অষ্টম শ্রেণি স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা পঞ্চম অধ্যায় অনুশীলনী প্রশ্নের উত্তর
অষ্টম শ্রেণি
স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা
পঞ্চম অধ্যায়
ক্রেতা সুরক্ষা
পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ঃ
১. উপভোক্তা সুরক্ষা আইন কবে চালু হয় ?
উঃ। ১৯৮৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারতবর্ষে উপভোক্তা সুরক্ষা আইন চালু হয়।
২. উপভোক্তা কারা ?
উঃ। প্রকৃত অর্থে সবাই উপভোক্তা। সারা দুনিয়ার অর্থনৈতিক বাজারে আর্থিক লেনদেনের তিন ভাগের দুই ভাগ জোগান দেন যারা তারা উপভোক্তা।
৩. কোন্ চিহ্ন দ্বারা সোনার গহনার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় ?
উঃ। হলমার্ক চিহ্ন দ্বারা।
৪. কীসে ওজন করা বেআইনি?
উঃ। কাঠের দাড়িপাল্লায় ওজন করে মাল বিক্রয় করা বেআইনি।
৫. দোকানে তৈরি জামাকাপড়ের মাপ কীভাবে দেখতে হবে?
উঃ। জামাকাপড়ের মাপ সেন্টিমিটারে দেখতে হবে।
৬. গ্যাসের সিলিন্ডারের গায়ে কত ওজন লেখা থাকে?
উঃ। ১৪.২ কেজি ওজন লেখা থাকে।
৭. বরফ, লাড্ডু, পান প্রভৃতি খাদ্যে কী ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত করা হয় ?
উঃ। এগুলিতে তবক হিসেবে ভোজ্য রূপোর বদলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করা হয়।
৮. উপভোক্তা কতদিনের মধ্যে অভিযোগ জানাতে পারেন ?
উঃ। অভিযোগের কারণ ঘটার ২ বছরের মধ্যে উপভোক্তাকে অভিযোগ জানাতে হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. আইন প্রবর্তন হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও এ-দেশে উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত নয় কেন ?
উঃ। এদেশে উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত না হওয়ার কতকগুলি কারণ রয়েছে। অধিকার সম্পর্কে উপভোক্তাদের অজ্ঞতা। অধিকাংশ উপভোক্তাই সংগঠিত নন। অধিকাংশ উপভোক্ত নিজেদের অধিকার প্রয়োগে উদ্যোগী হন না। • কোথায় এবং কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে তা অধিকাংশ উপভোক্তা।জানেন না।
২. উপভোক্তা কে ?
উঃ। কোনো জিনিস কেনা বা পরিসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে—
• কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সমবায় সমিতি উপভোক্তা হিসাবে বিবেচিত হবেন।
• যিনি বা যাঁরা নিজের বা নিজেদের ব্যবহারের জন্য কোনো দ্রব্য/পরিসেবা কেনেন।
• তিনি বা তাঁরা নগদে বা ধারে কিনলেও উপভোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
৩. উপভোক্তা অধিকারগুলি কী কী ?
উঃ। উপভোক্তা অধিকার আইনে (C.P. Act 1986) উপভোক্তাদের ছয় দফা অধিকার দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ফোরাম তৈরি করা হয়েছে।
(i) জীবন ও সম্পত্তির পক্ষে ক্ষতিকারক জিনিস বা পরিসেবার বিপণনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার অধিকার। (ii) জিনি বা পরিসেবা সংক্রান্ত তথ্যলাভের অধিকার।
(iii) প্রতিযোগিতামূলক দামে জিনিস বা পরিসেবার মধ্য থেকে বাছাই অধিকার।
(iv) প্রতিকার চাওয়ার অধিকার।
(v) শুনানির অধিকার।
(vi) উপভোক্তা শিক্ষার অধিকার।
৪. একজন উপভোক্তা কীভাবে তার অভিযোগ জানাতে পারবেন।
উঃ। সঠিক পদ্ধতিতে লিখিত ন্যূনতম তিনটি অভিযোগপত্র এ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ফোরামে জমা দিতে হবে।
• অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অতি অবশ্যই জমা দিতে হবে।
• অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে ফোরামের সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে।
৫. অভিযোগপত্রের দরখাস্তে কী কী উল্লেখ করতে হবে?
-অভিযোগকারীর নাম, পিন কোড সহ ঠিকানা ও ফোন নম্বর।।যার বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার বা তাদের নাম ও পুরো ঠিকানা (পিন কোড
ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
-অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হবে।
কী কী প্রতিকার চান জানাতে হবে।
-অভিযোগটি অন্য কোনো আদালতে বিচারধীন নেই—এই মর্মে ঘোষণা করে দিতে হবে।
৬. সৎ ব্যবসার আচরণবিধির কয়েকটি উল্লেখ করো।
উঃ। • সঠিক মূল্যে সঠিক পরিমাণ জিনিস/পরিসেবা বিক্রি করা। • প্রত্যেকটি বিক্রির
CON ক্ষেত্রে রসিদ দেওয়া। • গ্যারান্টি এবং ওয়ারান্টির যথাযথ স্বীকৃতি। • জিনিসের গুণ/উপকারিতা PROTIসম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া। • অসৎ ব্যবসাপদ্ধতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া।
৭. খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল কীভাবে মেশে এর ফলে কী হয়ে থাকে?
