ইতিহাসের কিছু প্রশ্ন - Online story

Wednesday, 18 September 2024

ইতিহাসের কিছু প্রশ্ন

 



 

 

প্রশ্ল-ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতির উপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব কী ছিল?
উঃ। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে একদিকে ভারতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
চলছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। এই যুদ্ধে একদিকে ছিল জার্মানি, ইতালি ও জাপান, আর অন্য দিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সোভিয়েত রাশিয়া। ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো ভারতকে একতরফা 'যুদ্ধরত' দেশ বলে ঘোষণা করে দেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড কোনঠাসা হয়ে যায়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জাপান যুদ্ধে যোগ দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারতের জড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। জার্মান আক্রমণে তখন ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সাহায্য পেতে উদগ্রীব হন। এই
পরিস্থিতিতে ভারতে আসেন স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপসের একটি দল। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যুদ্ধের পর ভারতকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেবেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়া ভারতীয়দের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখান। যুদ্ধের ফলে খাদ্য সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। গান্ধিজি এই সময় ডাক দেন 'ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো।' এই পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বসু সিদ্ধান্ত নেন যে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে হবে।

প্রশ্ন- তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের বিবরণ দাও।

উঃ। সতীশচন্দ্র সামস্তের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের পর তমলুক, মহিষাদল, নন্দীগ্রাম, ভগবানপুর প্রভৃতি অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তমলুকের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন। ঘূর্নিঝড়ে যখন মেদিনীপুর ক্ষতিক্রম্য তখন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ধনী ব্যক্তিদের বাড়তি ধান গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার টিকে ছিল।


প্রশ্ন:- সুভাষচন্দ্রের ছাত্রজীবন সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উঃ। ছোটোবেলা থেকে সুভাষচন্দ্র পড়াশোনায় খুবই মেধাবী ছিলেন। নানা কারণে সুভাষচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। এই সময় ওটেন সাহেবকে ঘিরে একটি ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই কারণে সুভাষ ও তার কয়েকজন সহপাঠীকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে তিনি বি. এ. পাশ করেন। ছাত্র থাকাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেরিটোরিয়ান আর্মির শাখায় চারমাসের জন্য সুভাষচন্দ্র যোগ দান করেন। এই সময় তিনি সামরিক প্রশিক্ষণও অসামরিক জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আই. সি. এস পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।

প্রশ্ন:- কংগ্রেসের হরিপুরা ও ত্রিপুরি অধিবেশন-এর বিবরণ দাও।
উঃ। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের হরিপুরা কংগ্রেসে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতির পদে নির্বাচিত হন। গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে নবীনদের মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে
ত্রিপুরি কংগ্রেসে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে সুভাষচন্দ্র পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু পরে সভাপতির পদত্যাগ করে দলের সহকর্মীদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন
করেন।

প্রশ্ন-মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের অন্তর্ধান সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ৩৮/২ এলগিন রোডের বসুবাড়ি থেকে মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশে সুভাষচন্দ্র গাড়ি চেপে বেরিয়ে যান। নিজের বাড়িতেই তিনি নজরবন্দি অবস্থায় ছিলেন। যাবার সময় পরনে ছিল লম্বা উঁচু গলা কোট, ঢিলে
সালওয়ার। মাথায় কালো টুপি। চোখে সরু সোনালি ফ্রেমের চশমা। গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন সুভাষচন্দ্রের ভাইপো শিশিরকুমার বসু। গোমো স্টেশনে দিল্লি কালকা মেল চড়ে প্রথমে পেশোয়ার, কাবুল, ইতালি ও মস্কো হয়ে সুভাষচন্দ্র পৌঁছলেন জার্মানির রাজধানী বার্লিনে। কিন্তু বার্লিনে হিটলারের কাছ থেকে বিশেষ কোনো সাহায্য পাননি সুভাষচন্দ্র।


 প্রশ্ন- হলওয়েল মনুমেন্ট সরানোর আন্দোলন কীরূপ ছিল?

