সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস নয় অধ্যায়ের অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস
নয় অধ্যায়
অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
আজকের ভারত সরকার গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন
ভেবে দেখো খুঁজে দেখো
১. শূন্যস্থান পুরণ করো :
(ক) (বাংলাদেশ / জাপান / ফ্রান্স) – এ এখনও রাজারানি আছেন।
উঃ। জাপান।
(খ) নিজেরা নিজেদের মধ্য থেকে শাসক নির্বাচনের পদ্ধতিকে বলে -
(গণতন্ত্র /রাজতন্ত্র / যুক্তরাষ্ট্র
উঃ-গণতন্ত্র
(গ) (ভারতের জাপানের/ইংল্যান্ডের) – সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধান।
উঃ। ভারতের।
(ঘ) জনগণ যে শাসনব্যবস্থায় নিজেই নিজের অধীন, তাকে বলে --- (সংবিধান/ সভা ও সমিতি/ স্বায়ত্ত্ব শাসন
উঃ-স্বায়ত্ত্ব শাসন
(ঙ) অনেকগুলি গ্রাম নিয়ে হয় একটা-(ব্লক/জেলা/ পুরসভা)।
উঃ ব্লক।
২। "ক"স্তম্ভের সাথে 'খ' স্তন্ত মিলিয়ে লোগো :
উত্তর-
সরকার > ফারসি
ড. বি. আর আসেনকর > ভারতীয় সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্র > ভারত
এন্থেস > গ্ৰিস
জেলা পরিষদ > স্বায়ত্ত্ব শাসন
৩. সংক্ষেপে (৩০–৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) বর্তমান ভারতে শাসনব্যবস্থার কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়?
উঃ। আমাদের দেশ ভারতের বর্তমান শাসনব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান ভারতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের জনগণ শাসক বেছে নেন। একটি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা আছে, যার কেন্দ্রে আছে কেন্দ্রীয় সরকার। আবার প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সরকার আছে, অর্থাৎ একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা আছে।
(খ) যুক্তরাষ্ট্র ও সংবিধান কাকে বলে?
উঃ। যে শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু-রকম সরকারের ক্ষমতাই স্বীকার করা হয়, তাকে বলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা। ভারতে সংবিধান মেনে শাসন ব্যবস্থা চলে। ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র।
প্রত্যেক দেশ কীভাবে চলবে তার একটা নিয়মকানুন আছে। এই নিময়কানুনকেই 'সংবিধান' বলা হয়। 'বিধান' শব্দটির মানেই নিয়ম।
(গ) সরকারের কাজ কী কী?
উঃ। সরকারের কাজ হলো দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা। জনগণের যাতে ভালো হয় তার জন্য নানান উদ্যোগ নেওয়া, কর সংগ্রহ করা, দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখা এবং দেশের শাস্তি ও উন্নতির জন্যে কাজ করা। এইসব কাজে সরকারকে পথ দেখাবে সংবিধান। সংবিধান মেনেই সরকার দেশ শাসন করবে।
(ঘ) স্বায়ত্তশাসন বলতে তুমি কী বোঝো?
উঃ। ভারতের জনগণ শুধু শাসক নির্বাচন করেন না, নিজেরাও শাসনে অংশ নেন। সরাসরি শাসনে অংশ নেওয়াকেই বলে 'স্বায়ত্তশাসন'। 'স্ব' মানে নিজের আর 'আয়ত্ত' মানে অধীন। জনগণ যেখানে নিজেই নিজের অধীন সেই শাসনব্যবস্থাকে বলে 'স্বায়ত্তশাসন'।
(ঙ) নির্বাচনকে সাধারণভাবে কী বলে? ভারতে কত বছর অন্তর সরকার নির্বাচন হয়? সরকার নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক?
