অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা তৃতীয় অধ্যায়ের অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর - Online story

Monday, 16 September 2024

অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা তৃতীয় অধ্যায়ের অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

 



অষ্টম শ্রেণি 

স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা
তৃতীয় অধ্যায়
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
প্রাথমিক চিকিৎসা

Section - 1 : Recap zone
১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো ঃ

(a) ছুরির আঘাতে (কর্তনজনিত/বিষ/থ্যাতলানো/মিশ্র ক্ষতের) সৃষ্টি হয়।
 উঃ। কর্তনজনিত
(b) বিষধর সাপ হল (গোখরো/অজগর/বেলেসাপ/দাঁড়াশ)।
উঃ। গোখরো
(c) সাপের খাবার নয়- (ইঁদুর/ব্যাং/মাছ/গাছের ফল)।
উঃ। গাছের ফল।
২. শূন্যস্থান পূরণ করো :
(a) সাপ শব্দ শুনতে .......কম্পন অনুভব করে।
উঃ- পায়না
, (b) ক্ষতের ফলে ........পাত হয়।
উঃ-রক্ত
(c) ক্ষতের বিপদ...... 'ও রক্তপাত।
উঃ-সংক্রমণ
(d) বিভিন্ন কারণে মাংসপেশি, ত্বকসহ রক্তবাহী নালিকার সংযোগ ছিন্ন হয় তখনই... . সৃষ্টি হয়।
উঃ-ক্ষতের
(e) পেরেক বা কোনো সূঁচালো অস্ত্রের দ্বারা........ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
উঃ-বিদ্ধ
(f) ........... প্রথমে রক্ত বন্ধ করতে হবে .......প্রত্যক্ষ চাপের সাহায্যে।
উঃ-ক্ষতস্থান, পরোক্ষ
 (g) ক্ষতস্থান যথেষ্ট পরিমাণে তুলো দিয়ে.........ও করতে হবে।
উঃ-প্যাডিং
(h) গজ দিয়ে ক্ষতস্থানটি আচ্ছাদিত করে রাখতে হবে।
উঃ-জীবাণুশূন্য



৩. দু-এক কথায় উত্তর দাও।
(a) প্রাথমিক চিকিৎসার সংজ্ঞা দাও।

উঃ। মানুষের দেহে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হলে বা রক্তপাত হলে এবং সাপে কামড়ালে বা জলে ডুবে গেলে, আগুন লাগলে যে বিপদ ঘটে চিকিৎসক আসার আগে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে যে সাময়িক প্রতিবিধান করে রোগীকে আরাম দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়। তাকেই প্রাথমিক চিকিৎসা বলা হয়।


(b) ক্ষতের সংজ্ঞা দাও।
উঃ। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ছুরি, কাঁচির সঠিক ব্যবহার না জানায় হাত কেটে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ফলে হাঁটু, কপাল, কনুই, পা কেটে যায়। এর ফলে রক্ত বের হয়ে থাকে, এর থেকে নানা ব্যাধি সৃষ্টিকারী জীবাণু ও ক্ষতিকারক পদার্থ বিভিন্ন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মাংসপেশি, ত্বকসহ রক্তবাহী নালিকার সংযোগ ছিন্ন হয়, তখনই ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে থাকে।


(c) দুটি করে বিষধর ও নির্বিষ সাপের নাম লেখো। 

উঃ । বিষধর সাপ : গোখরো, কেউটে। নির্বিষ সাপ ঃ জলটোড়া, অজগর।

(d) বিষহীন সাপের কামড়ের লক্ষণগুলি লেখো।
উঃ। বিষহীন সাপের কামড়ের লক্ষণগুলি হল –
 (i) কামড়ের দাগ অনেকটা হালকা হয়।
(ii) কামড়ের দাঁতের দাগ অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো হয়।
(iii) খুব জ্বালা ও যন্ত্রণা ছড়িয়ে যায়।
(iv) জায়গাটা নীল হতে পারে।
(v) কামড়ানো জায়গা থেকে হলদেটে একটা রস বা রক্ত চুঁইয়ে পড়তে পারে। বিষহীন সাপে কামড়ালে টাটকা রক্ত বেরোয়, যা জমাট বেঁধে কালচে হয়।


(e) সাপের বিষ কয় প্রকার ও কী কী ?  

