অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা চতুর্থ অধ্যায় অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
অষ্টম শ্রেণি
স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা
চতুর্থ অধ্যায়
বিপর্যয় মোকাবিলার শিক্ষা
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
Section -1: Recap Zone
১. শূন্যস্থান পূরণ করো :
(a) ঘূর্ণিঝড় এক প্রকার........বিপর্যয়।
উঃ।প্রাকৃতিক
(b) ঘূর্ণিঝড় ঘন্টায় ..... থেকে........কিমি/ঘন্টা বেগে চলতে পারে।
উঃ।৫০, ১৮০,
(c) .........অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বেশি দেখা যায়।
উঃ। উপকূলবর্তী
(d) ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমাতে...... ভীষণ জরুরি।
উঃ। গাছ লাগানো,
(e) ......... ও মে মাসে আরাকান উপকূলে অস্ত্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে।
উঃ। এপ্রিল
(f) ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমাতে দৃঢ়মূল ঘন সন্নিবিষ্ট....... ভীষণ জরুরি।
উঃ। বৃক্ষরোপণ
(g) আবহাওয়া বিষয়ক সতর্কতা ও পরামর্শ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষদের ......স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
উঃ। নিরাপদ
২. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো ও ভুল থাকলে সংশোধন করো :
(a) প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারি সূত্রের তথ্য ও অনুসরণ করতে হবে।
উঃ। সঠিক।
(b) দুর্যোগের সময় গুজবে বিশ্বাস করতে হবে।
উঃ। ভুল।
(c) অকারণে আতঙ্কগ্রস্ত হবে না বা গুজব ছড়াবে না।
উঃ। সঠিক।
(d) ঘূর্ণিঝড়ের সময় উঁচু গাছ, উঁচু গাছ, বাড়ি, লাইটপোস্ট ইত্যাদির নীচে দাঁড়াবে না।
উঃ। ভুল।
(c) ঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে রোধ করা যায়।
উঃ। সঠিক।
(f) বিপর্যয়ের সময় সামাজিক সুরক্ষার ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অনেক দৃষ্ট প্রকৃতির লোক কমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের বিপথে পরিচালিত করে, পরিবার থেকে তাদেরকে নিয়ে যায়।
উঃ। সঠিক।
(g) বিদ্যালয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা শিক্ষার জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ এবং সুরক্ষিত বিদ্যালয়গৃহ তৈরি করা।
উঃ। সঠিক।
৩. সংক্ষেপে উত্তর দাও।
(a) ঘূর্ণিঝড়ের সময় কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত ?
উঃ। সর্বশেষ আবহাওয়া বিষয়ক সর্তকতা ও পরামর্শের জন্য রেডিয়ো/টিভির তথ্য জানতে হবে ও নিয়মিত খবর শুনতে হবে।
(i) সামাজিক সর্তকতামূলক পদ্ধতির দিকে নজর রাখতে হবে।
(ii) শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
(iii) সরকারি সূত্রের তথ্য অনুসরণ করতে হবে। (iv) জরুরিকালীন সর্যাম তৈরি রাখতে হবে। যাতে থাকবে পোর্টেবল ট্রানজিস্টর/রেডিয়োসেট, ব্যাটারি, টর্চ, অতিরিক্ত ব্যাটারি, হ্যারিকেন, ফার্স্ট এইড বক্স, শুকনো খাবার, পানীয় জল ও অন্যান্য নুন্যতম অত্যাবশ্যক সামগ্রী।
(v) জরুরিকালীন কিছু ফোন নম্বর (পুলিশ-প্রশাসন, হাসপাতাল, স্থানীয় চিকিৎসক, জন প্রতিনিধি ইত্যাদি) হাতের কাছে রাখতে হবে।
(vi) বাড়িতে হাতের কাছে রাখতে হবে প্লাস্টিক শিট, প্লাস্টিকের দড়ি, রাবার টিউব, ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ইত্যাদি। এগুলো সংকটজনক পরিস্থিতিতে কাজে লাগতে পারে।
(vii) খাদ্যশস্য/কৃষিজাত সামগ্রী নিরাপদ প্লাস্টিক ব্যাগে মজুত রাখতে হবে।
(viii) কাচের জানলা বন্ধ রাখতে হবে ও শাটার নামিয়ে রাখতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে দরজা-জানলা মেরামত করে নিতে হবে।
(ix) আশ্রয় নেওয়ার জন্য সাইক্লোন শেলটার ও নিরাপদ বাড়ি দেখে রাখতে হবে, কর্তৃপক্ষের পরামর্শ পেলে পরিবারের সঙ্গে সাইক্লোন শেলটারে চলে যেতে হবে। যাবার সময় কিন্তু নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী, কাগজপত্র ও জরুরিকালীন সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে মনে রাখতে হবে। যতদিন প্রশাসন সাইক্লোন শেলটারে থাকতে বলবে ততদিন সেখানে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