উঃ। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতবর্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার মনস্থ করেন সুভাষচন্দ্র। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে তিনি জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যতটা আশা তিনি করেছিলেন ততটা সাড়া পাননি। সুভাষচন্দ্র এই সময় বাংলার হলওয়েল মনুমেন্ট সরানোর জন্য আন্দোলন করেন। অনেকে মনে করতেন সিরাজ-উদ-দৌলার নামে অপবাদ দেওয়ার জন্য হলওয়েল অন্ধকূপ হত্যার কথা বলেছিলেন। ফলে হলওয়েল মনুমেন্টটি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের প্রতীক
হয়ে উঠেছিল। হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের আন্দোলনে হিন্দু মুসলমান সকলে যোগদান করেছিলেন। এই আন্দোলন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই সুভাষচন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য এই হলওয়েল মনুমেন্টটি ভেঙে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।


প্রশ্ন:-আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতি সুভাষচন্দ্র বসুর আহ্বান কী ছিল?
উঃ। ‘ভারতের আজাদ হিন্দ ফৌজের স্বার্থে ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দেশ্যে আমি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। একজন ভারতবাসীর কাছে এটা আনন্দ ও গর্বের বিষয় যে-মুক্তি ফৌজের সেনাপতি হওয়া। এর থেকে
বড়ো কোনো সম্মান থাকতে পারে না। আমি যে দায়িত্ব নিচ্ছি তা যে কত বড়ো সে সম্পর্কে আমি সচেতন।' “আমি নিজেকে ভারতের আটত্রিশ কোটি মানুষের সেবক বলে মনে করি। প্রকৃত জাতীয়তাবাদ, ন্যায় বিচার এবং নিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে ভারতে মুক্তি ফৌজ গঠন হতে পারে।' 'মাতৃভূমির মুক্তির জন্য আটত্রিশ কোটি ভারতবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ভারতের স্বাধীনতা চিরদিন রক্ষার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। এরজন্য যে সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলার কথা বলা হয় তার একটাই লক্ষ্য হবে—ভারতের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা কিংবা মৃত্যুবরণ করা। আসুন 'দিল্লি চলো' ধ্বনি দিতে দিতে আসুন আমরা সংগ্রাম করতে থাকি এবং শপথ নিই যে লালকেল্লায় ভারতীয় পতাকা উড়বে। যতদিন না তা হয় ততদিন এই সংগ্রাম চলবে।' এই ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতি সুভাষচন্দ্র বসুর আহ্বান। ২৫ আগস্ট ১৯৪৩ আজাদ হিন্দ ফৌজের
সর্বাধিনায়ক হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসু এই নির্দেশনামাটি ঘোষণা করেছিলেন।


প্রশ্ন:-রানি ঝাসি বাহিনীর বিবরণ দাও।
উঃ। ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের অন্যতম নজির হলো আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি বাহিনী। কংগ্রেসে থাকার সময় সুভাষচন্দ্র নারীদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে থাকেন।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের নাম থেকে ওই বাহিনীর নাম রাখা হয় রানি ঝাঁসি বাহিনী। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৫০০ নারী ওই বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইম্ফল অভিযানে এই বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে নেমেছিল। ভারতীয় নারীদের আত্মমর্যাদা ও স্বাবলম্বনের ধারণা প্রতিষ্ঠার পথে রানি ঝাসি বাহিনী প্রেরণা যুগিয়েছিল।