 উঃ। সাপের বিষ দুই প্রকার— হেমাটোটক্সিন ও নিউরোটক্সিন।

(f) মিশ্র ক্ষত কাকে বলে?
উঃ। বন্দুকের গুলি, বোমার আঘাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে কোনো এক ক্ষতের মধ্যে একাধিক প্রকারের ক্ষতের লক্ষণ দেখা যায় একে মিশ্র ক্ষত বলে।

(g) কার্ডিয়াক ম্যাসাজ কী ?
উঃ। বুকের খাঁচার সবচেয়ে নীচের পাঁজর দুটি মাঝখানে যেখানে মিশেছে, তার দু-আঙুল নীচে বক্ষ অস্থির ওপর মধ্যরেখা বরাবর হাতের তালুর শক্ত জায়গা দিয়ে একটা হাতের উপর অন্য হাতের তালু রেখে নিজের কাঁধ থেকে সরলরেখায়।দৃঢ়ভাবে ব্যাক্তির শরীরে চাপ দিতে হয়। যাতে এক ইঞ্চির মতো পাজরকে ভিতকে চেপে দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিকে।কার্ডিয়াক ম্যাসাজ বলে।


(h) হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধের সম্ভাব্য উপসর্গগুলি কী কী ?
উঃ। হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপসর্গগুলি হল – (i) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া,
(ii) নাড়ির গতিহীনতা, ক্যারোটিড ধমনি ও উরুর ধমনিতে নাড়ি না পাওয়া,
(iii) হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শোনা না যাওয়া,
 (iv) শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া,
(v) চামড়া ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির রং ফ্যাকাশে হওয়া বা নীলাভ রং ধারণ করা,
(v) চোখের তারারন্ধ্র স্ফীত হওয়া,
(v) হাত-পায়ের খিঁচুনি।
হূৎপিণ্ডের কাজ বন্ধের উপসর্গ দেখা মাত্রই এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে হৃৎপিণ্ডের মালিশের পাশাপাশি সর্বদা একই সঙ্গে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস পরিচালনা করা উচিত।


৪. রচনাধর্মী প্রশ্ন :
(a) ক্ষত কীভাবে সৃষ্টি হয় ? ক্ষত কয় প্রকার ও কী কী ?
উঃ। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ছুরি, কাঁচির সঠিক ব্যবহার না জানায় হাত কেটে ফেলে, অনেকে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ফলে।হাঁটু, কপাল, কনুই, পা কেটে যায়। এর ফলে রক্ত বের হয়, এ থেকে নানা ব্যাধি সৃষ্টিকারী জীবাণু ও ক্ষতিকারক পদার্থ বিভিন্ন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মাংসপেশি, ত্বকসহ রক্তবাহী নালিকার সংযোগ ছিন্ন হয়, তখনই ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রকৃতি অনুসারে ক্ষত পাঁচ প্রকার।
 (i) কর্তনজনিত ক্ষত, (ii) ছিন্নভিন্ন ক্ষত, (iii) থ্যাতলানো ক্ষত, (iv) বিদ্ধ ক্ষত, (v) মিশ্র ক্ষত।


(b) সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক প্রতিবিধান আলোচনা করো।
উঃ। (i) এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ‘অ্যান্টিডেনিম' সাপের বিষের প্রতিরোধক ইনজেকশন দিতে হবে প্রাণ বাঁচাতে। সঠিক অ্যান্টিভেনিম যত তাড়াতাড়ি দেওয়া যায় তত বাঁচার সম্ভাবনা রোগীর বেশি থাকে।
(ii) রোগীকে শান্ত রাখতে হবে। উৎসাহ দিয়ে মনোবল বাড়াতে হবে। যে জায়গায় কামড়েছে সেখানটা নিশ্চল করতে হবে। হাঁটাচলা করা উচিত নয়।
(iii) বিষ ছড়িয়ে যাওয়ার গতি কমাতে কামড়ের
জায়াগাটা একটা চওড়া ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ অথবা একটা পরিষ্কার মোটা কাপড়ের পাড় দিয়ে জড়িয়ে দিতে হবে। তবে।এমনভাবে আটকাবেন না যাতে কবজি বা পায়ের পাতার বা অন্য স্থানের নাড়ির স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।
(iv) ব্যান্ডেজ দিয়ে রোগীর ক্ষতের সম্পূর্ণ ওই অংশটা ঢেকে ফেলতে হবে। কিন্তু দেখতে হবে যেন নাড়ির স্পন্দন বন্ধ না হয়ে যায়।
(v) একটা স্প্লিন্ট লাগিয়ে ওই স্থানটি অনড় করতে হবে। (vi) একটি স্ট্রেচারে বা যতটা সম্ভব ঝাঁকুনি পরিহার করে দ্রুত।নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র/ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
(vii) হাত বা পা ও দেহ প্লাস্টিকের চাদর ও কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
(viii) রোগী যেন ঘুমিয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হলে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
(ix) হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় যতটা সম্ভব রোগীকে না নাড়িয়ে শোয়ানো অবস্থায়
গাড়িতে তুলতে হবে ও নিয়ে যেতে হবে।