উঃ। কৃষিকার্যে বিভিন্ন প্রকার সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ফসলেই নানাপ্রকার ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে যা পরবর্তীকালে ওই ফসল থেকে প্রস্তুত খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে মানুষ বা জীবজন্তুর শরীরে প্রবেশ করে এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত বা বিপণন-এর সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যদ্রব্যে বিভিন্ন ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত করে তা দিয়ে অন্যায্য বাণিজ্য করে থাকেন। এর ফলে সাধারণ উপভোক্তারা সর্বদা সমস্যায় পড়েন।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. কেনাকাটার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?
উঃ। কেনাকাটার সময় একটু সতর্ক হলে উপভোক্তারা অনেক হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
(i) কেনাকাটা করলে রসিদ/ক্যাশমেমো ইত্যাদিসহ গ্যারান্টি/ওয়ারস্টি কার্ড নিতে হবে ও সেগুলো যত্ন করে রেখে দিতে হবে। জেনে রাখা রসিদ হারাবেন না ।ভালো, ৫০০ টাকার বেশি কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্যাশমেমো বা রশিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
(ii) প্যাকেট করা জিনিসে উৎপাদকের নাম, উৎপাদনের তারিখ এবং নীট ওজন বা পরিমাণ বা সংখ্যা লেখা আছে কিনা দেখে নিতে
হবে।
(ii) প্যাকেটের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরো দামের থেকে (MRP) বেশি দামে কোনো জিনিস বিক্রি করা বেআইনি।
(iv) বিদেশ থেকে আমদানি করা জিনিসের প্যাকেটে আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকে
(v) তৈরি জামাকাপড়ের মাপ শুধুমাত্র সেন্টিমিটারে দেখাতে হবে। 'XXL', 'XL', 'L', 'M', 'S', মার্কাযুক্ত পোশাক কেনা উচিত নয় কারণ এগুলি বেআইনি।
(vi) যে দণ্ডটি দিয়ে কাপড় মেপে বিক্রি করা হয় সেটি ইস্পাতের তৈরি এবং তার দৈর্ঘ্য ১ মিটার বা তার থেকে বেশি হতে হবে। দণ্ডের দুই প্রান্তে বৈধ পরিমাপন পরিদর্শকের দেওয়া চলতি বছরের ছাপ থাকতে হবে।
(vii) ওজন বা মাপে জিনিস কিনতে গেলে দোকানে বৈধ পরিমাপন দফতরের শংসাপত্র টাঙানো আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
(viii) কাঠের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে মাল বিক্রি করা বেআইনি।
(ix) ওজনে জিনিস কেনার সময়ে বাটখারাগুলো বৈধ কিনা দেখে নিতে হবে। বাটখারাগুলোর তলায় সিসার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বৈধ পরিমাপ পরিদর্শকের ইউনিট নম্বর, মেয়াদ সূচক বছর এবং কোয়ার্টারের ছাপ থাকা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, নবীকরণের পরে ওজনের কাঁটা এবং বাটখারাগুলো দু'বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে। কিন্তু সমস্ত ইলেকট্রনিক ওজনযন্ত্র ও পেট্রোল পাম্পে বছরে একবার নবীকরণ করা বাধ্যতামূলক।
(x) সোনার গয়নার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য 'হলমার্ক' চিহ্ন দেখে নিতে হবে।
(xi) হোটেলে/রেস্টুরেন্টে জলের বোতল বা পানীয়ের ক্ষেত্রে বোতলের গায়ে লেখা দামের
থেকে বেশি নেওয়া বেআইনি।
(xii) বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, পানীয় জলের বোতল, বেবিফুড, প্রেসার কুকার ইত্যাদি কেনার সময় ISI ছাপ দেখে নিতে হবে।
(xiii) ভোজ্য তেল, ঘি, মাখন, মধু, মশলা ইত্যাদি কেনার সময় প্যাকেটে আগমার্ক ছাপ দেখে কিনতে হবে।
(xiv) মোড়ক করা খাদ্যসামগ্রীর মোড়কের উপর ‘FSSAI' নং লেখা দেখে নিতে হবে।
(xv) টিন বা প্যাকেট ভরতি মাংস ইত্যাদি কেনার সময় MFPO ছাপ দেখে নিতে হবে।
প্রয়োজনে গ্যাসের ওজন দেখে নেওয়ার জন্য যে ব্যক্তি বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করতে আসছে তার কাছে স্প্রিং-তুলাযন্ত্র থাকা বিধিসম্মত। সিলিন্ডারে কতটা গ্যাস আছে তা দেখতে হলে সিলিন্ডারের গায়ে লেখা (খালি সিলিন্ডারের) ওজন ও গ্যাসের ওজন (১৪.২ কিগ্রা)-এর যোগফল তুলা-নির্দেশিত ওজনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। পেট্রোল/ডিজেল/কেনার সময় উপভোক্তা
যাতে প্রয়োজনে পেট্রোলের/ডিজেলের পরিমাপ পরীক্ষা করতে পারেন, জন্য প্রত্যেক পেট্রোল
পাম্পে প্রকাশ্যে পরীক্ষিত ৫ লিটারের পাত্র রাখা থাকে।