রাধারাণী' গল্পানুসারে রুক্মিণীকুমার রায়ের দ্বারা রাধারাণীরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল তা ‘ লেখো। - Online story

Monday 19 August 2024

রাধারাণী' গল্পানুসারে রুক্মিণীকুমার রায়ের দ্বারা রাধারাণীরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল তা ‘ লেখো।

 

রাধারাণী' গল্পানুসারে রুক্মিণীকুমার রায়ের দ্বারা রাধারাণীরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল, তা ‘ লেখো।

অথবা, 'তাঁহার নাম রুক্মিণীকুমার রায়।—রুক্মিণীকুমার রায়ের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী' গল্পের স্বল্প পরিসরে রুক্মিণীকুমার রায় সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারি না। তবু রাধারাণীর সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ ও তাঁর আচরণ থেকে উক্ত
চরিত্র সম্পর্কে কিছু তথ্য আমরা পেয়ে থাকি। যেমন বন্ধুপরায়ণ—
প্রবল বৃষ্টির কারণে রথের মেলা ভেঙে যাওয়ার ফলে রাধারাণীর কোনো মালা বিক্রি হয় না। রাধারাণী মায়ের পথ্যের কথা ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। তখন পরম বন্ধুর মতো রাধারাণীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
দিয়েছেন রুক্মিণীকুমার। তিনি রাধারাণীর সকল মালাই কিনে নেন, যাতে রাধারাণী মায়ের পথ্য কিনতে পারে।

পরোপকারী-অন্ধকার পিচ্ছিল পথে বালিকা রাধারাণী কোনোপ্রকার অসুবিধায় না-পড়ে, সেই চিন্তা করে রাধারাণীকে হাত ধরে তাদের
কুটিরে পৌঁছে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাধারাণীর সঙ্গে কথোপকথনে তিনি রাধারাণীদের দুরবস্থার কথা জেনেছিলেন, তাই একটি কাপড়ও দোকান থেকে কিনে রাধারাণীদের কুটিরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

প্রচারবিমুখ
রুক্মিণীকুমার মালার মূল্যরূপে অধিক মূল্য দিয়েছেন, আড়ালে থেকে কাপড় পাঠিয়েছেন। রাধারাণীদের কুটিরে একটি ‘নোট’ রেখে
এসেছেন—এসবই তিনি নীরবে করেছেন। নিজেকে অপ্রকাশ্য রেখেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন—এতে তাঁর প্রচারবিমুখতার পরিচয় ব্যক্ত হয়েছে।

বিচক্ষণতা-
রুক্মিণীকুমার তাঁর নাম লিখে দিয়েছেন নোটে, যাতে কেউ রাধারাণীদের ‘চোর' অপবাদ দিতে না-পারে।এতে তাঁর 
বিচক্ষণতার পরিচয় ফুটে উঠেছে।

দয়াশীলতা--
সর্বোপরি বলা যায় যেভাবে তিনি একটি অপরিচিত পরিবারকে সাহায্য করেছেন তাতে তার চরিত্রের
মানবতা ও দয়াশীলতার পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।
'রাধারাণী' গল্পে রুক্মিণীকুমারের পূর্বোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলিই উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।




প্রশ্ন "তাহার দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে- তাৎপর্য লেখো।
উত্তর-[রাধারাণীর পরিবারের বিপর্যয়]--প্রশ্নের এই অংশটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'রাধারাণী' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য গল্পে তৎকালীন সমাজজীবনের যেমন ছাপ পড়েছে, তেমনই এক সর্বহারা মা-মেয়ের সংগ্রামী সৎ জীবনের পরিচয়ও পাওয়া যায়। রাধারাণীর পিতার মৃত্যুর পরে এক জ্ঞাতির সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমায় হাইকোর্টে পরাজিত হয় রাধারাণীর মা। ফলে তাদের প্রায় দশ লক্ষ টাকার বিষয়সম্পত্তি ডিক্রিদার গ্রাস করে। রাধারাণীরা নিজের বাড়ি ছেড়ে একটি কুটিরে আশ্রয় নেয়। বিধবা কায়িক শ্রমের দ্বারা কোনোক্রমে সংসার চালাতে থাকেন। এরই মধ্যে বিধবা পীড়িত হন, কায়িক শ্রম করতে পারেন না, ঘরে আহারের সংস্থান নেই, পথ্য কেনার অর্থ পর্যন্ত নেই। রাধারাণী মায়ের পথ্য কেনার জন্য অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বনফুলের মালা গেঁথে মাহেশের রথের মেলায় যায়। প্রবল বর্ষণে মেলা পণ্ড হলে তার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার পিচ্ছিল পথ দিয়ে কুটিরে ফেরার পথে নাটকীয়ভাবে এক দয়ালু ব্যক্তির সঙ্গে রাধারাণীর সাক্ষাৎ হয়। তিনি রাধারাণীকে কুটিরে পৌঁছে দেন।
মালাক্রয়-
রাধারাণীর সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে সেই ব্যক্তি রাধারাণীদের দুর্দশার খবর জেনে নেন এবং দয়াপরবশ হয়ে কৌশলে রাধারাণীর সব মালা কিনে নেন। শুধু তাই নয় মালার মূল্যের অধিকমূল্য প্রদান
করেন। এমনকি একটি শান্তিপুরে শাড়িও প্রেরণ করেন। কুটিরে প্রবেশ করে রাধারাণী প্রদীপের আলোয় দেখে উক্ত ব্যক্তি 'টাকা'-ই দিয়েছেন। ততক্ষণে সেই ব্যক্তি সেখান থেকে চলেও গেছেন। ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে রাধারাণী একটি 'নোট' পায়। মা-মেয়ে বুঝতে পারে সেই ব্যক্তি
অর্থাৎ রুক্মিণীকুমার রায় নোটে নিজ নাম অঙ্কিত করে গেছেন। পরের দিন মা-মেয়েতে মিলে শ্রীরামপুর ও নিকটবর্তী স্থানে অনেক খুঁজেও রুক্মিণীকুমারের কোনো খোঁজ পেল না। তারা দরিদ্র ও অসহায় বলেই রুক্মিণীকুমারের মালার মূল্যরূপে 'দান' গ্রহণ করেছে কিন্তু অতিরিক্ত অর্থের লোভ ছিল না বলেই দরিদ্র, কিন্তু লোভী নয় 'নোট'-টি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে। আবার
রুক্মিণীকুমারকে না-পেয়ে 'নোট'-টি তারা খরচ না-করে তুলে রেখেছে। এই কারণেই গল্পের শেষাংশে লেখক বলেছেন- "তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।