চন্দ্রগুপ্ত অষ্টম শ্রেণীর বাংলা অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
চন্দ্রগুপ্ত
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?
উঃ। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।
উঃ। তাঁর রচিত দুটি নাটক নাম হলো '
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখো
২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করো।
উঃ। নাট্যাংশটির ঘটনা সিন্ধু নদীতট এবং সময় সন্ধ্যাকাল।
২.২ নাট্যাংশে উল্লিখিত 'হেলেন' চরিত্রের পরিচয় দাও।
জ্ঞ। নাট্যাংশ হেলেন ছিলেন গ্ৰিক সেনাপতি সেলুকাসের কন্যা ।
২.৩ ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ।'—উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে?
উঃ।বক্তা হলেন ভারতীয় রাজা পুরু
২.৪ ‘জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই বক্তা কীভাবে এই কীর্তি বেগে সেতে হাস
উঃ। বক্তা সম্রাট সেকেন্দার শৌখিন দিবিজয় যারা জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চান।
২.৫ ‘সম্রাট, আমার না করে বন্দি করতে পারবেন না।
উঃ। বক্তাকে যেহেতু সম্রাটের কাছে গুপ্তচর বলে ধরে আনা হয়েছে এবং সেই সন্দেহে সম্রাট তাকে বন্দী করতে চেয়েছেন । তাই বধ করে বন্দী করতে পারবেন না।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
৩.১ ‘কী বিচিত্র এই দেশ।-বার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য ভাবে ধরা পড়েে?
উঃ। আলোচ্য অংশে বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শত ভারতের অসাবাসৌন্দর্যে খুশি হয়ে সেলুকসের কাছে ভারতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। তিনি সেনাপতি সেলুকাসের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।তিনি ভারতের সৌন্দর্য বর্ণনাকরতে গিয়ে বলেছেন, দিনে প্রচণ্ড সূর্যতাপে এখানে আকাশ দগ্ধ হয়ে যায় । আর রাত্রে শুভ্র জোৎস্নার আলোয় স্নিগ্ধ মায়াময় করে তোলে। বর্ষায় ঘন কালো মেঘ গুরুগান্ধীর গর্জনে আকাশ ছেয়ে ফেলে। এই দেশে আকাশ ভেদ করা শুভ্র তুষার হিমালয় দাঁড়িয়ে
রয়েছে। এ দেশের বিশাল নদীগুলি উচ্ছ্বাসে ছুটে চলেছে ।এই পাশে তিনি দেখন তপ্ত বালু রাশি নিয়ে খেলা করে চলেছে মরুভূমি। কোথাও তালীবন গর্বভরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। কোথাও বিশাল সৰ্প বক্ররেখার মতো পথে পড়ে রয়েছে। কোথাও বৃহৎ শিং বিশিষ্ট হরিণ বনের মধ্যে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সর্বোপরি সাহসী, তেজী, নির্জীর একাতি যার নাম ভারতবাস তারা এ জাতিকে পরাজিত করাও গৌরবের।
৩.২ ভাবলাম – এ একটা জাতি বটে।'—বক্তা কে? তাঁর ভাবনার কারণ কী?
উঃ। আলোচ্য অংশের বক্তা স্বয়ং সেকেন্দার শাহ।
সুদূর ম্যাসিডন থেকে তিনি দিগ্বিজয় করতে বেরিয়েছেন।সেকেন্দার শাহ সারা পৃথিবী জয় করে ভারতের মাটিতে এসে প্রথম বাধা পেলেন। কারণ তাঁর সঙ্গে ভারতের মাটিতে প্রথম দেখা হয় পুরুরাজের শতদ্রুর তীরবর্তী দেশে। যুদ্ধে পুরুরাজের পরাজয় হয়। বন্দি পুরুরাজকে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন জানতে চাওয়ায় তিনি সেকেন্দার শাহকে জানালেন যে পরাজিত রাজার প্রতি বিজিত রাজার আচরণ ‘রাজার তুল্য' হওয়া উচিত।
তখন সেকেন্দার শাহ চমকিত হলেন এবং ভাবলেন যে একটি জাতি হিসেবে ভারতবাসী অনন্য, তাদের শৌর্য অতুলনীয়। এই উক্তিটিতে সম্রাটের মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে।
৩.৩ ‘এ দিগ্বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট?'—এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন?
