভরা মজার চাহনিতে তাকিয়ে চড়ুই কী ভাবে?
উঃ। কার্নিশে উড়ে এসে বসে একটি ছোটো চড়ুই পাখি। তাচ্ছিল্য ভরা চাহনিতে তাকিয়ে চড়ুই ভাবে সে, একটা বাজে, ঘরে আছে নিতান্ত তার মায়ার শরীর বলে। ইচ্ছে করলে সে আজকেই এ পাড়ায় ও পাড়ায় ‘পালেদের’ ‘বোসেদের বাড়িচলে যেতে পারে। কবির নিঃসঙ্গতা অনুভব করেই যেন সে চলে যায় নি।
৩.৫ চড়ই পাখিকে কেন্দ্র করে কবির ভাবনা কী ভাবে আবর্তিত হয়েছে তা কবিতা অনুসরণে আলোচনা করো।
উঃ। ছোট্ট একটি চড়ুই পাখি, তাকে কেন্দ্র করে কবি মেলে ধরেছেন তাঁর কল্পনার জাল। সারাদিন পাখিটি কবির ঘরে কতো কি না বয়ে আনে। খড়কুটো, ধান, আর কবিকে দেখে ভাবে এই লোকটা চলে গেলে ঘরের সবকিছুই আমার হবে।কখনো সে দয়ার দৃষ্টিতে দেখে কবিকে, ভাবে যেন দয়া করে আছি এই ঘরে, যখন ইচ্ছা হবে উড়ে চলে যাব। তবু সে যায় না, কবির প্রতি সে যেন এইটুকু দয়া করে। কবি ভাবছেন চড়ুইটি হয়তো তাঁকে আর তার ঘরকে ভালোবেসেই রয়ে গেছে। দিন শেষে রাত্রি নামে কবি ফিরে আসেন, দেখেন রাত্রে চড়ই পাখি তাঁর ঘরেই আশ্রয় নিয়েছে। নির্জন রাত বেড়ে চলে ঘরে কবি ও পাখি একাকী অথচ পাশাপাশি বাস করেন। কবির একলা জীবনে চড়ুইটি কখন যেন তাঁর সাথি হয়ে ওঠে।
৩.৬. তবুও যায় না চলে এতটুকু দয়া করে পাখি'—পঙ্ক্তিটিতে কবি মানসিকতার কীরূপ প্রতিফলন হয়েছে?
উঃ। কবি খুব রসিক প্রকৃতির মানুষ, কবিতায় তাঁর কথার ভঙ্গি, পরিহাসপ্রিয়তা সর্বত্রই ফুটে উঠেছে। কবি বুঝতে পারেন যে চড়াই পাখিটি ইচ্ছে করলেই এ পাড়ায় ও পাড়ায় পালেদের, বোসেদের বাড়ি চলে যেতে পারে তবুও সে কবির প্রতি মমতা অনুভব করে সেখানে থেকে যায়। কবি বুঝতে পারেন সেও নির্জন ঘরে নিঃসঙ্গ কবিকে পছন্দ করে। তাই কবি মনে মনে চড়ুইটির প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন।
৩.৭ ছোট্ট চড়ুই পাখির জীবনবৃত্ত কীভাবে কবিতার ক্ষুদ্র পরিসরে আঁকা হয়েছে তার পরিচয় দাও।
উঃ। চড়ুই পাখি লোকালয়ে থাকতে ভালোবাসে। গাছ গাছালিতে বাসা না বেঁধে ঘরের কার্নিশে, চালে সে বাসা বাঁধে। সারাদিন খড়কুটো বয়ে বয়ে বেড়ায়, ধানের খোসা ছাড়িয়ে ধান খায়। গোটা ঘরময় কিচমিচ শব্দ করে সে গান গায়, নানা
শব্দের জাল বোনে। কখনো সে কবির কাছাকাছি এসে কৌতূহল নিয়ে দেখে আর ভাবে লোকটা চলে গেলে তার সবই চড়ুইটির নিজের হবে। আবার কবির নিঃসঙ্গ জীবনেও পাখিটি বৈচিত্র্য নিয়ে এসে কবিমনকে ভরিয়ে রাখতে পেরেছে। কবির ঘরেই শুধু নয় কবির মনেও সে স্থান করে নিয়েছে।
৩.৮ ‘কৌতূহলী দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে’—চড়ুই পাখির চোখ কৌতুহলী কেন? তার চোখে কবির সংসারের কোন্ চালচিত্র ধরা পড়ে?
