সিপাই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় কি
প্রশ্ন:- ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় কি?
উত্তর-
ভূমিকা : ১৮৫৭-র বিদ্রোহ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন যথার্থই বলেছেন, "ধর্মনাশের বিরুদ্ধে ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হলেও তা জাতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধরূপে সমাপ্ত হয়।
পক্ষে যুক্তি : ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলার কারণগুলি হল-
১. ব্যাপকতা : পূর্ববর্তী বিদ্রোহগুলির তুলনায় ১৮৫৭-র বিদ্রোহের ব্যাপকতা ও স্বাতা স্ফূর্ত গণসমর্থন ছিল ব্যাপক।
২ . সাম্প্রদায়িক ঐক্য : দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতীক। এই ধর্মীয় ভাবাবেগ পরবর্তীকালে তা
স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়।
৩.দেশপ্রেম : আবুল কালাম আজাদের মতে, আধুনিক জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায় বিচার করলে একে জাতীয় আন্দোলন বলা না-গেলেও বিদ্রোহীদের দেশপ্রেমের খামতি ছিল না।
৪.পরিকল্পিত বিদ্রোহ : এই বিদ্রোহ আচমকা হঠাৎ ছিল না, এর পেছনে স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সাহায্যের আশায় দ্বিতীয় বাহাদুর
শাহ পারস্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।
৫. গণ-অভ্যুত্থান: জাতীয়তাবাদ বলতে আমরা যাই বুঝি না কেন বিদেশি শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্য গড়ে ওঠা গণ অভ্যুত্থানকে
জাতীয় সংগ্রাম বলা যেতেই পারে।
৬. জাতীয় সংগ্রাম : ঐতিহাসিক কে পানিক্কর-এর মতে, ১৮৫৭-র বিদ্রোহের নেতারা যদি নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতার কথাও চিন্তা করে থাকেন, তবু তাঁরা যে জাতীয় সংগ্রামই করেছিলেন তা বলা যায় না।
>> বিপক্ষে যুক্তি : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় না, কারণ- (১) বিদ্রোহীদের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিকল্পনা বা সংগঠন ছিল না।
(২) ঐক্য বা বোঝাপড়া কেবলমাত্র
সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
(৩) সিপাহিদের সঙ্গে বিদ্রোহী নেতাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না।
(৪) বিদ্রোহের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য ও আদর্শের ফারাক ছিল এবং এটি জাতীয়
স্বার্থে পরিচালিত হয়নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, একটি দেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশের সমস্ত মানুষ অংশ নেবে এ কথা আশা করা যায় না। এই বিদ্রোহে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যোগদান করেছিল, তাই একে জাতীয় বিদ্রোহ বলা হয়ে থাকে। তা ছাড়া বিদ্রোহীদের মধ্যে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা হয়তো ছিল না, কিন্তু ব্রিটিশ-বিরোধী মানসিকতার প্রভাব ছিল।