উঃ। আলোচ্য উক্তিটির বক্তা সেনাপতি সেলুকস।
আলোচ্য উক্তির উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার জানালেন যে, তাঁর দিগ্বিজয় সম্পূর্ণ করার জন্য দরকার উপযুক্ত সৈন্যদল।
কেননা তার সৈন্যদল সুদূর ম্যাসিডন থেকে বিজয়ী হয়ে এসে এখানে প্রথম বাধা পেল। শুধু তাই নয় তারা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়ায় তিনি বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে যাচ্ছেন। তাছাড়া তিনি সাম্রাজ্য স্থাপন করতে আসেননি, এসেছেন শৌখিন দিগ্বিজয়ে।
৩.৪ ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।'—বক্তা কে? কোন্ সত্য সে উচ্চারণ করেছে?
উঃ। আলোচ্য উদ্ভিটির বক্তা স্বয়ং চন্দ্রগুপ্ত।
চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সম্রাটকে সত্য কথাই জানিয়েছিলেন যে তিনি গুপ্তচর নন। তিনি মাসাধিক কাল সেলুকসের কাছে অশ্বচালনা, ব্যূহপ্রণালী রচনা, সামরিক নিয়ম শিখছিলেন। গ্রিক সৈন্য সেই স্থান পরিত্যাগ করে যাবে শুনে তিনি সেগুলি একটি পত্রে লিখে নিচ্ছিলেন। সেকেন্দার শাহের সঙ্গে যুদ্ধের ইচ্ছায় নয়, তিনি বৈমাত্রেয় ভাই নন্দের দ্বারা অন্যায়ভাবে রাজ্য থেকে নির্বাসিত। তাই তিনি তার প্রতিশোধ নিতে চান। এটাই তাঁর উচ্চারিত সত্য।
৩.৫ 'আমার ইচ্ছা হলো যে দেখে আসি.... - বক্তার মনে কোন্ ইচ্ছে জেগে উঠেছিল? তার পরিণতিই বা কী হয়েছিল?
উঃ। বক্তা অর্থাৎ মগধের নির্বাসিত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তের মনে ইচ্ছা জেগেছিল সৈকেন্দার শাহকে দেখার। কেননা তিনি শুনেছিলেন ম্যাসিডনরাজ দারুণ বীর, পরাক্রমী, সমগ্র এশিয়া তাঁর পদতলে। চন্দ্রগুপ্ত দেখতে চেয়েছিলেন যে কী সেই পরাক্রম, যার বীরত্বে সমগ্র এশিয়া তাঁর পদতলে লুটিয়ে পড়েছে। আর্য জাতির বীরত্বও যার যুদ্ধে বিচলিত হয়েছে। সেই ইচ্ছা থেকেই তিনি তা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু এই ইচ্ছাপূরণের অভিপ্রায়ে এসে অ্যান্টিগোনসের হাতে চন্দ্রগুপ্ত ধরা পড়ে যান। পরে তার সাহস ও সততায় মুখ্য হয়ে সম্রাট তাকে মুক্তি দেন।
৪. নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলোচনা করো :
৪.১ 'এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে।'
উঃ। আলোচ্য উক্তিটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে স্বয়ং সেকেন্দার শাহের। তিনি সন্ধ্যাকালে সিটে সেনাপতি সেলুকসের সঙ্গে কথোপকথনে মগ্ন ছিলেন। তখন ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ভারতের বীর জাতির পরিচয়ে মুগ্ধ সেকেন্দার শাহ প্রসঙ্গত উদ্ভিটি করেছেন। আলোচ্য অংশে স্বয়ং সেকেন্দার শাহ পুরুরাজের জয়গান করেছেন। কারণ বন্দি পুরুরাজ সেকেন্দার শাহের কাছে রাজার প্রতি রাজার আচরণ প্রত্যাশা করেছিলেন। এই প্রত্যাশা সেকেন্দার শাহকে চমকিত করে। তিনি বোঝেন ভারতবাসী শৌর্য-বীর্ষে অন্য সকল দেশ অপেক্ষা অনেক এগিয়ে, তাঁদের শৌর্য-বীর্যকে পরাজিত করে আনন্দ আছে। তিনি বলতে চেয়েছেন প্রকৃত শক্তিশালী কোনো সাহসী জাতিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাস্ত করেই দেশজয়ের যথার্থ গৌরব ও আনন্দ লাভ করা সম্ভব।