উঃ। নির্বাচনকে চলতি কথায় 'ভোট হওয়া' বলে। সেই নির্বাচনে ভোট দিয়ে দেশের মানুষ আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার নির্বাচন করেন। ভারতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার নির্বাচন হয়।
নিজেরা নিজেদের মধ্যে থেকে শাসক বেছে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলে 'গণতন্ত্র'। জনগণ নিজেরাই দেশের ব্যবস্থা ঠিক করেন বলেই এটা গণতন্ত্র। এইভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বেছে নেন নিজেদের প্রতিনিধিদের দেশ চালাবার জন্য। এটাই হচ্ছে নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক।
৪. বিশদে (১০০ – ১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) ভারতকে কেন গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয়? দেশ পরিচালনায় সংবিধানের ভূমিকা কী বলে তুমি মনে করো ?
উঃ। ভারত একটি বিশাল দেশ। এই দেশে একটাই কেন্দ্রীয় সরকার আছে। আবার প্রতিটা রাজ্যের নিজস্ব সরকার আছে, তাদের বলা হয় রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দুটোই জনগণ বেছে নেন। যে শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু-রকম সরকারের ক্ষমতাই স্বীকার করা হয়, তাকে বলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা। ভারতের সরকার একদিকে গণতান্ত্রিক কারণ জনগণ নিজেরা শাসক বেছে নেন। আবার অন্যদিকে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কারণ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু-ধরনের সরকারই ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় আছে। তাই ভারতকে গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয়। প্রত্যেক দেশ কীভাবে চলবে তার নিয়মকানুন আছে। এই নিয়মাবলিকে 'সংবিধান' বলা হয়। ভারতের একটি লিখিত সংবিধান আছে, যা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। ভারতীয় সংবিধানে ভারতের জনগণের দেশের সরকার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের জনগণের অধিকারকেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ভারতে দু-রকম সরকার আছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য
সরকার। ভারতীয় সংবিধানে এই দুই সরকারের কী কী ক্ষমতা তা বলা আছে। দেশের শাস্তি ও উন্নতির জন্য সরকার কাজ করবে। এইসব কাজে সরকারকে পথ দেখাবে সংবিধান। সংবিধান মেনেই সরকার দেশ শাসন করবে।
(গ) সরকারের কয়টি ভাগ? ওই ভাগগুলির কোনটি কী কাজ করে? বিচার বিভাগকে কেন আলাদা রাখা হয় ?
উঃ। সরকারের তিনটি ভাগ। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগের কাজ দেশ পরিচালনার আইন তৈরি করা। শাসন বিভাগের কাজ হল ওই আইন অনুসারে দেশ পরিচালনা করা। বিচার বিভাগের কাজ সংবিধান অনুসারে দেশশাসন হচ্ছে কি না, জনগণের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি না—এসবের প্রতি নজর রাখা এবং এই নিয়ম মেনে না চললে বা নিয়ম ভাঙলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
সব দেশেই বিচার বিভাগকে এই আইন ও শাসন বাকি দুটি বিভাগের থেকে আলাদা রাখা হয়। কোনোভাবেই যাতে সুবিচারের পথ বন্ধ না-হয়, তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। কারণ কেউই দেশের আইনের উর্ধ্বে নয়। দেশের সব নাগরিক যাতে সুবিচার পায় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের আইন বা শাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও সংবিধান মেনে না চললে তার বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থা নিতে পারে। এককথায় একে বলে ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণ নীতি। ‘স্বতন্ত্রীকরণ' মানে আলাদা করা। গণতন্ত্র যাতে বলবৎ থাকে তার জন্যই এই নীতি নেওয়া হয়।
(গ) পৌরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কী কী কাজ করে?
