সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাত অধ্যায় অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর ভেবে দেখো খুঁজে দেখো - Online story

Friday 23 August 2024

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাত অধ্যায় অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর ভেবে দেখো খুঁজে দেখো

 



              সপ্তম শ্রেণীর
                 ইতিহাস
              সাত অধ্যায়

 জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সুলতানি ও মুঘল যুগ
ভেবে দেখো খুঁজে দেখো
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর


১. শূন্যস্থান পূরণ করো :
(ক) ---(টালি ও ইট/সিমেন্ট ও বালি/শ্বেত পাথর) ব্যবহার করে বাংলায় সুলতানি মুঘল আমলে সাধারণ লোকের বাড়ি বানানো হত।
উঃ। টালি ও ইট।
(খ) কবীরের দুই পঙ্ক্তির কবিতাগুলিকে বলে----
(ভজন / দোহা / কথকতা)।
উঃ। দোহা।


(গ) সুফিরা গুরু মনে করত----
(পির/মুরিদ/ বে-শরা)।
উঃ। পির।

(ঘ)----(কলকাতা/নবদ্বীপ/মুর্শিদাবাদ) ছিল চৈতন্য আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র।
উঃ। নবদ্বীপ।
(ঙ)--- (নানক/কবীর/মীরাবাঈ) ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ বা গিরিধারীর সাধিকা।
উঃ মীরাবাঈ।

(চ) দীন-ই-ইলাহির বৈশিষ্ট্য ছিল মুঘল সম্রাট ও তাঁর অভিজাতদের মধ্যে----(গুরু-শিষ্যের/মালিক-শ্রমিকের/রাজা- প্রজার) সম্পর্ক।
উঃ। রাজা-প্রজার।

(ছ) শ্বেতপাথরে রত্ন বসিয়ে কারুকার্য করাকে বলে---(চাহার বাগ/পিয়েত্রা দুরা/টেরাকোটা)।
উঃ। পিয়েত্রা দুরা।
(জ) মহাভারতের ফারসি অনুবাদের নাম---(হমজানামা/ তুতিনামা/রজমনামা)।
উঃ। রজমনামা

(ঝ) (দসবস্তু/মির সঈদ আলি/আবদুস সামাদ)----পরিচিত ছিলেন শিরিন কলম' নামে।
উঃ। আবদুস সামাদ।

(ঞ) জৌনপুরী রাগ তৈরি করেন---(বৈজু বাওরা / হোসেন শাহ শরকি /ইব্রাহিম শাহ শরকি)।
.উঃ। ইব্রাহিম শাহ শরকি।


(ট) শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের লেখকের নাম---(কাশীরাম দাস/কৃত্তিবাস ওঝা/মালাধর বসু)।
উঃ। মালাধর বসু।

(ঠ) 'পারসিকচক্র' কাজে লাগানো হত---(জল তোলার জন্য/কামানের গোলা ছোড়ার জন্য/বাগান বানানোর জন্য)

 উঃ। জল তোলার জন্য।

২। নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে তার নীচের কোন্ ব্যাখ্যাটি তোমার সবচেয়ে মানানসই বলে মনে হয়?

(ক) বিবৃতি : নদীর মোহনায় শিল্পগুলি তৈরি হতো।
ব্যাখ্যা-১ : নদীর মোহনায় শিল্প তৈরি করলে কর লাগতো না।
ব্যাখ্যা-২: সেকালে সব মানুষই নদীর ধারে থাকতো।
ব্যাখ্যা-৩ : কাচামাল আমদানি ও তৈরি মাল রপ্তানির সুবিধা হত।
উঃ। ব্যাখ্যা-৩ : কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি মাল রপ্তানির সুবিধা হত।


(খ) বিবৃতি ঃ চৈতন্য বাংলা ভাষাকেই ভক্তি প্রচারের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।
ব্যাখ্যা-১ : তিনি শুধু বাংলা ভাষাই জানতেন।
ব্যাখ্যা-২: সেকালের বাংলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।
ব্যাখ্যা-৩ : ভক্তি বিষয়ক সব বই বাংলায় লেখা হয়েছিল।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ : সেকালের বাংলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।