(x) রান্নার গ্যাস লিক করছে কিনা দেখে রাখতে হবে।
(xi) ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের মেইন সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে।
(xii) ঝড়ের পরবর্তীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য পড়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইন, পোল থেকে ঝুলে থাকা তার ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ, বিল্ডিং ও গাছ সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে।
(b) ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চারটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।
উঃ। (i) ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমাতে দৃঢ়মূল ঘনসন্নিবিষ্ট বৃক্ষরোপণ ভীষণ জরুরি। উপকূল অঞ্চলে গাছ লাগানো (বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে উপকূলরেখা বরাবর ছোটো থেকে বড়ো এই সারিতে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ঘটানো)-র মাধ্যমে বিপর্যয়ের মাত্রা বা প্রভাব কমানো যেতে পারে।
(ii) বছরের কোন সময়ে কোন কোন অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানচিত্র এবং অতীতের আবহাওয়ার নথি, বিগত বছর গুলোতে বাতাসের গতিবেগের পরিসংখ্যান ইত্যাদি।ইত্যাদি তথ্যের দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের ধরন, ম্যাক্ষতির তীব্রতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে আগাম জানা যায়। এছাড়া আবহাওয়া সংক্রান্ত নথি, যাতে হাওয়ার গতিবেগ ও দিকনির্দেশ করা থাকে তা থেকে কোনো অন্যলে ঝড়ের সম্ভাবনা বোঝা যায়। ফলে অনেকদিন আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড় আসার আগাম পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতর দিয়ে থাকে; সেইমতো সতর্কতা গ্রহণ করলে ক্ষয়ক্ষতি, জীবনহানির ঘটনা কম ঘটে।
(iii) জমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি থাকা দরকার এবং বিল্ডিং কোড যাতে ঠিকঠাক মানা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বিপদসংকুল এলাকাগুলোতে কেবলমাত্র পার্ক, চারণভূমি, খেলার মাঠ প্রভৃতিকে রাখা উচিত। নির্মাণ কাজের জন্য স্থাপত্যবিদ্যার সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(c) ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি লেখো।
উঃ। (i) ঘরবাড়ি এবং পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ঃ প্রবল ঝড়ে হালকা চালযুক্ত ঘরবাড়ি ও ভঙ্গুর পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ের পরে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং উপকূল অঞ্চলের ঢেউ-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয় পার্শ্ববর্তী এলাকা।
(ii) প্রাণহানির ঘটনা ও জনস্বাস্থ্য : ঝড়ে ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর ও বস্তুর আঘাতে এবং বন্যার জলে ভেসে গিয়ে প্রচুর প্রাণহানি হয়। তাছাড়া বন্যাপ্লাবিত এলাকায় কলেরা ও ডায়ারিয়ার মতো রোগ ছড়ায় যা মহামারির আকার নিতে পারে।
(iii) পানীয় জল সরবরাহ ঃ ভূগর্ভস্থ জল ও নলবাহিত জল উভয়ই বন্যার জলে দূষিত হতে পারে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়।
(iv) শস্যের ক্ষতি ও খাদ্য সরবরাহ : প্রবল ঝড়ে ও বৃষ্টির জল জমে মাঠের ফসল ও মজুত শস্যের ব্যাপক ক্ষতি।হয়। জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে গিয়ে জমি অনুর্বর করে তোলে। বন্যার জলে ডুবে।যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
(v) যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি ঃ প্রবল ঝড় বিদ্যুতের ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টাওয়ার, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি টেলিফোন লাইন, অ্যান্টেনা, স্যাটেলাইট ডিস এবং সম্প্রচার ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে তছনছ করে দিতে পারে। রাস্তা।ও ট্রেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছোতে অসুবিধা হয়।
(d) ঘূর্ণিঝড়ের সময় কী করবে?