প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার ও গণবিক্ষোভ সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উঃ। আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার শুরু হলে সারা দেশ জুড়ে গণবিক্ষোভের সূচনা হয়। ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাঁরা ছিলেন দেশদ্রোহী। কিন্তু ভারতীয়দের চোখে তাঁরা “মহান দেশপ্রেমিক' হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিচার বন্ধের দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। ওই বাহিনীর অন্যতম সদস্য রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ পথে নামে। গণবিক্ষোভের সূচনা দেখে কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা বন্দিদের পক্ষ নিয়ে উকিল হিসাবে আদালতে হাজির হন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিটিং মিছিল দেখা দেয় যা ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে। জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল মানুষ এতে যোগদান করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বন্দিদের শাস্তি ঘোষণা হলেও, গণঅভ্যূত্থানের আশঙ্কায় ব্রিটিশ সরকার পিছু হটে তিন বন্দিকে মুক্তি দেন।


প্রশ্ন:- নৌ-বিদ্রোহের বিবরণ দাও।
উঃ। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি বোম্বাইয়ের নৌ বিদ্রোহ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের ওপর আঘাত করেছিল। খাবারের মান খারাপ ও বর্ণবৈষম্যের অপমানের বিরুদ্ধে 'তলোয়ার' নামক জাহাজে যে ধর্মঘট ঘোষণা হয় তাই নৌ-বিদ্রোহ নামে পরিচিত। তাঁদের দাবি ছিল খাবারের মান উন্নত করা ও বেতনের সমতা বজায় রাখা। পাশাপাশি আজাদ হিন্দ বাহিনী ও অন্যান্য রাজবন্দিদের মুক্তির দাবীও বিদ্রোহীরা তুলেছিলেন। বিদ্রোহীরা সমস্ত রাজনৈতিক দলের পতাকা জাহাজের মাস্তুলগুলিতে উড়িয়ে দিয়েছিল। ব্রিটিশ প্রশাসন চরম দমননীতি গ্রহণ করে নৌ বিদ্রোহকে থামানোর চেষ্টা করে। ফলে ধর্মঘট দ্রুত সংঘর্ষের রূপ নেয়।


প্রশ্ন:; বেনিতো মুসোলিনি কে ছিলেন? তাঁর কোন্ প্রকল্পগুলি সুভাষকে উৎসাহিত করে ?
ঊ। বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন ইতালির রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর দুর্নীতি দূরীকরণ ও সামাজিক প্রকল্পগুলি সুভাষকে উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন-সাইমন কমিশনকে ফিরে যাওয়ার জন্য জনগণ কী করেছিল ?
উঃ। দেশজোড়া বিভিন্ন হরতালে কমিশনকে কালো পতাকা দেখিয়ে আওয়াজ তোলা হয়েছিল ‘সাইমন ফিরে যাও’।

প্রশ্ন:. কত খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়? উঃ। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়।

প্রশ্ন:- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কোন্ মামলা শুরু হয়? উঃ। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা।

প্রশ্ন:- ভগৎ সিং কেন স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন ?
উঃ। লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভগৎ সিং স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন।

.প্রশ্ন:- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কত খ্রিস্টাব্দে কার নেতৃত্বে হয় ?
উঃ। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়।

প্রশ্ন:-. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কে কে কেন্দ্রীয় আইনসভা কক্ষে বোমা ফেলেন ?
উঃ। ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত কেন্দ্রীয় আইনসভা কক্ষে বোমা ফেলেন।

প্রশ্ন:- কে, 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' ডাক দিয়েছিলেন? উঃ। 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' ডাক দিয়েছিলেন গান্ধিজি।


প্রশ্ন:-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন্ কোন্ দেশ দুটি দলে ছিল?
উঃ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একদিকে ছিল জার্মানি, ইতালি ও জাপান। আর অন্যদিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সোভিয়েত রাশিয়া।

প্রশ্ন:- কত খ্রিস্টাব্দে চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু হয়? উঃ। ১৯২৫ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু হয়।