(গ) বিবৃতি : চিশতি সুফিরা রাজনীতিতে যোগ দিতেন না।
ব্যাখ্যা-১ : তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়।
ব্যাখ্যা-২: তাঁরা রাজনীতি বুঝতেন না।
ব্যাখ্যা-৩ : তাঁরা মানবদরদী ছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-১ : তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়।


(ঘ) বিবৃতি : আকবর দিন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেন।
ব্যাখ্যা-১ : তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী ছিলেন।
ব্যাখ্যা-২: তিনি অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা-৩ : তিনি যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ : তিনি অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।


(ঙ) বিবৃতি : মুঘল সম্রাটরা দুর্গ বানাতে আগ্রহী ছিলেন।

ব্যাখ্যা-১ : দুর্গ বানানোর খরচ ছিল কম।
ব্যাখ্যা-২: দুর্গ বানানো ছিল প্রাসাদ বানানোর চেয়ে সহজ।
ব্যাখ্যা-৩ : দুর্গ বানানোয় সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হত।
উঃ। ব্যাখ্যা-৩ : দুর্গ বানানোয় সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হত।


(চ) বিবৃতি ঃ জাহাঙ্গিরের আমলে ইউরোপীয় ছবির প্রভাব মুঘল চিত্রশিল্পে পড়েছিল।
ব্যাখ্যা-১ : এই সময়ে ইউরোপীয় ছবি মুঘল দরবারে আসতে শুরু করেছিল।
ব্যাখ্যা-২: মুঘল শিল্পীরা সবাই ছিল ইউরোপীয়।
ব্যাখ্যা-৩ : ভারতীয় শিল্পীরা এই সময় ইউরোপ থেকে ছবি আঁকা শিখে এসেছিলেন।
উঃ। ব্যাখ্যা-১ ঃ এই সময়ে ইউরোপীয় ছবি মুঘল দরবারে আসতে শুরু করেছিল।


(ছ) বিবৃতি : মধ্যযুগের মণিপুরি নৃত্যে রাধা-কৃয় ছিলেন প্রধান চরিত্র।
ব্যাখ্যা-১ : ভারতে নৃত্যের দেবদেবী হলেন কৃষ্ণ ও রাধা।
ব্যাখ্যা-২: এই সময় বৈষ্ণবধর্ম মণিপুরে বিস্তার লাভ করেছিল।
ব্যাখ্যা-৩ : চৈতন্যদেব ছিলেন মণিপুরের লোক।
উঃ। ব্যাখ্যা-২ : এই সময় বৈষ্ণবধর্ম মণিপুরে বিস্তার লাভ করেছিল।


(জ) বিবৃতি ঃ ভারতে প্রাচীনকালে তালপাতার উপরে লেখা হত।
ব্যাখ্যা-১: সে আমলে কাগজের ব্যবহার জানা ছিল না।
ব্যাখ্যা-২: সে আমলে ভারতে কাগজের দাম খুব বেশি ছিল।
ব্যাখ্যা-৩ : সে আমলে ভারতীয়রা কাগজের উপরে লেখার কালি আবিষ্কার করতে পারেনি।
উঃ। ব্যাখ্যা-১ঃ সে আমলে কাগজের ব্যবহার জানা ছিল না।


৩। সংক্ষেপে (৩০–৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন্ কোন্ ফল, সবজি ও শস্যের চাষ সবচেয়ে বেশি হত?
উঃ। সুলতানি ও মুঘল যুগে গাঙ্গেয় সমভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে আমের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। আঙুর, খেজুর, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারকেল প্রভৃতি ফলের চাষ হত। শস্যের মধ্যে ধান, গম, যব, ডাল, সরষে প্রভৃতির চাষ হত ।
সবজির মধ্যে লংকা, আদা, নানা ধরনের মশলা, নানা ধরনের শাক, পটল, বেগুন প্রভৃতির ফলন হত।


(খ) মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা কারা ছিলেন?