উঃ। (i) অকারণে আতঙ্কগ্রস্ত হবে না বা গুজব ছড়াবে না।
(ii) জলস্রোত বা নদীর কাছাকাছি যাবে না, বিপদ হতে।পারে।
(ii) ঘূর্ণিঝড়ের সময় উঁচু গাছ, বাড়ি, লাইটপোস্ট ইত্যাদির নীচে দাঁড়াবে না।
(iv) গবাদিপশুর মৃতদেহ যেখানে-সেখানে।নিক্ষেপ করবে না।
(v) গাছ কাটা বা জঙ্গল ধ্বংস করা যাবে না।
৪. রচনাধর্মী প্রশ্ন
(a) ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উঃ। (i) ঘরবাড়ি এবং পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ও প্রবল ঝড়ে হালকা চালযুক্ত ঘরবাড়ি ও ভঙ্গুর পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ের পরে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং উপকূল অঞ্চলের ঢেউ-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয় পার্শ্ববর্তী এলাকা।
(ii) প্রাণহানির ঘটনা ও জনস্বাস্থ্য ঃ ঝড়ে ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর ও বস্তুর।আঘাতে এবং বন্যার জলে ভেসে গিয়ে প্রচুর প্রাণহানি হয়। তাছাড়া বন্যাপ্লাবিত এলাকায় কলেরা ও ডায়ারিয়ার মতো রোগ ছড়ায় যা মহামারির আকার নিতে।পারে।
(iii) পানীয় জল সরবরাহ ঃ ভূগর্ভস্থ জল ও নলবাহিত জল উভয়ই বন্যার জলে দূষিত হতে পারে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব।দেখা দেয়।
(iv) শস্যের ক্ষতি ও খাদ্য সরবরাহ : প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির জল জমে মাঠের ফসল ও মজুত শস্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে গিয়ে জমি অনুর্বর
করে তোলে। বন্যার জলে ডুবে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
(v) যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি ঃ প্রবল ঝড় বিদ্যুতের ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টাওয়ার, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি।টেলিফোন লাইন, অ্যান্টেনা, স্যাটেলাইট ডিস এবং সম্প্রচার ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে তছনছ করে দিতে পারে। রাস্তা।ও ট্রেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছোতে অসুবিধা হয়।
(b) ঘূর্ণিঝড়ের বিপর্যয় কমানোর পদক্ষেপগুলি কী কী ?
