জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের গুরত্ব আলোচনা কর - Online story

Saturday 7 September 2024

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের গুরত্ব আলোচনা কর

 
৫. জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের কার্যকলাপের মূল্যায়ন করো
জাতীয় কংগ্রেসের আদি পর্বে নেতৃত্বকে নরমপন্থী বলে চিহ্নিত করা হয়। কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের
কার্তিকলাপ ছিল বার্ষিক অধিবেশন কেন্দ্রিক। বিভিন্ন প্রতিনিধিরা অধিবেশনে নানা  বক্তব্য ও প্রস্তাব পেশ করতেন। তার মধ্যে কিছু প্রস্তাব গ্রহন করে অধিবেশন শেষ হতো।  সারাবছর ওই গৃহীত ওই প্রস্তাবগুলি  নিয়ে জাতীয় স্তারে আন্দোলনের উদ্যোগ দেখা যেত না। বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ নিজেদের ব্যাক্তিগত পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকার সংগঠনের কাজে সময় দেওয়ার মানসিকতা তাদের ছিল না। তাদের প্রতিবাদ আন্দোলনের  পদ্ধতি ও লক্ষ‍্যগুলি ছিল একইরকম। অধিকাংশ নরমপন্থী নেতাদের কাছে ব্রিটিশ শাসন ছিল বিভিন্ন বিধান। নরমপন্থীরা চাইতেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও শাসানের
আওতায় থেকেই ভারত আংশিক স্বশাসন ভোগ করবে। তাঁরা আইনসভাগুলিতে ভারতীয়াদের আংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানাতেন। পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন আদি কংগ্রেসের নেতৃত্বের প্রধান কর্মসুচি ছিল না। কিন্তু সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনটি ছিল তাদের আন্দোলন পরিচালনার পথ।নরমপদীরা আশা করতেন একসময় ভারতবাসী স্বশাসানের উপযুক্ত হবে এবং তখন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সেই স্বশাসনের অধিকার মেনে নেবে। নরমপন্থীদের  অপর দাবি ছিল প্রশাসনের ভারতীয়করণ। সরকারি চাকরিতে ভারতীয়দের নিয়োগ বাড়লে প্রশাসন দেশীয় মানুষের অভাব অভিযোগের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। নরমপণীরা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বসার বয়স ১৯ এর বদলে এর 23 করার দাবি জানান‌। পাশাপাশি ভারতে ও লন্ডনে একই সঙ্গে পরীক্ষাটি নেওয়ার কথা বলা হয়। ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে নানা স্থানে যুদ্ধে ব্যবহার করা ও যুদ্ধখাতে খরচ বাড়ানো নিয়েও নরমপণীরা প্রতিবাদ জানান।
উপনিবেশিক শাসকের কাছে নরমপন্থীদের ভাবনাচিন্তার কোনো গুরুত্ব ছিল না। তাঁদের প্রায় কোনো দাবিই সরকারের তরফে মানা হয়নি। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার কোনো সম্প্রসারন ঘটানো হয়নি। প্রশাসানের ভারতীয়করণ ও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আদৌ কাম্য ছিল না। বাস্তবে নরমপন্থীদের নীতি ও সংকুচিত সামাজিক ভিত্তি এর জন্য দায়ী ছিল। সেদিক থেকে কংগ্রেসের নরমপন্থীরা উপনিবেশিক শাসানের কোনো জরুরি সংস্কার ঘটাতে পারেন নি।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে নরমপন্থীরা ভারতের বৃহত্তর জনগণের অভাব অভিযোগের সাঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। আদি পর্যায়ের আনেক কংগ্রেসি কার্যকলাপের পিছনে জমিদারদের আর্থিক সহায়তা ও ব্যবসায়ী মহাজনদের সমর্থন থাকায় কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ কংগ্রেস নিতে পারেনি। তাছাড়া নরমপন্থী নেতাদের মধ্যে দু একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব কংগ্রেস প্রায় ছিল না। ফলে, প্রথম কুড়ি বছরে প্রকৃতিগতভাবে নরমপন্থী রাজনীতি লক্ষ্য ও কর্মসূচির দিক থেকে ছিল সীমিত। তাতে জনগণের অংশগ্রহণ প্রায় ছিল না। সেই কারণে ব্রিটিশ প্রশাসন জাতীয় কংগ্রেসের বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না।
জাতীয় কংগ্রেস প্রথম কুড়ি বছরের রাজনীতির পর্যায়টিকে পুরো ব্যর্থ মনে হলেও যাবতীয় ব্যর্থতা সত্ত্বেও নরমপন্থীরা অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার হলেই যুক্তিনির্ভর সাংবিধানিক রাজনীতির একটি বিশেষ ক্ষেত্র তারা তৈরি করেছিলেন। তাদের পরিচালিত আন্দোলন গণআন্দোলনের রূপ পায়নি এবং ভারতীয়রা তার সুবিধা পায়নি। তবুও তাদের যুক্তি নির্ভর রাজনীতির মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে রাজনৈতিক আধুনিকতা দেখা গিয়েছিল‌