জমি জল জঙ্গল /জীবন জীবকার অধিকার ও গণ আন্দোলন - Online story

Thursday, 12 September 2024

জমি জল জঙ্গল /জীবন জীবকার অধিকার ও গণ আন্দোলন

 
     
জমি - জল - জঙ্গল  জীবন জীবিকার

অধিকার ও গণ আন্দোলন  


ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে জমি-জল-জঙ্গলের অধিকার নিয়ো জনগণের বিদ্রোহ এক প্রতিরোধের রূপ নিয়েছিল। ওই বিদ্রোহগুলির চাপে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কিছু আইনও তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু কৃষক ও জাল নির্ভর জনগন তাদের জীবন জীবিকার সুরক্ষা পায়নি বরং সেই আইনে তারা অধিকার থেকে একপ্রকার বঞ্চিত হয়েছে। ফলে বিংশ শতকে বারবার কৃষক তথা গণ আন্দোলন সংগঠিত হয়। পরবর্তীকালে পরিবেশ রক্ষা, কৃষিজমির অধিকার জল ও জঙ্গল
রক্ষার বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় আন্দোলন এর সঙ্গে জুড়ে যায়।


তেভাগা-তেলেঙ্গানা ।
কৃষকদের অধিকার রক্ষায় গণ আন্দোলন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফ্লাউড কমিশন শস্যের তেভাগা বন্টন এর সুপারিশ করেন। গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সুপারিশ কার্যকর করার জন্য ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা কৃষক ইতিহাস আন্দোলন সংগঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তরবঙ্গ, দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা ও রংপুর, মালদা ও জলপাইগুড়ি সংলগ্ন এলাকা আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ময়মনসিংহের কিশোরগণ্যা, মেদিনীপুরের মহিষাদল, সুশহাটা ও নন্দীগ্রাম এবং ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে তেভাগার ঘাঁটি গড়ে ওঠে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের কিনারা পর্যন্ত হিন্দু ও মুসলমান তেভাগা আন্দোলন গড়ে তোলে।
১৯৪৬ সালে আধুনিক ভারতের সবচেয়ে বড়ো কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল হায়দারাবাদের তেলেঙ্গানায়। ১৬০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত প্রায় ৩০০০ গ্রামে তেলেঙ্গানার গণবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। লালগোণ্ডার জনগাঁও, সূর্যপেট, ও হুজুরনগর তালুকগুলি ছিল প্রতিরোধের কেন্দ্র, ক্রমে ও ওয়ারাঙ্গাল খাম্মামের প্রতিবেশী জেলাগুলিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তেলেঙ্গানা সংগ্রামের ইতিবাচক সাফল্য ছিল অনেক। এই গণআন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতের সবচেয়ে বড়ো
স্বৈরাচারী সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে।
'বেটি' প্রথা অবলুপ্ত হয়।



জল-জঙ্গলের অধিকার : পরিবেশকেন্দ্রিক গণ
আন্দোলন :
উনিশ শতক থেকেই অরণ্যের অধিকার নিয়ে উপনিবেশিক রাষ্ট্রের জনগণের বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। পরিবেশ সংকট রুখতে জল ও জঙ্গল
বাঁচাতে ভারতের নানা প্রান্তে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছে।
উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কেরলের বনাঞ্চল, পশ্চিমে গুজরাট থেকে পূর্বে ত্রিপুরা সর্বত্রই পরিবেশ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে, চিপকো, নর্মদা বাঁচাও, আপ্পিকো, সাইলেন্ট ভ্যালি প্রভৃতি নানা পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠেছে জঙ্গল ধ্বংস, জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়া, বন্যা মরুভূমির প্রসার প্রভৃতির প্রতিবাদে।