উঃ। মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা ছিলেন নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবির, নানক, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই প্রায় খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পশ্চাদশ শতকের মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া অলভার ও নায়নার সাধকেরা ছিলেন দক্ষিণের সাধক।


(গ) সিলসিলা কাকে বলে? চিশতি সুফিদের জীবনযাপন কেমন ছিল?
উঃ। সিলসিলা মানে হচ্ছে গোষ্ঠী।
চিশতি সুফিদের জীবন ছিল খোলামেলা। তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকতেন ‘খানকা বা আশ্রমে। তাঁরা ধর্ম, অর্থ,ক্ষমতার মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করতেন না। চিশতি সুফিরা রাজনীতি ও রাজদরবার
থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে রাজ্য পরিচালনার কাজে জড়িয়ে
পড়লে কোনোভাবেই ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়। শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন এই গোষ্ঠী বা সিলসিলার অন্যতম সাধক।

(ঘ) দীন-ই-ইলাহি-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেমন ছিল?
উঃ। যিনি দীন-ই-ইলাহি গ্রহণ করতেন তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর জীবন (জান), সম্পত্তি (মাস), ধর্ম (দীন) ও সম্মান (নামুস) বিসর্জন (কুরবান) দেওয়ার শপথ নিতেন।
শিষ্য (মুরিদ) যেমন তার সুফি গুরুর (পীর) পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে, তাঁকেও তেমনই বাদশাহের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হত। এরপর অনুষ্ঠান শেষ হলে বাদশাহ তাঁকে দিতেন একটি নতুন পাগড়ি, সূর্যের একটি পদক ও পাগড়ির
সামনে লাগানোর জন্য বাদশাহের নিজের ছোট্ট একটা ছবি।


(ঙ) স্থাপত্য হিসাবে আলাই দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য কী?
উঃ। আলাই দরওয়াজা তৈরি হয় সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আমলে। এটি ছিল ইন্দো-
ইসলামীয় স্থাপত্যশিল্পের একটি অসাধারণ নমুনা। লাল বেলেপাথরের তৈরি এই দরওয়াজা যেন
সুলতান আলাউদ্দিনের ক্ষমতার প্রতিফলন ছিল। এর গায়ে আল্লাহর কথা নয়, খোদাই হয়েছিল
সুলতানের প্রশংসা। এইরকম কাজের নমুনা সে যুগে বিরল ছিল। এটি কুতুব চত্বরে অবস্থিত ছিল।

(চ) ক্যালিগ্রাফি ও মিনিয়েচার বলতে কী বোঝায়?
উঃ। মুঘল যুগে সুন্দর হাতের লেখা শিল্পের সেকালে খুব চর্চা হত। একে ইংরেজিতে বলে Calligraphy
(ক্যালিগ্রাফি)। বাংলায় একে হস্তলিপি বিদ্যা বা হস্তলিপি শিল্প বলা যেতে পারে। ছাপাখানার রেওয়াজ তখন ছিল না। তাই এই ধরনের হাতে লেখা বইগুলিই ছিল শিল্পের নমুনা।
সম্রাট আকবরের সময়ে বই-এর অলংকরণ শিল্পের নানা নমুনা পাওয়া যায়। তুতিনামা, রজমনামা (মহাভারতের ফারসি অনুবাদ) প্রভৃতি বই-এর প্রতিটি পৃষ্ঠা সাজানো হতো সূক্ষ্ম হস্তলিপি ও ছবি দিয়ে। আকার ও আয়তনে ছোটো এই
ছবিগুলিকে বলা হয় Miniature (মিনিয়েচার)। মিনিয়েচার কথাটি ইংরেজি। তবে সেটাই বেশি প্রচলিত। বাংলায় তাকে অনুচিত্র বলা যেতে পারে। বইতে সোনার ও অন্যান্য রঙের ব্যবহার হত, লেখার চারপাশে নানারকম অলংকরণ করা হত।

(জ) শিবায়ন কী? এর থেকে বাংলার কৃষকের জীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায় ?
উঃ। সুলতানি আমলে শিবকে নিয়েও সাহিত্য লেখা হয়েছে। সেই লেখাগুলিকে ‘শিবায়ন' বলে। পুরাণে শিব বিষয়ে যে কাহিনি তার সঙ্গে শিব-দুর্গার ঘর-সংসারের কথা জুড়ে শিবায়ন কাব্যগুলি লেখা হয়েছে। শিবায়নে গরিব শিব-দুর্গা ও তাদের জীবনের কথা লেখা হয়েছে। শিব সেখানে চাষবাস করে রোজগারের চেষ্টা করে। এই লেখাগুলিতে সেই
সময়ের বাংলাদেশের গরিব কৃষক পরিবার যেন শিব-দুর্গার পরিবারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।