(c) বিষধর সাপের কামড়ের লক্ষণগুলি লেখো।
উঃ। সাপের কামড়ের কতকগুলি লক্ষণ থাকে যে লক্ষণগুলি দেখে চিহ্নিত করা যায় যে বিষধর সাপ কামড়েছে কিনা।লক্ষণগুলি হল—
(i) ক্ষতস্থানে দুটি দাঁতের দাগ দেখতে পাওয়া যায়, দুটি ক্ষতের মধ্যে দূরত্ব হবে ২ সেন্টিমিটার।
(ii) ক্ষতস্থান গভীর হয়।
(ii) কিছুটা সময়ের মধ্যেই শরীর ঝিমিয়ে আসে, প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভূত হয়।
(iv) ঘুম পায় ও চোখের  পাতা ঝুলে পড়ে, নজর ঝাপসা হয়ে মাথা সামনে ঝুঁকে পড়ে।
(v) টলে টলে, চলতে চলতে শুয়ে পড়ে।
(vi) ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
 (vii) কথা জড়িয়ে যায়, মুখ নীলচে হয়, শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।
(viii) নাড়ির গতি বেড়ে যায়, খিঁচুনিও হতে পারে। (ix) মুখ থেকে লালা বা ঝরতে থাকে, বমির লক্ষণ দেখা দেয় এবং বমি হতেও পারে।
(x) বিষধর সাপে কামড়ালে ক্ষতস্থান থেকে জলরক্ত বা লসিকা বেরোয়।
(xi) বিষধর সাপে কামড়ালে সাপের বিষ মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র অকেজো করে দেয়।
(xii) লোহিত রক্তকণিকাকে ভেঙে দেয়।
 (xiii) কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে প্রস্রাবে রক্তের লোহিতকণিকা রয়েছে।



(d) ডুবন্ত মানুষকে জল থেকে তোলার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
উঃ। (i) প্রথমে ডুবন্ত মানুষ বা শিশুটিকে লক্ষ করে তার দিকে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় এমন কিছু একটা অবলম্বন ছুঁড়ে দিতে হবে। যেমন বাঁশ, গাছের ডাল, ধুতি, শাড়ি, তোয়ালে, জামাকাপড় যা হাতের কাছে পাবে।

(ii) ভেসে থাকে এমন জিনিসও দিতে পারলে হবে।
টায়ারের টিউব, প্লাস্টিকের বড়ো খেলনা ইত্যাদি।

(iii) সম্ভব হলে নৌকা, লাইফ জ্যাকেট বা লম্বা দড়ি
ফাঁস গিঁট দিয়ে তার দেহের দিকে ছুড়ে মারতে হবে। হাতে ফাঁস গিট আটকাতে পারলে তো আরও সুবিধা।

(iv) কখনও সাঁতার কেটে ডুবন্ত মানুষের সামনে যাওয়া- বিপজ্জনক। বাঁচার জন্য সে তখন জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাইবে। এর ফলে দুজনেরই প্রাণসংশয় হবে।
(v) যদি ডুবন্ত মানুষটি শিশু বা হালকা ধরনের গঠনের হয় তাহলে সাঁতরে তার পিছনে গিয়ে যাতে সে ধরতে না পারে এইরকমভাবে তাকে চিত করে শুইয়ে তার চুলের মুঠি/জামার কলার শক্ত মুঠিতে ধরে সাঁতরে সাঁতরে তাকে জলে ভাসিয়ে ডাঙায় তুলতে হবে।
(vi) কোনো অবস্থায় শরীর থেকে জল বের করার চেষ্টা করে সময় নষ্ট না করে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর কাজটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে চালিয়ে যেতে হবে।
(vii) রোগীকে গাড়ি করে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার সময় এক সেকেন্ডের জন্যও বিরতি না দিয়ে বিরামহীনভাবে এই দুই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।



(e) কী কী কারণে হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে লেখো।
উঃ। বিভিন্ন কারণে হূৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমন-
(i) শ্বাসরোধ হলে, (ii) গ্যাসের বিষক্রিয়া হলে, (iii) বিদ্যুৎঘাত হলে, (iv) বজ্রাঘাত হলে, (v) মস্তিষ্কের রক্তপাত হলে, (vi) হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ ও অন্যান্য অসুখ হলে, (vii) তাপঘাত (সানস্ট্রোক) হলে, (viii) হৃৎপিণ্ড অঞ্চলে সোজাসুজি প্রবল আঘাত লাগলে, (ix) অগ্নিদহন হলে, (x) ঠান্ডায় জমে গেলে, (xi) জলে ডুবে গেলে, (xii) শিশুদের
ক্ষেত্রে পেনসিল, পেনের ঢাকনি, পয়সা শ্বাসনালিতে আটকে গেলে, (xiii) দুর্ঘটনায় মুখের ভেতরের রক্ত, বমি ও অন্য কিছু জমে প্রশ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ হতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হলে হৃদ্যন্ত্রে অক্সিজেন পৌঁছোয় না। তাই।প্রাথমিক কারণ ফুসফুস বা হৃদ্যন্ত্র, যারই বৈকল্য হোক; অক্সিজেন মেশানো বিশুদ্ধ রক্ত আমাদের শরীরের কোথাও পৌছোয় না।