কৃষিজমির অধিকার : সিঙ্গুর গণ আন্দোলন :
২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি গাড়ি প্রকল্পের ঘোষণা করে বলে যে পশ্চিমবঙ্গে একটি শিল্পগোষ্ঠী ছোটো গাড়ি তৈরির কারখানা বানাতে চলেছে। ঠিক হয় তার জন্য সিঙ্গুরের কয়েকটি মৌজার কৃষিজমি ওই শিল্পগোষ্ঠীকে লিজ দেওয়া হবে।
সিঙ্গুর হুগলি জেলার একটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক। নিম্ন গাঙ্গেয় উপত্যকার এই ব্লকটি জেলাসদর চুঁচুড়া থেকে ২২ কিমি দূরে। সিঙ্গুর ব্লকের এলাকা ১৫৫.১৯ বর্গ কিমি। গাড়ি কারখানার জন্য এই ব্লকের বেড়াবেড়ি, গোপালনগর বাজেমেলিয়া, খাসের ভেড়ি এবং সিংহের ভেড়ি এই ৫টি মৌজাকে চিহ্নিত করা হয়। সিঙ্গুর কৃষিজ ফসলের বৈচিত্র্যে অনন্য। উর্বর মাটিতে এখানকার প্রধান ফসল ধান, পাট, আলু। প্রায় ৭০ ভাগ জমি এখানে তিন-চারফসলি হয়ে উঠেছিল। এখানে চাষি, জমির মালিক, বর্গাদার, খেতমজুর সবাই ছিল জমির ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি, কৃষিকেন্দ্রিক নানা কর্মকাণ্ড বহু মানুষের রোজগারের উপায় ছিল। গাড়ি কারখানার জন্য শিল্পগোষ্ঠীকে লিজের জন্য দেওয়া নির্বাচিত জমিতে প্রায় ১৫০০ মানুষ জীবিকার সূত্রে যুক্ত ছিল। এই সমস্ত মানুষকে তাদের জীবন জীবিকা থেকে উচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে সিঙ্গুর গণ আন্দোলন সংগঠিত হয়।
সিদুর আজ আর কোনো ভৌগোলিক ভূখণ্ড মাত্র নয়, এটি আজ এক ঐতিহাসিক জয়া ও আন্দোলনের প্রতিবাদের বলিষ্ঠ প্রতীক,শিল্পের নামে কারো সঙ্গে আলোচনা না করে গায়ের জোরে বহু ফসলি জমি দখল করার
এক দুঃসাহসী পরিকল্পনা, শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলার ব্যর্থতা এবং তার মাঝেই এক অনিবার্য ধংসের ছবি দেখেছিল এখানকার মানুষ।
চাষের জমি দিতে নারাজ কৃষিজীবীদের সংগ্রাম, অন্যদিকে শিল্পায়নের নামে দেশের কৃষিজীবী প্রান্তিক অংশের মানুষকে যৎসামান্য ক্ষতিপূরণের আশ্বাস, তাদের নির্মম মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া এসবের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ গর্জে উঠেছিল।
সেই আন্দোলনকে সুসংহত করে তার নেতৃত্ব দিলেন শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন পার্থ চ্যাটার্জী, প্রতুল মুখার্জী, সুজাত ভদ্র, পূর্ণেন্দু বসু, অসীমা পাত্র, অর্পিতা ঘোষ প্রমুখ। আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন বৃদ্ধা সরস্বতী দাস।
বয়সের ভার যার প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করতে পারেনি। সঙ্গে ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় সুব্রত বক্সী, মুকুল রায়, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্না প্রমুখ। এই আন্দোলন বহুফসলি জমির উপর শিল্পায়নের অশুভ প্রচেষ্টার অবসান ঘটিয়েছিল।
বহুফসলি উর্বর এই কৃষি এলাকার যে অত্যাচার ও অরাজকতার আবহ তৈরি হয়ে তার প্রতিবাদে সরব হন বহু বরেণ‍্য সাহিত্যিক, শিল্পী, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মানুষজন। এদের মধ্যে ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী, মেধা পাটেকর, অনুশ্রুতী রায়, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসা, অম্লান দত্ত, কবীর সুমন, জয় গোস্বামী, শাঁওলী মিত্র, অপর্ণা সেন প্রমুখ।
প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন সমাজ সচেতন ছাত্রসমাজ, সামাজিক ও মানবিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন, এগিয়ে আসেন সুমিত সরকার থেকে রোমিলা থাপার সহ ঐতিহাসিক মানুষজন। সিঙ্গুর আন্দোলন হয়ে ওঠে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার লড়াই।