উঃ। (i) ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমাতে দৃঢ়মূল ঘনসন্নিবিষ্ট বৃক্ষরোপণ ভীষণ জরুরি। উপকূল অঞ্চলে গাছ লাগানো (বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে উপকূলরেখা বরাবর ছোটো থেকে বড়ো এই
সারিতে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ঘটানো)-র মাধ্যমে বিপর্যয়ের মাত্রা বা প্রভাব কমানো যেতে পারে।
(ii) বছরের কোন সময়ে কোন কোন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানচিত্র এবং অতীতের আবহাওয়ার নথি, বিগত বছরগুলোতে বাতাসের
গতিবেগের পরিসংখ্যান ইত্যাদি ইত্যাদি তথ্যের দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের ধরন, ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে আগাম জানা যায়। এছাড়া আবহাওয়া সংক্রান্ত নথি, যাতে হাওয়ার গতিবেগ ও দিকনির্দেশ করা থাকে তা থেকে কোনো অঞ্চলে ঝড়ের সম্ভাবনা বোঝা যায়। ফলে অনেকদিন আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড় আসার আগাম পূর্বাভাস আবহাওয়া
দফতর দিয়ে থাকে; সেইমতো সতর্কতা গ্রহণ করলে ক্ষয়ক্ষতি, জীবনহানির ঘটনা কম ঘটে।
(iii) জমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি থাকা দরকার এবং বিল্ডিং কোড যাতে ঠিকঠাক মানা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বিপদসংকুল এলাকাগুলোতে কেবলমাত্র পার্ক, চারণভূমি, খেলার মাঠ প্রভৃতিকে রাখা উচিত। নির্মাণ কাজের জন্য স্থাপত্যবিদ্যার সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(c) ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় ছাত্র-ছাত্রী ও জনগোষ্ঠীর ভূমিকা লেখো।
উঃ। গ্রামের যুবগোষ্ঠী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মোকাবিলার জন্য গোষ্ঠী গঠন করতে হয়। প্রতিটি এলাকায় অধিবাসীদের সুবিধা অনুযায়ী পাঁচ থেকে দশজন সক্রিয় সদস্য নিয়ে এক-একটি সক্রিয় গোষ্ঠী।গঠন করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই জনগোষ্ঠীতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন করতে হবে। কানো একটি এলাকার বিপর্যয়ের পূর্ববর্তী সময়, বিপর্যয়ের সময় ও বিপর্যয়ের পরবর্তী সময়ের জন্য সুসংহত দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সময় মোটামুটি ৯টি সক্রিয় গোষ্ঠী গঠন করতে হবে। গোষ্ঠীগুলো হলো—
(i) দুর্যোগের সতর্কীকরণ গোষ্ঠী, (ii) বিপর্যস্ত এলাকা থেকে সরিয়ে আনা ও উদ্ধারকার্য সম্পাদন গোষ্ঠী, (i) প্রাথমিক শুশ্রুষা ও চিকিৎসা গোষ্ঠী, (iv) জল ও শৌচাগার গোষ্ঠী, (v) মূর্তদেহ সৎকার গোষ্ঠী, (vi) পরামর্শদাতা গোষ্ঠী, (vii) ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন গোষ্ঠী, (viii) ত্রাণ ও সমন্বয় গোষ্ঠী, (ix) আশ্রয়স্থল ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠী।
৫. প্রকল্প ঃ ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতামূলক একটি সচেতনতার পোস্টার তৈরি করো।
উঃ। প্রকল্পটি শিক্ষক/শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সাহায্যে নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে করতে চেষ্টা করো।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কীরূপ হতে পারে?
উঃ। ঘূর্ণিঝড় প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ১৮০ কিমি বা তারও বেশি গতিবেগে এগিয়ে যেতে পারে।
২. ভারতের কোন্ উপকূলের জলোচ্ছ্বাস কম বিপদসংকুল ?
উঃ। ভারতের ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাস প্রবল উপকূলের মধ্যে পশ্চিম উপকূলের জলোচ্ছ্বাস পূর্ব উপকূলের জলোচ্ছ্বাসের তুলনায় কম বিপদসংকূল।
৩. জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কোথায় কোথায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়?
উঃ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি ঝড় ভারতের অন্ধ্র, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।
৪. অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে কোথায় কোথায় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায়?
উঃ। অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।
• রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ঘূর্ণিঝড় কীভাবে তৈরি হয় ?