(ঝ) কাগজ কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল। মধ্যযুগের ভারতে কাগজের ব্যবহার কেমন ছিল তা লেখো।
উঃ। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতে কাগজ তৈরি করার প্রযুক্তি চিন থেকে প্রথম নিয়ে আসে মধ্য এশিয়ার মোঙ্গলরা। অল্প কিছুকালের মধ্যেই ভারতে কাগজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে লেখাপড়ার কাজ সহজ হয়। চতুর্দশ শতকে কাগজ এতটাই সস্তা হয়েছিল যে ময়রা মিষ্টি দেবার জন্য কাগজ ব্যবহার করতো।

৪। বিশদে (১০০ – ১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

(ক) মধ্যযুগের ভারতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা লেখো।
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করতেন। কৃষি-পণ্যকে ভিত্তি করে গ্রামে কারিগরী শিল্প চলত। সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। গরিব কৃষক পরিবারে নারী-পুরুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার ও খামারে পরিশ্রম করতে হত। সাধারণ গরিব জনগণের বসতির জন্য সামান্য কিছু উপকরণ লাগত। একটি পাতকুয়া, ডোবা বা পুকুর থাকলেই বসতি তৈরি করে নিতে পারত গ্রামের মানুষ। ঘর তোলার জন্য কয়েকটি গাছের গুঁড়ি, চাল ছাইবার জন্যে কিছু খড়।এতেই তারা মাথা গোঁজবার ঠাঁই করে নিত।
সরকারি খাজনা ও নানা পাওনা মিটিয়ে ফসলের কিছু অংশ কৃষকের হাতে থাকতো। সেটাই ছিল তার রোজকার ব্যবহারের সম্বল। বছরের কয়েকটা ঋতুতে কৃষক পরিবারগুলি দিনরাত পরিশ্রম করত। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সময়ের একজন ওলন্দাজ বণিক লিখেছেন যে, গরিবরা মাংসের স্বাদ প্রায় জানতোই না। তাদের রোজকার খাবার ছিল একঘেয়ে খিচুড়ি। তাই দিয়েই সারাদিনে একবার মাত্র তারা শুকনো পেট ভরাতো। পরবার পোশাকও যথেষ্ট ছিল না। একজোড়া খাটিয়া ও রান্নার দু-একখানা বাসনই ছিল তাদের ঘর-গৃহস্থালি। বিছানার চাদর ছিল একটা বা দুটো। তাই তারা পেতে শুতো, দরকারে গায়ে দিত। গরমের দিনে তা যথেষ্ট হলেও দারুণ শীতে তাদের ভীষণই কষ্ট হতো। পালা-পার্বণে আনন্দ-উৎসব ছিল একঘেয়ে জীবনের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম। সে যুগের খেলাধূলার মধ্যে কুস্তি ছিল একটি জনপ্রিয় খেলা। লোকগান, নাটক
জাদুকরের খেলা, সং প্রভৃতি ছিল সাধারণ মানুষের আনন্দের উপকরণ।


(খ) কবীরের ভক্তি ভাবনায় কীভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক হয়ে গিয়েছিল বলে তোমার
মনে হয় ?


উঃ। রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে সম্ভবত একজন ছিলেন কবীর। বারাণসীতে মুসলিম জোলাহা
(তাঁতি) পরিবারে পালিত কবীর ছিলেন চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের একজন বিখ্যাত ভক্তিসাধক।
ইসলামের একেশ্বরবাদের সাথে বৈস্নব, নাথযোগী এবং তান্ত্রিক বিশ্বাসও এসে মিশেছিল কবীরের
ভক্তিচিন্তায়। তাঁর কাছে সব ধর্মই ছিল এক, সব ভগবানই সমান। তাঁর মতে রাম, হরি, গোবিন্দ,আল্লাহ্, সাঁই, সাহিব ইত্যাদি ছিল এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন নাম। তাঁর এই দর্শন তখনকার সমাজে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যের বিভেদ ও বিরোধ মেটাতে খুবই সাহায্য করেছিল। কবীর বিশ্বাস করতেন যে মানুষ তার ভক্তি দিয়ে নিজের মনেই ঈশ্বর কে খুঁজে পাবে। তার জন্য মন্দির বা মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই মূর্তি পুজো বা গঙ্গাস্নান বা নামাজ পড়া তাঁর কাছে ছিল অর্থহীন। তখনকার সামাজিক জীবনে কবীরের ভাবনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁর রচিত দোহা এবং গান শুনলে বোঝা যাবে। তিনি ধর্মের লোক দেখানো আচারের বিরোধী ছিলেন।