উঃ। ছোটো ছোটো শহরে বা নগরে পৌরসভা আছে। শহর বা নগরের জনসেবা, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন ও প্রশাসন এগুলির পরিচালনা করাই পৌরসভার কাজ। পানীয় জল সরবরাহ করা, রাস্তাঘাট বানানো, দূষণ রোধ করা, এসব কাজ পৌরসভাগুলি করে থাকে। বিদ্যালয়, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ করে শিক্ষার প্রসারে ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে পৌরসভাগুলি উদ্যোগ নেয়। শহরের পৌরসভার মতোই গ্রামে আছে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামের সবরকম উন্নতি করা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ। পানীয় জলের সরবরাহ, গ্রামের পরিচ্ছন্নতা, পথঘাট নির্মাণ, এসবই গ্রাম পঞ্চায়েত করে। আবার শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করা, চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করা, বনসৃজন করা—এসবও গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের মধ্যে পড়ে।
(ঘ) পশ্চিমবঙ্গে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার বিষয়ে একটি টীকা লেখো।
উঃ। জনগণ যেখানে নিজেই নিজের অধীন, সেই শাসনব্যবস্থাকে বলে 'স্বায়ত্তশাসন'। পশ্চিমবঙ্গে এই স্বায়ত্তশাসন দু- ভাবে দেখা যায়। শহর বা নগরের ক্ষেত্রে পৌরসভা আর গ্রামের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত। ছোটো ছোটো শহর বা নগরে পৌরসভা আছে। ওই শহর বা নগরের আঠারো বা তার বেশি বয়সের বাসিন্দারা ভোট দিয়ে পৌরসভার সদস্যদের বেছে নেন। এদের পৌর প্রতিনিধি বলে। এঁদের মধ্যে একজন পৌরপ্রধান হন। শহর বা নগরের জনসেবা, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন, প্রশাসন প্রভৃতি পরিচালনা করাই পৌরসভার কাজ।
শহর বা নগরে পুরসভার মতোই গ্রামে আছে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নির্বাচন করেন। তাদের মধ্যে একজন হন পঞ্চায়েত প্রধান। গ্রামের সবরকম উন্নতি করা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ। পৌরসভা বা পঞ্চায়েত ব্যবস্থা— সবেতেই পাঁচ বছর অন্তর জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিনিধি কে নির্বাচন করেন।
(ঙ) প্রাচীনকালে ভারতে ও অন্য কোথাও গণতন্ত্রের কথা জানা যায় কি? সেই গণতন্ত্র কেমন ছিল বলে তুমি মনে করো ?
উঃ। প্রাচীনকালে ভারতে ‘সভা' ও 'সমিতি' নামে দুটি ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসন পরিচালিত হত। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ষোড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে বৃদ্ধি ও মন্ত্র নামে রাজ্য দুটিতে গণতান্ত্রিক শাসন ছিল। আবার মুঘল যুগেও গ্রামীণ শাসনের ধারা ছিল। ভারতে পাল যুগের শুরু হবার আগে একবারই জনগণ গোপাল নামে একজনকে রাজা হিসেবে বেছে নেন। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিস দেশে এথেন্সের লোকেরা তাঁদের মধ্য থেকে শাসক বেছে নিতেন। গ্রিস দেশের এথেন্সের লোকেরা ভাঙা কলশির টুকরোর ওপর পছন্দমতো চিহ্ন এঁকে আর-একটা আস্ত কলশির মধ্যে ফেলে দিত। যার পক্ষে বেশি কলশির টুকরো জমা পড়ত, সেই বিজয়ী হত এবং সে-ই হতো শাসক ।
৫। কল্পনা করো লেখো (১০০ – ১৫০টি শব্দের মধ্যে) :
(ক) ধরো তুমি একজন পৌর প্রতিনিধি/পায়েত সদস্য। তোমার স্থানীয় অঞ্চলের উন্নতি করার জন্যে তুমি কী কী কাজ করবে শ্রেণিকক্ষে যুক্তিসহ একটি বক্তৃতা পেশ করো।
উঃ। আমি একজন পৌর প্রতিনিধি। আমার স্থানীয় অঞ্চলের উন্নতির জন্য আমি জনস্বাস্থ্য, জনসেবা, পানীয় জল সরবরাহ করা, রাস্তাঘাটের মেরামত ও নতুন কিছু রাস্তা বানানো, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে জনচেতনা
বাড়ানোর চেষ্টা করবো।
(খ) ধরো তুমি ভারতের একজন সাধারণ মানুষ। তুমি তোমার অঞ্চলের উন্নতি করতে চাও।
কী কী ভাবে তুমি সেই উন্নতির পরিকল্পনা করবে, শ্রেণিকক্ষে যুক্তিসহ একটি বিতর্কের আয়োজন করো।
আট অধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তর দেখুন
সাত অধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তর দেখুন