(f) হৃদপিণ্ডের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখার পদ্ধতিগুলি ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করো।
উঃ। (i) কোনো মানুষ আচমকা জ্ঞান হারালে প্রথমেই তাকে একটা শক্ত জায়গাতে শুইয়ে দিতে হবে। তাকে হালকাভাবে ধাক্কা দিয়ে দেখতে হবে তিনি সাড়া দিচ্ছেন কিনা। সাড়া না পেলে প্রথমেই তার আশেপাশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাহায্য চাইতে হবে। (ii) জ্ঞান না থাকলে অনেক সময় শ্বাসপথ বন্ধ হয়ে থাকে। তাই আক্রান্তকে চিত  করে শোয়ানো অবস্থায় চিবুকটিকে একটু তুলে বা গলার পিছন দিকে হাত দিয়ে, মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে শ্বাসপথ অবাধ রাখতে হবে। (iii) যদি কৃত্রিম দাঁত থাকে তা বের করতে হবে এবং মুখের ভিতরে আগাছা বা বিজাতীয় পদার্থ থাকলে তা প্রথমে বের করতে হবে। জিহ্বা উলটে থাকলে তা সোজা করে দিতে হবে। (iv) মানুষটির পাশে হাঁটু মুড়ে বসে, কান দিয়ে তাঁর নাকের ভেতর থেকে আসা নিশ্বাসের প্রবাহ অনুভব করতে হবে। দেখতে হবে তাঁর বুক ও পেটের ওঠানামা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ। (v) যদি শ্বাসপ্রশ্বাস চালু থাকে অথচ সাড়া না দেয়, তবে ডান দিকে/বাঁদিকে পাশ ফিরিয়ে, “নিরাপদ ভঙ্গিতে শুইয়ে দিতে হবে। (vi) নাড়ির স্পন্দন না পাওয়া গেলে, বাইরে থেকে হৃৎপিণ্ড মালিশ করার পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। 

(vii) শ্বাসপ্রশ্বাস চালু না থাকলে অজ্ঞান মানুষটির মুখ শক্ত কিছু দিয়ে ফাঁক করে। একটি বা দুটি আঙুল ঢুকিয়ে মুখের ভিতর খাবার বা রক্ত যদি থাকে তা বার করে দিতে হবে। (viii) গলার মাঝখানে উঁচু হয়ে থাকা অ্যাডামস অ্যাপেল বা থাইরয়েড কর্টিলেজের যে কোন একপাশে গলার মাংসপেশির
খাঁজে দু-আঙুল দিয়ে ক্যারোটিড ধমনীর স্পন্দন অনুভব করতে হবে। (ix) রোগীকে যে কোনো একপাশে সুবিধামতো রেখে আক্রান্তের দিকে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে। (x) বুকের খাঁচার সবচেয়ে নীচের পাঁজরের দু-আঙুল নীচে বক্ষ অস্থির ওপর এক-হাতের তালুর ওপর অন্য হাতের তালু দিয়ে চাপ দিতে হবে। যাতে প্রায় পাঁচ সেমির মতো পাজরকে চেপে দেওয়া যায়। মিনিটে প্রায় ১০০ বার চাপ দেওয়া যায় এমন ছন্দে কার্ডিয়াক মাসাজ করে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসক না আসেন বা রোগীর জ্ঞান না ফিরে আসে।


(g) Airway Bneathway Circulation কী ?
উঃ। সম্প্রতি ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ইনটারন্যাশানাল লিয়াস কমিটি অন রিসাসিটেশন'-এর সুপারিশ অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তিকে আচমকা জ্ঞান হারাতে দেখা যায় এবং তাঁর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, শুধুমাত্র কার্ডিয়াক মাসাজ অর্থাৎ-ABC (Airway Breathing Circulation)
A- এয়ার ওয়ে-শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে হবে।
B-প্রশ্বাস-মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বভাবিক করবার চেষ্টা করতে হবে।
C- সার্কুলেশন-রক্তপাত হলে তা বন্ধ করতে হবে।
এই পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত হন বা রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে এবং সি এ বি (Circulation Airway Breathing)- এই ধাপে সি সি আর বা Cardio Cereobra Cerebral Resuscitation- করতে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্ঞান হারাবার প্রাথমিক কারণ হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হওয়া ধরা যেতে পারে। কারণ আচমকা হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ হলে, প্রায় সবক্ষেত্রে আগে হৃদযন্ত্র চালু করা জরুরি। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে বা জলে ডুবে গেলে সাধারণত প্রাথমিক কারণে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয় না। তাই সেক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাসও চালু রাখতে হবে। জলে ডোবা বা এমন ক্ষেত্রে যখন প্রাথমিক কারণ শ্বাসতন্ত্র, তখন শুধু কার্ডিয়াক মাসাজ করলে চলবে না। সাধারণভাবে ২:৩০ অনুপাতে শ্বাসক্রিয়া ও হৃদ্যন্ত্রের ছন্দ পালন করতে বলা হচ্ছে, আর শিশুদের ক্ষেত্রে ১:৩০ অনুপাতে শ্বাসক্রিয়া ও হৃদক্রিয়া পালন ছন্দ পালন করা প্রয়োজন।