৪.২ ‘সম্রাট মহানুভব।'
উঃ। আলোচ্য উক্তিটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের সেনাপতি সেলুকসের। গ্রিক শিবিরে সিন্ধুতটে দাঁড়িয়ে সেকেন্দার শাহ যখন ভারতীয়দের বীরত্বের প্রসঙ্গে পুরুরাজার বীরত্ব ও আত্মমর্যাদার কথা বলছিলেন তখন পুরুকে মুক্তি দেওয়ার প্রসঙ্গে সেলুকস এই উক্তিটি করেছিলেন। সেলুকস একজন বীর সৈনিক। তিনি অন্য বীরের মর্যাদা বোঝেন। স্বয়ং সেকেন্দার শাহও ছিলেন বীর। তিনি জানেন একজন বীরকে কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়। তাই পুরু বন্দি হলেও তাঁর বীরত্বপূর্ণ আচরণ সম্রাটকে মুগ্ধ করে, তাই পুরুকে তিনি মুক্তি দিতে বলেন। সেলুকস সম্রাটের এই আচরণে মুগ্ধ হন। তিনি বোঝেন যে সম্রাটও একজন মহান বীর। তিনি অন্য বীরের যথার্থ মর্যাদা রক্ষা করতে জানেন। তাই সেলুকস সম্রাটকে মহানুভব বলেছেন।
৪.৩. ‘বাধা পেলাম প্রথম—সেই শতদ্রুতীরে।'
উঃ। চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা স্বয়ং সেকেন্দার শাহ। ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দার শাহ দিগ্বিজয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং সেখানে শতদ্রু তীরে তিনি রাজা পুরুর কাছে প্রথম বাধা পান। সেই প্রসঙ্গেই সেকেন্দার শাহ এই উক্তিটি করেন।
সেনাপতি সেলুকস যখন সেকেন্দার শাহকে সম্রাটের যুদ্ধযাত্রা স্থগিত রাখার কারণ জানতে চাইলেন তখন সেকেন্দার শাহ জানালেন সুদূর ম্যাসিডন থেকে আগত গ্রিক সৈনিক দল প্রথম ভারতের শতদ্রু তীরে বাধা পেল। প্রায় অর্ধেক এশিয়াকে সেকেন্দার শাহ বিনা বাধায় অতিক্রম করে এসেছেন। সুন্দর ম্যাসিডন থেকে বিভিন্ন রাজ্য ও জনপদগুলিকে তিনি
তৃণের মতো পদদলিত করে এসেছেন। ঝড়ের মতো তিনি শত্রুসৈন্যকে ধূলায় উড়িয়ে দিয়েছেন, কোথাও সামান্যতম প্রতিরোধের মুখে তাকে পড়তে হয় নি। কিন্তু এই প্রথম তার শক্তিশালী গ্রিক বাহিনী পুরুর বীরত্ব ও সাহসের কাছে বাধা পেল। এই কথাই তিনি আলোচ্য উদ্ভিটিতে বোঝাতে চেয়েছেন।
৪.৪ 'আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।
লাউঃ। আলোচ্য উদ্ভিটি চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে স্বয়ং চন্দ্রগুপ্তের। সেকোর শাহ যখন সিন্ধুতটে সেলুকসের সঙ্গে ভারতবর্ষের বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনায় মগ্ন ছিলেন, সেই সময় অ্যান্টিগোনস এক ভারতীয় যুবককে গুপ্তচর সন্দেহে ধরে আনে। সেকেন্দার শাহ যুবকের পরিচয় ও অভিপ্রায় জানতে চাইলে প্রশ্নের উত্তরে যুবকটি তার সম্পূর্ণ পরিচয় দিয়ে এই উক্তিটি করে।
চন্দ্রগুপ্ত মগধের রাজকুমার। তাঁর পিতা মহাপরনন্দ। তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ধননন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাঁকে নির্বাসিত করেছেন। তারই প্রতিশোধ নিতে ম্যাসিডন সেনাপতি সেলুকসের কাছে তিনি মাসাধিক কাল ধরে বাহিনী চালনা, ব্যুহ রচনা প্রণালী ও সামরিক নিয়ম শিক্ষা করছিলেন। কারণ এই বিনা তিনি নন্দ রাজাকে পরাজিত করতে কাজে