সিন্দুর জমি রক্ষার আন্দোলন : ১৮৯৪ সালের কৃষিজমি অধিগ্রহণ আইন প্রয়োগ করে প্রায় হাজার একর যে জমি অধিগ্রহণ করা হয় তার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল ছিলেন জমির মালিক পাঠাদার, বর্গাদার, জমিহীন কৃষক, ভাগচাষি ও জমি এবং ফসলের বাজারিকরণের সঙ্গে জড়িত অসংখ্য মানুষ। তাঁরাই শিল্পায়নের জন্যে জমি দিতে সম্মত ছিলেন, যাঁদের জীবিকা সিঙ্গুরের জমি খন্যের উপর নির্ভরশীল ছিল না। এই আন্দোলনে অনিবার্যভাবে উঠে এল এই রাজ্যের ভূমি সংস্কার, কৃষিতে স্বনির্ভরতা, খাদ্যসংকট ও সুরক্ষা সংক্রান্ত জরুরি বহু প্রশ্ন।
অস্বচ্ছতা, অবিশ্বাস, উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তার দিনে নিরাপত্তাহীনতা তীব্র হয়ে ওঠে। ক্ষোভের মধ্যে দিয়ে চলে বিরোধিতার পালা। দীর্ঘদিন ধরে জামিন না দিয়ে কৃষক মহিলাদের জেলে আটকে রাখা হয়। জমি দিতে অনিচ্ছুকদের ক্ষোভের কথা জানা সত্ত্বেও তাদের সম্মতি ছাড়াই সরকার জমি অধিগ্রহণ করে এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করা হয় নি। অথচ বন্ধ কারখানার হাজার হাজার একর অনাবাদী জমি পশ্চিমবঙ্গে পড়েই ছিল।
শিল্পায়নের কাজে এগুলি ব্যবহার করা হলে কৃষি রক্ষা পেত, শিল্পও গড়ে উঠত। কিন্তু সরকার তখন তা ভাবলেন না।
কৃষকজীবনের অভাব ও বঞ্চনার মাঝে উচ্ছেদের যন্ত্রনা যোগ হওয়ায় সেই কৃষকদের পক্ষে কারখানার নিয়মিত কর্মী হওয়া ইতিহাস সম্ভব নয় তার কাজের জায়গা ধ্বংস হলে যে পরিণত হবে অসংগঠিত মেহনতিতে এটা উপলব্ধি করেই সিঙ্গুর আন্দোলনে দেখা গেল। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ।
২০০৬ এ ২২ মে জমি দেখতে আসা গাড়ি কারখানার লোকজন ও প্রশাসনিক কর্তব্যক্তিদের সাধারণ মানুষ তাড়িয়ে দেয় যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন,
মহিলা। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজধানীতে এভাবেই এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সুচিত হয়।
মানুষের বক্তব্য ছিল শিল্প হোক এমন জমিতে যেখানে কৃষির সম্ভাবনা নেই।
আর শিল্প গড়ে তুলতে এত জমির বা প্রয়োজন কীসের? সেই চিন্তা থেকে বিডিও অফিসের সামনে ২৫ সেপ্টেম্বর এক শাস্তিপূর্ণ অবরোধ সামিল হন মানুষ, ছিলেন শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে শিশু থেকে বৃদ্ধা সকলেই নির্মম অত্যাচারের শিকার হন। পর দিন মারা যান গোপালনগরের বাসিন্দা রাজকুমার ভুল। ২রা ডিসেম্বর শাসকের অত্যাচার প্রবল হয়ে ওঠে। মিথ্যে অভিযোগে ৪৯ জন গ্রেফতার হন। ১৮ ডিসেম্বর জনৈক ভাগচাষির মেয়ে তাপসী মালিককে হত্যা করা হয় এবং প্রমাণ লোপাটের জন্যে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার আগের দিনও সে অনশন অবস্থানে অংশ নেয়। তাপসী মালিক সহ ১০ জন শহিদ হন।
বহু মানুষকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। জমি হারিয়ে আত্মহননের পথ নেন হারাধন বাগ, প্রশান্ত দাস। কৃষিশ্রমিক শংকর দাস, শ্রীকান্ত শীশংকর পাত্র প্রমুখের মৃত্যু হয় অনাহারে।
এমতাবস্থায় শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের অগনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জমি দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে দীর্ঘ।২৬ দিন অনশন কর্মসূচি নেন। তাঁর এই অবস্থান মানুষের প্রতিবাদী মনোভাবকে শক্তিশালী করে তোলে। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা স্থাপনের ঘোষণা হয়, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়। সেই বছরেই।সেপ্টেম্বর মাসে কারখানার কাজ স্থগিত করে ৩ অক্টোবর শিল্প গোষ্ঠী সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২০১১ সালে শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফেরত দেবেন। সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ এবং পুর্নবাসন
বিষয়ে ২০১১ জুনে বিধানসভায় বিল পাস হয়। এর বিরোধিতা করে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা শুরু হয়। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট বিরোধী পক্ষে রায়।
দিলেও ৩১ আগস্ট ২০১৬ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন জমি অধিগ্রহণ ছিল অবৈধ। ফলে জমিকে অধিগ্রহণের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে রাজ্য সরকার
তা কৃষকদের হাতে তুলে দিক । সিঙ্গুরে চলছে তারই পূর্ণ প্রস্তুতি।
যেখানে চলছে অধিগৃহীত জমি ফেরতের।
জন্য চিহ্নিতকরণের কাজ, জমির নথি যাচাই করে ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া চলছে প্রশাসনিক স্তরে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা দিনরাত পরিশ্রম করে জমিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে তাকে চাষযোগ্য করে তুলতে চেষ্টা করছেন, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে গিয়ে কথা দিলেন জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দেবেন। ২০ অক্টোবর তিনি চাষের মাঠে প্রতীকীভাবে সরষের বীজ ছড়িয়ে দিলেন, ১০,৪৩৬ জনকে জমির পরচা দেওয়ার কাজ শেষ হলো। অবশিষ্ট.  কৃষকদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে জমির পরচা। ক্ষতিপূরণের চেক। নির্ধারিত সময়ের আগেই জমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করেছে নতুন সরকার। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পুরো জায়গাটা বদলে গেছে, নতুন করে বেঁচে উঠছে সিঙ্গার। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বিশ্বে কৃষিজমিতে মডেল হবে সিঙ্গুর। বস্তুত এই কৃষক আন্দোলন ভারতবর্ষে নজিরবিহীন।