(a) সাপ বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা দূর করতে তুমি কী ধরনের সচেতনতা প্রকল্প গ্রহণ করবে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।
(b) প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ঔষধসহ বাক্স প্রস্তুত করে প্রাথমিক চিকিৎসা হাতে কলমে করো।
(c) হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখার পদ্ধতির ছবিগুলি পর্যায়ক্রমিক সূচি অনুসারে সাজাও।
(d) হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্রিয়াহীনতা বজায় রাখার পদ্ধতিগুলি ছবিসহ একটি পোস্টারের সাহায্যে দেখাও।
উঃ। উপরের দেওয়া প্রকল্পগুলি শিক্ষক/শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজ অভিজ্ঞতার দ্বারা করতে চেষ্টা করো। পাঠ্যবইয়ের ৩৫ পাতার ছবিগুলি দেখে (c) প্রকল্পটির উত্তর লেখো।


সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :


১. ভারতবর্ষে সরকারি হিসাবে কত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান ?

উঃ। প্রতিবছর ভারতবর্ষে সরকারি হিসাবে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান। এছাড়া ওঝা ও গুণিনদের হাতে সাপের কামড়ের ভুল চিকিৎসায় বহু মানুষ মারা যায়।

২. সাপের কামড়ে বেশিরভাগ মানুষ কীভাবে মারা যান ?
উঃ। আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ সাপই বিষধর নয়। সাপ কামড়ালে যে পরিমাণ বিষ ঢালে তাতে অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সাপে কামড়ানো মানুষের মধ্যে একটা বেশিরভাগ অংশই আতঙ্কে হার্টফেল করে মারা যায়।


৩. ভারতবর্ষে কয় প্রকার সাপ দেখা যায় ? কী কী ?
উঃ। ভারতবর্ষে সাধারণত তিন ধরনের সাপের দেখা পাওয়া যায়। এগুলি হল বিষধর, ক্ষীণ বিষধর ও নির্বিষ সাপ।
কয়েকটি মারাত্মক বিষধর সাপ হলো কালাচ, কেউটে, গোখরো, শাঁখামুটি, শঙ্খচূড় ও চন্দ্রবোড়া।


৪. কয়েকটি ক্ষীণ বিষধর ও নির্বিষ সাপের নাম লেখো।
উঃ। কয়েকটি ক্ষীণ বিষধর সাপ হলো – কালনাগিনী, লাউডগা, নোনাবোড়া, মেটেলি ইত্যাদি।
কয়েকটি নির্বিষ সাপ হলো—জলটোড়া, দাঁড়াশ, ঘরচিতি, অজগর, পুঁয়ে, থুথুক, হেলেসাপ ইত্যাদি।


৫. পশ্চিমবঙ্গে কোন্ কোন্ প্রজাতির বিষাক্ত সাপ দেখা যায়?
উঃ। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত কেউটে, চন্দ্রবোড়া, কালাচ, গোখরো, শাঁখামুটি প্রভৃতি বিষাক্ত সাপ দেখতে পাওয়া যায়।


৬. যে কোনো ধরনের সাপ কামড়ালেই কি মানুষ মারা যেতে পারে ?
উঃ। না, শুধুমাত্র বিষধর সাপ কামড়ালেই বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকে।

৭. বিষধর সাপ কামড়ালে মারা যায় কেন ?
উঃ। বিষধর সাপ কামড়ালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না করে ওঝা, গুণিন এর কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করার ফলে রোগী মারা যায়।


৮. সাপে কাটা রোগীর সঠিক চিকিৎসা কী ?
উঃ। প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তারপর যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

৯. সাপের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উঃ। সাপ সরীসৃপ প্রাণী। এদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ নয়। এরা স্থির বস্তু ভালো দেখতে পায় না। সাপের বহিঃকর্ণ নেই, বাতাসে উৎপন্ন কোনো শব্দ এরা শুনতে পায় না। সাপ মানুষের থেকে জোরে দৌড়াতেও পারে না। সব সাপ বিষাক্ত নয়। মানুষ সাপের খাদ্যবস্তুও নয়, সাপ ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার জন্য মানুষকে কামড়ায়।


১০. সাপের বিষ কীভাবে ক্ষতিসাধন করে ?
উঃ। সাপের বিষ মূলত দু-প্রকারে ক্ষতিসাধন করে-
(a) নিউরোটক্সিন (স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া ধ্বংস করে) (b) হেমাটোটক্সিন (রক্তকলার ক্ষতি করে)।
বিষধর সাপের বিষের উপাদানগুলো কোনোটি স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া ধ্বংস করে, আবার কোনোটি দেহকলা বিনষ্ট করে। কিডনির পচন ঘটে—লোহিতকণিকা ধ্বংস করে-রক্ত জমাট বাঁধে।