(গ) বাংলায় বৈয়ব আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছিল বিশ্লেষণ করো

উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বাংলায় শ্রীচৈতন্য যে ভক্তি আন্দোলন প্রচার করেন তার ফলে বাংলায় বৈয়ব ভক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। শ্রীচৈতন্য বাংলায় পূর্বের বৈষ্ণব ধর্মের ঐতিহ্য ও ভক্তিবাদের ভাবনাকে একাকার করে দেন। জাত ধর্ম-বর্ণ এই ভেদাভেদের বিরুদ্ধে বৈয়ব ভক্তির একটি আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিক থেকে বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব কমতে থাকে। চৈতন্যদেব ও তাঁর অনুগামীরা জাতিভেদ না মানলেও সমাজে ভেদাভেদ থেকেই গিয়েছিল।
সবরকম ভেদাভেদ পুরো দূর করতে না-পারলেও, সেগুলোকে তুচ্ছ করা যায়—এ কথা চৈতন্যদেব জোর দিয়েই প্রচার করেন। সেকালের তুলনায় চিন্তা করলে এটাই ছিল একটা বড়ো সাফল্য। তবে চৈতন্য ও তাঁর ভক্তি আন্দোলনের সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়েছিল বাংলার সংস্কৃতিতে। সাধারণ মানুষের বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়ে সেই ভাষাতেই ভক্তি
গার করেন চৈতন্যদেব। শ্রীচৈতন্যের জীবন ও বৈষ্ণব ভক্তিবাদ নিয়ে অনেক সাহিত্য এই সময়ে রচিত হয়। শ্রীচৈতন্যের জীবন এবং কাজ নিয়ে অনেক বৈয়ব কবি কাব্য রচনা করেন। এগুলিকে চৈতন্য জীবনী কাব্য বলা হয়। তার ফলে বাংলা ভাষার বিকাশের পথ তৈরি হয়।


(ঘ) বাদশাহ আকবরের দীন-ই-ইলাহি সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
উঃ। ১৫৮০-এর দশকের মাঝামাঝি আকবর দীন-ই-ইলাহি নামে এক নতুন মতাদর্শ চালু করেন।
একসময় ভাবা হত দীন-ই-ইলাহি বোধহয় বাদশাহ আকবরের প্রচলিত এক নতুন ধর্ম। কিন্তু আকবর কখনও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেননি। ইসলাম ধর্মের নানা ব্যাখ্যার মধ্যে থেকে তিনি সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য মতটি মেনে নিতেন। নানা ধর্মের গুরুদের সাথে আলোচনা করে তিনি বিভিন্ন ধর্ম থেকে নিজের পছন্দ মতো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেছে নিতেন। সেই
বৈশিষ্ট্যগুলিকে এক করে আকবর দীন-ই-ইলাহি তৈরি করেন। তিনি এর প্রচলন করেছিলেন নিজের সভাসদদের মধ্যে। কিন্তু এখন এই ধারণা অনেকটা পালটে গেছে। এখন মনে করা হয় যে, দীন-ই-ইলাহি আসলে ছিল আকবরের প্রতি চূড়ান্ত অনুগত কয়েকজন অভিজাতদের মধ্যে প্রচারিত এক আদর্শ। আকবর নিজে তাঁদের বেছে নিতেন। বেশ কিছু অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে তাঁরা বাদশাহের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থাকার শপথ নিতেন। এইভাবে আকবর নিজের চারপাশে গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বস্ত অনুগামীদের একটি দল। এক-একজন সদস্যের ছিল পৃথক পৃথক ধর্ম। দীন-ই-ইলাহি কোনো আলাদা ধর্ম ছিল না।


