রচনা আমাদের বঙ্গদেশ - Online story

Sunday, 19 January 2025

রচনা আমাদের বঙ্গদেশ

  



রচনা

আমাদের বঙ্গদেশ

আমরা ভারতের অধিবাসী। ভারতের যে অংশে থাকি আমরা তার নাম ইংরেজ শাসনকালে ছিল বঙ্গদেশ। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলার বিভিন্ন এলাকা নানান সময়ে আলাদা-আলাদা ভৌগোলিক বিভাগের ছিল। বঙ্গ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋকবেদের ঐতরেয় আরণ্যক-এ। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যে বঙ্গ ছিল একটি বিভাগ মাত্র। স্বাধীনতার আগে এই বিরাট ভূখণ্ড বাংলা বা বঙ্গদেশ বা বেঙ্গল নামেই পরিচিত ছিল।

প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলি ছিল পুণ্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্র, বঙ্গ, বঙ্গাল, রাঢ়, সুক্ষ্ম, গৌড়, সমতট ও হরিকেল। প্রাচীন রাঢ় বা লাঢ় অঞ্চলের দুটি ভাগ ছিল— উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়। প্রাচীন এবং মধ্য যুগের বাংলায় গৌড় ছিল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ১৩৭০-৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শশাঙ্ক ছিলেন গৌড়ের স্বাধীন শাসক। তাঁর রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।

মাৎসন্যায় বলতে দেশে অরাজকতা বা স্থায়ী রাজার অভাবকে বোঝানো হয়। বছরের পর বছর মাৎসন্যায় অবস্থা চলার পরে বাংলার প্রভাবশালী লোকেরা মিলে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের মধ্যভাগে গোপাল নামে একজনকে রাজা নির্বাচন করে

আনুমানিক ৭৫০ খ্রি.। পালবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধর্মপাল। খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে বাংলার সেন রাজারা (বল্লালসেন, লক্ষ্মণসেন ইত্যাদি) শাসন শুরু করেছিলেন। বল্লালসেন সমাজ-সংস্কার করে রক্ষণশীল, গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য আচার-আচরণকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর ছেলে ও উত্তরাধিকারী লক্ষ্মণসেন প্রয়াগ, বারাণসী ও পুরীতে তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

১২০৪/৫ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণ ঘটলে বাংলায় সেন শাসনের কার্যত অবসান ঘটেছিল। মুঘল যুগে বাংলার বারো ভুইঞা (জমিদার)-রা খুবই প্রসিদ্ধ ছিলেন।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। বঙ্গদেশে জন্মেছিলেন অনেক মনীষী। যেমন : শ্রীচৈতন্য, শ্রীরামকৃষ্ণ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। আমাদের বাংলায জন্মেছিলেন যেসব বরেণ্য মানুষ তাঁরা হলেন- বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, শ্রীঅরবিন্দ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, বাঘা যতীন, আশুতোষ মুখার্জি,কাজী নজরুল ইসলাম, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়,গিরীশ ঘোষ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু প্রমুখ।

বাঙালি শুধু রাজনীতি বা ধর্মেই নয়, সাহিত্য, শিল্পকলা, খেলাধুলায় স্মরণীয় হয়ে আছে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায়, উদয়শংকর,রবিশংকর, নন্দলাল বসু, রামকিংকর বেইজ, আশাপূর্ণা দেবী, যাদুসম্রাট পি. সি. সরকার,গোষ্ঠ পাল, শৈলেন মান্না, চুনি গোস্বামি, পি. কে. ব্যানার্জি, পঙ্কজ রায়, সৌরভ গাঙ্গুলি,ঋদ্ধিমান সাহা, মিহির সেন, আরতি সাহা প্রমুখ। নোবেল জয়ী বাঙালি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। অস্কার পুরস্কার পান সত্যজিৎ রায়। ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, বিখ্যাত সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বহু বাঙালি খ্যাতি অর্জন করেছেন।