১১. সাপ বিষয়ে কী কী সচেতনতা গ্রহণ করা প্রয়োজন ?
উঃ। বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ অনুযায়ী সাপ ধরা, মারা ও সাপ নিয়ে খেলা দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ। নিজেরা কেউ সাপ মারব না অন্য কাউকেও সাপ মারতে দেব না। এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।

১২. সাপ মানুষের বন্ধু না শত্রু ?
উঃ। সাপ মানুষের বন্ধু। সাপ নিরীহ জীব। তার বিষ একটি প্রাকৃতিক নিঃসরণ। মানুষ কোনোদিনই সাপের খাদ্য ছিল না। সাপ জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রাণী। সাপ বিলুপ্ত হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হরে।'

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :

১. সাপে কাটা রোগীর ক্ষেত্রে কী করা উচিত নয় ?
উঃ। (i) উত্তেজনাকর কিছু খাওয়ানো যাবে না। (ii) তাবিজ, কবচ, ওঝা, শেকড়-বাকড়ে সময় নষ্ট করবে না। (ii) রোগীকে হাঁটাবে না, নড়াচড়া করাবে না। (iv) হাসপাতালে পাঠাতে বিলম্ব করবে না। (v) ক্ষতস্থান কাটবে না। (vi) মুখ দিয়ে টেনে বিষ করবার চেষ্টা করবে না। (vii) ক্ষতস্থানে কোনো রাসায়নিক পদার্থ দেবে না। (viii) হাঁটাচলা করাবে না এবং কড়া বাঁধন না দিয়ে হালকা বাঁধন দিতে হবে। (ix) ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা পরিষ্কার মোটা কাপড়ের পাড় দিয়ে এমনভাবে আটকাতে হবে যাতে ক্ষতস্থানে নাড়ির স্পন্দন বন্ধ না হয়ে যায়।

২. সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় কেন ?
উঃ। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন মজুত থাকে। ফলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শমতো অ্যান্টিভেনম ইনজেকশকন দেবার সুযোগ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সহজ হয়। অবশ্য এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থাগুলিও নিতে হবে।


৩. সাপ মানুষের বন্ধু বা শত্রু? তাদের বাঁচানো প্রয়োজন কেন?
উঃ। সাপ মানুষের বন্ধু। সাপের বিষ মানুষের ক্ষতির জন্য সৃষ্টি হয়নি। সাপের বিষ একটি প্রাকৃতিক নিঃসরণ যা কিছুদিন পরপর তৈরি হয়। সাপ তার বিষ খাদ্যবস্তুকে হজম করার কাজে ব্যবহার করে। সাপ নিরীহ জীব। পৃথিবীতে ১৩.৫ কোটি বছর আগে সাপ আবির্ভূত হয়েছিল, এর অনেক পরে মানুষ সৃষ্টি হয়েছিল। তাই মানুষ কোনোদিনই সাপের খাদ্য ছিল না এবং এখনও নয়। সাপ জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রাণী। সাপ বিলুপ্ত হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ে তা ইন্ধন জোগাবে। একটি সাপ বছরে গড়ে ৩৫০টি ইঁদুর খেতে পারে। কীটপতঙ্গ, মশার লার্ভা প্রভৃতি ক্ষতিকারক প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করে। সাপের বিষ থেকে বিষের প্রতিষেধক এ. ভি. এস তৈরি হয়। এছাড়া ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে এবং গবেষণা চালানো হচ্ছে। সাপ ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার জন্য মানুষকে কামড়ায়। এই পৃথিবীতে তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাই সাপ বাঁচুক সাপের জগতে, মানুষ বাঁচুক তার নিজ কর্মে।

৪. কেউটে সাপের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দাও।
উঃ। কেউটের বিজ্ঞানসম্মত নাম Naja naja Kautia। ভয়ংকর বিষধর সাপ কেউটে। এই সাপ কামড়ানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যে মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রকে বিনষ্ট করে দেয়। বিপজ্জনক মাত্রায় বিষ ঢালতে পারলে আর সঙ্গে সঙ্গে যদি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মৃত্যু অনিবার্য। কেউটের গতি দ্রুত ও এরা খুবই সজাগ। ভয় পেলে শরীর তুলে হিস হিস শব্দ করে এরা কামড়াতে
আসে। এদের ফণা আছে, ফণার পিছনে একটি গোল চিহ্ন থাকে। ফণার সামনের দিকে দু-পাশে কালো চিহ্ন থাকে। চিহ্নের নীচের দিকে আড়াআড়ি কালচে ব্যান্ড বা পটি দেখা যায়। শরীরের রং বাদামি, হলুদ, ধূসর বা কালোর সঙ্গে সমান বা হলুদ-কালো ডোরাকাটা। এদের ফণার পিছনে একটি চোখের মতো দাগ সবসময় চোখে পড়ে। লেজের তলার আঁশ গাঢ়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রং কালো, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রং বদলে বাদামি রং-এর হয়ে যায়। চারপাঁচ ফুটের মতো লম্বা হয়। ফণা তুলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নামিয়ে নেয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এরা ৮ থেকে ১৮টি ডিম পাড়ে। অল্প ভেজা মাটিতে এরা থাকতে ভালোবাসে। সুন্দরবনে এই সাপ দেখা যায়। এছাড়াও হরিয়ানা গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী এলাকা, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, সিকিম, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে এদের দেখা যায়। খেত খামার, উইঢিবি, গাছের কোটর, ইঁদুরের গর্ত, পানাডোবার ধারে বা ধানের গোলায় এরা বাস করে। ধান পাকবার সময় ধানের জমিতে বা জমির আলের গর্তে এরা খাদ্যের সন্ধানে ওঁত পেতে থাকে। ইঁদুর, ব্যাং, গিরিগিটি, টিকটিকি, পাখির বাচ্চা, ছোটো সাপ ইত্যাদি এদের
খাদ্য। কেউটে মূলত নিশাচর হলেও ভোরে ও সন্ধেবেলা এরা চলাচল করে। এদের চোখে রডকোশ থাকায় এরা রাতে ভালো দেখতে পায় এবং নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানে।


