১৮৫৭ -র অভুত্থানকে ভারতে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা যায় কি - Online story

Sunday, 9 March 2025

১৮৫৭ -র অভুত্থানকে ভারতে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা যায় কি

 



প্রশ্ন:-১৮৫৭-র অভ্যুত্থানকে ভারতের 'প্রথম স্বাধীতাসংগ্রাম' বলা যায় কি?


উত্তর- ভূমিকা : ১৮৫৭-র অভ্যুত্থানে দেশের মুক্তির জন্য কৃষক, কারিগর ও অন্যান্য সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল।

তাই প্রখ্যাত বিপ্লবী বি ডি সাভারকার এই অভ্যুত্থানকে ভারতের 'প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম' বলেছেন।

পক্ষে যুক্তি । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের অভ্যুত্থানকে ভারতের প্রথম

স্বাধীনতা সংগ্রাম রূপে অভিহিত করার যুক্তিগুলি হল- (১) ইংরেজ কোম্পানির দীর্ঘকালের শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষে জনগণের জ্বলন্ত প্রতিবাদ। 

(২) বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিল। ১৮৫৭-র বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে না হলেও, এমনকি এর কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য না-থাকলেও মনেপ্রাণে ইংরেজদের বিতাড়ন চেয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক এক সঙ্গে লড়েছিল এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে 'ভারতের সম্রাট' করেছিল। 

(৩) ইংরেজ-বিরোধী এত ব্যাপক

আন্দোলন ভারতে আর হয়নি। তাই গতানুগতিক বিচার না-করে এই অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতার সংগ্রাম বলাই যুক্তিযুক্ত।

-

বিপক্ষে যুক্তি : ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ও সুরেন্দ্রনাথ সেন ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেননি, কারণ তাঁদের মতে—

(১) ভারতের কিছু অঞ্চলে এই বিদ্রোহ সীমাবদ্ধ ছিল; কাজেই এই সংগ্রামকে সারাভারতের সংগ্রাম বলা যায় না।

(২) এই বিদ্রোহ ছিল সিপাহিদের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ, যা জাতীয় বিদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না।

(৩) অধিকাংশ সামন্তরাজা ও জমিদার ইংরেজ কোম্পানির প্রতি অনুগত ছিল এবং বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিল।

(৪) বিদ্রোহীদের মধ্যে সকলের স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে নয়, বরং পৃথক পৃথক উদ্দেশ্য সিদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্রোহ হয়েছিল।

(৫) শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ ও সমসাময়িক বাংলার পত্রপত্রিকাগুলিও বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিল।

(৬) তখন বিদ্রোহীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের চেতনা ছিল না, অর্থাৎ সেই সময় জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়নি।

উপসংহার : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ নিছক একটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় এই বিদ্রোহ ছিল জাতীয় বিদ্রোহ। আবার বিদ্রোহের আঙ্গিকে গণবিদ্রোহের রূপ প্রকট হয়ে উঠেছিল।