চন্দ্রনাথ গল্পে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের ভূমিকা আলোচনা কর নবম শ্রেণী বাংলা
প্রশ্ন-'চন্দ্রনাথ' গল্পে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর-তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'চন্দ্রনাথ' গল্পের একজন পার্শ্বচরিত্র হালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয়। গল্পকথক নরেশের কথার মাধ্যমেই আমরা তার পরিচয় পেয়ে থাকি। মাস্টারমশাই ছিলেন রোগা, লম্বা চেহারার, শান্তস্বভাবের এবং অত্যন্ত ছাত্রদরদি।কথক যেন চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পান বোর্ডিং-এর ফটকের সামনেই চেয়ার-বেঞ্চ পেতে বসে আছেন শাস্ত মানুষ মাস্টারমশাই। হুঁকোটি একইভাবে তাঁর হাতে ধরাই আছে। ছাত্রদের তিনি অন্তর থেকে স্নেহ করতেন বলেই ছাত্র চন্দ্রনাথকে নিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন, উদবিগ্ন।
চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিলে, সেই ও সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তা প্রধান শিক্ষক মহাশয় সেই পরিস্থিতিকে শান্ত করার চেষ্টায় চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথকে তার ভাইয়ের পত্রাঘাতের কথা জানান। এরপর চন্দ্রনাথের সহপাঠী নরেশকে বলেন চন্দ্রনাথের অভিমত আর ত
একবার জেনে আসতে। যদিও তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায় চন্দ্রনাথের আচরণে তিনি ব্যাথিত হয়েছেন। এরপর নরেশের মুখ থেকে যখন শোনেন উক্ত চিঠিকে (পুরস্কার প্রত্যাখ্যানকে) কেন্দ্র করেই দাদার সঙ্গেও চন্দ্রনাথ সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন- তাতে তাঁর পরিতাপের অন্ত থাকে না। তাই তার খেদোক্তি— 'চন্দ্রনাথের দাদাকে না জানালেই হতো।”
হীরুর আনন্দ-উৎসবে উপস্থিত নরেশকে সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে মাস্টারমশাই বলেন – সাহিত্যচর্চাটা পড়ার সময় একটু কম করো বাবা। তবে ছেড়ো না, ও একটা বড়ো জিনিস।' অর্থাৎ নরেশের সাহিত্যচর্চাতেও তিনি উৎসাহ দিয়েছেন।
- পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রধান শিক্ষক মহাশয় অসহায়তা অনুভব করেছেন। এভাবেই আলোচ্য গল্পে তাঁর স্নেহশীলতা, শান্ত-দরদী ও বেদনাহত মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটেছে।
প্রশ্ন- তিনি তখনও সেই তেমনি একা চিন্তা কুল নেত্রী বসিয়া আছেন। কার কথা বলা হয়েছে? তিনি চিন্তায় আকুল কেন?
উত্তর-প্রশ্নের এই অংশটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'চন্দ্রনাথ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য
অংশে গল্পকথক নরেশের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের কথা বলা হয়েছে।
| চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বিদ্যালয়ে চিঠি পাঠালে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে স্কুলের পরিবেশ। পরিস্থিতিকে শাস্ত করার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয় চন্দ্রনাথের সহপাঠী নরেশকে চন্দ্রনাথের মতামত জানার
অভিপ্রায়ে চন্দ্রনাথের কাছে যেতে অনুরোধ করেন। মাস্টারমশাইয়ের কথামত নরেশ চন্দ্রনাথের দারিদ্র্যলাঞ্ছিত ঘরে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয় মেধাবী চন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সম্ভাব্য ফলাফল তৈরি করে ফেলেছে, যা কথককে আশ্চর্য করে দিয়েছে। আবার দাদা নিশানাথবাবুর সঙ্গে চন্দ্রনাথের বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার সাক্ষ্যও বহন করছে নরেশ।
চন্দ্রনাথের নির্বিরোধী দাদা নিশানাথবাবু চন্দ্রনাথকে বলেন বিদ্যালয়কে লেখা চিঠিটি ফেরৎ নিয়ে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু আপোসহীন চন্দ্রনাথ দাদার নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে। এর ফলে ক্ষুদ্ধ, বেদনাহত নিশানাথবাবু ভাইকে সংসার থেকে পৃথক করে দেন। এই ঘটনাই প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের কাছে বলার জন্য কথক যখন বোর্ডিং-এ ফিরে আসে, তখনও সে দেখে যে মাস্টারমশাই আগের মতনই চিন্তাকুল নেত্রে বসে আছেন।আসলে মাস্টারমশাই ছিলেন ছাত্রদরদি, স্নেহপ্রবণ। তিনি ভেবেছিলেন
চন্দ্রনাথ হয়তো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। যদিও চন্দ্রনাথ তেমন নমনীয় চরিত্রের নয়। চন্দ্রনাথের এই সিদ্ধান্তে সমস্ত স্কুলটিই এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ছিল যা প্রধান শিক্ষকের কাছে চিন্তার ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। চন্দ্রনাথের বিদ্রোহ মাস্টারমশাইকে
গভীর টানাপোড়েন ও উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছিল। এ কারণেই মাস্টারমশাই চিন্তাকুল হয়েছিলেন।