৫. চন্দ্রবোড়া সাপের পরিচয় দাও।
উঃ। চন্দ্রবোড়া সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Vipera russelli. এই সাপের দেহ মোটা, মাথা ত্রিকোণ দেহের মাঝের অংশটি মোটা ও মাথা এবং লেজের দিকটি সরু। এই সাপ গোল পাকিয়ে থাকতে ভালোবাসে।
এদের শরীরের রং বাদামি বা হলদে বাদামির সঙ্গে তিনটে করে লম্বালম্বি গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ। দেখতে অনেকটা শিকলের মতো বলে অনেকে 'চেইন ভাইপার’ বলে। এদের পেটের রং সাদা। এদের কোনো ফণা নেই। এরা বাচ্চা দেয়, ডিম পাড়ে না। এই সাপ মূলত নিশাচর, স্ত্রী সাপ মে-জুলাই মাসে ৬ থেকে ৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে। এই সাপ বিরক্ত হলে জোরে হিসহিস শব্দ করে। উত্তেজিত হলে বা কোণঠাসা হলে মাথা থেকে দেহের কিছুটা অংশ তীব্রবেগে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে যে কোনো দিকে সজোরে কামড়াতে পারে। চন্দ্রবোড়ার বিষদাঁত ভারতীয় সাপেদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ফলে এদের দংশনের গভীরতা অনেক বেশি। চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমাটোটক্সিন বা রক্তনাশক। খোলা মাঠ, বাঁশঝাড়, কচুবন, পুরোনো ইটের পাঁজা, উইঢিবি, কাঁটাগাছের জঙ্গল, পাথরের মাঝে এদের দেখা যায়। এদের মূল খাদ্য হলো ইঁদুর, ব্যাং, টিকটিকি ইত্যাদি।


৬. শাঁখামুটি সাপ সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। শাঁখামুটি সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus Fasciatus। এই সাপ দেখতে ভারি সুন্দর। এর আঁশ মসৃণ, মাথা ঘাড়ের চেয়ে সামান্য চওড়া। এদের চোখ কালো, লেজ ছোটো ও ভোঁতা। এদের দেহে
হলুদ ও কালো মোটা পটির মতো দাগ দেখা যায়। স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাস নাগাদ ৪ থেকে ১৪টি ডিম পাড়ে। শাঁখামুটি দিনের বেলায় খুবই শান্ত কিন্তু রাতে প্রচণ্ড সক্রিয়। এদের বিষ নিউরোটক্সিন জাতীয়। এদের মূল খাদ্য সাপ, সাপের ডিম, ইঁদুর, মাছ, ব্যাং। এমনকি কালাচ, চন্দ্রবোড়া সাপ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
সাধারণত ঝোপজঙ্গল, বিহার, ওড়িশা, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশে এই
সাপ দেখা যায়।


৭. কালাচ সাপের পরিচয় দাও।
উঃ। কালাচ সাপের বিজ্ঞানসম্মত নাম Bungarus Caruleus। এই সাপের আঁশ মসৃণ, মাথা ঘাড়ের চেয়ে সামান্য চওড়া, চোখ সম্পূর্ণ কালো। এদের রং চকচকে, কালো, ধূসর, কালচে নীল বা গাঢ় বাদামির ওপরে সরু নীলের আভা। এদের পেটের রং চক্চকে সাদা বা হলদে। স্ত্রী সাপ মার্চ থেকে মে মাসে ৮
থেকে ১৮টি ডিম পাড়ে এবং দু'মাস পর্যন্ত ডিম পাহারা দেয়। এই সাপনিশাচর, ভারতবর্ষের সমস্ত স্থলচর সাপের মধ্যে এই সাপের বিষ সবচেয়ে শক্তিশালী। কালাচ সাপ মূলত রাত্রে কামড়ায় এবং শরীরের ক্ষতস্থান অসাড় করে দেয়। এদের বিষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এদের বিষ স্নায়ুনাশক ও রক্তনাশক হয়ে থাকে। ফলে বিষের তীব্রতা বুঝতে না পেরে চিকিৎসায় দেরী হওয়ায় মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। উইয়ের ঢিবি, ইঁদুরের গর্ত, ইটের ভাটায়,
জলের ধারে, বাগানে এমন কি ভাঁজ করা বা মোড়ানো গালিচায় কালাচ সাপকে বাস করতে দেখা যায়। সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাং ইত্যাদি এদের খাদ্য।