লাগাবেন। এই উক্টিটিতে বক্তার সাহস ও সততার পরিচয় পাওয়া যায়।
৪.৫ যাও বীর। মুক্ত তুমি।'
উন্ন। আলোচ্য উদ্ভিটির বক্তা চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশের স্বয়ং সেকেন্দার শাহ। অ্যান্ডিগোনস গুপ্তচর সন্দেহে চন্দ্রগুপ্তকে তাঁর কাছে ধরে নিয়ে আসে। তারপর ঘটনাক্রমে চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করার প্রসঙ্গ আসায় চন্দ্রগুপ্ত তৎক্ষণাৎ তরবারি উন্মুক্ত করে বীরদর্পে বলেন সম্রাট তাকে বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। তখন মুগ্ধ সম্রাট এই করেন। চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব সম্রাট সেকেন্দারকে মুগ্ধ করে। তিনি বুঝতে পারেন যে চন্দ্রগুপ্ত কোনো সাধারণ মানুষ নন। তিনি
বীর, তিনি শাসক হবার যোগ্যতা রাখেন। সেকেন্দার শাহ নিজে বীর বলেই বীরের সম্মান তিনি দিতে জানেন। তাই অবস্থা তাকে বন্দি করে নিজের গৌরব লাঘব করতে তিনি চাননি। তাই চন্দ্রগুপ্তকে তিনি যুক্ত করে দেন এবং জানিয়ে সে তাকে তিনি পরীক্ষা করছিলেন মাত্র। পাশাপাশি একটি ভবিষ্যবাণীও করেন যে আত্মামী দিনে চন্দ্রগুপ্ত হারানো রাজ
এবং দিগ্বিজয়ী হবেন।
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৫.১। নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
যেরকম পরিবেশ দরকার তা দ্বিজেন্দ্রলাল এখানে রচনা করেছেন। শতদ্রু নদী, গ্রিকদের বাসভূমি ম্যাসিডন এসবই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রচনা করেছে। পাশাপাশি সেকেন্দার, সেলুকস, অ্যান্টিগোনস প্রমুখ চরিত্র গ্রিক ইতিহাস থেকে উঠে
এসেছে। অপরদিকে চাগুপ্ত, নন্দ, রাজা পুরু প্রমুখ চরিত্র ভারতীয় ইতিহাস সমর্থিত। সন্ধ্যাকাল, নদীবক্ষ, ঐতিহাসিক চরিত্রাবলি তাঁর নাটকের মাত্রা বেঁধে দিয়েছে। সর্বোপরি প্রকৃত ঘটনাকেই তিনি নাটকের আকারে সাজিয়েছেন। তাঁর নাটকের সংলাপ অত্যন্ত সুনিপুণ। তিনি এমনভাবে নাটকের পরিবেশ তৈরি করেছেন যেন মনে হয় তিনি স্বয়ং এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। নাট্যাংশটি যত এগিয়েছে নাটকীয় পরিবেশ ততই ঘন হয়েছে। প্রথমেই সবাই চমকিত হয় যখন সেলুকসকে চন্দ্রগুপ্তের গুরু বলে জানা যায়। এরপর নাটকীয়তা আসে যখন আন্টিগোনস তরবারি বের করে সেলুকসকে আক্রমণ করেন এবং চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রতিহত হন। সবশেষে সেকেন্দার শাহ চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত তাঁকে বধ না করে বন্দি করা যাবে না তা বুঝিয়ে দেন। ফলে সেকেন্দার শাহ মুগ্ধ হয়ে যান। এরপর যখন চন্দ্রগুপ্তকে সেকেন্দার শাহ ছেড়ে দেন, তখন সব ঘটনার নাটকীয় অবসান হয়। ঐতিহাসিক নাটক সাধারণত বীরত্ব, গৌরব ও বিয়োগান্তক পরিণতিতে সমাপ্ত হয়। এই নাট্যাংশেও নাট্যকার বীরত্ব ও শৌর্যের জয়গান দ্বারা নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