প্রশ্ন:-. কবে রাওলাট আইন সংঘটিত হয়? উঃ । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রাওলাট আইন সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন:- দিল্লির লালকেল্লায় কাদের 'দেশদ্রোহী' বলে অভিযুক্ত করা হয় ?
উঃ। পি. কে. সেহগাল, জি. এস. ধিলো, শাহনওয়াজ খানকে দিল্লির লালকেল্লায় 'দেশদ্রোহী' বলে অভিযুক্ত করা হয়।

প্রশ্ন:-. কত খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহ ঘটে? কারা এই বিদ্রোহ শুরু করেন ?
উঃ। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহ ঘটে। 'তলোয়ার' জাহাজের সেনারা এই বিদ্রোহ শুরু করেন।

প্রশ্ন:- কে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য কোন উপাধি ত্যাগ করেন ?
উঃ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য 'স্যার' উপাধি ত্যাগ করেন।

প্রশ্ন:-. চৌরিচৌরা গ্রাম কোন জেলায় অবস্থিত ?
উঃ। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় চৌরিচৌরা গ্রাম অবস্থিত।

প্রশ্ন:- স্বরাজ্য দল কে কে গঠন করেন?

উঃ। স্বরাজ্য দল গঠন করেন চিত্তরঞ্জন দাশ ও মোতিলাল নেহেরু ।

প্রশ্ন:- খান-আবুদল-গফফর খানের বাহিনীর নাম কী ছিল?
উঃ। খুদাই-খিদমদগার।
• সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. সাইমন কমিশন কী? কেন ভারতীয়রা এর বিরোধ করে ?
উঃ। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয়দের সাংবিধানিক অধিকার খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিশন তৈরি করে। স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে ওই কমিশন ভারতে আসে।
এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনগুলি সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে। পাশাপাশি নানা স্তরে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন হরতালে কমিশনকে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘সাইমন
ফিরে যাও' আওয়াজ তোলা হয়।

২. 'ডান্ডি অভিযান' কী ?
উঃ। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ অর্জনের কথা ঘোষণা করে এবং আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়। আমেদাবাদের সবরমতী আশ্রম থেকে অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে গান্ধিজি দীর্ঘদিন পদযাত্রা করে গুজরাটের ডান্ডি নামক স্থানে পৌঁছে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল লবণ আইন ভঙ্গ করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা 'ডান্ডি অভিযান' নামে পরিচিত। সমুদ্রের তটভূমিতে একমুঠো লবণ তুলে গান্ধি প্রতীকীভাবে ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনকে অস্বীকার করেন।



৩. সীমান্ত গান্ধি সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে পাঠানরা আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। এদের নেতৃত্ব দেন খান আব্দুল গফফর খান। এরা ছিলেন অহিংস গান্ধিবাদী সংগ্রামী। গান্ধি অনুগামী হওয়ার সুবাদে আব্দুল গফফর খান ‘সীমান্ত গান্ধি' নামে পরিচিত হন। তাদের সংগঠনটির নাম ছিল খুদা-ই-খিদমদগার।

৪. কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উঃ। কাকোরি রেল স্টেশনে ডাকাতির অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার ভগৎ সিং ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা করে। এই মামলায় ভগতের সহযোগী রামপ্রসাদ বিশমিল, আসফাকউল্লাসহ চারজনের ফাঁসি হয়।


৫. ১৯৩০ এর দশকে কংগ্রেসের মধ্যে কেন মতবিরোধ দেখা দেয়?
উঃ। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুরোনো রক্ষণশীল নেতৃত্বের আন্দোলনের উপায় ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ভাবনা চিন্তার মধ্যে নানা মতপার্থক্য দেখা দেয়। সুভাষচন্দ্র, জওহরলাল প্রমুখ তরুণ নেতা স্বাধীনতা সংগ্রামে ও ভবিষ্যতের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে যুবসম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বৈপ্লবিক কর্মসূচির দাবী তোলেন। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও প্রাদেশিক সরকার পরিচালনায় কংগ্রেসের কি ভূমিকা হওয়া উচিত তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে একটা বিরাট মতবিরোধ বা ফাটল দেখা দেয়।