(ঙ) মুঘল সম্রাটদের আমলে বাগান তৈরি ও দুর্গ নির্মাণ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘলরা ভারতে নতুন এক বাগান তৈরির কৌশল নিয়ে আসেন। পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে মুঘলরা এই কৌশল নিয়ে আসেন। সম্রাট বাবর, জাহাঙ্গির ও শাহাজাহানের ছিল বাগানের খুব শখ। চারভাগে ভাগ করা একরকম সাজানো বাগান মুঘল আমলে বানানো হত। তাকে ‘চাহার বাগ' বলে। জাহাঙ্গিরের সময়ে বাগান বানানোর উদ্যোগ আবার শুরু হয়। আগ্রায়, কাশ্মীরে বানানো বাগানগুলির কথা সম্রাট জাহাঙ্গির লিখেছেন তাঁর আত্মজীবনী জাহাঙ্গিরনামায়।
মুঘল স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ শুরু হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকে। দুর্গ- শহর, প্রাসাদ বানানোয় আকবর মনযোগী ছিলেন। এতে একদিকে যেমন সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হয়েছিল, আবার একই সাথে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশও ঘটেছিল। আগ্রা দুর্গ এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ। আজমের গড়, লাহোরগড়, কাশ্মীরের ডাল হ্রদের গড়, এলাহাবাদগড়গুলি আকবরের সময়ে তৈরি করা হয়। শাহজাহান তৈরি করেছিলেন লালকেল্লা।



(চ) মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যরীতির পর্যায়গুলির মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উঃ। বাংলার স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসকে তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।
প্রথম পর্যায় (১২০১–১৩৩৯), দ্বিতীয় পর্যায় (ইলিয়াস শাহি শাসন : (১৩৩৯—আদিনা মসজিদ
১৪৪২) এবং তৃতীয় পর্যায় (১৪৪২–১৫৩৯) ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্প। প্রথম পর্যায়ে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ত্রিবেণীতে জাফর খানের সমাধির ভগ্নাবশেষ এবং বসিরহাটে ছড়িয়ে থাকা কিছু স্তূপ ছাড়া এসময়কার কোনও স্থাপত্যই আজ আর অবশিষ্ট নেই।

দ্বিতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হলো পান্ডুয়ায় সিকন্দর শাহের বানানো আদিনা মসজিদ। এ ছাড়া হুগলি জেলায় ছোটো পান্ডুয়ার মিনার ও মসজিদ এবং গৌড়ের শেখ আকি সিরাজের সমাধি এই পর্যায়ের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য।
তৃতীয় পর্যায়ে বাংলায় ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্প সবচেয়ে উন্নত হয়। পাণ্ডুয়ায় সুলতান জালালুদ্দিন মাহমুদ শাহের সমাধি বা একলাখি সমাধি ছিল এই ধাঁচের সেরা নিদর্শন।
উচ্চতায় খুব বেশি না-হলেও, টেরাকোটার গম্বুজ ও তার অর্ধগোল আকৃতির জন্য এটি বাংলায়
 ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের উন্নতির অন্যতম নজির। এছাড়াও সে সময়ে গৌড়ের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নজির হলো দাখিল দরওয়াজা, তাঁতিপাড়া মসজিদ, গুম্মত মসজিদ ও লোটন মসজিদ এবং ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি ফিরোজ মিনার। ইট ও টেরাকোটার কাজ ছাড়া এই মিনারটি সাদা
ও নীল রঙের টালি দিয়ে অলংকৃত। এছাড়া ছিল ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ বড়ো সোনা মসজিদ।
ওই স্থাপত্যরীতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল গঠনভঙ্গিতে ইসলামি রীতি ও বাইরের কারুকার্য ও কাঁচামাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলার লৌকিক রীতির ছাপ।