টুকরো কথা: প্রশ্ন ও উত্তর
তেলেঙ্গানার সংগ্রামী জীবনযাত্রার কীরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়?
উঃ। তেলেঙ্গানার যে সকল অঞ্চলগুলিতে সংগ্রাম চলেছে তার জীবনযাত্রার বর্ণনায় আমরা পাই সেখানে সেচের উন্নতি ও কলেরা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। বহু চাষির ও পারিবারিক বিরোধের আপস মীমাংসা ও নারীদের মর্যাদার উন্নয়নের চেষ্টা করা। অস্পৃশ্যতা ও কুসংস্কারের বিরোধিতা করা। সংগ্রামকে প্রচার করার জন্য লোকসংগীত ও নাটক
ইত্যাদি সাংস্কৃতিক মাধ্যমকে ব্যবহার করা।



চিপকো আন্দোলন কী? এই আন্দোলনের দাবিগুলি কী ছিল?
উত্তর- চিপকো আন্দোলন শুরু হয় উত্তর ভারতে। সেখানে হিমালয়ের ঘন অরণাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। জঙ্গলের অধিকার সাধারণ মানুষের এই মনোভাব থেকে ১৯৭০ এর দশক থেকে গাছ কাটার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জোরদার হয়। গাছকাটা
আটকাতে জনগন গাছকে জড়িয়ে থাকত। ঐ পদ্ধতি অর্থাৎ 'চিপকে জড়িয়ে থাকা থেকেই এই নামটি এসেছিল।চিপকো আন্দোলনের মূল দাবিগুলি ছিল বিভিন্ন রকম। প্রধানত ছিল ঔপনিবেশিক জঙ্গল আইনের বিরোধিতা।বাণিজ্যিক স্বার্থে গাছ কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করা। বেশি পরিমাণ অঞ্চলে অরণ্যের প্রসার ঘটানো। অরণ্যের দেখভালের জন্য গ্রাম সমিতি গঠন করা। অরন্যকেন্দ্রিক বিভিন্ন দ্রব্যনির্ভর কুটির শিল্পের প্রসার ঘটানো।



নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কেন সংগঠিত হয়েছিল?
উঃ। পশ্চিম ভারতে অবস্থিত নর্মদা নদী উপত্যকায় বাঁধ প্রকল্পের ফলে প্রায় ২১ লক্ষ জনগন জীবন ও জীবিকার সংকটে পড়ে। ওই অঞ্চলের ভিল ও গোল্ড
আদিবাসী মানুষজনও জঙ্গলের অধিকার থেকে বর্ণিত হতে থাকে। এর ফলে ১৯৭০ দশকের গোড়া থেকেই অসংখ্য মানুষ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। বাঁধ নির্মান বন্ধ করা ও উচ্ছেদ হওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকার অধিকার সুরক্ষিত করার দাবিতে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সংঘবদ্ধ হয়েছিল।