৬. 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' কী ?
উঃ। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনসভার কক্ষে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা মারেন। দুই বিপ্লবীই স্বেচ্ছায় ধরা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রশাসন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' শুরু করেন। সেই মামলার রায়ে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ ভগৎ সিংহ সহ বটুকেশ্বর দত্ত, সুখদেও ও রাজগুরুর ফাঁসি হয়।



৭. হোমরুল আন্দোলন কী? এর গুরুত্ব কী ছিল ?
উঃ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বায়ত্তশাসন লাভের আশায় ভারতীয়রা হোমরুল আন্দোলনের ডাক দেয়। আয়ারল্যান্ডের হোমরুল আন্দোলনের অনুকরণে, ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যানি বেসান্ত ও বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে ভারতে হোমরুল
আন্দোলনের সূচনা হয়। বেসান্ত এর 'নিউ ইন্ডিয়া' ও তিলকের ‘মারাঠা' ও 'কেশরী' পত্রিকা আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। তবে হোমরুল আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তবে আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ প্রশাসন মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার দ্বারা ভারতীয়দের সীমিত স্বায়ত্তশাসনের দাবী মেনে নেয়।


৮. নেহেরু রিপোর্ট কী ?
উঃ। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে ভবিষ্যত ভারতের খসড়া সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে পণ্ডিত মোতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে গঠিত ৯ সদস্যের কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে।
এই রিপোর্ট নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত। তবে সুভাষচন্দ্র, জওহরলাল নেহেরু, জিন্নাহ সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই রিপোর্ট মানতে অস্বীকার করেন।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
১. গান্ধিজির স্বরাজ ভাবনা কীরূপ ছিল? তাঁর সব আদর্শ কি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল?
উঃ। গান্ধিজি তাঁর স্বরাজ ভাবনার আদর্শ বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন যে কেবল ব্রিটিশ শাসন বা সরকার নয়, পুরো পাশ্চাত্য আদর্শভিত্তিক আধুনিক শিল্প সমাজ ভারতের সাধারণ মানুষের শত্রু। তাই শুধু ঔপনিবেশিক শাসনকে হটালেই হবে না। সমাজে ঔপনিবেশিক শাসনের হাত ধরে যা যা গড়ে উঠেছে সেগুলিও ত্যাগ করতে হবে। তিনি চাষির মতো সরল জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন। এর পাশাপাশি যন্ত্রনির্ভর আধুনিক সভ্যতার বিরোধিতা করে তিনি খাদির পোশাক ও চরকা কাটার কর্মসূচি যোগ করেন। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি গান্ধিজি নিজের ব্যক্তিত্বকেও আলাদা রূপ দেন। হাঁটুর উপরে সাধারণ কাপড় পরা, সরল ভাষায় কথা বলা এবং গ্রাম্যজীবনের সঙ্গে জড়িত লোকধর্মের প্রতীক তিনি ব্যবহার করতে শুরু করেন।
স্বাভাবিক ভাবেই গান্ধির পাশ্চাত্য ও যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা বিরোধী বক্তব্য সবাই সমর্থন করেনি। মনে রাখতে হবে গান্ধিজি নিজেই তাঁর বক্তব্য প্রচারের কাজে সংবাদপত্র ব্যবহার করেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের জন্য তিনি
রেলব্যবস্থার সুবিধা নেন। সংবাদপত্র বা রেলব্যবস্থা ছিল আধুনিক যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার একটি প্রধান অঙ্গ। গান্ধিজি নিজের ব্যক্তিত্ব ও লোকবর্ণের অনুষঙ্গ ব্যবহার করে অসংখ্য সাধারণ মানুষের কাছে 'আপনজন' হয়ে উঠলেও তুলসীদাসী রামায়ণ বা রামরাজ্য প্রভৃতি প্রতীক দেশের হিন্দু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, কিন্তু দেশের অনেক সংখ্যক বিভিন্ন  ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীর কাছে সেগুলির গুরুত্ব তেমন ছিল না। বরং হিন্দু ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের ফলে গান্ধির আদর্শের মধ্যে একটা অংশের সর্বজনীনতা নষ্ট হয়েছিল।


২. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উঃ। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধি ডাক দেন 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে', ভারতজোড়া এই আন্দোলনে নানান অংশের জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ওই বছরে ১ আগস্ট ব্রিটিশ সরকার আন্দোলনের প্রধান নেতাদের গ্রেফতার করে। ফলত নেতৃত্ববিহীন সাধারণ মানুষ ভারতের নানা জায়গায় স্বতস্ফূর্তভাবে আন্দোলন চালান। ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত শহরগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। জনগণের সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে হরতাল ও বিক্ষোভ চলতে থাকে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই আন্দোলনের ভরকেন্দ্র শহর থেকে গ্রামের দিকে সরে যেতে থাকে। ব্যাপক সংখ্যায় কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দেন।
বিভিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করে দেওয়া হয়। কয়েকটি অঞ্চলে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সরকার গড়ে তোলে। মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমায় সতীশচন্দ্র সামস্তের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ভারতছাড়ো আন্দোলন দমন করার জন্য সরকারের তরফে বিরাট সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল। তমলুকের বৃদ্ধা বিদ্রোহিনী মাতঙ্গিনী হাজরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। বাস্তবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর এত বড়ো বিদ্রোহ যে ভারতে হয়নি তা ব্রিটিশ প্রশাসন স্বীকার করে নিয়েছিলেন।


৩. ভারতের রাজনীতিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযানের কী প্রভাব পড়েছিল?
উঃ । আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান সফল না হলেও ভারতের রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়েছিল। ওই ফৌজের বহু সেনাকে আত্মসমর্পনের পরে ভারতে আনা হয় এবং দিল্লির লালকেল্লায় তাঁদের বিচার শুরু হয়। এদের মধ্যে পি. কে. সেহগাল, জি. এস ধিলো ও শাহনওয়াজ খানকে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার অভিযুক্ত করে। আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ের প্রভাব ভারতীয় সেনাদের ওপর পড়েছিল। অনেক সৈনিক আজাদ হিন্দ ত্রাণ তহবিলে অর্থদান করেন। ব্রিটিশ সরকারের চোখে আজাদ হিন্দের সেনারা দেশদ্রোহী হলেও জনমানসের চোখে তাঁরা দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিচার বন্ধের দাবীতে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্য জনসভা ও মিছিল হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি বা ব্রিটিশ নৌবাহিনী প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আজাদ হিন্দ সেনাদের শাস্তি ঘোষিত হলেও গণঅভ্যূত্থানের
আশঙ্কায় ব্রিটিশ সরকার তিন বিচারাধীন বন্দিকে মুক্তি দেয়।