৫.২ নাট্যাংশে 'সেকেন্দার ও সেলুকস-এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।
উঃ। ডিজেন্দ্রলাল রায় রচিত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র সেকেন্দার। ইতিহাসে তিনি আলেকজান্দার নামে খ্যাত। তিনি দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে ভারতে আসেন এবং পুরুরাজের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়। পুরুর বীরত্বে মুগ্ধ সেকেন্দার পুরুকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন। সেকেন্দার তথা গ্রিক বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন সেলুকস। তিনি গ্রিক সম্রাটের সহযোদ্ধা রূপে ভারতে এসেছেন।
সেকেন্দার ভারত ছেড়ে চলে গেলে গ্রিক রাজ্যগুলির অধিপতি হয়েছিলেন সেলুকস। সেকেন্দার ভারতের রূপে মুগ্ধ। তিনি ভারতবর্ষে রূপকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যেন মনে হয় ভারতবর্ষ তাঁর নিজের দেশ ম্যাসিডন। কোথাও তিনি দেখেন যে তালবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কোথাও বা বটের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও বা মদমত্ত হাতি পর্বতের মতো জঙ্গম হয়ে ধীরে ধীরে যাচ্ছে। কোথাও বা বক্ররেখার মতো অল বিশাল সর্প পড়ে রয়েছে, কোথাও বা বিরাট শৃঙ্গযুক্ত হরিণ দেখা যাচ্ছে। সর্বাপেক্ষা বড়ো কথা এই সুবিশাল ভারতবর্ষকে শাসন করছে যে জাতি তাদের চক্ষে সূর্যের দীপ্তি, বুকে দুর্জয় সাহস, দেহে বজ্রসম শক্তি কিন্তু তারা শিশুর মতো সরল।
সেকেন্দার শাহের ভারতবর্ষ সম্পর্কে বর্ণনার মধ্যে ভারতের প্রতি তাঁর এক অদ্ভুত শ্রদ্ধা প্রস্ফুটিত হয়েছে।
৫.৩ 'চমকিত হলাম।'—কার কথায় বক্ত্রা চমকিত হয়েছিলেন? তাঁর চমকিত হবার কারণ কী?
উঃ। আলোচ্য উত্তিটির বস্তা সেকেন্দার শাহ। তিনি পুরুরাজের কথায় চমকিত হয়েছিলেন।
সেকেন্দার শাহ তাঁর বিশাল সেনাদল নিয়ে সুদুর ম্যাসিডন থেকে ভারতে এসেছেন বিন্দুমাত্র বাধা না পেয়ে। ভারতবর্ষে শত্রু
তীরে পুরুরাজ্য এবং পুরুরাজ ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। তিনি সেকেন্দার শাহর সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁর হাতে বন্দি হলেন। সেকেন্দার
শাহ বন্দি পুরুকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁর কাছ থেকে কীরকম ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করেন। পুরুরাজ উত্তর দেন রাজার প্রতি রাজার আচরণ তিনি প্রত্যাশা করেন। একথা শুনে সেকেন্দার শাহ চমকে যান। একজন বন্দি রাজার এরকম বীরত্বপূর্ণ আচরণ ও আত্মমর্যাদা
বোধ তাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। তিনি বুঝতে পাবেন যে ভারতীয়রা শৌর্যবীর্যে এক মহান জাতি।
৫.৪ 'সম্রাট মহানুভব।'-বক্তা কে? সম্রাটের ‘মহানুভবতা'-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায়?