(ছ) মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতিতে মুঘল বাদশাহের কী ভূমিকা ছিল?
উঃ। সুলতানি চিত্রশিল্পের ধারা মুঘল যুগে আরও পরিণত ও উন্নত হয়। বইতে ছবি আঁকা বা অলংকরণ সম্রাট বাবরের সময়ে দেখা যায়। এ ব্যাপারে সম্রাট হুমায়ুনেরও খুব উৎসাহ ছিল। সম্রাট আকবরের সময়ে ছোটো ছবি বা মিনিয়েচার দিয়ে বই সাজানো হত। যেমন : তুতিনামা, রজমনামা ইত্যাদি। মিনিয়েচারকে বাংলায় অনুচিত্র বলা যেতে পারে। বই অলংকরণের পাশাপাশি প্রতিচ্ছবি আঁকাও আকবরের সময় থেকে শুরু হয়। আকবরের আমলে বহু চিত্রকর পরিচিতি পান। প্রতি সপ্তাহে
দারোগা ও কেরানিরা সমস্ত চিত্রকারদের ছবি বাদশাহ কে দেখাত। তিনি শিল্পীর গুণের বিচার করে পুরস্কার ঘোষণা করতেন বা মাস মাইনে বাড়িয়ে দিতেন। জাহাঙ্গিরের আমলে তা আরও উন্নত হয়। সেসময় থেকেই ইউরোপীয় ছবি আঁকার রীতিনীতির ছাপ মুঘল চিত্রশিল্পে পড়েছিল। ছবিতে বাস্তবতা ও প্রকৃতিবাদ-এর ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলেই শিল্পীরা প্রথম ছবিতে স্বাক্ষর করতে শুরু করেন। তাতে বোঝা যেত কোন ছবি কার আঁকা। বাদশাহি বা অভিজাত নারীরা অনেকেই ছবি আঁকার ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। তবে বাইরের শিল্পীদের দিয়ে অন্দরমহলের মহিলাদের ছবি আঁকানোর রেওয়াজ খুব বেশি ছিল না। নাদিরাবানু, সাহিফাবানুর মতো মুঘল নারীরা নিজেরাও ছবি আঁকতেন। সম্রাট শাহজাহানের সময়ে ছবির মধ্যে কাছে-দূরে বোঝানোর পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়। পাদশাহনামা গ্রন্থের অলংকরণ এই সময়ের বিখ্যাত কাজ। এইসব ছবিগুলি শিল্প হিসাবে অসাধারণ। পাশাপাশি এই ছবিগুলি সমকালীন ইতিহাসের উপাদানও হয়ে উঠেছে।
শাহজাহানের পর মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতি খুব একটা দেখা যায় না।


(জ) মধ্যযুগের ভারতে কীভাবে ফারসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল তা বিশ্লেষণ করো।
উঃ। মধ্যযুগের ভারতে ফারসি সাহিত্যের শুরু সুলতানি শাসনের হাত ধরে। দশম শতাব্দীতে তুর্কিরা যখন ভারতে আসে সম্ভবত তখন থেকেই ফারসির প্রচলন ঘটে। কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিশ ফারসি ভাষার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে খলজি যুগের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় লাহোর শহর হয়ে ওঠে ফারসি ভাষা চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
সেসময় ফারসি সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের মধ্যে আমির খসরু ছিলেন সবচেয়ে বিখ্যাত। খসরু ফারসি সাহিত্যের এক নতুন রচনাশৈলী সবক-ই-হিন্দ-এর আবিষ্কারক। সারাজীবন তিনি ফারসি কাব্য লেখার নানা প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এসময়ে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ফারসি হয়ে ওঠে অতি পছন্দের ভাষা। মধ্যযুগে বহু রচনা মূল সংস্কৃত থেকে ফারসিতে অনুবাদ করা হয়। এই ধারার প্রথম লেখক ছিলেন জিয়া নকশাবি। ফারসিতে অনুবাদের রেওয়াজ সমানভাবে চলতে থাকে তুঘলক, সৈয়দ ও লোদি আমলেও। মহম্মদ বিন তুঘলক দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করলে দক্ষিণ ভারতে ফারসি চর্চা ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ ভারতের বাহমনি শাসকরা ফারসি ভাষা চর্চায় আগ্রহী ছিলেন। এই কারণে বাহমনি-রাজধানী গুলবর্গা ও বিদর ফারসি ভাষা সাহিত্যের এক বিখ্যাত কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ফারসির কার্যকারিতা ও জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছিল মুঘল আমলে। সম্রাট বাবর ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁর আত্মজীবনী বাবরনামা ফারসিতে অনুদিত হয়েছিল। হুমায়ুনও ছিলেন ফারসিপ্রেমী। ইরান থেকে তাঁর সঙ্গে বহু কবি ও সাহিত্যিক আসেন। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে পারস্য থেকে বহু কবি ও সাহিত্যিক এসে মুঘলদের দরবারে ভিড় জমান। পারস্য ও ভারতের এক সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ঘটেছিল ফারসি ভাষার মধ্যে দিয়ে। সম্রাট আকবরের আমলে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য আরও উন্নত হতে থাকে। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য রচনা আকবরনামা ও আইন-ই-আকবরি। আকবরের মতো সম্রাট।জাহাঙ্গিরও ফারসির অনুরাগী ছিলেন। শাহজাহানের সময়েও এই চর্চা সমানভাবে চলতে থাকে। ঔরঙ্গজেবের আমলে এই চর্চা কমে আসে। তবে তাঁর কন্যা উজব-উন-নিসার ফারসি ভাষা ভালোবাসতেন ও তাতে কবিতাও লিখতেন। ঔরঙ্গজেব নিজেও এই ভাষা ভালোমতোই জানতেন। সাধারণের মধ্যেও মধ্যযুগে এই ভাষার চর্চা ভালোমতোই ছিল। শুধু মুসলমান সমাজ নয়, ঈশ্বরদাস নাগর, চন্দ্রভান ব্রাক্ষ্মণ ও ভীমসেন বুরহানপুরি প্রমুখ হিন্দুদের রচনা থেকে বোঝা যায় অন্যরাও এই ভাষায় সমান পটু ও আগ্রহী ছিলেন।