৪. আইন অমান্য আন্দোলনের বিবরণ দাও।
উঃ। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ অর্জনের কথা ঘোষণা করে এবং গান্ধির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল আইন অমান্য কর্মসূচির লক্ষে গান্ধিজি গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে দীর্ঘ পদযাত্রা করে ডান্ডির সমুদ্রতীরে পৌঁছান। সমুদ্রের তটভূমি থেকে লবণ তৈরি করে গান্ধিজি লবন আইন ভঙ্গ করেন এবং প্রতীকীভাবে ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনকে অস্বীকার করেন।
এরপর অতি দ্রুত দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ হরতাল ও বিক্ষোভে যোগ দিতে থাকেন। বিদেশি দ্রব্য বয়কট করার পাশাপাশি সরকারকে কর দেওয়া বন্ধ করে। কৃষকরা রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে। ব্যাপক সংখ্যায় নারীরা আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে খান আবদুল গফফর খানের নেতৃত্বে পাঠানরা আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হন। আইন অমান্য আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকার প্রবল দমননীতির সাহায্য নেয়। রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কংগ্রেসকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্রগুলির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ চাপানো হয়। পাশাপাশি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার একটি বৈঠক ডাকে। কংগ্রেস এই বৈঠক বয়কট করে। এর ফলে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ৪ মার্চ গান্ধি ও লর্ড আরউইনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে ঠিক হয় অহিংস সত্যাগ্রহী বন্দিদের ব্রিটিশ সরকার মুক্তি দেবে। দমনমূলক আইনগুলি সরকার তুলে নেবে। এর বদলে কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলন তুলে নেবে। পাশাপাশি লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গান্ধিজিকে উপস্থিত থাকাতে রাজি করায় ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় হতাশ গান্ধিজি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম থেকে আবার আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য জেলে যান। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আইন অমান্য আন্দোলন নিঃশর্ত ভাবে তুলে নেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আইন অমান্য আন্দোলন বিশেষ সফল হয় নি। হিন্দু মুসলিম ঐক্যও তেমনভাবে দেখা যায় নি। পাশাপাশি এই আন্দোলনে শহুরে শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত মানুষের যোগদান কম ছিল। শ্রমিকরা কম যোগ দিয়েছিলেন। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এই আন্দোলনে বেশি সংখ্যায় যুক্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি জাতীয় কংগ্রেস গান্ধির স্বরাজের আদর্শ থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস ধীরে ধীরে সংবিধানিক আধিকার পেতে বেশি উৎসাহী হয়ে পড়েছিল।


৫. সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযানের বিবরণ দাও ।
উঃ। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন মোহন সিং ও রাসবিহারী বসু জাপানে যুদ্ধবন্দি ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেন। রাসবিহারী বসুর অনুরোধে সুভাষচন্দ্র জাপানে গিয়ে এই বাহিনীর দায়িত্ব
নেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ বা স্বাধীন ভারতের যুদ্ধকালীন সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি এক নির্দেশনামায় বলেন এই সৈন্যবাহিনীর লক্ষ্য হইবে মাত্র একটি—ভারতের স্বাধীনতা লাভ, এবং ইচ্ছাও হইবে একটি—ভারতের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা কিংবা মৃত্যুবরণ করা ।....” জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে জাপান অধিকৃত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তুলে দেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রথম ব্যাটেলিয়ন রেঙ্গুন থেকে ভারত অভিমুখে যাত্রা করে। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ ভারতের মাটিতে তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এপ্রিল মাসে আজাদ হিন্দ বাহিনী কোহিমা অবরোধ করে। কিন্তু আজাদ হিন্দের দুই রেজিমেন্টসহ জাপানের সেনাবাহিনীর ইম্ফল অভিযান বিপর্যস্ত হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান কোণঠাসা হয়ে পড়ার ফলে বার্মা সীমান্ত থেকে জাপান তার বিমানবাহিনী যুদ্ধরত এলাকায় সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। প্রবল বর্ষার ফলে খাদ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া রোগ, শীত, ম্যালেরিয়া প্রভৃতির জন্য প্রচুর সৈনিক মারা যান। নানা সমস্যা ও বাধার ফলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযান সফল হয়নি। তবু সুভাষচন্দ্র নিরাশ হননি। তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে সাহায্যের আশা করেন। জাপান সরকার সুভাষচন্দ্রকে রাশিয়া চলে যাওয়ার জন্য মাঞ্চুরিয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু যাত্রাপথে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তাইওয়ার্নের তাইহোকু  বিমানবন্দরে এক দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয় বলে প্রচারিত হয়। তবে খবরটির সত্যতা সম্পর্কে সংশয় তৈরি হয়। ভারতবাসী এই সংবাদ বিশ্বাস করেননি তাঁরা মনে করেন সুভাষচন্দ্র বসু আজও জীবিত আছেন।