উঃ। আলোচা উক্তিটির বক্তা সেকেন্দার শাহের সেনাপতি সেলুকস।
ম্যাসিডোনিয়ার রাজা সেকেন্দার শাহ বহু সৈন্যসামন্ত নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। তিনি এতদিন যেসব দেশ আক্রমণ করেন সেখানে যতটা না বাধা পান ভারতে শতধু তীরে পুরুরাজকে পরাজিত করতে তাঁকে বেগ পেতে হয়। বন্দি
পুরুরাজকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন যে কীরকম ব্যবহার পুরু প্রত্যাশা করেন। পুরুরাজ জানান রাজার প্রতি রাজার ন্যায় ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করেন। ম্যাসিডনরাজ সেকেন্দার শাহ বিস্মিত হন এবং তাঁকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে ম্যাসিডনরাজ প্রকৃত বীরের মর্যাদা দিতে জানতেন। তিনি প্রকৃত বীর কে তা বুঝতে পেরেই পুরুরাজের প্রতি সদয় ছিলেন। এখানে তিনি শুধু সম্রাট নন, তিনি একজন মহানুভব মানুষ।
৫.৫ ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গ কীভাবে নাট্যকলেবরে বিধৃত রয়েছে তা ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করে আলোচনা করো।
উঃ। আলোচ্য নাট্যাংশটি কাল্পনিক, কিন্তু ইতিহাস কে আশ্রয় করেই তা রচিত। তাই নাটকের বিভিন্ন অংশে ঐতিহাসিক
চরিত্র এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলির উল্লেখ দেখা যায়।
প্রথমত সেকেন্দার শাহ, সেলুকস, চন্দ্রগুপ্ত প্রতিটি চরিত্রই ঐতিহাসিক। সেকেন্দার শাহ ভারত জয় করেন এবং পুরুরাজের বীরত্বে খুশি হয়ে তাঁকে মুক্তি দেন। সেই ঘটনা ঐতিহাসিক এবং তার উল্লেখও নাট্যাংশে আছে। এরপর
সেকেন্দার শাহের ভারতবর্ষ ত্যাগ ও সেলুকসের হাতে শাসনভার প্রদানের যে ঐতিহাসিক ঘটনা তার উল্লেখ আমরা নাট্যাংশে দেখতে পাই। এরপর দেখা যায় চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার। সেখানে চন্দ্রগুপ্ত এবং সেকেন্দার শাহের
সাক্ষাৎকারের ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ নাট্যাংশে দেখা যায়। চন্দ্রগুপ্ত যে প্রকৃতপক্ষে ধননন্দের বৈমাত্রেয় ভাই এবং তাঁর দ্বারা বিতাড়িত এর উল্লেখও আমরা ইতিহাসে দেখি। চন্দ্রগুপ্ত পরবর্তীকালে মগধের রাজা হন। তিনি যে সেকেন্দার শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেই ঘটনাটিও ঐতিহাসিক সত্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। এসবই এই নাট্যাংশে উল্লেখিত। এইসব ঘটনার প্রসঙ্গ থাকার কারণে ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গে নাটকটিও ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে।
৫.৬ ‘গুপ্তচর।'—কাকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর
উঃ। আলোচ্য অংশে ‘গুপ্তচর’ বলতে মগধের বিতাড়িত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত কে বলা হয়েছে।
না, তিনি গুপ্তচর নন। চন্দ্রগুপ্ত প্রকৃতপক্ষে মগধের রাজা মহাপানন্দের পুত্র। তিনি বৈমাত্রেয় ভাই ধননন্দ কর্তৃক বিতাড়িত হন। গুপ্তচরেরা সাধারণত লুকিয়ে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে এবং কোনো রাষ্ট্রকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করে।
এখানে চন্দ্রগুপ্ত লুকিয়ে থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করেননি। সে সেলুকাসের কাছে বিগত একমাস ধরে যা শিখেছিল তা একটি তালপাতায় লিখে রাখছিল। সেকেন্দার বা তাঁর বাহিনীর কোনো ক্ষতি করার মানসিকতা চন্দ্রগুপ্তের ছিল না। এই রণকৌশল সে তার বৈমাত্র্যের ভাই নন্দের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তাই চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর বলা যায় না।
৫.৭ সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন – তার এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী?