আপ্পিকো আন্দোলন কেন সংগঠিত হয়েছিল? এর বিবরণ দাও।
উঃ। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গভীর অরণ্য সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে আপ্পিকো আন্দোলন সংগঠিত হয়। ওই অঞ্চলের বড়ো গাছ কেটে তা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হতো। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই। স্বাধীনতার পরেও সেই একই নিয়মে গাছ কাটা চলতে থাকে। গাছ কাটার প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনকারীরা গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবাদ জানান। আপ্পিকো আন্দোলনের ফলে ওই অঞ্চলে গাছ কাটা বন্ধ হয় পাশাপাশি নতুন গাছ লাগানো ও জঙ্গলের ওপর স্থানীয় মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়।ইতিহাস


সাইলেন্ট ড্যালি আন্দোলনের বর্ণনা দাও।
উঃ। দক্ষিণ ভারতের কেরলের ৮৯ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে সাইলেন্ট ভ্যালি। সেখানে ছিল অরণ্য ও বন্যপ্রাণের বিচিত্র সম্ভার। ১৯৮০-র দশকে এক স্থানীয় নদী প্রকল্পের কারণে ওই প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংসের সম্ভাবনা।তৈরি হয়। এর প্রতিবাদে স্থানীয় মানুষ সংগঠিত হন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পরিবেশকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো।




ক্ষেতমজুর কাদের বলা হয় ?
উঃ। মজুরির বিনিময়ে যে অন্যের চাষের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে তাদের খেতমজুর বলা হয়।
বর্গাদার কারা?
উঃ। যে চাষি পরের জমি ফসলের ভাগের বিনিময়ে চাষ করে তাদের বর্গাদার বলে। বর্গাদারকে ভাগচাষিও বলা হয়।
ভূমিহীন চাষি কারা?
উঃ। যে চাষির নিজের কোনো চাষের জমি নেই, অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তারা হল ভূমিহীন চাষি।
পাট্টাদার কারা ?
উঃ যে চাষি অস্থায়ীভাবে জমির পাট্টা বা দলিল পয়েছে তারা হল পাট্টাদার।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. ফ্লাউড কমিশন কী সুপারিশ করেছিল ?
উঃ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফ্লাউড কমিশন সুপারিশ করেছিল শস্যের তেভাগা বণ্টন।

২. তেভাগা কৃষক আন্দোলন কবে সংগঠিত হয়?

উঃ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্লাউড কমিশনের সুপারিশ গণসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কার্যকর করার জন্য তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়।
৩. তেলেঙ্গানা গণবিদ্রোহ কবে কোথায় সংগঠিত হয় ?
উঃ। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে হায়দারবাদের তেলেঙ্গানায় সংগঠিত হয়েছিল আধুনিক ভারতের অন্যতম বৃহৎ কৃষক আন্দোলন তেলেঙ্গানা গণবিদ্রোহ।

৪. তেলেঙ্গানা সংগ্রামের কোন্ প্রথা অবলুপ্ত হয় ?
উঃ। তেলেঙ্গানা সংগ্রামের সাফল্যে 'বেটি' প্রথা বা বেগার শ্রম অবলুপ্ত হয়েছিল।
৫. কয়েকটি বিখ্যাত পরিবেশ আন্দোলনের নাম করো।
উঃ। চিপকো, নর্মদা বাঁচাও 'আপ্পিকো' সাইলেন্ট ভ্যালি প্রভৃতি কয়েকটি হল বিখ্যাত পরিবেশ আন্দোলন।
যারা জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেন তাঁরা মৃত্যুকে ভয় পান না।
  প্রশ্ন: সিঙ্গুর গুলোকে কোন কোন মৌজাকে গাড়ি কারখানা প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়?

উঃ। বেড়াবেড়ি, গোপালনগর, বাজেমেলিয়া, খাসের ভেড়ি এবং সিংহের ভেড়ি নামক এই ৫টি মৌজাকে সিঙ্গুর গাড়ি প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়।
৭. সিঙ্গুরে কেন গণ আন্দোলন সংগঠিত হয় ?
উঃ। সিঙ্গুরের মানুষকে জীবন-জীবিকা থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সিঙ্গুরে গণ আন্দোলন।সংগঠিত হয়।