উঃ। চড়ুই পাখিটি কবির ঘরে বাসা বেঁধে রয়েছে। পাখিটির দুটি চোখ কৌতূহলী কারণ সে কবিকে দেখে তার বাড়িঘর পর্যবেক্ষণ করে আর ভাবে এই মানুষটি চলে গেলে, এই বাড়িঘর, দোর-জানালা-টেবিলের ফুলদানি সব তার। পাখির চোখে ধরা পড়ে কবির সংসারের চালচিত্র। কবি একাকী শান্ত প্রকৃতির মানুষ,পাখি এতো নোংরা করলেও তাকে তাড়ান না। কবির বাড়ি গুছানো, পরিষ্কার টেবিল তাতে ফুলদানি পাশে বইপত্র। বাড়িটি অতি সাধারণ এবং কবি একলাই বাস করেন ।
কবির এই নিঃসঙ্গতা মাঝে মাঝে এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে চড়ুই পাখিটির কবির ঘরে না থাকা কবির মনকে উতলা করে তোলে। তাই কবি বলেছেন ইচ্ছা করলেই সে চলে যেতে পারে—কিন্তু কবির প্রতি কৃপাবশত চড়ুই পাখিটি কোথাও যায় না ।
৩.৯ ‘রাত্রির নির্জন ঘরে আমি আর চড়ুই একাকী’—পঙ্ক্তিটিতে ‘একাকী' শব্দটি প্রয়োগের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উঃ। ‘একাকী’ কথাটির মধ্যে দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি এই পৃথিবীতে একদম একা, তাঁর আপনজন বলতে কেউ নেই তাই তিনি একা । তিনি যেমন একা প্রিয়জনহীন তেমনি চড়ুইটিও একা থাকে। হয়তো সে কবির সঙ্গ পছন্দ করে কিন্তু তা তার ভাবভঙ্গীতে বোঝা যায় না। তাই একই ঘরে চড়ুই ও কবি একসাথে থাকলেও কবি মনের দিক দিয়ে একাই
থাকেন। সেই অর্থে ‘একাকী' শব্দটি কবির নিঃসঙ্গ জীবনের বেদনাকে আরও গভীর করে তুলেছে।
৩.১০. ‘একটি চড়ুই পাখি’ ছাড়া কবিতাটির অন্য কোনো নামকরণ করো। কেন তুমি এমন নাম দিতে চাও, তা বুঝিয়ে লেখো।
উঃ। কবিতাটির নামকরণ করা যেতে পারে—চড়ুই-এর ভাবনা'। কবিকে লক্ষ্য করে চড়ুই পাখিটির ভাবনার অন্ত নেই। পাখিটি ভাবে এই লোকটি চলে গেলে এই ঘরদোর- জানালা-টেবিলের ফুলদানি-বইপত্র সবই তার হবে। আবার কখনো কবির দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে সে তাকায়। ভাবখানা যেন সে ইচ্ছা করলেই কবির বাড়ি ছেড়ে যেতে পারে, যায় না কারণ তার দয়ার শরীর। মনে হলেই সে পালেদের, বোসেদের বাড়ি যেখানে খুশি যেতে পারে, তাই কবিতাটির নামকরণ 'চড়ুই-এর ভাবনা' অযৌক্তিক হবে বলে মনে হয় না।
৪. নীচের শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করো :
উঃ। সন্ধ্যা = সম্ + ধা।
কৌতূহলী = কুতুহল + অ + ঈ।
দৃষ্টি = দৃশ + তি।
৫. নীচের বাক্যগুলির ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করো :
উঃ ।
৫.১ চতুর চড়ুই এক ঘুরে ফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে।
৫.২ বই-খাতা এসব আমারই হবে।
৫.৩ আবার কার্নিশে বসে।
৫.৪ এই বাজে ঘরে আছি।
৫.৫ ইচ্ছে হলে আজই চলে যেতে পারি ।
৬ নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
৬.১ অন্ধকার ঠোটে নিয়ে সন্ধ্যা ফেরে যেই সে'ও ফেরে। (সরল বাক্যে
উঃ। অন্ধকার ঠোটে নিয়ে সন্ধ্যা ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সে'ও ফেরে।
৬.২ কখনো সে কাছাকাছি কৌতূহলী দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে। (নিম্নরেখাঙ্কিত বিশেষ্যের রূপ
লিখে বাক্যটি আবার লেখো।)
উঃ। কখনো সে কাছাকাছি কৌতূহল-ভরা দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে
৬.৩ আমাকেই দেবেন বিধাতা। (না-সূচক বাক্যে
উঃ। আমাকে না দিয়ে বিধাতা থাকবেন না ।
৬.৪ এই বাজে ঘরে আছি নিতান্ত মায়ার শরীর আমার তাই। (জটিল বাক্যে)
উঃ। যেহেতু আমার মায়ার শরীর তাই এই বাজে ঘরে আছি।
৬.৫ ইচ্ছে হলে আজই যেতে পারি, এপাড়ায় ওপাড়ায় পালেদের বোসেদের বাড়ি। (জটিল বাক্যে)
উঃ। যদি ইচ্ছে হয় তবে আজই যেতে পারি, এপাড়ায় ওপাড়ায় পালেদের বোসেদের বাড়ি।
৭. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো : চড়ুই, ধান, চোখ, জানালা, দোর, ইচ্ছে, পাখি ৷
উঃ।
চড়ুই >চড়াই > চড়ুই
স্বরসংগতি
ধান > ধান্য > ধ্বনি
ধ্বনিলোপ
চোখ > চক্ষু > চোখ
ধ্বনিলোপ
জানালা > জানলা > জানলা
স্বরলোপ
দোর > দুয়ার > দেব
স্বর ও স্বরসঙ্গতি
ইচ্ছা > ইচ্ছা > ইচ্ছে
মধ্যস্বরাগম
পাখি > পক্ষী > পাখি
মধ্যস্বরাগম
৮. চোখ শব্দটিকে পৃথক পৃথক অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা করো।
উঃ। চোখ (দেহের অঙ্গ) চোখ খারাপ হয়েছে দূরের জিনিস দেখতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে।
চোখ (সতর্কতা) লোকটির গতিক ভালো নয় চোখে চোখে রেখো।
চোখ (নজর দেওয়া) সব কাজেই ওর নজর দেওয়া অভ্যাস।
চোখ (বিশেষ ভাবে বোঝানো) তোমাকে কি সব কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে?
অন্য গুলি দেখুন
আলাপ
অন্য টা দেখুন দাঁড়াও
অন্যটা দেখুন আদাব
পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর
ভাষাচর্চা (১)