উঃ। ঘূর্ণিঝড় একটি বিধ্বংসী ঝড় বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলের উয় সমুদ্রের উপরের বাতাস প্রচণ্ড উত্তাপে হালকা হয়ে উপরে উঠে গেলে সেই স্থানে একটি প্রবল বায়ুর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। তখন সেই
নিম্নচাপের কেন্দ্রের চারপাশের বায়ু সেই জায়গা পূরণ করতে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসে। এর ফলে শক্তিশালী কেন্দ্রমুখী, উর্ধ্বগামী যে প্রবল বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে।
২. ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বিদ্যালয়ে কীভাবে ঘটে আলোচনা করো।
উঃ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্বাভাবিক, প্রকৃতির নিয়মে তা হয়, হবে। প্রতিবার একটি দুর্যোগ বিপর্যয়ে ঘটায়, বহু শিশু তারপর আর বিদ্যালয়ে ফিরে আসে না। এইসব বিপর্যয়কে আমরা মোকাবিলা করতে পারি আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগে, পরিকল্পনার মাধ্যমে, সঠিক প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিয়ে।
(i) বিপর্যয়ের সরাসরি প্রভাব পড়ে যখন ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা একটি অ-সুরক্ষিত বিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এই বিদ্যালয়টি নিশ্চয়ই বিপজ্জনকভাবেই তৈরি হয়েছিল অথবা মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়ে এটাকে তৈরি করা হয়নি।
(ii) ক্ষতিগ্রস্ত একটি বিদ্যালয় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকারকে সংকুচিত করে। সময় নষ্ট হলে শিক্ষার গুণগত মান পড়ে যায়। যদি বিদ্যালয় চালিয়ে যাওয়ার মতো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে, তবে নিরন্তর শিক্ষায় ছেদ পড়ে, ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীই পরবর্তীকালে আর পড়া অনুসরণ করতে পারে না ও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার আঙিনা থেকে হারিয়ে যায়।
(iii) একটি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়কে সারিয়ে তুলতে যে খরচ হয় প্রথম থেকেই একটি সুরক্ষিত বিদ্যালয় তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের চেয়ে তা অনেক বেশি। অভিভাবকদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তাতে বাড়ির ছোটোদের শিক্ষার পিছনে খরচ করতে তারা অপরাগ হয়ে পড়ে।
(iv) বিপর্যয়ের ফলস্বরূপ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তা তাদের মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু সঠিকভাবে মোকাবিলা করার মতো ব্যবস্থা আগে থেকে নিলে, ছাত্রছাত্রীরা মোকাবিলা করার আনন্দ উপলব্ধি করে এবং ভবিষ্যতের জন্য মানসিক সবলতা লাভ করে।
৩. নিরাপদ বিদ্যালয় কীরূপ হওয়া উচিত?
উঃ। শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইনে প্রতিটি বিদ্যালয়কে শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
(i) বিদ্যালয়টি ঝুঁকিসম্পন্ন নয় অর্থাৎ বিপর্যয় মোকাবিলা করার ক্ষমতা তার আছে। যেমন—ভূমিকম্পে সহজে ভাঙবে না।
(ii) বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাইরে তার অবস্থান। যেমন—বন্যাপ্রবণ এলাকায় উঁচু জায়গায় বিদ্যালয়টি থাকবে।
(iii) বিদ্যালয়টির শৌচাগার ও রান্নাঘর সম্পূর্ণ নিরাপদ। যেমন—রান্নাঘর থেকে আগুন লাগার
সম্ভাবনা নেই।
(iv) পড়ুয়াদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে বিপদের সম্ভাবনা থাকবে না।
(v) বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষাসহায়কদের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে।
৪. শিশুদের উপর বিপর্যয়ের কী কী প্রভাব দেখা যায় ?
উঃ। বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হয় শিশুরা। এইসময় তাদের বড়োদের সঙ্গে ঘরছাড়া হতে হয়। এর প্রবল প্রভাব পড়ে তাদের উপর। তাদের চেনা জগৎটা হারিয়ে যায়। এছাড়াও দেখা গেছে বিপর্যয়ে শিশুরা সবচেয়ে বেশি মারা যায়। এই সময় তারা পরিবারের সহায়তা পুরোপুরি পায় না, জীবনযাপনের অন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা ও তাদের নাগালের ভিতর থাকে না। এছাড়া এইসময় তারা তাদের শিক্ষার জগৎ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ফলে সমবয়সিদের সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হয়।
E