উঃ। সেকেন্দার শাহ সেলুকসের প্রতি এভাবে দৃষ্টিপাত করলেন কারণ সেকেন্দার শাহ পূরেই ভারতবাসীকে বীর, শৌর্যবান
ও তেজস্বী বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এখন চন্দ্রগুপ্ত তাঁকে জানান যে ভারতবাসী প্রকৃত সত্যবাদী। তারা এখনও অবধি মিথ্যা বলাতে শোখেনি। অর্থাৎ ভারতবাসীর যেসব গুণরাশি সেকেন্দার শাহকে যুদ্ধ করেছিল তার মধ্যে সত্যবাদিতা অপর একটি
গুণ। এটি ছাড়াও যে গুণ ভারী ছিল তা হল সততা। সেকেদার শাস্ত্রের এই দৃষ্টিপাতের কারণ তিনি সেলুকরকে বোঝাতে চাহিলেন ভারতবাসী সম্বন্ধে তিনি যা বলেছেন সেগুলো সবই সত্য। ভারতবাসীর গুণই ভারতবাসীর সহায়।
৫.৮ চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে?
উঃ। আলোচ্যনাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্ত ও সেলুকাসের সম্পর্ক নিয়ে সামান্য আলোচনা রয়েছে। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকাসের কাছে নানা বিষয়ে শিক্ষা করছিলেন। যেমন বাহিনীচালনা, ব্যতত্রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ন ইত্যাদি। অর্থাৎ গ্রিক সেনাপতিও চন্দ্রগুপ্তের পূর্বপরিচিতই শুধু নন তাদের মধ্যে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক বর্তমান ছিল।
তাই ঘটনা প্রসঙ্গে আল্টিগোলন যখন সেলুকনকে বিশ্বাসঘাতক বলে আকুল করেন তখন চন্দ্রগুপ্ত তা থেকে সেলুকরকে রক্ষা করেন। এ থেকে প্রমাণ হয় যে সসের প্রতি গুপ্তের এক অসীম শ্রদ্ধা ছিল।
৫.৯। তা এই পরে লিখে নিচ্ছিলাম।-করে উদ্ভি? সে কী লিখে নিচ্ছিল? তাঁর এই লিখে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী?
উঃ। আলোচ্য উদ্ভিক বার নির্বাসিত রাজপুত্র সজগুপ্ত।
চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকার্সের কাছে যা নিয়েছিল তা সে নিয়ে নিচ্ছিল। নির্বাচিত। কিন্তু একদিন তিনি সদর উপার করে সিংহাসন লাভ করবেন, এই আশা তাঁর আছে। এজন্য মাসাধিক কাল
পরে তিনি গ্রিক সেনাপতি সেলুসের কাছে বাহিনী চালনা ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম শিখছিলেন। তিনি যখন শুনবেন পিক দৈন্য এই সমান ত্যাগ করে চলে যাবে তাই তিনি তালপাতার সেগুলি লিখে নিচ্ছিলেন।
৫-১০ আল্টিজোনান নাটকের এই দৃশ্যে সেলুকানকে বিশ্বাসবাকে বলেছে। তোমার কি সেলুকসকে সত্যিই বিদায় বসে মনে না করো।
আলাপ
অন্য টা দেখুন দাঁড়াও
অন্যটা দেখুন আদাব
পথের পাঁচালী বইয়ের অনুশীলন প্রশ্ন উত্তর
ভাষাচর্চা (১)