(ঝ) সুলতানি ও মুঘল আমলে সামরিক ও কৃষি প্রযুক্তিতে কী কী পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
উঃ। সামরিক : সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই যুগে বড়ো রকমের একটা বদল দেখা যায়। চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে বারুদ-ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র চিন থেকে মোঙ্গলদের হাত ঘুরে প্রথমে ভারতে এসে পৌঁছায়। পরে ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হয় বারুদ-চালিত রকেটের ব্যবহার। পাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মামেলুক শাসিত মিশর থেকে বন্দুকের প্রযুক্তি আসে ভারতে। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোর্তুগিজরা এই প্রযুক্তি দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেয়। এই সময়ের কাছাকাছি মুঘলরাও উত্তর ভারতে যুদ্ধে ব্যাপক হারে বন্দুক ও কামানের ব্যবহার চালু করে। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধের সময় সৈনিকের পা রাখার পাদানি বা রেবকাবের ব্যবহার তুর্কি বাহিনীকে বাড়তি সুবিধা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই এই সামরিক প্রযুক্তি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
কৃষি ঃ ত্রয়োদশ শতক নাগাদ পারস্য দেশ থেকে ভারতে আসে পারসি চক্র বা সাকিয়া। বেল্টও গিয়ার লাগানো ছোট্ট নাগরদোলার মতো দেখতে কাঠের তৈরি এই যন্ত্রের মাধ্যমে পশুশক্তির সাহায্যে কুয়ো বা খাল থেকে জল তোলা যেত। তবে যন্ত্রটি দামি হওয়ায় ভারতীয় কৃষক সমাজে এটি খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি। কৃষিক্ষেত্রে মধ্যযুগের সবচেয়ে
বড়ো উন্নতির দিক ছিল সেচ ব্যবস্থার প্রসার। দক্ষিণ ভারতে বিজয়নগর শাসকরা ও উত্তর ভারতে মুঘল বাদশাহরা সেচব্যবস্থার খুব উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতে অধিকাংশ জমি পাথুরে ও নদী কম থাকায় সেচের জন্য বড়ো মাপের জলাধার খনন করে তার থেকে ছোটো নালা বা খালের মাধ্যমে চাষের জমিতে জল পৌঁছে দেওয়া হতো।
৫। কল্পনা করে লেখো : (১০০ – ১৫০টি শব্দের মধ্যে)
(ক) রাজনীতি, জীবনযাপন ও ধর্ম নিয়ে একজন সুহরাবর্দি সুফি সাধকের সঙ্গে কবীরের কাল্পনিক সংলাপ লেখো।
উঃ। নিজে করো।

 আট অধ‍্যায়ে প্রশ্নের উত্তর দেখুন

  নয় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর দেখুন