অন্যগুলোর সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে।
এই দুই প্রকারেই হূৎপিণ্ড রক্ত পাম্প বন্ধ করে দেয় এবং রক্তবাহী শিরাগুলোর মধ্যে রক্তের স্রোত বন্ধ হয়ে যায়।
৩. শিশুদের হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে কী করতে হবে?
উঃ। আচমকা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে সবার আগে হৃদযন্ত্র চালু করা জরুরি। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসনালিতে খাবার আটকানো বা জলে ডোবার কারণে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয় না। তাই সেক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখতে হবে। যখন হৃদযন্ত্রের বন্ধের প্রাথমিক কারণ শ্বাসতন্ত্র তখন শুধু কার্ডিয়াক মাসাজ করলে হবে না। সাধারণভাবে ২:৩০ অনুপাতে শ্বাসক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের ছন্দ পালন করতে হবে আর শিশুদের ক্ষেত্রে তা ১:৩০ অনুপাতে শ্বাসক্রিয়া ও হৃদক্রিয়া ছন্দ পালন করতে হবে।

৪. জলে ডোবার প্রাথমিক প্রতিবিধানগুলি কী কী ?
উঃ। যার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়ু ৩ মিনিট, যা করবার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
(i) যদি সম্ভব হয় ডুবে যাওয়া লোকটিকে/শিশুটিকে জল থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই যদি জলের গভীরতা দাঁড়াবার মতো হয় তাহলে তখনই ওই অবস্থায় মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে শুরু করতে হবে। তার আগে মুখের থেকে পাতা-ময়লা ইত্যাদি বের করে দিতে হবে। জীবটা উলটে গেলে সোজা করে দিতে হবে। (ii) যদি তার ফুসফুসে বাতাস ঢোকানো সম্ভব
না হয় তাহলে পাড়ে উঠেই তাড়াতাড়ি লোকটির মাথা পায়ের থেকে নীচু করে রাখতে হবে।
(iii) জলে ডোবা ব্যক্তির মুখ নীচের দিকে রাখতে হবে এবং মাথার অবস্থান একদিকে হেলিয়ে রাখতে হবে। যাতে শ্বাসপথে বা খাদ্যনালিতে জমা জল বেরিয়ে যেতে পারে।
 (iv) ভিজে জামাকাপড় খুলে দিতে হবে এবং দেহটিকে কম্বল দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে যাতে
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ফিরে আসে।
(v) আক্রান্তের চেতনা/জ্ঞান ফিরে এলে গরম চা/কফি/দুধ আস্তে আস্তে দিতে হবে।
(vi) যথাসম্ভব শীঘ্র হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. অঙ্গচ্ছেদ কাকে বলে ?

উঃ। দুর্ঘটনা বা নানা কারণে দেহাংশের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকে অঙ্গচ্ছেদ বলা হয়।


২. অঙ্গ প্রতিস্থাপন কাকে বলে?
উঃ। দেহের হাত পা ও আঙুল ইত্যাদি কাটা পড়লে বা দেহের কোনো অংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ওই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গ দেহের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হয়। একেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন বলা হয়।

৩. প্রেসার পয়েন্ট কাকে বলে?
 উঃ। রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য যেখানে কোনো ধমনী অথবা শিরাকে তার নিম্নস্থিত অস্থির উপর চেপে ধরা যায়, তাকে প্রেসার পয়েন্ট বলা হয়।

৪. প্রেসার পয়েন্ট ক্যাটি? তাদের নামগুলি লেখো।
উঃ। প্রেসার পয়েন্ট চারটি। এগুলি হল
 (i) ক্যারটিড প্রেসার পয়েন্ট
(ii) সাবক্লোভিয়ান প্রেসার পয়েন্ট
 (iii) ব্রেকিয়াল প্রেসার পয়েন্ট
(iv) ফিমোরাল প্রেসার পয়েন্ট।

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :

১. অঙ্গচ্ছেদ হয়ে যাওয়া অংশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের দ্বারা কীভাবে রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
উঃ। (১) প্রথমে প্রত্যক্ষ
ও পরোক্ষ চাপের দ্বারা রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(২) প্রত্যক্ষ চাপের দ্বারা রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ : ক্ষতস্থানের যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেখানে প্রত্যক্ষ চাপ দিতে হবে।
গ্লাভ্স পরে নিতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন অঙ্গটি একটি পরিষ্কার প্লাস্টিক শিটে ভালো করে মুড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু কখনই